বুধবার | ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:১৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সাত সাহেবের বিবি সুসান্না আনা মারিয়ার গল্প এখন লোককাহিনী : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৪৬৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হুগলী জেলার চুঁচুড়ার খাদিনামোড় ও তালডাঙার মাঝে জিটি রোডের ধারে সাদা ধবধবে নিঃসঙ্গ একাকী দাঁড়িয়ে থাকা নিওক্লাসিক্যাল বারোক সৌধটির নাম সাত সাহেবের বিবির কবর। ছোটবেলায় যখন বাসে করে এই রাস্তার ধার দিয়ে যেতাম, দেখেছি স্মৃতিসৌধটি বনজঙ্গলে ঘেরা থাকতো। ইদানিং প্রত্নতত্ব সর্বেক্ষণ দপ্তর চারপাশটা পরিষ্কার করে একটা বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। স্মৃতি সৌধটি জনৈক সুসান্না অ্যানা মারিয়া নামে এক ডাচ রমণীর।

সুসান্না অ্যানা মারিয়া ভারকার্ক, হ্যাঁ এটাই তার আসল নাম। তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন ডাচ। ঐতিহাসিক প্রমাণ বলতে, সমাধিসৌধের গম্বুজের বেষ্টনীতে লেখা আছে “Susanna Anna Maria Yeats Reboore Verkerk OBILT 12 May Anno 1809” রিবুর ভার্কার্ক অর্থাৎ জন্মসূত্রে পদবী ভার্কার্ক।

ইতিহাস বলে ১৭৪৩ সালে নেদারল্যান্ডের তিয়েল নামে এক ছোট্ট শহরে জন্ম হয় সুসান্নার। তবে তিনি নেদারল্যান্ড থেকে কিভাবে চুঁচুড়ার ডাচ উপনিবেশে এসেছিলেন সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। সে যাই হোক ১৭৫৯ সালের সুসান্নার বিয়ে হয় প্রভাবশালী ওলন্দাজ ব্যবসায়ী পিটার ব্রুইসের সঙ্গে। পিটার ব্রুইস ছিলেন চুঁচুড়ার ওলন্দাজ কুটির চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। ১৭৫৯  সালে ইংরেজদের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় ওলান্দাজরা। পলাশীর যুদ্ধের সাফল্যের পর চুঁচুড়ার ওলন্দাজ কর্তৃপক্ষ ইংরেজদের অভিনন্দন জানালেও তারা সুখী ছিলেন না। আবার ইংরেজরা তাদের শত্রু ডাচ-দের  চুঁচুড়া থেকে তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৭৫৯ সালে ২০ নভেম্বর কর্নেল ফোর্ড বরাহনগরের ডাচকুঠি দখল করেন এবং ২৪ নভেম্বর চুঁচুড়ায় সশরীরে আসেন। ২৫ নভেম্বর চন্দননগরের বেদারা বা বাজরা নামে সরস্বতীর পূর্ব তীরে এক গ্রামে আধা ঘন্টার যুদ্ধে ডাচরা পরাজিত হয়। ইংরেজরা বাংলার নবাব কে দিয়ে বাঁচাতে বাণিজ্য ক্ষমতা খর্ব করে। ফলে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ হলেও, বাণিজ্য ক্ষেত্রে ডাচেরা দুর্বল হয়ে পড়ে।

চুঁচুড়ার টালমাটাল এই পরিস্থিতিতে ১৭৮৩ সালে পিটারের মৃত্যু হয়। তাকে চুঁচুড়ার মিয়ার বেড়ের ওলন্দাজ কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয়।

এরপর ১৭৯৫ সালে সুসান্নার আবার বিয়ে হয় ধনী প্রতিষ্ঠিত ইংরেজ ব্যবসায়ী থমাস ইয়েটস এর সাথে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সুসান্নাকে ছাড়ে না। সে বিবাহও দীর্ঘস্থায়ী হলো না। কিছুদিনের মধ্যেই থমাসের মৃত্যু হয়।

চুঁচুড়া তালডাঙ্গায় প্রায় ৬০ বিঘা জমির উপর ছিল সুসান্নার বিরাট প্রাসাদ–আয়েশবাগ। ১৮০৯ সালে সুসান্নার মৃত্যু হল তার ইচ্ছা অনুসারে এখানেই তৈরি হয় তার সমাধিসৌধ। চারদিক থেকে সিঁড়ি উঠে গিয়েছে সৌধটিকে ঘিরে। স্মৃতিসৌধটির মাথায় ইউরোপীয় ধাঁচের এক অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ ও তার মাথায় একটি চূড়া রয়েছে। স্মৃতিসৌধের ভিতরে অগোছালো ভাবে উত্তর-পশ্চিম কোণে সুসান্নার সমাধি রয়েছে।

মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারে সমাধিক্ষেত্রে এই সৌধটিরই একটি হুবহু প্রতিকৃতি পাওয়া যায় এবং অনেকে মনে করেন যে এই সৌধটির অনুকরণেই সুসান্নার সমাধিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। কাশিমবাজারের সমাধিটি জনৈক ওলন্দাজ তামেরাস ক্যান্টার ভিশেরের (Tammerus Canter Visscher)।

জীবদ্দশায় সুসান্নার কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে খুব একটা বেশি জানা না গেলও, জনশ্রুতি আছে বিরাট জমিদারি আর বিপুল ধনরাশির জন্য তিনি সাধারণ মানুষের কাছে রানীমা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চুঁচুড়া শহরের ও তার অধিবাসীর প্রতি সুসান্না আন্না মারিয়ার যে ভালোবাসার দরদ ছিল তা বোঝা যায় তার ১৮০৯ সালের একটি ইচ্ছা পত্রে। এই ইচ্ছা পত্রে তিনি বলেন যে তার প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টের উদ্বৃত্ত অর্থ যেন চুঁচুড়ার poor Fund এ যায়। তিনি এও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে চুঁচুড়ার তোলা ফটো, তালডাঙ্গা রোডে অবস্থিত তার ৬০ বিঘা জমিতে একটি বাড়ি ও ডাচ ইংরেজদের সমাধি যেন করা হয়। এই ইচ্ছা অবশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও বাগান থেকে আয়ের একটি অংশ চুঁচুড়া রোগাক্রান্ত অসুস্থদের সেবায় চার্চের সহায়তার জন্য দান করা হয়। ডাচ সমাধিস্থলের বাইরে চুঁচুড়া তোলাফটক তালডাঙ্গা রোডের পাশে আইসবাগ না মাঙ্কি তো সেই জমিতে সুসান্নার বৈশিষ্ট্যময় সমাধিতে আজও উজ্জ্বলভাবে অবস্থিত।

ইতিহাস যাই বলুক, সুসান্নার চরিত্র রহস্যময় হয়ে উঠেছে তাকে ঘিরে নানা লোককথায়। বলা হয়, সুসান্না নাকি ৭ বার বিয়ে করেছিলেন আর বিয়ের পরে প্রতিবার তার স্বামীরা রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছেন। সুসান্নাকে তার স্বামীদের হত্যাকারি বলে কয়েকবার সন্দেহ করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুসান্না যথেষ্ট ধনী আর প্রতিপত্তিশালী ছিলেন, নিজের মৃত্যুর আগে উইল বানিয়ে পুত্র লুইস আড্রিয়ান ডি ব্রুয়েক্সস (প্রথম পক্ষ) কে সবকিছু দিয়ে যান। উইল অনুযায়ী তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি (ছ’টি ঘোড়া, একটি পুরনো আমলের ঘোড়ার গাড়ি এবং একটি বাড়ি) তিনি দান করেন তাঁর ছেলে ল্যুইকে।

জনশ্রুতি আছে সুসান্নার বিপুল ধন-সম্পদ সৌধের ভেতর লুকানো আছে আর তার পোষা কেউটে সাপগুলো বংশ পরম্পরায় সেই সম্পদগুলি রক্ষা করে চলেছে।

রহস্যময়ী সুসান্নার চরিত্রের উপর ভিত্তি করে সাহিত্যিক রাস্কিন বন্ড লিখেছিলেন “সুসান্নাস সেভেন হাসবেন্ডস”। আর সেই কাহিনী অবলম্বনে ২০১১ সালে বিশাল ভরদ্বাজ “সাত খুন মাফ” ছবিটি তৈরি করেন।

সুসান্নার চরিত্রে ছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, এছাড়াও সিনেমায় অভিনয় করেন ইরফান, নীল নিতিন মুকেশ প্রমুখ।

ইতিহাস বলে সুসান্নার দুবার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু জনশ্রুতি বলে সুসান্নার সাতবার বিয়ে হয় এবং প্রতিবারই স্বামীদের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। পরস্পর বিরোধী এই তথ্য বিরোধের প্রশ্নের কারণ কি?

সপ্তদশ অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন রোগব্যাধি উপশমের জন্য ও মঙ্গল কামনায় বনদেবীর পূজা করা হতো। সম্ভবত হিন্দু-তন্ত্রের সপ্তমাতৃকার ধারণা থেকেই এই লৌকিক উপদেবতার সৃষ্টি।

বনদেবীর বিভিন্ন রূপেকে একত্রে সাতবোন বা সাতবউনি হিসেবে কল্পনা করা হতো।

আজও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও সুন্দরবনের অরণ্য সংলগ্ন অঞ্চলে এঁদের পুজো হয়। এককালে চুঁচুড়ায় মুসলিম প্রভাবে এঁরাই হয়তো সাতবিবি নামে পূজিত হতেন। যেমন ধরুন হিন্দু ওলাইচণ্ডী দেবী ওলাবিবি নামে কলেরা উপসমকারী দেবী নামে পরিচিত হয়েছে। এছাড়া ঝোলাবিবি, মড়িবিবি, আসানবিবি ইত্যাদিও রয়েছেন।

সাত বিবির কবরের কিছু দূরেই রয়েছে বুনোকালী মাতার প্রাচীন মন্দির, কোন এক কালে বন-জঙ্গলে ঢাকা এইসব অঞ্চল তারই সাক্ষ্য বহন করে। তাই হয়তো লোকমানসের স্মৃতি-বিস্মৃতির ষটচক্রে এই সাতবিবি আর সুসান্না মারিয়ার চরিত্র একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে তৈরি হয়েছে এই লোককাহিনী।।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “সাত সাহেবের বিবি সুসান্না আনা মারিয়ার গল্প এখন লোককাহিনী : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Subhamoy Das says:

    Read the book and seen the film. But, the historical facts were not known to me till now. Thanks, Rinki, for such a good post.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন