বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে। নানা যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস জানিয়ে দেয় আবহাওয়া অফিস। কিন্তু অন্য প্রাণীরা তাদের সহজাত শক্তিতে কিছুটা অনুভব করতে পারে সেই দুর্যোগ। তারা অস্থির হয়ে ওঠে। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। গৃ্হপালিত কুকুর-বেড়ালের মধ্যেও এ রকম অস্থিরতা দেখা যায়। ভূমিকম্প, সুনামি, সাইক্লোনের আগে এ জিনিসটা লক্ষ্য করা যায়।
আমাদের এই সমাজ জীবনেও আসে দুর্যোগ। দেখা দেয় কোন শাসন-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ। তুষের আগুনের মতো জ্বলতে জ্বলতে একদিন সেই ক্ষোভ পরিণত হয় বিদ্রোহে। উলঙ্গ রাজাকে প্রশ্ন করা শুরু করে মানুষ। রাজার বা শাসকের শেষের শুরু হয় এইভাবে।
এই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কি সেই রকম একটা ঝড় উঠতে যাচ্ছে? কেন, নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর অনুগামীরা তো ‘আবকি বার চারশো পার’ বলে প্রচার করে চলেছেন। নরেন্দ্র মোদিকে টেক্কা দেবার মতো বিরোধী মুখ দেখা যায় নি এখনও। সর্বভারতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসও এককভাবে পাল্লা দিতে পারবে না। বাকি রইল নানা রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলি, সেখানে নানা মুনির নানা মত। তারা যাতে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে, তার খেলাও খেলে চলেছে বিজেপি। টাকা দিয়ে, এজেন্সি দিয়ে মুখ বন্ধ করার খেলা।
সুতরাং ‘আবকি বার চারশো পার’ হবে না কেন?
ছোট বড় অনেক কারণ। মোদি ম্যাজিক ছিল, অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু সে ম্যাজিক ফিকে হয়ে গেছে। কালের ব্যবধানে। সময় যে বড় নিষ্ঠুর। সাধের রামমন্দির তুলতে পারল না ঢেউ তেমনভাবে। এমনকি হিন্দি বলয়েও। ‘মোদির গ্যারান্টি’ হয়ে গেল হাসির খোরাক। আগের আগের গ্যারান্টির পরিণামের কথা তুলতে লাগল মানুষ। বিভাজনের রাজনীতির খেলাটারও প্রতিবাদ হতে লাগল।
তার উপর ঘরের ভেতরে লেগেছে আগুন। ক্ষমতার গুড়ে এমনভাবে লেপ্টে গেলেন মোদি আর শাহ যে, তাঁরা দলের অন্য নেতাদের গ্রাহ্যই করলেন না। যাঁর একটু এলেম আছে, প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন, তাঁকে নির্মমভাবে সরিয়ে দিতে লাগলেন এই জুটি। রাজস্থানের রাজমাতা, মধ্যপ্রদেশের মামা, উত্তরপ্রদেশের যোগী, রাজনাথ সিং, নিতিন গড়করি এমনি আরও কতজন। এমন কি যে আর এস এস এঁদের লালন করেছে, তাকেও এই জুটি বুড়ো আঙুল দেখাতে শুরু করে দিলেন। প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রীসভায় আর কেউ নেই। আর কেউ নেই মানে তাঁরা থাকলেও কায়া বিসর্জন দিয়ে ছায়া হয়ে আছেন। তাই মোদি-শাহকে লড়তে হচ্ছে দলের বিক্ষুব্ধদের মতো বাইরের বিরোধীদের সঙ্গে। এর আগের দুই নির্বাচনে এ সমস্যা ছিল না।
আর দু-তিন দফা নির্বাচনের পর নানাভাবে মোদির পরাজয়ের গন্ধটা ভাসতে শুরু করেছে। বোধহয় বড় বড় মোদিভক্ত মিডিয়া, আদালতের বিচারক, সিবিআই-এর প্রাক্তনীরা এই গন্ধটা পাচ্ছেন। তাঁদের হাবভাবে বোঝা যাচ্ছে সেটা। আবার এঁদের এই ভোল বদল বলে দিচ্ছে ঝড় আসছে। ‘দিন বদলের পালা এলো ঝড়োযুগের মাঝে’।