রবিবার | ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (চতুর্থ পর্ব) : অভিজিৎ রায় ভনিতাহীন চলন, সাইফুর রহমানের গল্প : অমর মিত্র সাইফুর রহমান-এর বড়োগল্প ‘করোনা ও কফিন’ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়: এক বাঁধনছেঁড়া গণশিল্পী : সন্দীপন বিশ্বাস

সন্দীপন বিশ্বাস / ৩৮০ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সেটা সম্ভবত ১৯৭৭ বা ’৭৮ সাল হবে। আমাদের পাড়ার ক্লাবের তহবিল বৃদ্ধির উদ্দেশে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কম পয়সায় কী অনুষ্ঠান করা যায়? গানের পাশাপাশি একটা নাটক কিছু রাখলে ভালো হয়। একজন বলল, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধরলে হবে। উনি ইচ্ছে করলেই আমাদের অনুষ্ঠানে নাটক করে দেবেন। ওনার অনেকগুলো একাঙ্ক নাটক আছে।

আমরা তখনও ভাবতেই পারছি না, কী করে তাঁকে গিয়ে বলব, আমাদের কথা। তবু সাহসে বুক বেঁধে আমরা কয়েকজন গেলাম। উনি সব শুনলেন। আমাদের কিছু প্রশ্নও করলেন। সব শুনে বললেন, ‘তোমরা কত দিতে পারবে শুনি।’ আমাদের মুখ দিয়ে আর কথা বেরোয় না। আমাদের বাজেট তো পাঁচশো টাকা। কোনোরকমে নিচু স্বরে সেকথা বললাম। শুনে হো হো করে তিনি হেসে উঠলেন। সেই অনাবিল হাসি, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখত। বললেন, ‘বেশ তো, তা তোমরা লজ্জা পাচ্ছো কেন? আমি করব। তোমাদের সকালের শো বলেই করে দেব। রাতে হলে পারতাম না।’ তিনি কথা রেখেছিলেন। বয়েজ ওন লাইব্রেরি হলে এক রবিবার সকালের শোয়ে তিনি তাঁর ‘নানা রংয়ের দিন’ নাটকটি অভিনয় করেছিলেন।

তারপরে তাঁর সঙ্গে আমার পরে একবার কথা হয়েছিল, তখন সাংবাদিক হিসাবে কিছু প্রশ্ন তাঁকে করেছিলাম। তিনি তখন যাত্রাশিল্পী। নতুন আঙ্গিকে যাত্রায় ‘রাবণ’ করছেন। তখন বলেছিলেন, ‘অর্থের জন্যই যাত্রায় এসেছি, প্রাথমিকভাবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাছাড়া গ্রামের ছেলে তো, ছেলেবেলা কেটেছে কোলিয়ারি এলাকায়। সেইসময় অনেক যাত্রা দেখেছি। তাই একবার এই মাধ্যমে অভিনয় করার খুব লোভ হল।’

কোলিয়রিতে থাকার দিনগুলিতে তিনি যে ভিন্ন ধারার মানুষের জীবন দেখেছিলেন, সেই জীবনই হয়তো তাঁকে নাটকের মতো গণমাধ্যমের দিকে নিয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য তিনি আজীবন নাটক করতে চেয়েছেন। বাংলা নাটককে সমৃদ্ধ করার জন্য বিদেশি নাটক দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও তার মধ্যে আমাদের দেশের এবং মানুষের সমস্যা ও সংকটকেই প্রধান করে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।

লুই পিরানদেল, আন্তন চেকভ, আর্নল্ড ওয়েস্কার, বের্টোল্ড ব্রেশট কিংবা পিটার টার্সান এর নাটকের যেসব রূপান্তর করেছেন, তা আদতে হয়ে উঠেছে একটা মৌলিক নাটকের মতোই। যে নাটক থেকে আমাদের ঘাম ও ভাতের গন্ধ উঠে এসেছে। অভিনেতা অজিতেশ নিয়ে কথা হয়, কিন্তু নাট্যকার অভিনেতা বা নির্দেশক অভিনেতা যে কত বড়, তা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয় না। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় মানে এক বিরাট নাট্যব্যক্তিত্ব। নাট্যদলের অভিভাবকের মতো। এক বহুমুখী প্রতিভা। তিনি ছিলেন যেন একজন অ্যাক্টিভিস্টের মতো।

আমার সবসময় মনে হয়েছে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে একটা লোকশিল্পীর সত্তা লুকিয়েছিল। তাঁর নাটকের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে থেকে গিয়েছে লোকশিল্পের নানা উপাদান। নাগরিক প্রেক্ষাপটের মধ্যে থেকেও সেই লোকশিল্পের অনুশীলনই তিনি করে গিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁকে আমরা এক গণশিল্পী হিসাবেও পাই। যেমন চারণ কবি। গান বেঁধে যান, সমাজকে জাগিয়ে দেন তাঁর গানে। হাটে মাঠে বাটে তিনি গান গেয়ে বেড়ান। অজিতেশও তেমন। মানুষের মধ্যে নাটককে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সে ছিল তাঁর বাঁধনছেঁড়া সাধন। যে যেখানে ডাকতেন, মানুষকে নাটক দেখানোর তাগিদে ছুটে যেতেন। নাটক ছিল তাঁর হাতিয়ার।

নান্দীকারের জন্ম আজকের প্রজন্ম বোধহয় ততটা জানে না। এই নান্দীকারের যে অতীত ইতিহাস আছে, সেখানে অজিতেশ তার জন্মদাতা এবং পালক। ১৯৬০ সালে নিজের হাতে গড়া দল ছেড়ে তাঁকে বেরিয়ে আসতে হল। সেটা ১৯৭৭ সাল। এই ১৭ বছরেই অসাধারণ সব নাটক নান্দীকার উপহার দিয়েছে। ‘নাট্যকারের সন্ধানে ছ-টি চরিত্র’, ‘আন্তিগোনে’, ‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী’, ‘শের আফগান’, ‘তিন পয়সার পালা’, ‘ভালো মানুষ’, ‘নটী বিনোদিনী’, ‘ফুটবল’ ইত্যাদি। তবুও বোধহয় সবগুলো বলা হল না। এ সব নাটক আজকের বাংলা নাটকের উত্তরণের ক্ষেত্রে এক একটা মাইলস্টোন হয়ে আছে।

শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত এবং অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময় এই তিনজনকে বলা হত বাংলার অন্যধারার নাটকের ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। তিনজনে তিন ধারার নাটক করতেন, তিনজনের নির্দেশনা এবং অভিনয়রীতিও আলাদা। কিন্তু সত্যি বলতে কী অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমস্ত প্রযোজনা আমাকে আবিষ্ট করে তুলেছিল। শম্ভু মিত্র বা উৎপল দত্তের নাট্য ঘরানার সঙ্গে, বাচিক ও আঙ্গিক অভিনয়ের সঙ্গে তাঁদের দলের অন্যান্য শিল্পীদের কমবেশি মিল খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু অজিতেশ কখনো নির্দেশনার সময় নিজে শিল্পীকে প্রভাবিত করতেন না। শুনেছি তিনি নাকি বলতেন, প্রত্যেক শিল্পী তার নিজস্বতা দিয়েই চরিত্রটা নির্মাণ করুক। এই উদারতা এবং শিল্পীদের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তোলার শক্তি তাঁর ছিল।

তাঁর ‘আন্তিগোনে’ নাটকটি আমি তিনবার দেখেছিলাম। মঞ্চে ক্রেয়ন ও আন্তিগোনের সেই দুরন্ত সিকোয়েন্স। সত্যি ভাবাই যায় না! যেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেয়া চক্রবর্তীর ডুয়েল চলছে। রুদ্ধশ্বাস দর্শন। ‘ভালো মানুষ’ই বা কম কিসে। কিংবা ‘মঞ্জরী আমের মঞ্জরী’ অথবা ‘তিন পয়সার পালা’। ‘তিন পয়সার পালা’ নাটকটি সমাজের নিচুতলার মানুষদের জীবনকে তুলে ধরেছে। ঈর্ষণীয় ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিল নাটকটি। সব নাটকেই অজিতেশ কিংবা কেয়ার জুটির টানটান লড়াই ছিল উপভোগ করার মতো। শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্রের পর বাংলা নাটক পেয়েছিল এই দুরন্ত জুটিকে।

সেই নান্দীকার ছেড়ে তাঁকে বেরিয়ে যেতে হল। ইতিহাস এমনই। আবার গড়ে তুললেন নতুন দল, ‘নান্দীমুখ’। সেখানেও আর একবার দুটি অনবদ্য প্রযোজনা পেলাম আমরা। ‘পাপপুণ্য’ এবং ‘তেত্রিশতম জন্মদিন’।

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যয়ের নাম বললেই আমার দুটি একাঙ্ক নাটকের কথা মনে পড়ে। দুটিই অনবদ্য। একটি আন্তন চেকভের ‘প্রোপোজাল’ অবলম্বনে ‘প্রস্তাব’ এবং আর একটি চেকভেরই ‘সোয়ান সং’ অবলম্বনে ‘নানা রংয়ের দিন’। ‘নানা রংয়ের দিন’ নাটকটি রজনী চ্যাটার্জি নামে একজন শিল্পীর বেদনা। যার উজ্জ্বল অতীত ছিল, আজ যেন তা বিবর্ণ। এই চরিত্রটিতে তিনি অভিনয় করতে ভালোবাসতেন। চেকভ ছিলেন তাঁর অন্যতম প্রিয় নাট্যকার। পাশাপাশি পছন্দ করতেন স্তানিস্লাভস্কি ঘরানার অভিনয়।

থিয়েটারের সঙ্গে সঙ্গে আর দুটি বিষয় তাঁর প্যাশন ছিল। ফুটবল খেলা ও রাজনীতি। বামপন্থী রাজনীতি করতেন। কিন্তু ১৯৬৪ সালে পার্টি ভাগ হওয়ার আগে ছেড়ে দিলেন রাজনীতি।

রাজনীতিতে এত বিষয়, টানাপোড়েন। কিন্তু তিনি মনে করতেন, রাজনৈতিক থিয়েটার ঠিক যেমন হওয়া উচিত, তেমন আমাদের দেশে হয়নি। নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমাদের এখানে রাজনৈতিক থিয়েটারের নামে যা হয়, তা আসলে ওই রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে একটু মস্করা করলাম বা পুলিশকে একটা কমিক কারেক্টার বানিয়ে ব্যঙ্গ করলাম অথবা এস্টাব্লিশমেন্টের বিরুদ্ধে কিছু বললাম। ব্যস এই পর্যন্তই। তাছাড়া এখানে ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি কিছু নাট্যদলকে ভোটের স্বার্থে কিছু রাজনীতির কথা নাটকের মাধ্যমে বলিয়ে নিল। এর বেশি কিছু নয়। রাজনৈতিক থিয়েটার বলে এখানে আলাদা করে কিছু গড়ে ওঠেনি। অর্থাৎ নাটকে শিকড় থেকে উঠে আসা কোনও কথা বা বিষয়, তা আমরা এখনও সেই অর্থে পাইনি।

একবার ইলেকশনের আগে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিপিআইএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্তের প্রবল মনোমালিন্য হয়েছিল। প্রমোদ দাশগুপ্ত চেয়েছিলেন থিয়েটারের শিল্পীরা ভোটের আগে পার্টির পক্ষে পথনাটিকা করুন। কিন্তু অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি প্রমোদবাবুকে বলেছিলেন, তিনি ওইসব অতুল্য ঘোষ সেজে বা মাথায় গান্ধীটুপি পরে কংগ্রেসকে ব্যঙ্গ করে পথনাটিকা করতে পারবেন না। এই ধরনের পোস্টার প্লেতে তে কোনও লাভ হয় না। প্রমোদবাবু প্রকারান্তরে জানিয়ে দিয়েছিলেন, পার্টিতে যিনি যে কাজটা করায় দক্ষ, তিনি সেই কাজ না করে পার্টিকে যদি সাহায্য না করেন, তবে তিনি বিশ্বাসঘাতক। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথার প্রতিবাদ করেছিলেন। বলেছিলেন, ভোটের আগে এসব নাটক করে কোনও লাভ হয় না। কেন সারা বছর এই ধরনের নাটক নিয়ে গিয়ে জনমত গঠনের চেষ্টা করা হয় না।

অত্যন্ত স্পষ্ট বক্তা ছিলেন তিনি। পার্টির নানারকম সুবিধাবাদী পদক্ষেপকে রেয়াত করতেন না। একটি লেখায় তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তখন পুরোদস্তুর কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য এবং দায়িত্ববান সদস্য। আমি লক্ষ্য করেছি—যাঁরা পার্টির সদস্যপদ নেন, তাঁরা পার্টির সুবিধেগুলো ভোগ করেন, কষ্টগুলো নয়। পার্টির গর্বগুলো, লজ্জাগুলো নয়। তাঁদেরকে বলা হত ‘মোর দ্যান এ পার্টি মেম্বার’। এ নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যেও বহুবার ঠাট্টা করেছি।’

নাটকের সঙ্গে সঙ্গে সিনেমাতেও অসাধারণ সব কাজ করেছেন। কম কাজ করেছেন হয়তো, কিন্তু তাঁর কাজই বুঝিয়ে দিয়েছে, তিনি কতবড় শিল্পী ছিলেন। ‘রাণুর প্রথম ভাগ’, ‘কুহেলি’, ‘হাটে বাজারে’, ‘গণদেবতা’। অসাধারণ। বাংলা চলচ্চিত্র তাঁকে সেভাবে ব্যবহার করতে পারেনি, সেটা বাংলা ছবির দীনতা।

আমার বারবার মনে হয় তাঁর কন্ঠস্বরের মধ্যে কেমন একটা রহস্যময়তা ও দরাজ ভাব ছিল। তা হয়তো ব্যরিটোন ভয়েস নয়, কিন্তু হো হো করে যখন হেসে উঠতেন, সত্যিই বুক কেঁপে উঠত। মনে পড়ে তাঁর রেডিও নাটক ‘বল্লভপুরের রূপকথা’। বারবার যেন শুনতে ইচ্ছে করে তাঁরই জন্য।

আজ চারিদিকে এত নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যবিজ্ঞদের ভিড়েও তাঁর অভাব ভীষণভাবে অনুভূত হয়। সেই শূন্যস্থান আজও ভরাট হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন