ঘানাপ্রেম ইউসুফ ইয়াকুবু থেকে। ইউসুফ ইয়াকুবু কোনোদিন মোহনবাগানে খেলেননি, মহিন্দ্রাতে ব্যারেটোর সাথে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন।ইস্টবেঙ্গলে যখন খেলতেন তখন তাঁর উপস্থিতিতে মাঝমাঠের দখল নেওয়ার কথা আমরা, মানে বিরোধীরা, ভুলেও ভাবতামনা। বুড়ো বয়সেও যখন ইউনাইটেড স্পোর্টসে খেলতেন আমরা সিঁটিয়ে থাকতাম, একবার তো একার পায়ে ভর করে মোহনবাগানকে ৩-২ এ হারিয়েও দিলো। এহেন ইউসুফ ইয়াকুবুর দেশ শুনলাম ঘানাতে। ঘানা নামটা আমাদের মধ্যে জনপ্রিয় হলো সেই থেকে। ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপটা যখন চলছিলো তখন আমার এবং আমার সমবয়সী সক্কলেরই স্কুলজীবন।আমার ফারহান বলে একজন বন্ধু ছিলো,কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা যখন কেউ আর্জেন্তিনা,কেউ ব্রাজিল বলছি, সেই বন্ধু হাতমুঠো করে বললো, “ঘানা ঘানা”। ১০’এর ফিফা বিশ্বকাপ মাতিয়ে রেখেছিলো ঘানার আসামোয়া। আমেরিকার বিরুদ্ধে দুরন্ত শ্যুটিংয়ে গোল করে সাইডব্যারিকেড টপকে দৌড়ে যাচ্ছেন আসামোয়া। সার্বিয়ার জালে বল জড়িয়ে আসামোয়া ডেকে নিচ্ছেন ঘানার বাকীজনদের, সাইডলাইন বরাবর ছন্দবদ্ধ নৃত্যে নেচে যাচ্ছেন তাঁরা,তাঁদের সাথে নাচ্ছেন লাল-হলুদ-সবুজ রঙা ঘানাইয়ান ক্রাউড। এহেন ঘানা হেরে গেলো কোয়ার্টারে। তাদের স্বপ্নীল উত্থানের অপমৃত্যু ঘটালেন লুই সুয়ারেজ, হাত দিয়ে নিশ্চিত গোল সেভ করে। সুয়ারেজের লাল কার্ড, ঘানার ভাগ্যে পেনাল্টি। আসামোয়া পেনাল্টি মিস করে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। ফোরলানের দুরন্ত ফ্রিকিক, টাইব্রেকারে দুরন্ত ওঠানামাকে ছাড়িয়ে সেইম্যাচের সবচেয়ে নজরকারা দৃশ্য বোধহয় আসামোয়া গায়ানের মাটিতে লুটিয়ে পড়া কান্নাটা।
আজ বিশ্বকাপে আবারও নামছে ঘানা, আমাদের স্কুলবেলার ডার্ক হর্স। ২০১০ বিশ্বকাপের দলটার একজনই মাত্র ২০২২ সালের বিশ্বকাপ দলের নিয়মিত মুখ,তিনি আন্দ্রে আয়িউ, মূলত নাম্বার টেন, কিন্তু সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড-ঘানা ম্যাচটাতে খানিক স্লো মনে হলো। ঘানার ইনাকি উইলিয়ামস নিয়েও মাতামাতি হচ্ছে,মাতামাতি হচ্ছে ঘানার হয়ে ১১০ নম্বর ম্যাচ খেলে ফেলা আন্দ্রে আয়িউকে নিয়েও। কিন্তু আমার নজর থাকছে অন্য দুজনের দিকে — সুলেমানা এবং সেমেনিও। সুইজারল্যান্ড ম্যাচে আন্দ্রে আয়িউয়ের ভাই জর্ডন আয়িউ ঘানার লেফট উইং বরাবর তেমন কিছু করতে পারেননি, স্ট্রাইকার পজিশনে থাকা ইনাকিও সাদামাটা ছিলো। ঘানার কোচ সুলেমানা এবং সেমেনিওকে পরিবর্ত হিসাবে নামিয়েছিলেন। আর সুলেমানার দুরন্ত উইংপ্লে থেকে গোল করেছিলেন সেমেনিও।সেমেনিওর খেলা দেখলে একজন আদর্শ স্ট্রাইকারের কথাই মনে হয়। ঘানার আরেকজনকে দেখার আছে, ওদের নাম্বার থারটিন-আফ্রিয়ি। আজ মন বলছে পেপে, দানিলো, রুবেন ডায়াসেরা খুব একটা শান্তিতে থাকবেননা। রোনালদো নিজের শেষ বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখুক এটা আমি চাই, কিন্তু আমার এই চাওয়া-পাওয়া নিয়ে দড়িটানাটানি খেলা খেলছেন আফ্রিয়ি, সুলেমানা, সেমেনিও। ছেলেবেলার অপূর্ণ ঘানাপ্রেম বনাম ক্রিশ্চিয়ানোর পোর্তুগালের দুরন্ত মিডফিল্ড — নিজের সাথেই নিজেকে লড়তে হবে আজ।