এইসব বামেদের ধিক!
সমসাময়িক কালের প্রেক্ষাপটে যে অপূর্ব ইতিহাস রচিত হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া থেকে বামেরা নিজেদের সম্পূর্ণভাবে বিযুক্ত রেখেছে। গণআন্দোলনের এমন অভিনব এবং সৃষ্টিশীল প্রকাশভঙ্গি দেখেও গত তিন বছরে তাদের হতশ্রী অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। যে লক্ষ লক্ষ জনতা ক্রোধে গর্জে উঠেছেন, অন্যদের সংগঠিত করেছেন কিংবা পথে প্রান্তরে নেমেছেন- তাদের অনেকেই এই প্রথমবার জীবনে কোন আন্দোলনের শরিক হয়েছেন। নতুন আঙ্গিকে ভাবনার একটি রোমাঞ্চকর ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতার আন্দোলন যতই বিক্ষিপ্ত এবং বিচিত্র মুখী হোক না কেন, বিপ্লবের তত্ত্বে এবং অনুশীলনে যারা আস্থাশীল তাদের কাছে এক শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকছে। কোটি কোটি মানুষ জেগে উঠেছেন এবং আমাদের বিশ্বাস তারা আর কখনো পুরনো পন্থার ভাবনায় ফিরে যাবেন না। এসবই কিন্তু ঘটছে বামপন্থার কাল্পনিক গণ্ডির বাইরে গিয়ে।
যখন বাইরের পৃথিবীতে নতুন এক বিপ্লবী সম্ভাবনা জন্ম নিচ্ছে তখন বামেরা তাদের চিরাচরিত আদব কায়দায় নিশ্চল রয়েছেন। তাদের পরিচিত আদব কায়দা এখন শত ছিন্ন, ক্লান্ত এবং বিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত।
ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস যে চক্রান্ত তত্ত্বের সমর্থক বলে নিন্দিত দা লাইট পত্রিকা এখন অবিসংবাদিতভাবে মুক্তমনা, উজ্জীবিত, সাহসী, প্রেরণার উৎস এবং সর্বোপরি সঠিক অর্থেই বৈপ্লবিক। বামপন্থী পত্র-পত্রিকার চেয়ে তাদের পাঠক সংখ্যা এখন অনেক অনেক বেশি। শাসক শ্রেণী সম্পর্কে তাদের বিশ্লেষণ অনেক বেশি নিখুঁত এবং ধারালো।
মর্নিং স্টার এবং সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার এর মত বামপন্থী পত্রপত্রিকাগুলি সাধারণত যেসব বিষয় নিয়ে কখনোই লেখেনা সেগুলো হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ডিজিটাল মুদ্র্ যন্ত্র-কুশলীদের একনায়কত্ব, মেডিকেল ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। তারা কখনো অর্থনৈতিকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখায়নি কোভিড প্রকল্পের অর্থনৈতিক বনিয়াদ কি ছিল।
কখনোই বলা যাবে না মূল ধারার দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট অথবা বিবিসির থেকে এই বামেরা অনেক বেশি প্রগতিশীল।
একটি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক , বিশ্লেষক এবং ভাষ্যকাররা উঠে আসছেন যারা বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত মূল্যবান এবং তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তুলে ধরছেন। দেখার বিষয় হল এই নতুন প্রজন্মের বুদ্ধিজীবীদের কেউই বামপন্থার চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গির কাছে দায়বদ্ধ নয়। শ্রেণী সংগ্রামে তারা কতটা আছেন বা নেই এইরকম সেকেলে ভাবনা থেকে তারা মুক্ত।
বর্তমানে শিল্পক্ষেত্রে যে অসন্তোষ এবং সক্রিয় প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে, প্রধানতঃ তার মূলে রয়েছে সেই উন্মত্ত রাষ্ট্রীয় নীতি যাকে বামেরা ২০২০ সাল থেকেই সমর্থন করে আসছে। তিন বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আধুনিক কালের ইতিহাসে শ্রমিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ আক্রমণের উত্তরের বামেরা তাদের লাল টুপির বদলে আনুগত্যের নীল মুখোশ মুখে এঁটে নিয়েছে। বিচার বিবেচনার এই ধ্বংসাত্মক ভুলের পর প্রশ্নটা থাকছে না বামেদের পুনর্জাগরণ হবে কিনা। বরং প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে এইভাবে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা উচিত হবে কিনা।
মূল ইংরাজী নিবন্ধের লিঙ্কঃ
https://leftlockdownsceptics.com/the-left-and-covid-part-i-reflections-on-a-catastrophe/