বুধবার | ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৫৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
মনসার নাম কেন ঢেলাফেলা : অসিত দাস ভোও.. ও ..ও.. কাট্টা…! ভো… কাট্টা…! : বিজয় চৌধুরী দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা : সন্দীপন বিশ্বাস নারীবেশী পুরুষ অভিনেতা শঙ্করকে সামাজিক ট্যাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় না : বিশ্বেন্দু নন্দ সাসারামের রোহতাসগড়, বৃহতের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ : নন্দিনী অধিকারী জমিদার রবীন্দ্রনাথ : আহমাদ ইশতিয়াক আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর, এবারও অধরা রইলো আলোচনা : সুমিত ভট্টাচার্য জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব চাষির দুঃখের ঘরে সাপের বাসা, আজও রেহাই নেই ছোবলের হাত থেকে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সল্টলেক তথা লবণহ্রদই কি কুচিনান : অসিত দাস পদ্মা বা পার্শ্বপরিবর্তনী একাদশী ব্রতকথা : রিঙ্কি সামন্ত জয়া মিত্র-র ছোটগল্প ‘ছক ভাঙার ছক’ কত দিন বিনা চিকিৎসায় চলে যাবে অসুস্থ মানুষের প্রাণ? প্রশ্ন দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের : সুমিত ভট্টাচার্য দেবী করন্দেশ্বরীর পূজো ঘিরে উৎসবের আমেজ মন্তেশ্বরের করন্দা : প্রবীর কুমার সামন্ত প্রেতবৈঠকে (প্ল্যানচেট) আত্মার আগমন : দিলীপ মজুমদার সংগীত সাধক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য : রিঙ্কি সামন্ত শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্যের অন্দরে বাহিরে বিরাজমান সিণ্ডিকেট : তপন মল্লিক চৌধুরী কবিতা সিংহ-এর ছোটগল্প ‘পশ্চিম রণাঙ্গন আজ শান্ত’ কলকাতার আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠী : অসিত দাস মঙ্গলবারের মধ্যে কাজে ফিরুন — সুপ্রিম ধমক, উৎসবে ফিরুন — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (পঞ্চম পর্ব) : বিজয়া দেব বিবিসির ইয়ংগেস্ট হেডমাস্টার বাবর আলী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত হাঁসের ডিমের উৎপাদন বাড়াতে এগিয়ে এল রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় এ আমার এ তোমার পাপ : দিলীপ মজুমদার জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (চতুর্থ পর্ব) : বিজয়া দেব রোহিঙ্গা সংকট — ত্রান সহায়তা ও কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে কি তিলোত্তমা সুবিচার পাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী বিবিসির ইয়ংগেস্ট হেডমাস্টার বাবর আলী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত সময় হোক বা পরিস্থিতি, প্রণাম সব শিক্ষককেই : প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (তৃতীয় পর্ব) : বিজয়া দেব
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ কৌশিকী অমাবস্যার-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (পঞ্চম পর্ব) : বিজয়া দেব

বিজয়া দেব / ৭৪ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

একধরনের নিষ্ঠুর জৈবিক প্রবৃত্তি ও অমোঘ নিয়তি কালো ছায়ার মত জগদীশ গুপ্তের গল্পবলয়ে আরেক অন্তর্বলয় নির্মাণ করেছে। “যাহা ঘটিল তাহাই সত্য” গল্পটিতে শিশুর অচেতন মনের ঈর্ষা ছোট ভাইটিকে হত্যা করিয়েছে। মা দেড় বছরের ছোট ছেলেটিকে বড় ছেলেটির কাছে রেখে গিয়েছিল জ্যোতিষীর কথা শুনতে, ফিরে এসে দেখে ছোট ছেলেটির বুকে ছোট্ট কাঁথাটির উপর ছোট দুটি পায়ের ছাপ, বড়ো ছেলে ঝন্টুর পায়ের মাপের। শিশুমনের জৈব প্রবৃত্তি নিষ্ঠুর রূপ ধারণ করে গল্পের মধ্যে এক ধরনের ধর্ষকামী প্রবৃত্তির জন্ম দিয়েছে।

ফ্রয়েড মানব প্রকৃতিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। একটি কামপ্রবৃত্তি, অপরটি মৃত্যুচেতনা। এই মৃত্যুচেতনা থেকে হত্যা ও আত্মহত্যার প্রবৃত্তি জাগ্রত হয়। ঝন্টুর ছোটভাইকে হত্যা করার প্রবৃত্তি ফ্রয়েডীয় মৃত্যুচেতনার ফসল হয়তো।

অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির দ্বারাই মানুষ চালিত, জগদীশের প্রতিটি লেখায় এই প্রবৃত্তি চালিত মানুষদের সাথেই পাঠকের নিরন্তর সাক্ষাৎ হয়। এজন্যে ভালমন্দের ব্যাপার কোথাও চোখে পড়েনা। প্রবৃত্তি দ্বারাই মানুষ উঠেবসে, সামাজিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে, তাদের নিজ নিজ কাজ করে, তারা অদ্ভুত ধরণের নিরাসক্ত। আদর্শ চেতনা, মানবতাবোধ থেকে তারা বহুদূরে অবস্থান করে।

লেখকের অনেকগুলি গল্প গ্রামকেন্দ্রিক, কিন্তু তবু তা সরলরৈখিক নয়, জটিলতাপূর্ণ। নাগরিক সভ্যতাই জটিলতার জন্ম দেয়, এই প্রচলিত ধারণাকে তাঁর গল্প একেবারে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এই জটিলতার বিচিত্র বেড়াজাল থেকে এদের মুক্তি নেই। জৈবিক প্রবৃত্তিসুলভ আচরণ আপাতবিরোধিতার জন্ম দিলেও ফ্রয়েডিয় মনস্তত্ত্বের আলোকে এই আপাতবিরোধিতা কেটে গিয়ে মানুষের অন্তর্লোকের দুর্বলতাগুলো মূর্ত্ত হতে থাকে। যৌন দুর্বলতা অপরাধের জন্ম দেয়, জগদীশ গুপ্তের গল্পের অনাস্বাদিত ব্যতিক্রমী চরিত্ররা অপরাধকে অপরাধ বলেই মনে করে না। এই দুর্বলতাগুলি এমনভাবে চরিত্রগুলো অবলম্বন করে আছে যে মনে হয় এই-ই স্বাভাবিক, মানুষ কত অসহায় তার প্রুবৃত্তির কাছে, মানুষের এই অসহায়ত্বকে মুখ্য ভূমিকায় দাঁড় করিয়ে লেখক চিরায়ত মানুষকে আলোকিত করেন। মনে হয় যেন পরোক্ষে মানবজীবন ধারার বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করেই লেখক এক কঠিন প্রতিবাদ করে গেছেন।

“অসংলগ্ন ভবিষ্যৎ” গল্পে অধ্যাপক সরোজাক্ষ সেন ভালবেসে বিয়ে করল অংশুময়ীকে, যে নারী অনেকের কাছেই প্রাপনীয়া ছিল। বিয়ে করেই সরোজাক্ষ সেন “আতঙ্কে আফশোসে সারা হইয়া গেল”। মনে হলো, এমন রূপৈশর্যশালিনীকে বিবাহ করাটা অবিমৃশ্যকারিতা, বিবাহ ব্যাপারটা গুরুভার, এমনই গুরুভার যা মানুষের বুকে চেপে থাকে, মানুষকে মুক্তি দেয় না, প্রতি মুহূর্তেই মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করে রাখে। অপরদিকে প্রতিবেশি সুশিক্ষিত, বাকপটু, পরিচ্ছন্ন পঙ্কজের সাথে অংশুময়ীর বিবাহ হবার কথা ছিল, কিন্তু অংশুময়ী স্বামী হিসাবে সরোজাক্ষকে পছন্দ করেছিল কেননা তার মনে হয়েছিল, পঙ্কজের সাথে লুডো খেলা চলে, সিনেমা দেখা চলে কিন্তু স্বামী হিসাবে গ্রহণ করা চলে না।

যাই হোক, বিবাহের পর সরোজাক্ষ ভাবনায় আছে স্ত্রীকে নিয়ে। তার মনে হয়, যেভাবে মা ভাই বোন অস্তিত্বের সাথে মিশে যায়, স্ত্রী তা নয়, সে সর্বদাই স্বতন্ত্র হয়ে থাকে এবং প্রতি মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয় স্বামীর দায়িত্ব ও ক্রিয়াকলাপের ধারাবাহিক অনুপুঙ্খকে। সুতরাং সরোজাক্ষ ভাবিত, এরপরই পঙ্কজের আগমন। দুটি শিক্ষিত ব্যক্তিত্বের সংশ্রবে যা অবশ্যম্ভাবী, উভয়ের তর্ক, বিষয়, “ইংরেজি বনাম বাংলা ভাষা”। সরোজাক্ষও তাতে অংশ নেয়। নিজের বক্তব্যের সারবত্তা নিশ্চয় করতে সরোজাক্ষ উঠে যায় তার পাঠের ঘরের আলমারি থেকে রবীন্দ্রনাথের বই আনতে। সেই ঘরে গিয়ে সে দেখে আলমারির চাবি সে রেখে এসেছে সেই ঘরে যে ঘরে তর্ক চলছিল। “সুতরাং তাহাকে ফিরিতে হইল এবং সেই ঘরের জানালার কাছে আসিয়া সে যে দৃশ্য চোখে পড়িল, সে দৃশ্যের স্বপ্নও সাংঘাতিক। দেখিল পঙ্কজ এবং অংশুময়ী পরস্পরের দিকে ঝুঁকিয়া আছে, পঙ্কজের বাঁ হাতখানা অংশুময়ীর গ্রীবা বেষ্টন করিয়া আছে, উভয়ে চুম্বনরত…মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্যে সরোজাক্ষের মনে হইল ফিরিয়া যাই কিন্তু পরক্ষণে সে নি:শব্দে প্রবেশ করিল। সরোজাক্ষ বলিল- কত সুখী হলাম তা বলতে পারিনে। বিয়ে করবার কিছুদিন পর থেকেই কেবল একই চিন্তায় আমার মনে তিলমাত্র শান্তি ছিল না, আমি আমার ঠিক মনের মতো করে স্ত্রী পালনের গুরুদায়িত্ব পালন করব কী করে। ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছিলাম। আমি নিষ্কৃতি পেয়েছি-অংশুময়ী আমার নয়- আপনার। আমার দায়িত্ব নেই।” এমনভাবে সে কথাগুলো বলল, মনে হলো যেন এধরণের দৃশ্যের জন্যে সে তৈরি হয়েই ছিল। যেন উন্মুখ হয়েই ছিল, তার ভাবনার প্রকৃতি প্রথম থেকেই ভিন্ন স্রোতে বইছিল। বিয়ে করার পর থেকেই স্ত্রীকে কেন তার আলাদা এবং স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বলে মনে হচ্ছিল সেখানেই অনেকগুলো প্রশ্নচিহ্ন উঠে আসে পাঠকের মনে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোবিশ্লেষণ একান্তভাবেই মৌলিক নি:সন্দেহে এবং এমন নিরাসক্ত স্বামীও বাংলাসাহিত্যে বিরল বলেই মনে হয়।

“মায়ের মৃত্যুর দিনে” গল্পটিতে অন্তর্লীন লোভের কাছে অসহায় হয়ে আছে কেশবলাল। মা বৃদ্ধা হয়েছেন, মৃত্যু সন্নিকট, এই অসহায় করুণ পরিস্থিতিতে কেশবলাল উদ্বিগ্ন হয়ে আছে মায়ের সোনাকে কোনক্রমে হস্তগত করার জন্যে। মেয়ে তার বড় হয়েছে, বিবাহযোগ্যা, সুতরাং স্বর্ণের তার প্রয়োজন আছে, ভাই রামলালের সঙ্গে এ নিয়ে ভাগ বাঁটোয়ারা হোক, সে তা চায় না। কেশবলাল ছটফটে লোক, মায়ের মৃত্যুর দিনে সে ছটফট করছে ভয়ে। ভয় মৃত্যুকে নয়, আসন্ন শ্রাদ্ধাদির ক্রিয়াকর্মে ব্যয়বাহুল্যের জন্যে নয়, ভাই রামলালের আগমনের ভয়ে। প্রবৃত্তি তার চরিত্রের অন্যদিকগুলো আড়াল করে দাঁড়িয়েছে, যেন তার প্রবৃত্তির কাছে সে একটি পুতুলমাত্র।

জগদীশ গুপ্তের গল্পে এই প্রবৃত্তিময়তা, নিরাসক্তি, তিক্ততা ইত্যাদির পেছনে কারণ খুঁজতে গিয়ে তাঁর ব্যক্তিজীবনের প্রতি অনুসন্ধিৎসু হয়েছেন অনেকেই। এটা সত্যি, ব্যক্তিজীবনেও লেখকের এক অদ্ভুত নিরাসক্তি দেখা যায়। আইনজীবী পরিবারের সন্তান হয়েও জগদীশ গুপ্ত হয়েছিলেন আদালতের সাধারণ স্টেনো টাইপিস্ট, তা-ও স্থির হয়ে একজায়গায় চাকুরি করতে পারেননি। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে তিক্ত হয়েছিলেন, এদেশে গল্প লিখে যে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অর্থটুকুও উপার্জন করা যায় না, সেজন্যে তাঁর ক্ষোভ ছিল। মুরলীধর বসুকে লেখা চিঠিতে তিনি লিখেছেন — ” গল্প অন্ন দেয় নাই, এ আশাও দেয় নাই….. মনে রাখিবেন, ৫ বছর আমি গল্পলেখক ও অন্নদাস ছিলাম, এখন গল্পের কথা ক্কচিৎ মনে হয়।” আবার লিখছেন — “…কিন্তু জিনিস যতই ভালো হোক তার যদি commercial value না থাকে, তবে needy লোক সে বস্তু উৎপন্ন করিতে চাহিবেন না। প্রেরণা ভবিষ্যৎ প্রভৃতি কথা ঋণদায়গ্রস্তকে বেশি সান্ত্বনা দিতে পারে না বলিয়াই মনে হয়।”

জীবন তাঁকে যে তিক্ততা দিয়েছে সেই তিক্ততার ছাপ অবশ্য তাঁর লেখায় খুঁজে বেড়ানোর অর্থ নেই, কেননা কল্লোলযুগের উত্তাল এলোমেলো হাওয়ার প্রবাহে প্রবাহিত না হলেও জগদীশ গুপ্ত যুগের প্রয়োজনকে খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন। সাহিত্যের কাছে যুগের চাহিদাকে ব্যক্ত করেছেন স্পষ্ট ভাষায় — “উন্মুখ প্রবৃত্তি লইয়াই এবং মনোভাবের বিশ্লেষণ করিয়াই এখন গল্প লেখা চলিত হইয়াছে। কাজেই মানুষের সঙ্গে যার যত পরিচয় বা সে বিষয়ে যার যত অন্তর্দৃষ্টি, তাঁর গল্প তত বিচিত্র হইবে।” [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন