অনুমান করা হয়, বেদের সময় আদি নাটকের সৃষ্টি। আর তাই হয়ত নাটককে বলা হয় পঞ্চম বেদ। ঋগ্বেদের সূত্র মতে, আদিতে যম-যমী (সুক্ত ১০.১০), পুরুরবা-উর্বশী (সুক্ত ১০.৯৫), সরমা-পনি (সুক্ত ১০.১০৮)-দের কথোপকথন থেকে প্রথম নাটকের ধারণা জন্ম নেয়। ম্যাক্সমুলার মনে করেন, সময়বিশেষে কোনও সংবাদ সুক্ত অভিনয় করে দেখানো হত। যথা একপক্ষ ইন্দ্র, অপরপক্ষ অন্য মরুৎগণের কথোপকথন অভিনয় করে দেখাত। আবার লেভির মতানুসারে সামবেদ থেকে যেসব সঙ্গীতের উৎপত্তি এবং কুমারীরা তাদের দয়িতকে আকর্ষণ করতে নৃত্যের মাধ্যমে অনুভূতির প্রকাশ করত, যা পুরোহিতগণ স্বর্গীয় মুনিঋষির অনুকরণে মর্ত্যে প্রকাশ করতেন অভিনয়ের মাধ্যমে। পাশ্চাত্য পণ্ডিত পিশেল আবার মনে করেন, পুতুলনাচের থেকে নাকি নাটকের ধারণা প্রথম জন্মেছিল। অনেকের মতে, বসন্ত উৎসব ছিল নাটকের সৃষ্টির মূলে। আবার অনেক পণ্ডিতের মতে, পরলোকগত আত্মার উদ্দেশ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পরিবর্তিত এবং পরিমার্জিত রূপ নাটকের সৃষ্টির দাবিদার। তবে পণ্ডিত নির্বিশেষে মত পোষণ করেন যে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকেই নাটকের শুরু। যথা রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনি অথবা শ্রীকৃষ্ণের কীর্তিকলাপও নাটকের মাধ্যমে প্রচার করা হত। আবার অনেক পণ্ডিত মনে করেন, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়কাল, অর্থাৎ ৩২৭-৩২৬ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে ভারতবর্ষে প্রথম গ্রীক নাটক অভিনীত হয় এবং গ্রীক থিয়েটারের অনুকরণে প্রথম রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা হয় (যথা ছোট নাগপুর রামগড় পাহাড়ের গুহায়) এবং বোধহয় তখন থেকেই ভারতবাসী নিয়মিত নাটক অভ্যাস করে। বিশ্বাসযোগ্য নয় যদিও তবু ভরতের নাট্যশাস্ত্র অনুসারে ব্রহ্মা স্বয়ং দৃশ্যকাব্যের সৃষ্টিকর্তা। তিনি নিজে ‘অমৃতমন্থন’ ও ‘ত্রিপুরদাহ’ নামে দুখানি নাটক রচনা করেছিলেন। তবে ভারতে হয়তো গ্ৰীক আসার আগেও নাটকের প্রচলন ছিল ধারণা করা যায় দুটি সঙ্গত যুক্তিতে: যজুর্বেদে ‘শৈলুষ’ শব্দের ব্যবহার আছে (তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ ৩.৪.২ এবং বাজসনেয়ী সংহিতা ৩০.৪)। এই শব্দে নট বা অভিনেতা কিংবা সঙ্গীতজ্ঞ বা নর্তককে বোঝাত। পাণিনির অষ্টধ্যায়ীতেও (৪.৩.১১০) নটসূত্রের উল্লেখ আছে। সুতরাং নাটকের ইতিহাস গ্ৰীক আবির্ভাবের আগেও ছিল এই অনুমান অসঙ্গত হবে না। পতঞ্জলির মহাভাষ্যে (খ্রিস্ট-পূর্ব ২য় শতক) নাটকের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভুলে গেলে চলবে না ভারতীয় মাইথোলজি বলে ভরতমুনি ছিলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় নাট্য ও সঙ্গীত বিশারদ। তিনি প্রাচীন ভারতীয় নাটক, বিশেষ করে সংস্কৃত মঞ্চনাটক ও অভিনয় বিদ্যা বিষয়ক নাট্যশাস্ত্র রচনা করেছেন। ভরতকে ভারতীয় নাট্যধারার জনক বলা হয়ে থাকে।
বাংলা নাটকের ইতিহাস যদি বলতে হয় তবে আমার মতে তার জন্য বাংলায় চৈতন্যদেবের আবির্ভাব এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই সময় থেকেই পৌরাণিক দেবস্তুতিসমৃদ্ধ নাট্যরীতি থেকে সরে আসেন নটরা। এর আগে অর্থাৎ আদিযুগ থেকে এই চৈতন্য-পূর্ববর্তী আমল পর্যন্ত নাটকে সংলাপ প্রায় থাকতই না। গীতসর্বস্ব নাটকে কখনও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজে নিজে তাৎক্ষণিক সংলাপ বানিয়ে নিক্ষেপ করতেন। কিন্তু চৈতন্যদেবের সময় থেকে নাট্যরীতিতে এক পরিবর্তন ঘটে। এই সময় থেকে ভক্তিরসাত্মক নাটগীতির প্রচলন হয় এবং এসব নাট্যকলাকে যাত্রা নামে অভিহিত করা হয়। সে হিসাবে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগকে বাংলা যাত্রার আদিযুগ বলা যেতে পারে, যা অষ্টাদশ শতক অব্দি বিস্তৃত ছিল। এই সময়ে আদিরসাত্মক নাটপালা চৈতন্যদেব শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক ভক্তিরসাশ্রিত যাত্রাপালায় রূপান্তরিত করেন। এই প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এবং কালীয়দমন পালা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই প্রসঙ্গে ড. সুকুমার সেন বলেছেন যে, প্রথমে যাত্রার বিষয় ছিল কৃষ্ণলীলা, তার মধ্যে বিশেষ করে কালীয়দমন কাহিনি। এই জন্য যাত্রার নামান্তর ছিল কৃষ্ণ যাত্রা বা কালীয়দমন। কৃষ্ণলীলার অন্যান্য কাহিনি যাত্রায় গৃহীত হলেও কালীয়দমন সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল বলে একসময় যাত্রার নামকরণ হয়ে গেছিল কালীয়দমন। এই কালীয়দমন নাম নিয়ে যাত্রাপালা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে অব্দি চলে এসেছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোনও পালার লিখিত কোনও সংরক্ষণ না থাকায় আমাদের কল্পনা ছাড়া কিছু করার নেই। অনুমান করা যায়, ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর যাত্রাপালায় কোনও বাঁধা কাহিনি ছিল না। দান, মান, মাথুর, অক্রুর সংবাদ, উদ্ধব সংবাদ, যুগলমিলন ইত্যাদি যে কোনও প্রসঙ্গ অবলম্বন করে সঙ্গীতের পর সঙ্গীত সংযোজন করে কাহিনি পরিণতির দিকে এগোত, তার ফলে দর্শকমনে কোনও স্থায়ী দাগ কাটত না। গানের ফাঁকে ফাঁকে অভিনেতা কিছু কিছু সংলাপ তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করে প্রক্ষেপ করতেন। স্ত্রী-চরিত্রে পুরুষেরা অভিনয় করতেন। সাজপোশাকেরও বিশেষ পারিপাট্য থাকত না। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই বাংলা নাটকের জগতের বর্তমান যুগের গোড়াপত্তন। এই সময় থেকেই এদেশাগত ব্রিটিশ রাজপুরুষেরা অবসর বিনোদন করার লক্ষ্যে আধুনিক রীতিতে মঞ্চাভিনয়ের সূচনা করেন। নবীনচন্দ্রের হাত ধরে বাংলা থিয়েটারের পথচলা শুরু ১৮৩৫ সনে, তার পূর্ণতা পাওয়া শুরু হল আরও ২২ বছর পর। বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসের দিকে তাকালে, এই যুগের প্রতিনিধি হিসেবে নির্দেশ করা যায়— রামনারায়ণ তর্কালঙ্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও দীনবন্ধু মিত্রকে। এই যুগের প্রবর্তক হিসেবে গণ্য করা যায়— মনোমোহন বসুকে, যাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই যুগকে বিশেষরূপে সমৃদ্ধ করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমৃতলাল বসু, গিরিশ ঘোষ প্রমুখ। একদিন বাংলা নাটকের জগৎ বিশ শতকে প্রবেশ করে। বিশ শতকের প্রথম ভাগকে ঐতিহাসিক নাটকের স্বর্ণযুগ বলা যায়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এবং সমসাময়িক ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের হাত ধরে বহু কালজয়ী নাটক রচিত এবং অভিনীত হতে থাকে। ‘তারাবাই’, ‘প্রতাপ সিংহ’, ‘নূরজাহান’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘শাজাহান’, ‘মেবার পতন’, ‘দুর্গাদাস’, ‘সিরাজদ্দৌলা’ প্রভৃতি ঐতিহাসিক নাটক এবং ‘কল্কি অবতার’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’, ‘পুনর্জন্ম’, ‘আনন্দ বিদায়’ আদি প্রহসন দ্বিজেন্দ্রলালের এবং ‘সপ্তম প্রতিমা’, ‘রঞ্জাবতী’, ‘রঘুবীর’, ‘দৌলতে দুনিয়া’ ইত্যাদি ক্ষীরোদপ্রসাদের উল্লেখযোগ্য নাটক। এই সন্ধিক্ষণে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। এক, রবীন্দ্রনাথ তাঁর নতুন ধারার নাটক রচনায় পূর্ণ মনোনিবেশ করেন আর দুই, গিরিশচন্দ্র ঘোষের মৃত্যুর পর শিশির ভাদুড়ীর যুগের শুরু হয়। সাধারণ রঙ্গমঞ্চে সূর্য চৌধুরী, নির্মলা মিত্র, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, যোগেশ চৌধুরী প্রমুখ শক্তিশালী অভিনেতাদের প্রবেশ ঘটে। এই সময় রবি ঠাকুর তাঁর রচিত নাটক, প্রহসন নাটক ইত্যাদিতে মেতে ওঠেন। ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব স্টেজে বিভিন্ন নাটক অভিনীত হতে থাকে। ১৮৮১ সনে ‘বাল্মিকী প্রতিভা’, ১৮৮২ সনে ‘কালমৃগয়া’ এবং তাঁর আরও দুটো বিখ্যাত সৃষ্টি ‘রাজা ও রাণী’ (১৮৮৯), ‘বিসর্জন’ (১৮৯০)। গীতিনাট্য পর্বে তিনি আরও দুটি নাটক রচনা করেন। যথাক্রমে ‘চিত্রাঙ্গদা’ (১৮৯২) এবং ‘মালিনী’ (১৮৯৬)। এসব গীতিনাট্যে তিনি নিজেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর রবি ঠাকুর প্রহসন নাটকে মন দেন। ‘গোড়ায় গলদ’ (১৮৯২), ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ (১৮৯৭), ‘হাস্যকৌতুক ও ব্যঙ্গকৌতুক (১৯০৭) এবং ১৯২৬ সনে ‘চিরকুমার সভা’ ও ‘রক্তকরবী’। এছাড়া রূপক আঙ্গিকে তিনি ‘শারদোৎসব’, ‘রাজা’, ‘ডাকঘর’, ‘অচলায়তন’, ‘ফাল্গুনী’, ‘মুক্তধারা’, ‘তাসের দেশ’, ‘কালের যাত্রা’ ইত্যাদি নাটক ১৯০৮ থেকে ১৯৩৩ অব্দি রচনা করে শান্তিনিকেতনে ছাত্রদের রিহার্সাল দিয়ে মঞ্চস্থ করেন। এরপর কালের বিবর্তনে নাট্যজগতেও পালাবদল ঘটে।
রবীন্দ্রনাথের নাটক নিয়ে আলোচনা কম হয়নি এবং সেই ধারা অব্যাহতই থাকবে এটাই কাম্য। রবীন্দ্রনাথের নাটকে একটা জিনিস প্রায় কমন সেটা হচ্ছে রাজা। কোথাও সেই রাজাকে রবীন্দ্রনাথ এনেছেন সরাসরি মঞ্চে, তাঁকে ঘিরেই সমগ্র নাটক আবর্তিত হয়েছে; আবার কোথাও বা সেই রাজা থেকেছেন মঞ্চের বাইরে অর্থাৎ নেপথ্যে, পাত্র পাত্রীর মুখে তাঁর নামটুকু উচ্চারিত হয়েছে।’ডাকঘর’, ‘গুরু’, ইত্যাদি নাটকে রাজা থেকেছেন মঞ্চের বাইরে।যেমন- ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলের মুখে রাজার কথা পাই, অমল বার বার অপেক্ষা করে থেকেছে রাজার থেকে চিঠি পাবার জন্য। অন্যদিকে ‘রাজা ও রানী’, ‘তপতী’, ‘রক্তকরবী’, ‘রাজা’ নাটকে রাজাই কেন্দ্রীয় চরিত্র। আবার যে সকল নাটকে রাজা প্রধান চরিত্র, সেই নাটক গুলির ক্ষেত্রেও রাজাকে রবীন্দ্রনাথ দুরকমভাবে তুলে ধরেছেন। কোথাও রাজা বিশিষ্ট তত্ত্বের বাহন, আবার কোথাও বা রাজা হয়েছেন রক্তমাংসের সজীব চরিত্র। আর এই রাজা চরিত্রের ধারাতে যে দুই রাজার কথা বিশেষভাবেই উল্লেখের দাবি রাখে, তাঁরা হলেন ‘রাজা ও রানী’ এবং ‘রক্তকরবী’ নাটকের দুই রাজা।রবীন্দ্রনাথ এই দুই নাটকে রাজা চরিত্রকে শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় চরিত্র রূপেই দেখাননি, সেইসঙ্গে দুই রাজাকেই রক্তমাংসের অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত ট্র্যাজিক নায়ক রূপেও তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথ নেতায় বিশ্বাস করতেন এটা সত্য। কিন্তু তাঁর নাটকে নেতার একক শক্তিতে পরিবর্তনগুলো ঘটে না। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই অন্যদের উপস্থিতি দেখা যায়।
এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না
‘রাজা ও রানী’ নাটকের রাজা বিক্রমদেব জালন্ধরের রাজা, তাঁর স্ত্রী রানী সুমিত্রা। রানী সুমিত্রার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অন্তর্বিরোধই এই নাটকের মূল অবলম্বন। আর সেই বিরোধের মূলে আছে রাজার ভ্রান্ত প্রেমভাবনা।আপাতভাবে মনে হবে, রাজা বিক্রমদেব একজন যথার্থ প্রেমিকপুরুষ এবং রানী সুমিত্রার প্রতি তাঁর অন্তরের ভালবাসা যেন অগাধ। কিন্তু রাজার সেই ভালবাসা আসলে অন্ধ আসক্তিরই নামান্তর মাত্র। ভালবাসার ক্ষেত্রে দুটি মানুষের মধ্যে যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও বিশ্বাস প্রয়োজন হয়—তা রাজার মধ্যে ছিলনা। রাজা বিক্রমদেব। তিনি যথার্থ প্রেমিক হলে রাজা হিসাবে নিজের সমস্ত দায়দায়িত্ব তথা রাজকর্তব্যের মাঝে ডুবে থেকেও রানীর প্রতি নিজের ভালোবাসাকে হৃদয়ে লালন করতে পারতেন। কিন্তু যথার্থ হৃদয়ধর্মকে উপলপদ্ধি করতে পারেননি বলেই হৃদয়ের ধনকে তিনি দেহের মধ্যে সন্ধান করেছেন, সব কর্তব্যকর্ম থেকে দূরে সরে রানীকে নিয়ে এক অলীক সুখস্বপ্নে ডুবে থাকতে চেয়েছেন। আর আত্ম কেন্দ্রিক ভালবাসার ধর্মই হল, সে কিছুতেই নিজের অধিকার ছাড়তে রাজি হয় না। তাই আকাঙ্খার পীড়ন থেকে স্বামীকে রক্ষা করার জন্য রানী সুমিত্রা যখন রাজা বিক্রমদেবকে ছেড়ে চলে গেছেন, তখনই ধরা পড়েছে ক্ষমতা আর প্রতাপের প্রবল আস্ফালন। ভালবাসাকে, নারীর হৃদয়কে রাজা বাঁধতে চেয়েছেন নিজের ক্ষমতা আর প্রতাপ দিয়ে।
পর্বতের মতন রাজা শূণ্যতা যার শোভা
রবীন্দ্রনাথের লেখা নাটকের মধ্যে সবচেয়ে অধিক পরিচিত, আলোচিত ও তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে রক্তকরবী (১৯২৬)। এ নাটকের নান্দনিক সৌন্দর্য অসাধারণ। কিন্তু অন্তর্গত দার্শনিক বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। রক্তকরবীর মূল দ্বন্দ্বটাকে একাধিক নামে চিহ্নিত করা সম্ভব এবং তা করা হয়েছেও বৈকি। একদিকে আছে মানুষের সর্বগ্রাসী রাক্ষুসে লালসা, অন্যদিকে প্রকৃতির স্বাভাবিক ও প্রবহমান জীবন। লড়াইটাকে যন্ত্রের সঙ্গে মনুষ্যত্বের বিরোধ হিসাবে ব্যাখ্যা করাও অযৌক্তিক নয়। নাটকের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায, যক্ষপুরী নামে পরিচিত একটি নগরে নানা রকম দ্বন্দ্বের উপস্থিতি। এখানে কোনো উৎপাদন নেই, নেই কোনো সৃষ্টি। আছে শুধু অমানবিক শ্রম। দিনের পর দিন যক্ষপুরীর শ্রমিকরা পাতাল থেকে সোনা তুলে আনছে। কেউ বা সোনা খোদাইয়ের কাজ করছে। সবার উপরে প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী রাজা। মাঝখানে আরো কয়েকজন পেশাজীবীর উপস্থিতি দেখা গেলেও বস্তুতপক্ষে কথা বলার ক্ষমতা কারো নেই। আপাতদৃষ্টিতে এ পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে মার্কসীয় দর্শনের সাথে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মকররাজের এই যক্ষপুরীতে মানুষের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। এখানকার লোকেরা উৎপাটিত, পরস্পরবিচ্ছিন্ন, যান্ত্রিক। তারা আত্মপরিচয় হারিয়েছে। স্বর্ণখোদাইকারকেরা নিজের নামে পরিচিত নয়, তারা পরিণত হয়েছে একেকটি সংখ্যায়। বেচারা অধ্যাপক এখনো পুরোপুরি যন্ত্রে পরিণত হন নি, নবাগত পুরাণবাগিশকে তিনি বোঝাচ্ছেন, ‘পৃথিবীর প্রাণভরা খুশিখানা নির্জের সর্বাঙ্গে টেনে নিয়েছে ওই আমাদের নন্দিনী। এই যক্ষপুরে যত সর্দার আছে, খোদাইকার আছে, আমার মতো পণ্ডিত আছে, মুর্দাফরাশ আছে সব বেশ মিশ খেয়ে গেছে। কিন্তু ও একেবারে বেখাপ্পা। চার দিকে হাটের চেঁচামেচি, ও হলো সুরবাঁধা তাম্বুরী।’ এই নগরটি পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিক, পুঁজিবাদ যেমনটা হয়ে থাকে। এখানে কেউ ওকে চায় আত্মসাৎ করবে, কেউ চায় তাড়িয়ে দেবে। কিন্তু নন্দিনী তার স্বভাবগুণেই চায় ব্যবস্থাটাকে ভাঙবে, অস্ত্রের জোরে নয়, প্রাণের জোরে। রাজাকে সে জানিয়ে দিয়েছে, ‘আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার সঙ্গে লড়াই।’ রাজা নিজেও কিন্তু বন্দী, তার নিজের গড়া ওই ব্যবস্থার ভেতরে। সে নিঃসঙ্গ, তপ্ত, রিক্ত, ক্লান্ত। থাকে লোহার তৈরী জালের ভেতরে। যে সর্দার ও মোড়লরা তার চার পাশে রয়েছে তারা তার পক্ষে কাজ করে, আবার তাকে পাহারাও দেয়, ঘিরে রাখে, রাজা যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে। যক্ষপুরীতে মৈত্রী নেই। রয়েছে রাগ, অবিশ্বাস, হিংসা ও ষড়যন্ত্র। নগরের বাইরে আছে জীবন্ত প্রকৃতি, সেখানে কৃষিকাজ চলে, সেখান থেকে ডাক আসে : ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয়রে চলে আয়, আয়, আয়।’ ঘটনার সময়টা পৌষ মাসের, ফসলকাটার দিনের। রাজার ভেতরে আছে লালসা; তাল তাল সোনা খুঁড়ে তুলেছে তার খোদাইকাররা। কিন্তু ভেতরের মানুষটা এখনো একেবারে পাথর হয়ে যায় নি। যে জন্য নন্দিনীর প্রতি সে চঞ্চল হয়। নন্দিনীর সঙ্গে রঞ্জনের বন্ধুত্ব রাজাকে ঈর্ষাকাতর করে, তার ভেতরে কম্পন ধরায়, রঞ্জনও বিদ্রোহী, সে এই রাজ্যের যান্ত্রিকতাকে মানে না, সে গান গায়, নানান সাজে নিজেকে সাজায়; রঞ্জন কিছুতেই খোদাইকার হবে না। আর আছে বিশুপাগলা। সেও গান গায়, এবং যক্ষপুরীর নিয়মকানুন মানে না। রাজা দিনরাত শক্তির সাধনা করতে গিয়ে তিনি তাঁর যৌবনকে, হৃদয়ধর্মকে ভুলতে বসেছিলেন। তিনি মনে করেন সবকিছু ক্ষমতা দিয়ে, প্রতাপ দিয়ে জয় করে নেওয়া যায়। প্রবল ঔদ্ধত্য নিয়ে তিনি ঘোষণা করেন— “আমি পর্বতের মতো, শূন্যতাই আমার শোভা” কিন্তু নন্দিনীর উপস্থিতিতে এই রাজার মধ্যেও দেখা গেছে মানসিক দোলাচলতা। কিন্তু ক্ষমতা আর শক্তির সাধক রাজা এই সমস্ত ক্ষুদ্র হৃদয়ধর্মকে গুরুত্ত্ব দিতে চাননি। বরং নন্দিনীর মতো এক সামান্য নারীর হৃদয়কে, ভালবাসাকে যেন তিনি তাঁর প্রবল ক্ষমতা আর আধিপত্য দিয়েই জয় করে নিতে পারেন বলে মনে করেছেন। তাই যখন তিনি তাঁর বস্তুসর্বস্ব মন দিয়ে বুঝে উঠতে পারেননি নন্দিনীকে, তখনই দেখা গেছে ক্ষমতার আস্ফালন— “নন্দিনী তুমি কি জান বিধাতা তোমাকেও রূপের মায়ার আড়ালে অপরূপ করে রেখেছেন। তার মধ্যে থেকে ছিনিয়ে তোমাকে আমার মুঠোর মধ্যে কিছুতেই ধরতে পারছি নে। আমি তোমাকে উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখতে চাই, না পারি তো ভেঙেচুরে ফেলতে চাই।”আর এখানেই ধরা পড়েছে রাজার ক্ষমতার দম্ভ। ভালোবাসা যে জোর করে পাওয়া যায় না, নারীর হৃদয়কে বুঝতে গেলে হৃদয়েরই প্রয়োজন হয়, একথা রাজার বস্তুসর্বস্ব মন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনি। নিজের ব্যর্থতা সম্পর্কে রাজা একেবারে অসচেতন ছিলেন না, কিন্তু যে জীবনকে তিনি দূরে সরিয়ে রেখেছেন এতদিন, সেই অজানা জীবনের গ্রহন করতে রাজা যেন ভয় পান। তাই যৌবনকে ছুঁতে না পারলেও ক্ষমতা দিয়েই তিনি তাঁর প্রাপ্য আদায় করে নিতে চান। তাই ‘রাজা ও রানী’ নাটকের বিক্রমদেবের মতো তিনিও বলেছেন— “সোনাকে জমিয়ে তো পরশমণি হয় না— শক্তি যতই বাড়াই যৌবনে পৌঁছল না। তাই পাহারা বসিয়ে তোমাকে বাঁধতে চাই।”
আমার কৈফিয়ত
দুটি রাজার তুলনা লিখতে বসেছি যখন তখন বার বার মনে হচ্ছিল রাজা নাটকের রাজাকে কেন নিলাম না? আপনারও এই প্রশ্ন মনে আসতে পারে অনেক ক্ষণ ভেবে দেখলাম রাজা নাটকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুটি তত্ত্বের কথা বলেছেন। এক. অরূপের মধ্যে রূপের সন্ধান, দুই. দুর্গম দুঃখময় পথ অতিক্রম করতে পারলেই সত্য ও ত্রেয়কে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সাধনায় সিদ্ধি লাভ। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, সুরঙ্গমা ও ঠাকুর দা’ রাজার অরূপের মধ্যে রূপের সন্ধান পেয়েছে কেবল সাধনার দ্বারা। আর সুদর্শনা রূপের মধ্যে আবিষ্কার করতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে, সুবর্ণর প্রতি মোহান্ধ হয়েছে এবং কাঞ্চীরাজের দ্বারা দগ্ধ হয়েছে। এই অরূপ তত্ত্বের বাইরে ‘রাজা’ নাটকে ভক্ত-ভগবানের অবিচ্ছেদ্য প্রণয়াসক্ত বন্ধনের তত্ত্ব অর্থাৎ হিন্দুর বৈষ্ণবতত্ত্ব, মুসলমানের সুফিবাদ ও খ্রিস্টানের মিস্টিক মতবাদের প্রভাবও আছে কিন্তু কোনভাবেই বিক্রমদেব বা মকররাজের মতন জীবনের ট্র্যাজিক নেই। প্রেমের ক্ষেত্রে দুই রাজাই হৃদয় ধর্মকে উপলবদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন—এখানেই দুই রাজা চরিত্রের মিলের জায়গা, যার প্রেক্ষিতে রাজা নাটকের রাজা এই তুলনায় অনুপস্থিত। দুই রাজা বিক্রমদেব ও মকররাজ এক ভ্রান্ত প্রেমভাবনার দ্বারা চালিত হয়েছেন।