পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গণতন্ত্রে জেলগুলি মূলত তৈরি হয়েছিল সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের রাখার জন্য। এখন ছবিটা পুরোপুরি বদলে গেছে, ভারতের জেলগুলিতে বিচারাধীন বন্দীদের সংখ্যা সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের থেকে বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর দেওয়া তথ্য থেকে এমন ছবিটাই ফুটে উঠেছে। বিরোধী দলগুলির মতে এটা সরকারি ব্যর্থতার একটা বড় উদাহরণ। বিচারের বিলম্ব হওয়া মানে বিচারাধীন বন্দীদের জেলে থাকার মেয়াদ বাড়া। বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার ফলে ঠিক এই ঘটনাটাই ঘটছে।
বিজেপির শাসনে দেশ কেমন চলছে তা বলছে ভারতের জেলগুলির অবস্থা। বর্ষশেষের হিসেবে দেখা যাচ্ছে এখন জেলে রয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি বন্দী। এদের অর্ধেকেরই বেশি বিচারাধীন বন্দী। এদের বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলির নিষ্পত্তি হতে দেরী হওয়া এবং দেশে অপরাধ ও হিংসাত্মক ঘটনা বাড়া এর একটা বড় কারণ। বিরোধী দলগুলির মতে শাসকদলের অসহিষ্ণুতাও জেলে বন্দীদের সংখ্যা বাড়ার জন্য দায়ী। যেকোন হাঙ্গামাতেই সাম্প্রদায়িক রঙ লাগিয়ে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়, এটা একটা বিপজ্জনক প্রবণতা।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী বন্দীদের মধ্যে বিচারাধীন বন্দীর অনুপাত ৭৭.১ শতাংশ। অন্যদিকে নানা অপরাধের কারণে সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের অনুপাত ২২.২ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড প্রিজন ব্রিফ এর হিসেব অনুযায়ী সারা বিশ্বে বিচারাধীন বন্দীর সংখ্যা হিসেবে ভারত রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। আমাদের আগে রয়েছে মাত্র ৫টি দেশ। লিয়েচটেনস্টেইন, সান মারিনো, হাইতি, গিবন এবং বাংলাদেশ।
বিচারের গতি দ্রুত না হলে শুধু সুবিচারেরই বিলম্ব হয় না, আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অনাস্থাও বাড়ে। আমাদের দেশে বিচারে বিলম্ব হওয়াটা অবশ্য খুব একটা সাম্প্রতিক ঘটনা নয়। ১৯৭৫ সালে ল কমিশনের একটা রিপোর্ট জানাচ্ছে, তখনই দেশে বিচারাধীন বন্দীর অনুপাত ছিল ৫৭.৬ শতাংশ। বিচারের বিলম্বের ফলে অপরাধ না করেও জেলে কাটাতে হচ্ছে বহু মানুষকে।
এটা ঘটনা কোভিডের ফলে বিচার সংক্রান্ত কাজ খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২০২০র ২৫ মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন চালু হওয়ার পর আদালতের কাজ ঠিকভাবে করা যায়নি। এর ফলে একদিকে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে অন্যদিকে কমেছে সাজাপ্রাপ্তদের সংখ্যা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একাজটা ভালোভাবে করা সত্যিই কঠিন। অথচ সুপ্রিম কোর্ট প্রথম থেকেই বলে আসছিল, কোভিড সংক্রমণ রুখতে হলে জেলে আটকদের সংখ্যা কমাতে হবে।