কেন্দ্রীয় সরকার ফের বড় ধাক্কা খেল সুপ্রিম কোর্টে। কেন্দ্রীয় সরকার ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনাকাণ্ডে ইউনিয়ন কার্বাইড থেকে আরও ক্ষতিপুরণ আদায়ের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের সেই আবেদন খারিজ করে দিল। দেশের উচ্চ আদালত স্পষ্ট জানালো, এই বিষয়ে কেন্দ্রের আগে আসা উচিৎ ছিল। ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডির ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কিউরেটিভ ইউনিয়ন কার্বাইড থেকে পিটিশনের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানায়। পাঁচ বিচারপতির নেতৃত্বে তৈরি বিশেষ বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। যেখানে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কিশান কোল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি অভয় এ ওক, বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি জে কে মহেশ্বরী।
১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস লিক করেছিল। ভয়ঙ্কর এই দুর্ঘটনায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বিশ্বের শিল্প বিপর্যয়গুলির মধ্যে এটি একটি ভয়ংকর ঘটনা। কেন্দ্রীয় সরকার চেয়েছিল ভোপাল গ্যাস ট্রাজেডির মামলাটি পুনরায় চালু হোক। ইউনিয়ন কার্বাইডের উত্তরসূরী সংস্থাগুলি যাতে গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আরও ক্ষতিপুরণ দেয় তারই আবাদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের যুক্তি ছিল ১৯৮৯ সালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসতি স্থাপনের সময় মানুষের জীবন ও পরিবেশের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই নতুন করে ক্ষতিপুরণের আবেদন জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড কার্বাইড কর্পোরেশন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের ৪৭০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপুরণ দেওয়ার পরও আরও ক্ষতিপুরণ দেওয়ার দাবি ওঠে। সুপ্রিম কোর্টে একটি কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের হয় আর এর মধ্যেই গ্যাস ট্র্যাজেডির ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ডাও কেমিক্যালসের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চায় কেন্দ্র। আর তার জন্যই ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে একটি কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করা হয়, যা সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার খারিজ করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। কিন্তু যে সংস্থায় গ্যাস লিক হয়েছিল সেই ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশন আদালতে জানায় যে, ১৯৮৯ সালে কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতায় এক কানাকড়িও বেশি দিতে ইচ্ছুক হয় না। এমন কি, আদালতের সংবিধানিক বেঞ্চ সরকারকে জিজ্ঞাসা করে কেন মাত্র ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ? এত বছর পরেও কোম্পানির দেওয়া ৪৭০ মিলিয়ন ডলার এখনও ভোপাল গ্যাস লিক ট্র্যাজেডির যাঁরা শিকার, তাঁদের কাছে পৌঁছায়নি!
কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, এত বড় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মাত্র ৫০ কোটির তহবিল নগণ্য মাত্র। যার অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের কোনওরকম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। আদালতের প্রশ্ন, এর জন্য দায়ী কি কেন্দ্রীয় সরকার? কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য, ওয়েলফেয়ার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন অনুযায়ী কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যে অসন্তুষ্ট শীর্ষ আদালত। আদালতের পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে ক্ষতিপূরণের অর্থ বণ্টন করা হয়নি কেন?
উল্লেখ্য, চার দশক আগের ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ৩ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছিল। গ্যাস বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। ১৯৮৯ সালে নিষ্পত্তির সময় ইউনিয়ন কার্বাইড এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৭১৫ কোটি টাকা দেবে বলে ঠিক হয়। যদিও কেন্দ্রের তরফে পরবর্তীকালে ৭,৮৪৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা হয় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। তবে ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশনের হয়ে সিনিয়র আইনজীবী হরিশ সালভে শুনানিতে দাবি করেন, মীমাংসার সময় ভারত সরকার কখনই বলেনি যে নির্ধারিত অর্থ ৭১৫ কোটি টাকা যঠেষ্ট নয়। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বর্ধিত ক্ষতিপূরণের দাবিতে শীর্ষ আদালতে মামলা করে কেন্দ্র। মঙ্গলবার সেই আরজি খারিজ করতে গিয়ে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, কয়েক দশক পর ক্ষতিপূরণের অর্থ বৃদ্ধি নিয়ে গ্রহণযোগ্য যুক্তি দিতে পারেনি, ফলে এই দাবি গ্রহণযোগ্য হয় না।
এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট এদিন ১৯৮৪ সালের ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা ঘিরে কেন্দ্রের উদাসীনতা নিয়ে কড়া বার্তা দেয়। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, রিজার্ভ ব্যাংকে যে ৫০ কোটি টাকা রয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্তদের বীমা সংক্রান্ত দাবির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হোক। ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ উষ্মা প্রকাশ করে বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বীমার ক্ষেত্রে যে নীতি কেন্দ্রের অবলম্বন করা উচিত ছিল, তা আদৌ করতে পারেনি কেন্দ্র।