হৃদয় ধর্মকে উপেক্ষা করে ক্ষমতা আর আধিপত্যসুলভ মানসিকতা নিয়ে প্রেমকে দেখেছেন, ভালবাসার মানুষকে তাঁরা বাঁধতে চেয়েছেন শাসন আর ক্ষমতা দিয়ে।প্রেমের ক্ষেত্রে যে বাইরের বাঁধন নয়, হৃদয়ের বাঁধনই শেষ কথা, তা এই দুই রাজাই উপলপব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলত প্রেমসম্পর্কিত ভ্রান্তির ক্ষেত্রে উভয় রাজার মধ্যেই একটা সাদৃশ্য ধরা পড়ে। অন্যদিকে দুই রাজা চরিত্রের ক্ষেত্রে আরও একটি চমৎকার মিলের জায়গা লক্ষ করি, আর তা হল— দুই রাজাই নিজেদের এই ভ্রান্ত প্রেমভাবনা থেকে মুক্ত হয়েছেন দুই নারীর সাহচর্যে। ‘রাজা ও রানী’ নাটকে সেই নারী হল ইলা, আর ‘রক্তকরবী’ নাটকে সেই নারী স্বয়ং নন্দিনী। এই দুই নারীর জীবনের ত্যাগের ধর্মে দীক্ষিত ভালবাসার গল্প এই দুই রাজাকেই নিজেদের জীবনের ভুল বুঝতে ও যথার্থ প্রেমের স্বরূপ উপলপব্ধিতে সাহায্য করেছে। দুই রাজা চরিত্রের আর একটি মিলের জায়গা তুলে ধরা যেতে পারে, আর তা হল তাঁদের স্বপ্ন ও সেই স্বপ্নপূরণের ব্যর্থতার ট্র্যাজিক দিকটি। ‘রাজা ও রানী’ নাটকে বিক্রমদেব ইলার কাছে পেয়েছিলেন যথার্থ ভালবাসার পরিচয়। নিজের জীবনে যে ভুল তিনি করেছিলেন, তার প্রায়শ্চিত্ত তিনি করতে চেয়েছিলেন কুমার আর ইলার ভালবাসাকে মিলিয়ে দিয়ে। অন্যদিকে ‘রক্তকরবী’ নাটকেও যক্ষরাজও চেয়েছিলেন রঞ্জন আর নন্দিনীর মিলন ঘটাতে। যে যৌবনকে তিনি উপেক্ষা করেছেন, রঞ্জনের মধ্যে তিনি সেই যৌবনের যাদুশক্তি প্রত্যক্ষ করেন, তাই নন্দিনীর প্রেম আর রঞ্জনের সেই যৌবনকে মিলিয়ে দিয়ে নিজ জীবনের অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণতা দিতে চেয়েছিললেন। আর এক্ষেত্রে দুই রাজার মধ্যে যে সাদৃশ্যের জায়গাটি উঠে আসে তা হল, তাঁরা দুজনেই নিজদের সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারেননি—স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা দুই রাজাকেই দগ্ধ করেছে। আর সব থেকে আশ্চর্যজনক মিল এবং ট্র্যাজিক বিষয় হল, তাঁরা নিজেরাই প্রকারান্তরে তাঁদের সেই স্বপ্নের হত্যাকারী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যদিও দুই রাজা চরিত্রেরই পরিণতিই ট্র্যাজিক, কিন্তু তা সত্বেও দুই রাজার পরিণতিগত একটি বৈসাদৃশ্যের দিকও এপ্রসঙ্গে তুলে ধরা যেতে পারে।’রাজা ও রানী’ নাটকে বিক্রমদেবের যে ট্র্যাজেডি, তা দু দিক থেকে। একদিকে কুমার ও ইলাকে রাজা মিলিয়ে দিতে পারেননি, অন্যদিকে তিনি রানী সুমিত্রাকেও আর ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। রাজা ভেবেছিলেন ইলার জীবনে কুমারকে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি সুমিত্রার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাঁকে রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু রাজাকে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগটুকুও দেননি রানী সুমিত্রা, তার আগেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করে যান। তাই রাজা বিক্রমদেবের যে ট্র্যাজেডি তা সান্ত্বনাহীন হাহাকারে পরিসমাপ্ত। অন্যদিকে ‘রক্তকরবী’ নাটকে রাজার পরিণতি ট্র্যাজিক হলেও, তাতে বিক্রমদেবের মতো সান্ত্বনাহীন হাহাকার নেই।রাজা দিনের পর দিন শুধু শক্তির সাধনাই করে গেছেন, যৌবনকে ছুঁতে পারেননি। নন্দিনী তাই বার বার চেয়েছে রাজাকে তাঁর জালের আবরণ থেকে, প্রাণহীন শক্তি সাধনা থেকে মুক্ত করে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে। নন্দিনী একলা রাজার যন্ত্রণাকে উপলপব্ধি করতে পারত। মানুষের নিজের চারদিকে প্রাচীর তোলার প্রবণতা রয়েছে। তেমনি রয়েছে মনের গহনে অন্তর্জাত মুক্তিলাভের আকঙ্ক্ষাও। নিজের তৈরি চিন্তাধারাকে সে নির্ভুল আর শাশ্বত মনে করে। প্রশ্নহীন এই অন্ধবিশ্বাস আর মূঢ়তা স্খলন আনে ব্যক্তিচরিত্রে। প্রতিষ্ঠানের চরিত্রেও। চিন্তা আর মননের জড়তায় আবদ্ধ হয় মানুষ। আবার চলিষ্ণু জীবনের অন্তহীন প্রবহমানতায় আর প্রাণের উত্তাপে নিজেই একসময় ভেঙে ফেলে বন্ধনের সেই প্রাচীর; নতুন সৃষ্টির প্রয়োজনে। শুরু হয় জীবন; নতুন করে। ‘রক্তকরবী’র বন্ধন ও মুক্তির, ধ্বংস ও সৃষ্টির আলো-আঁধারী লীলাচাঞ্চল্য এবং রাজা নাটকের খন্ডরূপের মধ্যে অরূপের উপলব্ধির এষণা যেন আলোকাভিসারী মানুষের অভিন্ন এক তপস্যা। তাই দেখি নন্দিনীর সাথে রাজার কোন বিরোধ নেই।যৌবনের নূতন ধর্মে দীক্ষিত রাজা আজ তাই জালের আবরণ ছিন্ন করে নিজের শক্তির বিরুদ্ধে নিজেই লড়াইয়ে নেমেছেন এবং সে লড়াইয়ে তিনি একা নন— নন্দিনীই তার পাশে দাঁড়িয়েছে।তাই রাজার ট্র্যাজেডির মধ্যে কোথাও যেন একটা সান্ত্বনার সুর আছে, কিন্তু বিক্রমদেবের মনে যে হাহাকার তা যেন নিজেকে ফিরে পাওয়ার অভিন্ন কাহিনি! ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে দিয়ে সত্যের সামগ্রিক উপলব্ধিতে পৌঁছনোর বিবর্তনময় এক ইতিবৃত্ত। তাই হয়ত রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন— এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়— এমনি মায়ার ছলনা…
তথ্যঋণ : ১) নাট্যশাস্ত্র ভরতমুনি।। বঙ্গানুবাদ: ড. সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ছন্দা চক্রবর্তী ২) international journal of creative research and thoughts article by Ghanashyam Roy ৩) কলকাতার গ্ৰুপ থিয়েটার।। উইকিপিডিয়া ৪) বিশ শতকে নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস।। গৌতম জানা ৫) আঠেরো উনিশ শতকের কলকাতার থিয়েটার ও সমাজ: পারস্পরিক সম্পর্ক ও বিবর্তনের একটি আলোচনা।। সৃজনী দাস, সপ্তডিঙা সাহিত্য পত্রিকা, তৃতীয় সংখ্যা, ১৪২৭। ৫) অজয় কুমার ঘোষ।। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী : সমাজ বাস্তবতা (২০০৩) ।। ৬) শ্রুতিনাথ চক্রবর্তী ।। রক্তকরবী : গানের ভিতর দিয়ে (২০০৫)।। ৭) শম্ভু মিত্র ।। নাটক : রক্তকরবী (১৯৯২) ।। ৮) ড. সুখেন বিশ্বাস ।। রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী : সহজ পাঠ (২০১১) ।।
বৃষ্টিভেজা ভোর, ৩১ মে, ২০২৫