মঙ্গলবার | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:৩৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী

তপন মল্লিক চৌধুরী / ৩০ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। যা নিয়ে শুক্রবার কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর জলশক্তিমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, “এক বিন্দু জলও সিন্ধু থেকে পাকিস্তানে যাবে না”। প্রায় প্রতিটি সংবাদমাধ্যমই এরপর থেকে ভারত ও পাকিস্তান-এই দুই দেশের মধ্যকার সিন্ধু চুক্তি ‘স্থগিত’ বা ‘সাসপেন্ড’ হওয়ার কথা বলে চলেছে নাগারে, কিন্তু সত্যিই কি বাস্তবে ভারত সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেছে বা পাকিস্তানে সিন্ধুর জল আটকানোর কথা বলেছে? প্রশ্নগুলি এই কারণেই মাথায় আসছে যে ওই চুক্তিতে কোনো দেশের পক্ষে একতরফাভাবে চুক্তি স্থগিত বা বাতিল করার বিধান নেই। বরং চুক্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করার স্পষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া কীভাবে ভারত সিন্ধুর জল পাকিস্তানে ঢোকা আটকাবে? এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাঙ্কের দিক থেকে কোনো রকম চাপ এলে কীভাবে তা ভারত মোকাবিলা করবে? এসব কারণেই ভারত সরকার সিন্ধু চুক্তি বাতিল করেছে কথাটি সংবাদ মাধ্যমে চর্চা শুরু হওয়ার পর থেকেই একের বেশি প্রশ্ন উঠে আসছে।

আসলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সিন্ধু চুক্তি ‘স্থগিত’ বা ‘সাসপেন্ড’ হওয়ার যে বিষয়টি এখন চর্চার কেন্দ্রে, বাস্তবে ঠিক তেমনটা কি এখনও পর্যন্ত ঘটেছে? যতদূর জানি ১২ দফার সিন্ধু জলবন্টন চুক্তির কোথাও কোনো পক্ষের একপাক্ষিকভাবে বেরিয়ে আসা বা স্থগিত করার সুযোগ নেই। আর সেই কারণে ভারতের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেখানে ‘দ্য গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া হেয়ারবাই ডিসাইডেড দ্যাট দ্য ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি ১৯৬০ উইল বি হেল্ড ইন অ্যাবিয়েন্স উইথ ইমিডিয়েট এফেক্ট’ এই কথাটি লেখা আছে। লক্ষ্য করার বিষয় হল ‘সাসপেন্সন’ নয়, তার পরিবর্তে ‘ইন অ্যাবিয়েন্স’ কথাটি লেখা হয়েছে অত্যন্ত সতর্কভাবেই। যার মানে দাঁড়াচ্ছে স্থগিত নয়, সাময়িকভাবে কার্যকারি নয়। উল্লেখ্য, পহেলগাঁও কাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেকটি ব্যবস্থা নেয় তার মধ্যে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। কারণ অতীতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ঘিরে প্রায় সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষিতেই উভয় দেশ নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ, ভিসা বন্ধ, কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করা প্রভৃতি ব্যবস্থা অনেকবার নিয়েছে, কিন্তু সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তির কার্যকারিতা কখনও ব্যাহত হয়নি। এমনকি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ভারত-পাকিস্তান পশ্চিম সীমান্তের যুদ্ধ, আশির দশকের শিয়াচেন যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধেও সিন্ধু চুক্তি স্থগিত কিংবা সাময়িকভাবে অকার্যকারিতার প্রশ্ন ওঠেনি। এমনকি ২০১৬ সালের উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিন্ধু চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু চুক্তিটি যে শেষ পর্যন্ত স্থগিত হতে পারে তা ২৩ এপ্রিল পহেলগাঁও কাণ্ডের আগে পর্যন্ত ভাবা যায়নি।

আশ্চর্যের বিষয় হল ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুই ‘জন্মশত্রু’ রাষ্ট্রের মধ্যে সাক্ষরিত এই চুক্তি ছটি দশক পেরিয়েও টিকে রয়েছে। সেদিক থেকে বিচার করলে আন্তঃসীমান্ত নদীর জলবণ্টন নিয়ে স্বাক্ষরিত সিন্ধু চুক্তিকে এশিয়ার অন্যতম সেরা চুক্তি বলা যায়। কারণ হিসাবে বলা যায় চুক্তিটির নাম সিন্ধু হলেও বাস্তবে আরও পাঁচটি উপনদীসহ মোট ছ’টি নদী এই চুক্তির আওতাভুক্ত। এর মধ্যে সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা নদীর সম্পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের এবং শতদ্রু, বিপাশা ও ইরাবতী নদীর সম্পূর্ণ অধিকার ভারতের। দুই দেশ তাদের ভাগের নদী নিজেদের মতো ব্যবহার করবে, কোনো ভাগাভাগি, মাপামাপির ব্যাপার নেই। এছাড়া এই চুক্তির কোনো মেয়াদ নেই। যেমন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর। যেমন, তিস্তা নিয়ে ২০১১ সালে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত অন্তর্বর্তী চুক্তিটির মেয়াদ ছিল ১৫ বছর। কিন্তু সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি হল স্থায়ী। তবে দুই দেশের মতবিরোধ হলে সিন্ধু চুক্তিতে সালিশির ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকে মধ্যস্থতা ও সালিশ করবে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বা নেপালের নদী চুক্তিগুলিতে এই ব্যবস্থা নেই। মতবিরোধ হলে কেবল আলাপ-আলোচনার মধ্যে সুরাহার কথা বলা আছে। এমনকি সিন্ধু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পাকিস্তানের ভাগের তিনটি নদীর– সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার বুকে ভারত কোনো নির্মাণ বা জল আটকাতে পারবে না। কিন্তু পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারত বলছে, নির্মাণ করবে জলও আটকাবে, বাকি ছ’টি নদীর বন্যা ও বৃষ্টিপাতসংক্রান্ত যেসব তথ্য পাকিস্তানকে দেওয়ার কথা, সেসবও দেবে না।

জল আটকাতে গেলে ভারতকে অনেক বাঁধ দিতে হবে। তা নাহলে সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার উপরে বাঁধগুলিকে পলিমুক্ত করে জলাধারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর ফলে পাকিস্তানের দিকে জল যাওয়া অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু এসব এখনই করা সম্ভব নয়। বরং ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্তান কিষেণগঙ্গা এবং চন্দ্রভাগার উপনদীর উপর নির্মীয়মাণ রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছে কারণ তাদের জল আটকে যাচ্ছে। সিন্ধু চুক্তি বাতিল হওয়ার পর এই আপত্তি আর ভারত শুনবে না। উল্লেখ্য, সিন্ধু জলবন্টন থেকে পাকিস্তান পায় ৮০ শতাংশ জল, তাদের কৃষি ব্যবস্থা পুরোটাই নির্ভর করে এই জলের উপরে। সুতরাং চুক্তি বাতিল হলে সমস্যায় পড়বে পাকিস্তান। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই কি ভারত জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে? বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ভারত সেই চুক্তি বাতিল করলে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্য চাইবে, সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে ভারতের উপর চাপ আসতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন