রবিবার | ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৩৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
গানের ভিতর দিয়ে দেখা পুজোর ভুবনখানি : সন্দীপন বিশ্বাস নবদুর্গা নবরাত্রি : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সাদা কালোয় কুমোরটুলি : বিজয় চৌধুরী জেল খাটাদের পুজো, মাইক আসছে মাইক, ছুটছে গ্রাম : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কাশ্মীর নির্বাচনে বিপুল সাড়ার নেপথ্যে কি ৩৭০ বিলোপের জবাব : তপন মল্লিক চৌধুরী তর্পণের তাৎপর্য : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় মহালয়ার চন্ডীপাঠ মন্ত্র, মহিষাসুরমর্দিনী স্তোত্র : বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পেজফোর-এর শারদোৎসব বিশেষ সংখ্যা ২০২৪ সুকুমার রায় মানেই শৈশব ও কৈশোর : রিঙ্কি সামন্ত অমৃতা প্রীতম-এর অনুবাদ গল্প ‘বুনোফুল’ মিল অমিলের মানিক ও মার্কেজ : রাজু আলাউদ্দিন কলকাতা ছিল একসময় ভেড়াদের শহর : অসিত দাস নিরাপদর পদযাত্রা ও শিমূলগাছ : বিজয়া দেব তোলা বন্দ্যো মা : নন্দিনী অধিকারী বাংলার নবজাগরণ ও মুসলমান সমাজ : দেবাশিস শেঠ সৌরভ হোসেন-এর ছোটগল্প ‘সালাম’ বঙ্গের শক্তি-পূজা : সুখেন্দু হীরা পুজোর পরিবর্তন, পরিবর্তনের পুজো : সন্দীপন বিশ্বাস পিতৃপক্ষের মধ্যে পালিত একাদশী — ইন্দিরা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত অরণ্যের অন্তরালে তাম্বদি সূরলা : নন্দিনী অধিকারী ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ হীরালাল সেন : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্যাসাগরের অন্তরালে ঈশ্বরচন্দ্র, পূর্ব পুরুষের ভিটে আজও অবহেলিত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব সুধীর চক্রবর্তী স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার : দীপাঞ্জন দে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে দুর্গা রূপে আরাধনা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির নিজস্ব দুর্গা : শৌনক দত্ত সে নারী বিচিত্র বেশে মৃদু হেসে খুলিয়াছে দ্বার : দিলীপ মজুমদার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘প্রাতঃভ্রমণ’ বন্যায় পুনর্জীবন বেহুলার : রিঙ্কি সামন্ত গরানহাটা কি ছিল ভেড়ার হাট : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পিতৃপক্ষের সমাপ্তি মাতৃপক্ষের শুভ সূচনা-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সুভদ্রার রথ দর্পদলন : সন্দীপন বিশ্বাস

সন্দীপন বিশ্বাস / ১২৬ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

মহাভারতের সুভদ্রাকে যতটা চেনা সহজ, যতটা নারীসত্তায় তিনি প্রকাশিত, পুরীর মন্দিরের সুভদ্রা কিন্তু ততটা প্রকাশিত নন। আসলে এঁরা দুই সুভদ্রা নাকি, এক সুভদ্রা তাই নিয়েই দ্বন্দ্ব আছে! ভিন্ন দুই কাহিনিকে মেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। পুরাণের ধারা অনুসরণ করলে দেখা যায়, পুরীর মন্দিরের সুভদ্রাকে ঘিরে লৌকিক আখ্যানের ভিন্নতর ধারা আছে। মহাভারতের সুভদ্রার অবস্থান তার থেকে বহু দূরে। তবে একবিন্দুতে দু’জনেই সমান। সেটা হল সুভদ্রা হলেন শ্রীকৃষ্ণ তথা জগন্নাথের ভগিনী।

পুরীর মন্দিরের তিন দেবতা জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা এক তাত্ত্বিক সত্তার ভিতরে অধিষ্ঠিত। তাঁদের ঘিরে রয়েছে বহু গভীর তথা লৌকিক দর্শন। একেবারে প্রথম স্তরে পুরীর সুভদ্রা ছিলেন সুলুক উপজাতিদের পূজ্য এক আঞ্চলিক দেবতা। তখন তাঁর নাম ছিল খাম্বেশ্বরী বা স্তম্ভেশ্বরী। সময়ের নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজ জগন্নাথ মন্দিরে পূজিত হন ত্রিমূর্তি, জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। সুভদ্রাকে পুজো করা হয় ভুবনেশ্বরী মন্ত্রে। অর্থাৎ সুভদ্রাকে এখানে মনে করা হয় শক্তিরই অংশ।

বিভিন্ন পুরাণে সুভদ্রার বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁকে বলা হয়েছে শক্তির প্রতিমূর্তি, লাবণ্যের আধার এবং তিনি সাক্ষাৎ লক্ষ্মীরূপা। যেমন স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে, ‘সুভদ্রা হি মহালক্ষ্মীঃ’। আবার তান্ত্রিক মতে বলা হয়েছে, ‘সুভদ্রা হি স্বয়ং শক্তিঃ ভবানী যোগমায়া চ’। অর্থাৎ তিনি একাধারে লক্ষ্মী ও দেবী পার্বতী। এরকম অসংখ্য তাঁর রূপ ও সত্তা।

প্রতি বছর আষাঢ় মাসে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা তিনটি রথে গুণ্ডিচা মন্দিরে যান। সেই রথযাত্রা ঘিরে দেখা যায় প্রবল উন্মাদনা। এই রথযাত্রা ঘিরে নানারকম গল্প আছে। মন্দিরে অধিষ্ঠান করতে করতে সুভদ্রার একদিন খুব মন খারাপ। তাই দাদা জগন্নাথ তাঁকে মন খারাপের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। সুভদ্রা বললেন, তাঁর নগর পরিক্রমা করতে ইচ্ছে করছে। সেকথা শুনে বোনের ইচ্ছেপূরণে জগন্নাথ দাদা বলভদ্রকে নিয়ে রথে চড়ে নগর প্রদক্ষিণ করতে বেরলেন। আরও একটা গল্পে পাই, অর্জুনের সঙ্গে বিয়ের বেশ কিছুদিন পর সুভদ্রা কৃষ্ণ বা জগন্নাথকে বলেন, তাঁকে একবার বাপের বাড়ি নিয়ে যেতে। এরপর জগন্নাথ এবং বলরাম তাঁকে রথ নিয়ে নিতে আসেন। বাপের বাড়ি ফিরতেই রাজ্যের গোপ এবং গোপিনীরা মহানন্দে সেই রথ টানতে শুরু করেন। রথযাত্রা নিয়ে এরকমই বেশ কিছু কাহিনি প্রচলিত আছে।

আসলে পুরাণ কাহিনির এই গল্পগুলি যতটা সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, রথযাত্রার কারণ কিন্তু তত সহজ নয়। এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে গূঢ় ধর্মীয় দর্শন। রথযাত্রার সঙ্গে আমাদের শরীর ও জীবনের এক জটিল তত্ত্বের অচ্ছেদ্য বন্ধন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই জটিলতার মধ্যে না গিয়ে আমরা দেখি পুরীতে রথযাত্রায় সুভদ্রার অংশগ্রহণ কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনটি রথ বের হয় বটে, কিন্তু মানুষের ভক্তির ৯৯ শতাংশ গিয়ে পড়ে প্রভু জগন্নাথদেবের চরণকমলে। তিনিই তো প্রধান হয়ে ওঠেন।

রথযাত্রায় পুরীতে জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরামের তিনটি রথ বের হয়। এই তিনটি রথেরই আলাদা নাম রয়েছে। জগন্নাথের রথটির নাম নন্দীঘোষ, বলরামের রথটির নাম তালধ্বজ, সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। শুধু নামই নয়, তিনটি রথের চাকার সংখ্যাও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, জগন্নাথের রথের চাকার সংখ্যা ১৬, বলরামের রথের চাকার সংখ্যা ১৪, সুভদ্রার রথের চাকার সংখ্যা ১২। প্রতি রথেই ৩৪টি অংশ। যেমন চাকা, আরা, ডাণ্ডিয়া, বেকি, হংসপট, কানি, শঙ্খদ্বার, জালি, গইপট, সিংহাসন, রুশিপট প্রভৃতি।

এমনকী, প্রত্যেকটি রথের আলাদা রংও রয়েছে। সুভদ্রার রথের রং লাল ও কালো। তিনটি রথে যে ঘোড়া ব্যবহার করা হয়, তাদেরও রয়েছে পৃথক নাম। সুভদ্রার রথে রয়েছে চারটি লাল রঙের ঘোড়া। এদের নাম যথাক্রমে রোচিকা, মোচিকা, জিতা এবং অপরাজিতা। আবার কোথাও কোথাও পাওয়া যায়, এই ঘোড়া চারটির নাম প্রজ্ঞা, অনুজ্ঞা, ঘোরা, অঘোরা। সুভদ্রার রথের সারথির নাম অর্জুন বা দেবদত্ত। সুভদ্রার রথের রশির নাম স্বর্ণচূড় নাগিনী বা যাজ্ঞবল্ক্য। তাঁর রথের চূড়ায় উড্ডীন পতাকার নাম নদাম্বিকা। ধ্বজার পাশের পাখি দু’টির নাম শ্রুতি ও স্মৃতি। রথটির রক্ষকের নাম জয়দুর্গা।

রথের মধ্যে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা একা থাকেন না। তাঁদের সঙ্গে সহযাত্রী হিসেবে থাকেন অন্য দেব-দেবীও। সুভদ্রার রথ দর্পদলনে সওয়ারি হন সুদর্শন ও আরও ৯ দেবী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চণ্ডী, চামুণ্ডা, বনদুর্গা, শুলিদুর্গা, শ্যামাকালী, মঙ্গলা, তারা, দেবী বিমলা।

রথ নির্মাণের মধ্যেও অভিনবত্ব আছে। ৫৯৩টি কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি সুভদ্রার রথটির আরও দু’টি নাম আছে। যেমন দেবদলন ও পদ্মধ্বজ। সুভদ্রাকে ধনসম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী বলে মান্যতা দেওয়া হয়। তাই তাঁর রথে রয়েছে পদ্মের চিহ্ন। সেই রথের উচ্চতা ৪৩ ফুট ৩ ইঞ্চি। দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সাড়ে ৩১ ফুট করে। এতে থাকে বারোটি চাকা। এই ১২টি চাকা ১২ মাস ব্যাপী সাধনার প্রতীক। চাকার পরিধি ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি।

মজার ব্যাপার হল, কোনও আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়াই এই রথগুলি নির্মাণ করা হয়। এমনকী গজ, ফিতে, স্কেলের ব্যবহারও করা হয় না। হাত দিয়ে মেপেই রথ তৈরি করেন হাজার দেড়েক কর্মী। এতে পেরেক, নাট বল্টু, বা ধাতু জাতীয় কিছু জোড় হিসাবে ব্যবহার করা হয় না।

রথযাত্রার দু’দিন আগে হয় পদ্মবেশ। নতুন পট্টবস্ত্রে সাজানো হয় ত্রিদেবকে। মাখানো হয় চন্দন। সেই সময় তাঁদের রাখা হয় মন্দিরের জগমোহনে। রথের দিন যে প্রক্রিয়ায় ত্রিমূর্তিকে রথে তোলা হয়, তাকে বলে পাহান্ডি পর্ব। সেদিন তাঁদের নানাবিধ অলঙ্কারে সাজানো হয়। শ্রীভূজ, কিরীটি, মাথায় টায়রা, কেয়ুর, কঙ্কন সহ বহু অলঙ্কারে সুভদ্রাকে সজ্জিত করা হয়। সেই বেশ দেখে ভক্তের মনে ভক্তিরসের প্রাবল্য আসে। চোখ দিয়ে নেমে আসে জলের ধারা। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য বারবার ভক্তিভাবে চোখের জলে ভাসতেন। মাঝে মাঝে জ্ঞানরহিত হতেন।

রথযাত্রা শুরুর আগে পুরীর রাজপরিবারের রাজা এসে সোনার ঝাড়ু দিয়ে রথের সামনে ঝাঁট দেন। একে বলে ‘চেরা পহন্‌রা’। এই নিয়ম চালু হয়ে আসছে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজা অনঙ্গ ভীমদেবের সময় থেকে। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ওড়িশার ‘রাজা’ একমাত্র জগন্নাথদেব। তাঁদের রাজবংশ তাঁর সেবকমাত্র। প্রতি বছর রথযাত্রার সময় সেই ঝাড়ু দেওয়ার পর যাত্রা শুরু হয়। রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরায় পুরীর রাজপরিবার আজও আছে।

রথযাত্রায় সবার প্রথমে থাকে দাদা বলরামের রথ। মাঝে থাকে আদরের বোন সুভদ্রার রথ এবং পিছনে থাকে জগন্নাথের রথ। এরও এক আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কারণ বলরাম হলেন গুরুতত্ত্বের প্রতীক। মাঝে সুভদ্রা হলেন ভক্তিতত্ত্বের প্রতীক। মানব জীবনে গুরুকৃপার লাভের পর ভক্তির পথ ধরে পৌঁছতে হয় পিছনের রথে অধিষ্ঠিত মহাপ্রভু জগন্নাথের কাছে অর্থাৎ দেবতার কাছে।

রথ যায় ৩ মাইল দূরে মাসির বাড়ি বা গুণ্ডিচা বাড়ি। এই গুণ্ডিচা হলেন মালব রাজ্যের সূর্যবংশীয় রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী। ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। সত্যযুগে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে তিনিই রথযাত্রার প্রচলন করেছিলেন বলে ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য প্রাচীন কালের মালব দেশই এখনকার ওড়িশা বলে ধরা হয়।

অনেকদিন আগে অবশ্য এখনকার মতো তিনটি রথ ছিল না। তিন দেবতারই ছিল দু’টি করে রথ। তখন গুণ্ডিচা বাড়ি যাওয়ার পথে পড়ত একটি নদী। সেই নদীর নাম ছিল বাঁকিমোহনা। এপারে এসে থামত তিনটি রথ। তারপর জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে নৌকায় করে নদী পার করানো হতো। অন্য পারে গিয়ে সেখানে অপেক্ষমান অন্য রথে আবার তাঁদের তোলা হতো। সেই নদী কবেই হারিয়ে গিয়েছে।

রথযাত্রার নবম দিনে ফের সেই রথ মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসে পুরীর মন্দিরে। আমরা বলি উল্টোরথ। ওঁরা বলেন, বহুড়া যাত্রা। সেদিন একাদশী। পথের মাঝেই তিন দেবতাকে অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয়। একে বলে ‘সোনা বেশ’। এই নিয়ে একটি কাহিনি আছে। প্রায় ছ’শো বছর আগে এক উল্টোরথের দিন রথ ফিরছে মন্দিরে। সেই সময় সূর্যবংশীয় রাজা গজপতি শ্রীকপিলেন্দ্রদেব ছিলেন কলিঙ্গের রাজা। তিনি ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা হন। তাঁর ছিল বিপুল পরাক্রম। তিনি তাঁর সীমানা বিস্তৃত করেছিলেন তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং বঙ্গদেশ পর্যন্ত। তাই তাঁকে বলা হতো ‘নবকোটি কর্ণাট কলাবর্গেশ্বর বীরাধি বীরবর কলিঙ্গ উৎকল রাজাধিরাজ শ্রীশ্রীকপিলেন্দ্রদেব’। রাজা ছিলেন জগন্নাথের পরম ভক্ত। তিনি একদিন দাক্ষিণাত্য বিজয় সেরে ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর প্রচুর সোনাদানা, হীরে জহরত, মণিমানিক্য। সেদিন জগন্নাথের বহুড়া যাত্রা। রাস্তায় সেই রথকে দেখে রাজা রথ দাঁড় করাতে বললেন। তারপর রাজা সেই সব সোনা উৎসর্গ করলেন তিন দেবতাকে। সেই ‘সোনা বেশ’ দেখে রাজা আনন্দে কেঁদে ফেললেন এবং প্রভুর চরণে লুটিয়ে পড়লেন। সেই থেকে এই ‘সোনা বেশ’ চলে আসছে।

রথযাত্রার সময় বলরাম, সুভদ্রা এবং জগন্নাথকে নানা অলঙ্কারে সাজানো হয়। সুভদ্রার অলঙ্কারগুলি হল শ্রীপায়র, শ্রীভূজ, কিরীটি, ওড়না মালি, ঘাগরা মালি, কানা মালি, সূর্যচন্দ্র, আদাকানি, সেবতী মালি, তড়াগি, তিলক চন্দ্রিকা, অলক চন্দ্রিকা প্রভৃতি। এই গয়নার মোট ওজন একশো কেজি।

বহু তত্ত্বের মধ্য দিয়ে উদ্ভাসিত সুভদ্রা। সময়ের বিবর্তনের মধ্য দিয়েই তাঁর আজকের প্রকাশ। তিনি যেমন নারী সৌন্দর্যের ধী এবং শ্রীকে প্রকাশ করেন, তেমনই তাঁর মধ্যে যোগমায়ার শক্তিকেও প্রকাশ হতে দেখা যায় বলে পুরাণকর্তারা মনে করেন। অর্থাৎ সুভদ্রার একদেহে লীন হয়ে আছেন দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। তাঁর মধ্য দিয়ে যেন নারীত্বের এক আদর্শ সত্তারই প্রকাশ ঘটেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন