সোমবার | ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:০২
Logo
এই মুহূর্তে ::
সাসারামের রোহতাসগড়, বৃহতের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ : নন্দিনী অধিকারী জমিদার রবীন্দ্রনাথ : আহমাদ ইশতিয়াক আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর, এবারও অধরা রইলো আলোচনা : সুমিত ভট্টাচার্য জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব চাষির দুঃখের ঘরে সাপের বাসা, আজও রেহাই নেই ছোবলের হাত থেকে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সল্টলেক তথা লবণহ্রদই কি কুচিনান : অসিত দাস পদ্মা বা পার্শ্বপরিবর্তনী একাদশী ব্রতকথা : রিঙ্কি সামন্ত জয়া মিত্র-র ছোটগল্প ‘ছক ভাঙার ছক’ কত দিন বিনা চিকিৎসায় চলে যাবে অসুস্থ মানুষের প্রাণ? প্রশ্ন দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের : সুমিত ভট্টাচার্য দেবী করন্দেশ্বরীর পূজো ঘিরে উৎসবের আমেজ মন্তেশ্বরের করন্দা : প্রবীর কুমার সামন্ত প্রেতবৈঠকে (প্ল্যানচেট) আত্মার আগমন : দিলীপ মজুমদার সংগীত সাধক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য : রিঙ্কি সামন্ত শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্যের অন্দরে বাহিরে বিরাজমান সিণ্ডিকেট : তপন মল্লিক চৌধুরী কবিতা সিংহ-এর ছোটগল্প ‘পশ্চিম রণাঙ্গন আজ শান্ত’ কলকাতার আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠী : অসিত দাস মঙ্গলবারের মধ্যে কাজে ফিরুন — সুপ্রিম ধমক, উৎসবে ফিরুন — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (পঞ্চম পর্ব) : বিজয়া দেব বিবিসির ইয়ংগেস্ট হেডমাস্টার বাবর আলী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত হাঁসের ডিমের উৎপাদন বাড়াতে এগিয়ে এল রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় এ আমার এ তোমার পাপ : দিলীপ মজুমদার জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (চতুর্থ পর্ব) : বিজয়া দেব রোহিঙ্গা সংকট — ত্রান সহায়তা ও কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে কি তিলোত্তমা সুবিচার পাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী বিবিসির ইয়ংগেস্ট হেডমাস্টার বাবর আলী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত সময় হোক বা পরিস্থিতি, প্রণাম সব শিক্ষককেই : প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (তৃতীয় পর্ব) : বিজয়া দেব রোহিঙ্গা সংকটের সাত বছর — বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন রবিবাবুর নোবেল রহস্য : সাইফুর রহমান জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (দ্বিতীয় পর্ব) : বিজয়া দেব স্যার এই পুরস্কার আপনারই প্রাপ্য — নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ডঃ আব্দুস সালাম : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ কৌশিকী অমাবস্যার-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (চতুর্থ পর্ব) : বিজয়া দেব

বিজয়া দেব / ৫৬ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জগদীশ গুপ্তের রচনাকাল ১৩৩৪ থেকে ১৩৬০ অবধি বিস্তৃত। যে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ঘটনাবলীতে ওই সময়ের পরিধি উদ্বেল, তার কোনও প্রত্যক্ষ প্রভাব তাঁর সৃষ্টিতে দেখা যায় না। তবে ওই সময়ের সুরকে তাঁর সৃষ্টি আত্মস্থ করে নিয়েছে। নৈরাশ্য, হতাশা, অস্তিত্ব সংকট, হতাশাজনিত ধূ ধূ শূন্যতা তাঁর সাহিত্যে শুধু বারবার আসেনি, একাধিপত্য করে গেছে।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন এবং যুদ্ধোত্তর সমাজের মূলসুরকে আত্মস্থ করে নিলেও জগদীশ গুপ্তের লেখার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য সেই সময় থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন, সেটি হলো অজ্ঞাত এবং অমোঘ এক শক্তির ওপর তাঁর সুগভীর বিশ্বাস। এইটি আশ্চর্য মনে হয়, অস্তিত্ব সংকটের ছিন্নমূল যন্ত্রণার চূড়ান্ত আধুনিকতা থেকে কীভাবে লেখক এই প্রাকৃতিক অমোঘ নিষ্ঠুর নিয়তিবাদে বিশ্বাসী হয়েছিলেন! প্রতিটি ঘটনার পিছনে যেন এক অদৃশ্য শক্তি ওৎ পেতে থাকে যা মানুষকে ভালো হতে দেয় না, পাপ থেকে মুক্তি পেতে দেয় না, সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে দেয় না, মানুষের কী অসহায় অবশ্যাম্ভাবী পরিণতি!

“অসাধু সিদ্ধার্থ” উপন্যাসে নটবর নামধারী ব্যক্তি দেশসেবক সিদ্ধার্থের মৃত্যুসময় উপস্থিত ছিল। জীবনের কলঙ্ক ও অসাধুতাকে ঢাকবার জন্যে সিদ্ধার্থের লাঠিটিকে সে হস্তগত করে, এবং সাজে সিদ্ধার্থ বসু। দেশসেবক সিদ্ধার্থ বসু সাজবার যোগ্যতা ছিল তাঁর, বিচারবুদ্ধি ছিল, ছিল ব্যক্তিত্ব, কথা বলবার অসামান্য ক্ষমতা, বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান। তাই নটবর সিদ্ধার্থ বসু হয়ে বাঁচতে চায়, কিন্তু চাইলেই অতীতকে মুছে ফেলা সহজ নয়, তার পূর্বতন সঙ্গীরা আসে, বারবার মনে করিয়ে দেয় তার কালিমালিপ্ত অতীত, সেই অতীতের দায়বদ্ধতাকে। বেঁচে থাকার স্পৃহা চলে যায় সিদ্ধার্থের। তার মনে হয় জীবনের অন্তরালে এমন কিছু আছে যা তাকে বানিয়েছে শঠ, অসামাজিক, ইতর। ভদ্রজীবনের সীমানায় তাকে কিছুতেই পা দিতে দেবে না সেই শক্তি, সেই শক্তি কি? সে কি মানুষের অন্ধ নিয়তি? সে কি অজ্ঞাত কোনও অপ্রতিরোধ্য শক্তি?

যার সংজ্ঞা নাই, যার স্বরূপ বলিয়া বোঝানো যায় না, সে অদৃষ্ট নয়, দৈব নয়, পুরুষকার নয়….এই সকলের মিলিত সে নিরুপাধিক অজ্ঞাত একটা বস্তু….।”

এই “অজ্ঞাত বস্তু”-ই সিদ্ধার্থকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেয় না। সিদ্ধার্থ মরতে যায়, মরতে গিয়ে অজয়া নামের এক যুবতীকে দেখে জীবনের আকর্ষণে সে ফিরে আসে। অজয়াকে ভালবাসে। অজয়া সিদ্ধার্থের বাকচাতুর্যে, ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়, ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয় দুজনের সম্পর্ক গভীরতার দিকে যেতে থাকে, সিদ্ধার্থ নতুন করে বাঁচতে থাকে। মিথ্যা পরিচয়ে যে ভালবাসা সে পাচ্ছে সে-ই তো মিথ্যা। তার অতীত তাকে অবিরাম বিক্ষত করে, তবু ভালবাসার অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ তাকে বাঁচিয়ে রাখে। সুস্থ জীবন তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে, অজয়ার সাথে তার বিবাহ স্থির হয়। সে বাঁচবে, মানুষের মতোই মানুষের আঙ্ক্ষাখা নিয়ে সে বাঁচবে। এ তার নিরন্তর সংগ্রাম, তিল তিল করে বেঁচে ওঠার সংগ্রাম একমুঠো সুস্থির জীবনের জন্যে-

“রিক্তা পৃথিবীর বুকের উপর যে দিন আদি প্রাণমুকুলটি শুক্তিকোষে মুক্তাটির মতো প্রথম সঞ্জীবিত হইয়া উঠিয়াছিল, সেইদিন হইতে এই বাঁচিবার প্রয়াস সংগ্রাম চলিয়া আসিতেছে -একমাত্র রব — বাঁচো, বাঁচো।”

কিন্তু সিদ্ধার্থ বাঁচে না, বাঁচতে পারে না, আসল সিদ্ধার্থের মাতামহ কাশীনাথ এগিয়ে আসেন, তার মুখোশের অন্তরালের জীবনকে নির্মমভাবে উদঘাটিত করেন। নকল সিদ্ধার্থ অসংকোচে স্বীকার করে নেয় কাশীনাথের সমস্ত অভিযোগকে। অবলীলায় অজয়ার ভাই রজতকে বলে —

“ভগবান জানের আমি নিরপরাধ, নিয়তির চক্রান্তে ভালবেসেছিলাম। ভালবাসার তাড়নায় আর প্রতিদানের লোভে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আমি তো সেই মানুষ।” আশ্চর্য স্বাভাবিকতায় শুধুমাত্র মানুষের পরিচয় দিয়ে সে চলে যায় সেই অন্ধকারের জগতের দিকে, তার বিশ্বাসে যে জগত তার জন্যে নিয়তি নির্ধারিত।

“লঘু-গুরু উপন্যাসে উত্তম নামে এক বারাঙ্গনা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চায়, বিশ্বম্ভর নামে এক ব্যক্তির সাথে সে ঘর করতে আসে, সেই ব্যক্তি এবং তার পারিপার্শ্বিক তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেয় না, উত্তমকে সংঘর্ষের কঠিন বাঁকাচোরা পথে চলতে হয়, বিশ্বম্ভরের মেয়ে টুকী উত্তমের হাতে মানুষ হয়, উত্তম তাকে পড়ায়, নৈতিক শিক্ষা দেয়, ধর্মকর্মে মন বসায়। উত্তমের ভয় টুকীকে যেন বারাঙ্গনার হীন জীবন যাপন করতে না হয়।

সেই টুকী বড় হয়ে ওঠে স্বয়ংসম্পূর্ণ কিশোরী হিসাবে, উত্তমের কাহিনি জেনেও সে তাকে শ্রদ্ধার আসনে বসায়, নিজের মা বলে ভাবে। কিন্তু টুকীর বিয়ের সম্বন্ধ গুলো ভেঙে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দোজপক্ষ পরিতোষ এগিয়ে আসে টুকীকে বিয়ে করতে। বিয়ের পর স্বামীর ঘরে সে দেখতে পায় সুন্দরী নামে এক স্ত্রীলোককে। এই সুন্দরী কে, পরিতোষের সাথে তার কি সম্পর্ক সেই উত্তরগুলি অতি সহজেই পেয়ে যায় টুকী। নির্দ্বিধায় সুন্দরী স্পষ্ট ভাষায় জানায় পরিতোষের সাথে তার অবৈধ সম্পর্কের কথা৷ পরিতোষও এতে কিছুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। বারাঙ্গনার সাথে যে জীবনযাপন করে এসেছে সেই টুকীর কাছে তো লুকোবার কিছুই নেই। এরপর অতি সহজেই নেমে আসে টুকীর জীবনের অতি স্বাভাবিক পরিণাম। পরিতোষ টুকীকে গণিকার রূপেই দেখতে চায়। শুরু হয় সংঘর্ষ, শেষ পর্যন্ত টুকীকে ফিরে যেতে হয়, পরিতোষের ঘর ছেড়ে সে “ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী অন্ধকারের” মধ্যে গিয়ে দাঁড়ায়।

“অসাধু সিদ্ধার্থ” ও “লঘু গুরু” দুটো উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে বিপরীতমুখী মিল। দুটোতেই দুটি চরিত্র সিদ্ধার্থ এবং টুকী (একজন অসাধু এবং অপরজনের মধ্যে অসাধুতার লেশমাত্র স্পর্শদোষ ঘটেনি) পেতে চায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবন, কিন্তু তারা পায় না, মানুষ হিসেবে একটাই মাত্র আকাঙ্খা তাদের, ভালবাসায় পূর্ণ ছোট্ট একখানি গৃহকোণ।

“অসাধু সিদ্ধার্থ” উপন্যাসটির বিরূপ সমালোচনা হয়েছিল ১৩৩৬ সালের শ্রাবণ সংখ্যা “মর্মবাণী” তে। সমালোচনাটি অস্বাক্ষরিত। বলা হয়েছিল “অসাধু সিদ্ধার্থ” উপন্যাসে লেখকের কথনশৈলীর ব্যক্তিগত ভঙ্গিমা (mannerism) লেখাটিকে একঘেয়ে ও দুষ্পাঠ্য করে তুলেছে। সর্বতোভাবে উপন্যাসটি একটি দুর্বল সৃষ্টি।

“লঘু গুরু” উপন্যাসটিকে রবীন্দ্রনাথ সমালোচনা করেছিলেন। সমালোচনাতে বিরূপতাই প্রকাশ পেয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের রুচিশীল মনন “লঘুগুরু” উপন্যাসের তথাকথিত কদর্য পারিপার্শ্বিককে মেনে নিতে পারেনি, উপরন্তু তিনি উপন্যাসটিতে খুঁজেছিলেন কার্যকারণ সূত্র। যা জগদীশের অনেক লেখাতেই খুঁজে পাওয়া যায় না।

মনুষ্যত্বের নীচের স্তরে যে জীবনপ্রবাহ চলিষ্ণু, সেই জীবনপ্রবাহ যেহেতু জগদীশ গুপ্তের উপজীব্য, এজন্যেই তার অনেক লেখার ঘটনা পরম্পরার মধ্যে কার্যকারণসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। “অসাধু সিদ্ধার্থ” ও “লঘু গুরু” দুটি উপন্যাসেই লেখক দেখিয়েছেন সমাজমানসের দুর্নিবার ক্ষমতা কিম্বা অদৃশ্য নিয়তির অলঙ্ঘনীয়তা। মানুষ সেক্ষেত্রে এক অসহায় ক্রীড়নক মাত্র। [ক্রমশ]


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন