ভোজ্য তেলের ব্যবহারে আমাদের দেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয়, বাইরে থেকে সবচেয়ে বেশি ভোজ্য তেল কিনি আমরাই। এই অবস্থাটা বদলে ফেলার জন্য উৎপাদন বাড়ানোর বহু চেষ্টা করেছে দেশ, কিন্তু কিছুই হয়নি। এখনও প্রায় ৬০ শতাংশ ভোজ্য তেল আমরা কিনি, মূলত মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়া থেকে। সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় পাম তেল। এরপর আছে সয়াবিন এবং সানফ্লাওয়ার তেল। সব মিলিয়ে এ বাজার বাড়ছে। তৈলবীজ উৎপাদন বাড়ানো এবং তেল তৈরির প্রযুক্তির উন্নতির জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছে। ৯০ এর দশকে কিছুটা অগ্রগতিও চোখে পড়েছিল কিন্তু আর্থিক উদারীকরণের ধাক্কায় তা থমকে গেছে। দশম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তা পুরোপুরি বাতিল হয়ে যায়।
২০২১ এ আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের একটা অংশ হিসেবে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ‘ন্যাশনাল এডিবল অয়েল মিশন — অয়েল পাম’ ঘোষিত হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অয়েল পাম রিসার্চ এর রিঅ্যাসেসমেন্ট কমিটি অয়েল পাম চাষের জন্য প্রায় ২.৮ মিলিয়ন হেক্টর জমি লাগবে বলে জানায়। সংশ্লিষ্ট চাষিদেরও জানানো হয় সরকার তাদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সব উৎপাদন কিনে নেবে। সবই ঠিক আছে, কিন্তু কৃষিবিজ্ঞানীদের একটা অংশ প্রশ্ন তুলেছেন এই চাষে অতিরিক্ত জল লাগে, জমিও লাগে বিস্তর। তাদের মতে, আমাদের চাষিদের অধিকাংশ ক্ষুদ্র কৃষক এবং তাদের জমির পরিমাণও খুব কম, তারা এই চাষে আগ্রহী হবে কেন? যেখানে গোটা কৃষি ব্যবস্থাটাই বৃষ্টি নির্ভর সেখানে এত জল পাওয়া যাবে কী করে?
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মত পাম তেল উৎপাদক দেশগুলিতে জীববৈচিত্র কমছে। তাই এখন অয়েল পাম চাষের জন্য উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি এবং আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কথা ভাবা হচ্ছে। পাম অয়েলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল রাইস ব্র্যান, বাদাম, সূর্যমুখী, সর্ষে ইত্যাদি ভোজ্য তেলের তুলনায় এর পুষ্টিগুণও কম। তাছাড়া ফলন ইত্যাদির সমস্যার জন্য ভাল পাম তেল উৎপাদন পেতে প্রায় ৭ বছর সময় লেগে যায়। সব থেকে বড় কথা আমাদের দেশে বীজ থেকে উৎপাদিত তেলের বাজার ভাল নয়। উৎপাদকদের তা প্রায়শই নূন্যতম সহায়ক মূল্যের কম দামে বিক্রি করতে হয়।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কারণেই রাইস ব্র্যান অয়েলের বা ধানের তুষ থেকে তৈরি তেলের ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিৎ। কারণ তুষে থাকে প্রায় ১৮-২০ শতাংশ তেল, যার থেকে সহজেই ভোজ্য তেল তৈরি করা যায়। এটা সহজপাচ্য এবং ফ্যাট কম। উৎপাদন পদ্ধতিও অনেক সহজ। সবচেয়ে বড় কথা হল ধান যেহেতু আমাদের দেশের প্রধান শস্য তাই তা পাওয়াও সহজ। কাঁচামালের কোন সমস্যাও থাকবে না। যেকোন জায়গায় এই তেল কল খুলে ফেলে যায়। বাজারে চাহিদা থাকায় রাইস ব্র্যান অয়েলের রপ্তানি বাণিজ্যের বাজারও ভাল, বিনিয়োগও কম। এই উদ্যোগে অনেক বেশি কৃষককে যুক্ত করা যায়। তবে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে সহায়তা দিতে হবে। সঠিক রাস্তায় এগোলে আমাদের ভোজ্য তেলের বাজারে রাইস ব্র্যান অয়েল একটা বড় জায়গা নিতে পারে।