শুক্রবার | ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৪৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
একটি গ্রামের বাড়ির পুজো… : বিজয় চৌধুরী আয় রে ছুটে আয় পুজোর গন্ধ এসেছে… : লুৎফর রহমান রিটন ময়নাপুর দেওয়ান বাড়ীর পুজো : কমল ব্যানার্জি মা দুর্গার মহাস্নান পর্ব : রিঙ্কি সামন্ত কোষ্টিয়া গ্রামের শীট বাড়ির দুর্গাপুজো : কমল ব্যানার্জী অয়দিপাউস : রিমি মুৎসুদ্দি পোড়খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনকথা : হরিশংকর জলদাস সাজসজ্জার পুজো : নন্দিনী অধিকারী আঠেরো শতকে কলকাতার ভেড়া যেত অস্ট্রেলিয়ায় : অসিত দাস জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব হরিয়ানায় হ্যাট্রিক করলেও উপত্যকার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ে গান্ধী জয়ন্তী : দীপাঞ্জন দে পটের পাড়ায় মাজরামুড়ায় : রঞ্জন সেন একটি ড্যান্স হাঙ্গামা : শৈলেন সরকার গুণের রাজা পানিফল, দুর্গা পুজোর নৈবেদ্যে অপরিহার্য : রিঙ্কি সামন্ত স্কুল পালিয়ে কী রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায়? : সাইফুর রহমান পুজোয় বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় পরিষেবার মান উন্নত করতে বিদ্যুৎ দপ্তরের তৎপরতা তুঙ্গে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় গানের ভিতর দিয়ে দেখা পুজোর ভুবনখানি : সন্দীপন বিশ্বাস নবদুর্গা নবরাত্রি : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সাদা কালোয় কুমোরটুলি : বিজয় চৌধুরী জেল খাটাদের পুজো, মাইক আসছে মাইক, ছুটছে গ্রাম : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কাশ্মীর নির্বাচনে বিপুল সাড়ার নেপথ্যে কি ৩৭০ বিলোপের জবাব : তপন মল্লিক চৌধুরী তর্পণের তাৎপর্য : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় মহালয়ার চন্ডীপাঠ মন্ত্র, মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্র : বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পেজফোর-এর শারদোৎসব বিশেষ সংখ্যা ২০২৪ সুকুমার রায় মানেই শৈশব ও কৈশোর : রিঙ্কি সামন্ত অমৃতা প্রীতম-এর অনুবাদ গল্প ‘বুনোফুল’ মিল অমিলের মানিক ও মার্কেজ : রাজু আলাউদ্দিন কলকাতা ছিল একসময় ভেড়াদের শহর : অসিত দাস নিরাপদর পদযাত্রা ও শিমূলগাছ : বিজয়া দেব
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

একটি গ্রামের বাড়ির পুজো… : বিজয় চৌধুরী

বিজয় চৌধুরী / ২৭ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪

…বাগচীবাবুর সঙ্গে আলাপ হবার কিছু পরেই বলে ওঠেন আমাকে — “আপনি তো শুনলাম ছবিও তোলেন? তাহলে এবারই চলে আসুন না! আমাদের গ্রামের বাড়ির পুজো দেখতে। আশা করি ভালোই লাগবে আপনার। আমি নিজেও থাকি প্রতিবছর, পুজোর দু’চারদিন আগেই চলে যাই। পরের দিকে বাড়ির অন্য লোকজনরা কলকাতা থেকে যায়।”

পেশায় উকিল, এই অমায়িক বাগচীবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিল ১৩-১৪ বছর আগে। একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার অফিসে। আমি বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলাম ঐ সংস্থায়। এই অফিসের কোর্ট কাছারির বিষয়গুলো এই ভদ্রলোকই দেখাশোনা করে থাকতেন। লোকজন ওঁকে বাগচীবাবু বলেই ডেকে থাকেন।

পুলিশ, উকিল-মোক্তার — এই সব লোকজনদের বিষয়ে মনে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও গ্রামের বাড়ির পুজো দেখার লোভ’টা আর সামলাতে পারলাম না। ভাবলাম, ভালো না লাগলে কোন ঢপ দিয়ে না হয় সে দিনই চলে আসবো।

মাস দুয়েক বাদে, সাতপাঁচ না ভেবে আমিও রওনা দিলাম। বাগচী বাবুর গ্রামের বাড়ির পুজো দেখবার উদ্দেশ্যে — ষষ্ঠীর দিন ভোর বেলায়।

ট্রেনে কৃষ্ণনগর তারপর বাস, সাইকেল ভ্যানে করে নদীয়া জেলার করিমপুরের নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম। প্রথমে দর্শনে অবাক হওয়ার ঘোর কাটতেই অনেক সময় চলে গেল। এতো দেখি এক বিশাল জমিদারি। ঠিক জায়গায় এসেছি তো? মনে হলো জলসাঘর সিনেমার লোকেশানে এসে পড়েছি। কিছুটা রেগেই ভ্যানওয়ালা ছেলেটিকেই বলি, যাও তুমিই ভেতরে গিয়ে বাড়ির কাউকে ডেকে নিয়ে আসো! কোন ভুলভাল জায়গায় নিয়ে এসে ভিড়িয়ে দিল আবার, কে জানে!

খানিক বাদেই একটা বিশাল দরজার ভেতর দিয়ে, সাদামাটা লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরে সত্তর ছুঁতে যাওয়া বাগচীবাবু হাসিমুখে বেড়িয়ে এলেন। — ‘তাহলে আপনি এলেন শেষে! আশা করি খারাপ লাগবেনা আপনার।’

আমি কথা বলবো কী, ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক শুধু মোহিত হয়ে দেখে যাচ্ছি। এরকম তো কথা ছিল না!

আমার ঘোর কাটতেই বেশ কিছু সময় লেগে গেল। কিছু পরে এক ধরনের খারাপ লাগাও শুরু হয়ে গেল। এই বাড়ির যেন বাংলার আরো পাঁচটা জমিদার বাড়ির মতোই করুণ — এক সময়ে পূর্বপুরুষদের গৌরবময় ঐতিহ্য আজ ক্রমশ যেন বিলুপ্তির পথে! প্রতিটি ইটের গায়ে যেন সেই বিখ্যাত সিনেমা জলসাঘর-এর চিত্রনাট্যই খোদাই করা আছে।

প্রায় দু’শো বছরেরও বেশি পুরনো এই জমিদার বাড়ি। এই অঞ্চলের স্কুল, মন্দির, হরিসভা, খেলার মাঠ, দাতব্য চিকিৎসালয় তৈরির জন্য এই জমিদার বাড়ির অবদান অনস্বীকার্য। — গ্রামের লোকজনদের কথাবার্তায় যা বুঝতে পারি।

আমার থাকবার ও শোওয়ার জন্য জায়গা হলো দোতলায় এক বিশাল কড়ি বরগা’র ঘরে, অসাধারণ কারুকাজ করা এক পালঙ্কে।

শিয়ালদহ লাইনের ট্রেনে চিঁড়ে চ্যাপটা হয়ে ও গঞ্জের ভীড় বাসে ঠোক্কর খেতে খেতে যখন আসছিলাম — কল্পনাও করতে পারিনি, রাতে এমন এক জমিদার বাড়িতে আমার রাত কাটানোর সৌভাগ্য হবে!

আমার মনে হল দু’দিনের জন্য হলেও দৈন্যতা ঘুচে গিয়ে চৌধুরী পদবী সার্থকতা লাভ করল!

বিকেলের দিকে বাগচীবাবু আমাকে গ্রাম ঘোরাতে নিয়ে গেলেন। গ্রামের লোকজন দেখলাম এই বাগচীবাবুকে দেখে এখনো সমীহ-সম্মান করে চলেছেন। পাশেই ওঁনাদের আরেক শরিকের জমিদারি দেখাতে নিয়ে গেলেন। সেও দেখবার মতোই। যা নতুন বাড়ি নামে পরিচিত এই গ্রামে। তা সেও প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। যেখানে নতুনত্বের বিন্দুমাত্র নামগন্ধ নেই! এক সময়ের রাজকীয় জৌলুস বিলীন হয়ে আজ কাঠামোটাই শুধু পড়ে আছে!

এখানে এসে পুজো দেখবার চেয়ে এই গ্রাম ও জমিদার বাড়ির আনাচেকানাচে ঘোরাঘুরি করতেই আমি বেশি উৎসুক ছিলাম। সেই স্বাধীনতাটাও বাগচীবাবু আমাকে দিয়েছিলেন। শুধু সাবধান করেছিলেন, ‘সাপখোপ আছে এখানে, একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন!’

আর ওঁনার আতিথেয়তায় কোন রকমের ফাঁক রয়ে যাচ্ছে কীনা প্রতি মুহূর্তে উনি সেইদিকে তীক্ষ্ম নজর রাখতেন। মনে হতো দীর্ঘদিনের পরিচিত কোন অবিভাবক!

বাপ ঠাকুর’দার এক সময়ের গরিমা নিয়ে কোন রকমের পাঁচালি ওঁর মুখ থেকে শুনতে পাইনি এক মূহুর্তের জন্যও — এটা আমার খুব ভালো লেগেছিল।

আমি মনের আনন্দে এই বাড়ির বিভিন্ন মহল্লায় চষে বেড়াতাম। মনে হতো যেন কোন পরিত্যক্ত মিউজিয়ামের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছি। কত কী সব নিদারুণ অবহেলায় পড়ে আছে। একটা পিয়ানোকেও দেখলাম ওই স্তুপের মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। — দেখে মনটা ভারী হয়ে যেত। তবে একটা জিনিস দেখে খুব ভালো লাগলো। একটা সময়ে এই বাড়িতে যে পড়াশোনার ভালই  চল ছিল, তা দেরাজ ও কাঠের আলমারিতে ঠাসা পুঁথি ও প্রাচীন বইপত্তর দেখে বুঝতে পারা গেল। তবে কালের প্রবাহে ও অযত্নে সবই প্রায় নষ্ট হয়ে যাবার পথে।

ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাগচীবাবুকেও বেশ চিন্তিত

দেখলাম। নাকে এক টিপ নস্যি দিয়ে বলে ওঠেন — “জানেন, যতো দিন যাচ্ছে আমাদের লোকবলও কমে আসছে। সবাই প্রায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, দেশে-বিদেশে,

নানা জায়গায়। জানিনা, এই পুজো আর কতদিন টানতে পারা যাবে!” একথা বলে একটা দীর্ঘশ্বাসও ফেললেন যেন।

অষ্টমীর দিন সকাল। গ্রামের লোকজনও এই বাড়ির ঠাকুরদালানে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য আর পুজো দেখবার জন্য জড়ো হতে শুরু করেছে। আর কলকাতা থেকে এই বাড়ির আত্মীয়স্বজনরা এখানে পৌঁছে যাবার আগেই আমি বাগচীবাবুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

মাস খানের বাদে বাগচীবাবুকে আমার তোলা কিছু ছবি দিয়েছিলাম। সেই ছবি দেখে ওঁনার স্বজনদেরও খুব ভালো লেগেছিল — পরে একদিন জানিয়ে ছিলেন সেকথা।

সময় বয়ে চলে…!

পুজো আসে পুজো যায়। আমিও সেই কর্মস্থল, অনেক দিন হলো ছেড়ে দিয়েছি। শুনেছি, বাগচীবাবুও সেখানে আর যান না। আমার সঙ্গেও আর যোগাযোগ নেই!

স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে হটাৎই মনে পড়ল — এই বাগচীবাবুর সঙ্গে আমার বাবা’র দুয়েকটি জায়গায় বেশ মিল ছিল। আমার বাবাও নস্যি নিতেন এবং ওই বাগচীবাবুর মতোই ফর্সা ও ছোটখাটো শীর্ণ চেহারার মানুষ ছিলেন আমার বাবা।

আর, এই দিন পাঁচেক আগেই আমার বাবা চলে গেলেন ‘না ফেরার দেশে!’

বাবার পারলৌকিক কাজের জন্য ছবি বাছাই করছিলাম। হটাৎই একটা সিডি থেকে করিমপুরের এই ছবিগুলো বেরিয়ে এলো! চোখের সামনে যেন একটা অদৃশ্য চলচ্চিত্রের কিছু মূহুর্ত ভেসে উঠলো— যা প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিলাম!

আজকের এই বিষণ্ণতার দিনে, বাগচীবাবুর এই ছবিগুলো দেখে কেন জানিনা ওঁর কথাও খুব মনে পড়ছে…!

কোথায়, কেমন আছেন বাগচীবাবু — কে জানে!

সেই সময়ে তোলা বাগচীবাবু এবং ওঁনার সেই জমিদার বাড়ির কিছু ছবি এখানে রাখলাম।

পুজো সবার ভালোভাবে কাটুক এই প্রার্থনাই করি।

১০-১০-২০২১


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন