মঙ্গলবার | ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:২৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
মাটির গন্ধমাখা লোকগানে সতেজতার সন্ধানী অমর পাল : রিঙ্কি সামন্ত কোটিপতি সাংসদরাই কি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি : তপন মল্লিক চৌধুরী বাহের দ্যাশের লোকসংস্কৃতি ও লোকসঙ্গীত নানা বৈচিত্র্যে বৈচিত্র্যময় : মনোজিৎকুমার দাস আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (শেষ পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী মোদি ম্যাজিক ছিল কিন্তু সে ম্যাজিক ফিকে হয়ে গেছে : দিলীপ মজুমদার সুশান্ত দাসের ‘প্রকৃতিগাথা’ : দিলীপ মজুমদার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহনযোগ্যতা ও আরাকান আর্মি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন কেদারনাথ-বদ্রীনাথ ভ্রমণ : প্রকৃতি আর ঈশ্বর যখন একটি বিন্দুতে মিশে যায়… : অমৃতাভ দে আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (তৃতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী বসিরহাটে নুনের হাট, শ্যামবাজার নুনের বাজার : অসিত দাস মুর্শিদাবাদের আমকথা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জেন অস্টিন নারী স্বাধীনতার অন্যতম পথিকৃৎ : মনোজিৎকুমার দাস ইসবার ইন্ডিয়া জোটকা সরকার, আমরা একাই একশো — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (শেষ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন মুর্শিদাবাদের আমকথা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (দ্বিতীয় পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ কবি কুসুমকুমারী দাশ ও পরাবাস্তবতার কবি জীবনানন্দ : বিজয়া দেব হুগলির লোকসভা ভোটে গ্রামীন এলাকায় ১৭১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (সপ্তদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজি : সমাজ বিবর্তনের দলিল (প্রথম পর্ব) : মোজাম্মেল হক নিয়োগী নজরুল ও মধুপুর (প্রথম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (ষোড়শ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন আলাউদ্দিন অল আজাদ-এর ছোটগল্প ‘আমাকে একটি ফুল দাও’ ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে বিজেপি বড্ড বেশি জরুরি করে ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ঘাটু গান আজ অবলুপ্তির পথে : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (পঞ্চদশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন হাসান আজিজুল হক-এর ছোটগল্প ‘স্বপ্নেরা দারুণ হিংস্র’ বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেদেদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাপনের কথা : মনোজিৎকুমার দাস শান্তিনিকেতনের দিনগুলি (চতুর্দশ পর্ব) : সন্‌জীদা খাতুন
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই অক্ষয় তৃতীয়া-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

‘আলম আরা’ বলিউডে জন্ম নেওয়া হারানো ছবির সন্ধানে : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ২২৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪

১৯২৭-এ আমেরিকায় প্রথম সবাক ব্রিটিশ কাহিনীচিত্র তৈরি হয়ে গেল। সঙ্গীতমুখর সেই কাহিনীচিত্রের নাম, ‘দ্য জ্যাজ সিঙ্গার’। স্বভাবতই অভূতপূর্ব সাফল্য পেল ছবিটি। এই সফলতা নতুন সিনেমা-টেকনিকের প্রতি আরদেশীর ইরানিকে আগ্রহী করে তুলল। ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে থাকতে ইরানি বিপণনের আঁটঘাট যেমন চিনে ফেলেছিলেন, তেমনি নিজের উদ্যোগে শিখে নিয়েছিলেন ছবি তৈরির কলাকৃতিও। ১৯২২-এ নির্বাক ছবি ‘বীর অভিমন্যু’ দিয়ে তাঁর চিত্রপরিচালনায় হাতেখড়ি। ১৯২৭-এর অক্টোবরে যখন আমেরিকায় সবাক ছবি ‘দ্য জ্যাজ সিঙ্গার’ রিলিজ করল, ততদিনে ইরানি আরও সাতখানা নির্বাক ছবি পরিচালনা করে ফেলেছেন। তাঁর ব্যবসায়ী ও শিল্পী মন চাইল এই নতুন টেকনিক এদেশে এনে সব্বাইকে চমকে দিয়ে ইতিহাস তৈরি করতে। সেই সময় বোম্বের পার্সিয়ান থিয়েটারে জোসেফ ডেভিডের ‘আলম আরা’ নাটকটি তখন মঞ্চ কাঁপাচ্ছিল। নাটকটি আসলে একটি রোম্যান্টিক প্রেমকাহিনী। এই গল্পের দিকেই চোখ গেল ইরানির। তিনি জোসেফ ডেভিড ও মুন্সী জাহীরের হাতে চিত্রনাট্যের দায়িত্ব দিয়ে নিজে শিখে নিলেন সিনেমার সাউন্ড রেকর্ডিং-এর কৌশল। তখন একই ফিল্মে সাউন্ড আর ছবি পাশাপাশি রেকর্ড হত। সেজন্য সাউন্ড রেকর্ডিঙয়ের সুবিধেওয়ালা ক্যামেরাও জোগাড় করতে হল। ছবির জন্য সাতখানা গান বাঁধলেন ফিরোজশাহ মিস্ত্রি আর বি ইরানি — দুজনে মিলে। হিন্দি-উর্দুতে স্ক্রিপ্ট লেখা হয়ে গেল। ছবিতে শাহজাদার ভূমিকায় নেওয়া হল তখনকার বিখ্যাত স্টান্টম্যান কাম অভিনেতা মাষ্টার ভিট্টলকে; আলম আরা’র ভূমিকায় নেওয়া হল বিখ্যাত নবাবপরিবারের মেয়ে জুবেদাকে; আদিল খানের চরিত্রে নেওয়া হল পৃথ্বীরাজ কাপুরকে।

আরদেশীর ইরানি

আলম আরা দ্য ফার্স্ট ইন্ডিয়ান টকিং ফিল্ম। ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘আলম আরা’ মুক্তি পেল ১৯৩১ সালে ১৪ই মার্চ, আজ থেকে ঠিক ৯৩ বছর আগে। আলম আরা (হিন্দি: आलमआरा; উর্দূ: عالم آراء; পৃথিবীর আলো) ছবিটি তখনকার মুম্বাই-এর গোরেগাঁও অঞ্চলের ম্যাজেস্টিক থিয়েটারে। বিখ্যাত ভারতীয় নৃত্যশিল্পী সিতারা দেবী, সেসময় থিয়েটারে গিয়ে সিনেমাটি দেখেছিলেন। তিনি স্মৃতিচারণে বলেছিলেন, সিনেমাটি ‘খুব সেনসেশনাল’ ছিল। ‘মানুষ টাইটেল কার্ড পড়ে নির্বাক সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু এ সিনেমায় তো অভিনেতারা কথা বলছিল। তখন দর্শকরা অবাক হয়ে বলছিল, শব্দ কোথা থেকে আসছে!’

সত্যিতো সিনেমার পর্দায় এতদিন ধরে দর্শকেরা নায়ক নায়িকার মুকাভিনয় দেখেছে। এবার প্রথম নায়ক নায়িকাদের একে অপরের সঙ্গে কথাবলা, অভিব্যক্তি, গান, বিভিন্ন দৃশ্যে বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ দেখে অবাক হয়ে গেলেন দর্শকেরা। ১২৪ মিনিটের ছবি দেখার জন্য দর্শকরা রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল সিনেমা হলে। ছবিটি এতই জনপ্রিয় হয়ে গেছিল যে ভিড় সামলাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ অব্দি করতে হয়েছিল। মুক্তি পাওয়ার পর দীর্ঘ আট সপ্তাহ পর্যন্ত হাউসফুল ছিল এই সিনেমা, তখনকার দিনে এটি ভাবাও ছিল অকল্পনীয়। উর্দু এবং হিন্দি এই দুই ভাষাতে সিনেমাটি তৈরি হয়।

জুবেদা ওয়াজেদ, মোহাম্মদ খান

এই সিনেমার নায়ক নায়িকা ছিলেন পৃথ্বীরাজ কাপুর এবং জুবেদা ওয়াজেদ মোহাম্মদ খান, এছাড়াও অভিনয়ে ছিলেন জোলি, মাস্টার ভিথাল, সুশীলা এবং এল ভি প্রসাদ। ফকিরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ওয়াজির মহাম্মদ খান।এই ছবিতে যে গানটি সুপারহিট হয়েছিল সেটা হলো ‘দে দে খুদা কে নাম পার’।

সুন্দরী জুবেদা খুব অল্পদিনের জন্য অভিনয় জগতে ছিলেন। রুপ লাবণ্যের মহারানী জুবেদা কে পাওয়ার জন্য বিদেশের উচ্চশিক্ষিত ফতেপুরের তরুণ মহারাজা বীরেন্দ্র সিং (ভিক্টর) পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত জুবেদার শর্ত মেনেই হিন্দু মহারাজা মুসলিম কন্যাকে বিয়ে করে নিজের পাটরানী করে নিয়েছিলেন।

সিনেমাটি জোসেফ ডেভিডের লেখা একটি পার্সি নাটকের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, যিনি পরে ইরানীর ফিল্ম কোম্পানিতে লেখক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এটি একটি ফ্যান্টাসি ফিল্ম যা একটি রাজপুত্র এবং একটি জিপসি মেয়ের প্রেমের গল্পকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। গল্পটিতে একজন নিঃসন্তান রাজা এবং তার দুই বিবাদমান স্ত্রী নববাহার এবং দিলবাহারকে ঘিরে। রাজার দুই রানী একে অপরের প্রতি অত্যন্ত ঈর্ষাপরায়ণ ছিলেন। রাজদরবারে হঠাৎ এক ফকির ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, রাজার সন্তানের জন্ম হবে নববাহারের গর্ভে। এরপর সমস্যা আরো বেড়ে যায়। নববাহার রাজার পরবর্তী উত্তরাধিকারীকে জন্ম দেবে জেনে রাজার অন্য স্ত্রী হিংসে পাগল হয়ে প্রতিশোধের ফন্দি আঁটতে থাকেন।

সময়ের সঙ্গে ফকিরের ভবিষ্যৎবাণী ফলে যায়। নববাহার মা হলেন। স্বাভাবিকভাবেই রাজা দিলবাহারকে উপেক্ষা করতে থাকেন। রাজার কাছে উপেক্ষিত হওয়ার ফলে দিলবাহার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রাজ্যের সেনাধ্যক্ষ আদিলের (অভিনেতা ছিলেন পৃথ্বীরাজ কাপুর) সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার মনস্কামনা পূর্ণ হয় না। আদিলের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে কৌশলে তিনি আদিলকে বন্দী করেন এবং আদিলের কন্যা আলম আরাকে (অভিনেত্রী ছিলেন জুবাইদা) রাজ্য থেকে বহিষ্কার করেন।

বহিষ্কৃত আলম আরা জিপসিদের খপ্পরে

পড়ে এবং তাদের তত্ত্বাবধানে লালন পালন হতে থাকেন। নানা দেশে ঘুরে বেড়ানোর পর ঘটনাক্রমে একদিন কুমারপুর রাজ্যের রাজপ্রাসাদের ফিরে আসে আলম। এখানে এসে নববাহারের সুদর্শনপুত্র রাজকুমারের (অভিনেতা মাস্টার ভিথাল) সাথে তার পরিচয় হয় এবং একে অপরের প্রেমে পড়েন। অবশেষে, রাজকুমার ও আলম আরা বিয়ে করেন এবং আদিলকে ছেড়ে দেয় এবং ক্লাইম্যাক্সে দিলবাহারও তার পাওনা হিসেবে চরম শাস্তি পায়।

আলম আরা চলচ্চিত্র এবং এর সঙ্গীত উভয়েই তৎকালীন সময়ে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। বিশেষ করে “দে দে খোদা কে নাম পার” ছিল তখনকার হিট গান, যা ছিল গানটি ভারতীয় সিনেমার প্রথম সঙ্গীত। গানটি গেয়েছিলেন অভিনেতা ওয়াজির মহাম্মদ খান, যিনি ঐ চলচ্চিত্রে ফকিরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। গানটি চলচ্চিত্রের শুটিং এর সময় সরাসরি শুধুমাত্র একটি হারমোনিয়াম এবং তবলা বাজিয়ে শ্যুটিং করা হয়েছিল।

সাউন্ড রেকর্ডিং করছেন আরদেশীর ইরানি

চলচ্চিত্রটি ভারতীয় চলচ্চিত্রাঙ্গণে ফিল্মি সঙ্গীতের সূচনা বলে মনে করা হয়। চলচ্চিত্রটিতে মূলত গান ছিলো বেশি এবং সংলাপ কম ছিল। মোট সাতটি গান ছিল ছবিতে। ১) দে দে খুদা কে নাম পর ২) বদলা দিল আয়েগা ইয়া রব ৩) রুঠা হ্যায় আসমা ৪) তেরি কাতিল নিগাহোঁ নে ৫) দে দিল কো আরাম আয়ে ৬) ভর ভর কে জাম পিলা ৭) দারাস বিনা মারে হ্যায়।

আরদেশির ইরানি তারান সাউন্ড সিস্টেমের সাহায্যে শব্দগ্রহণের কাজ করতেন। তারান সিঙ্গেল-সিস্টেম ক্যামেরার সাহায্যে চিত্রগ্রহণের কাজ করা হতো, একই সময়ে চলচ্চিত্রে সরাসরি শব্দগ্রহণও করা হতো। তখনকার সময়ে সাউন্ডপ্রুফ স্টুডিও ছিল না, ফলে দিনের শোরগোল এড়ানোর জন্য চলচ্চিত্রের বেশির ভাগই চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে রাতে, যেখানে অভিনেতাদের পাশের মাইক্রফোন আড়াল করে রাখা হতো।

সংলাপ ও সংগীতের সমন্বয়ে আলম আরা ছবিটি ছিল ভারতীয় সিনেমায় নতুন যুগের মাইল ফলক। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় আলম আরা ছবির কোন প্রিন্ট এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।

কোন স্টুডিও আর্কাইভ, পাবলিক অর্কাইভ বা ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকেও ছবিটির হদিস মেলেনি।

সিনেমা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের ইতিহাস একদমই সুখকর নয়। ১৯১২ থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে নির্মিত ১১৩৮টি নির্বাক চলচ্চিত্রের বেশিরভাগই আর টিকে নেই। পুনের ফিল্ম ইনস্টিটিউট এ সিনেমাগুলোর মাত্র ২৯টি সংরক্ষণ করতে পেরেছে। দোকান, বাড়ি, বেসমেন্ট, গুদাম এমনকি থাইল্যান্ডের একটি সিনেমা হলেও কিছু প্রিন্ট এবং নেগেটিভ পাওয়া গেছে ফেলনা জিনিস হিসেবে। চলচ্চিত্রনির্মাতা মৃণাল সেন ১৯৮০ সালে পুরানো একটি বাড়িতে শুটিং করার সময় বহু পুরনো একটি সবাক সিনেমার (বাংলা) প্রিন্ট খুঁজে পেয়েছিলেন।

পুনে ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়ার (NFAI) তথ্য অনুযায়ী দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজির পর ১৯৬৭ সালে ছবিটির একটি মাত্র কপি (এবং সম্ভবত সর্বশেষ কপি) পাওয়া গেলেও ২০০৩ সালের এক অগ্নিকান্ডে সেটি পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়, যদিও ধারনা করা হয় যে আলম আরা ছবির কোন প্রিন্ট কখনোই NFAI-এর সংগ্রহে ছিল না। ছবিটির এ্যান্টিক ভ্যালুর কারণে দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয়। NFAI-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পি কে নায়ারের মতে, আলম আরা ছবির প্রিন্ট পুড়ে ধংস হয়ে যাওয়ার তথ্যটি সম্ভবত সঠিক নয়।

পোস্টার এবং একটি প্রচারমূলক পুস্তিকা

বিশিষ্ট চলচ্চিত্রনির্মাতা ও আর্কিভিস্ট শিবেন্দ্র সিং দুঙ্গারপুর নেতৃত্বাধীন একটি দল কাজ করতে গিয়ে বেশ পুরনো একটি যন্ত্রে হোঁচট খেয়েছিল। এই যন্ত্র দিয়েই প্রিন্ট হয়েছিল আলম আরা। শিকাগোতে তৈরি বেল অ্যান্ড হাওয়েল মেশিনটি অযত্ন-অবহেলায় পড়েছিল এক শাড়ির দোকানে। আলম আরা’র প্রযোজক ও পরিচালক ইরানি ছিলেন এই প্রিন্টিং মেশিনটির মালিক। পরে তার কাছ থেকে এটি কিনেছিলেন নলিন সম্পাত, যিনি ছিলেন মুম্বাইয়ের একটি ফিল্ম স্টুডিও এবং একটি ফিল্ম প্রসেসিং ল্যাবের মালিক। দুঙ্গারপুর বলছিলেন, “এই যন্ত্রটি ছাড়া ‘আলম আরা’ সিনেমার সত্যিকার অর্থে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এই প্রিন্টিং মেশিনটিই সিনেমাটির একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন।” বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে দুঙ্গারপুর অলাভজনকভাবে ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন। তিনি মুম্বাইভিত্তিক ফিল্ম আর্কাইভের মাধ্যমে বহুদিন ধরে ‘আলম আরা’ সিনেমার কপি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। এমনকি এই ছবির কপি পেতে সোশ্যাল মিডিয়ায়তেও তিনি সহায়তা চেয়েছিলেন। সেখান থেকে পাওয়া একটি সূত্র ধরেই তিনি আলজেরিয়ার ফিল্ম সংরক্ষণাগারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পারেন যে তাদের কাছে বেশ কয়েকটি পুরানো ভারতীয় চলচ্চিত্র রয়েছে। আলজেরিয়ার ফিল্ম আর্কাইভ দুঙ্গারপুরকে সেখানে গিয়ে দেখতে বলেন, কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। আরেকটি সূত্র ধরে দুঙ্গারপুর জানতে পারেন ইরানের ফিল্ম আর্কাইভে সিনেমাটির থাকার সম্ভাবনা আছে। আরদেশির ইরানি যখন মুম্বাইতে ‘আলম আরা’ সিনেমার শুটিং করছিলেন, তখন তার স্টুডিও ‘লর গার্ল’ নামে আরেকটি সিনেমা তৈরি করছিল; যেটি ছিলো ফার্সি ভাষায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। দুঙ্গারপুর বলেন, ‘আলম আরা’ ও ‘লর গার্ল’ দুই সিনেমাতেই একই পোশাক ও একই অভিনেতাদের ব্যবহার করেছিলেন আরদেশির ইরানি। ‘আলম আরা’ উধাও হলেও ‘লর গার্ল’ ইরানের আর্কাইভে এখনও টিকে আছে।

তবে আলম আরার কিছু স্থিরচিত্র, পোস্টার এবং একটি প্রচারমূলক পুস্তিকা মুম্বাইতে ফিল্ম প্রপস বিক্রির একটি দোকানের মালিক শহীদ হোসেন মনসুরির কাছে বিগত ৬০ বছর ধরে রয়েছে৷ আজিজের যুগে এই দুষ্প্রাপ্য জিনিসের মূল্য হয়তো বা কেউ দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে যতই তর্ক থাকুক না কেন, এটাও ঠিক যে এই ছবিটি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের এক অমূল্য সম্পদ কে আমরা চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।

আলম আরা, প্রযোজনা : ইমপেরিয়াল মুভিটোন, চিত্রনাট্য : জোসেফ ডেভিড ও মুন্সী জহির, সংগীত : ফিরোজ শাহ এম, মিস্ত্রি ও বি, ইরানী, সিনেমাটোগ্রাফি : উইলফোর্ড ডেমিং ও আদি এম, ইরানী, সম্পাদনা : এজরা মীর, ছবির দৈর্ঘ্য : ১২৪ মিনিট, ভাষা : উর্দু ও হিন্দি, পরিচালক : আরদেশির ইরানী, কাস্ট : মাস্টার বিটল, জুবেদা, জিল্লুবাই, সুশীলা, পৃথ্বীরাজ কাপুর, এলিজার, ওয়াজির মহম্মদ খান, জগদীশ শেঠি, এলভিপ্রসাদ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন