সোমবার | ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৪৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নজরুল বাংলা সঙ্গীতাকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র : মনোজিৎকুমার দাস

মনোজিৎকুমার দাস / ৬৭৩ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৫ মে, ২০২২

বাংলা সঙ্গীতজগতের পঞ্চরতেœর মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ ) অন্যতম। বাংলা গান সৃজন, বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৬১-১৯৪১), দ্বিজেন্দ্রনাথ রায় (ডি.এল.রায়), অতুলপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও নজরুল ইসলামের অবদান স্বমহিমায় ভাস্বর। এরা বাংলাসঙ্গীতে নবতর মাত্রা সংযোজন করেন। এছাড়াও বংলা গানের জগতে রামপ্রসাদ সেন, দাশরথি রায়, রামনিধি গুপ্ত, লালন শাহ, হাসন রাজা, বিজয় সরকার প্রমুখ বাংলা গানে নিজস্বধারার প্রবর্তন করেন। তারা তাদের গানকে নিজস্বধারার গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ রাখেন। অন্যদিকে বাংলা গানের জগতের এ পঞ্চরত্ন রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত ও নজরুল ইসলাম বাংলা গানের নানা শাখায় বিচরণ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব সৃজনশীলতার মাধ্যমে বাংলা সঙ্গীতজগতকে বিশেষভাব ঋদ্ধ করেন।

বাংলাসঙ্গীত সৃজনে কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনন্যসাধারণ প্রতিভাকে স্বল্পপরিসরে উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। বাংলা সঙ্গীতাকাশে নজরুল ইসলামের আবির্ভাব ধ্রুবতারার মতো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি সঙ্গীত ও অভিনয় জগতে একাধারে গীতিকার, সুরকার ,গায়ক ও অভিনেতা। একজন মানুষের মধ্যে এতগুলো গুণের সমাবেশ খুব বেশি দৃষ্ট হয় না।

নজরুলের স্বদেশীগান ব্রিটিশের শৃঙ্খল মোচনে অজেয় শক্তি যুগিয়েছিল। আমাদের একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামেও তার জাগরণীমূলক গান প্রেরণার উৎস ছিল। তাঁর লেখা “চল চল উর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল—” আমাদের রণ সঙ্গীত।

গানের জগতে নজরুলের আগমন বালক বয়সে। রাঢ় বাংলার চুরুলিয়া গ্রামের ছেলে দুখু মিয়ার লেটোর দলে গান লেখা আর অভিনয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু। শৈশবে রাঢ় বাংলা বর্ধমানের চুরুলিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক লেটো গানের যে পাঠ তিনি তাঁর চাচা কাজী বজলে করিম ও অন্যান্যদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছিলেন তা হৃদয়ে ধারণ করে সৃজনশীলতায় বাংলা সঙ্গীতজগতকে ঋদ্ধ করেন। স্কুলে পড়াকালে তিনি তাঁর শিক্ষক সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল তাঁকে সঙ্গীতে অনুপ্রাণিত করেন। করাচী পল্টনের সৈনিকজীবন, কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানীর সাথে সম্পৃক্ততা তাকে সঙ্গীতজগতের উচ্চাসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। ওস্তাদ জমির উদ্দিন খাঁর সাহচর্যে তিনি তাঁর সঙ্গীত প্রতিভাকে প্রস্ফুটিত করার সুযোগ পান। তাছাড়াও ওস্তাদ কাদের বখশ, দবীর খাঁ, জ্ঞানপ্রকাশ গোস্বামী প্রমুখের সান্নিধ্যও তাঁকে সঙ্গীতে বিশিষ্টতা দান করে।

এক পর্যায়ে কলকাতার গ্রামোফোন কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত হবার সুবাদে নজরুল ইসলাম লঘু হাসির গান থেকে শুরু করে ধ্রুপদী সঙ্গীত রচনা শুরু করেন। বাংলা গানে এমন কোন শাখা নেই যেখানে তাঁর পদচারণা নেই। তিনি বাংলা গানের যে সব নব নব মাত্র যোগ করেছেন সেগুলো হচ্ছে— ভজন, কীর্তন, শ্যামা সঙ্গীত, জারি— সারি, ভাটিয়ালি, পল্লীগীতি, মুর্শিদি, মারফতি, হামদ, নাত, আধুনিক আঙ্গিকের প্রেম পর্যায়ের গান, গজল, রাগ সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গান, বাউল সঙ্গীত, ঝুমুর, গণসঙ্গীত, হাসির গান ইত্যাদি।

বাংলা সঙ্গীতজগতে নজরুল ইসলাম ছাড়া অন্য কোন সঙ্গীজ্ঞ গানের জগতে এতটা বৈচিত্রপূর্ণ অবদান রাখতে পারেননি। তিনি হিন্দুস্থানী ভজন আঙ্গিকের গানকে নিজস্ব সৃজনশীলতার মাধ্যমে বাংলা ভজন সঙ্গীতের সফল গীতিকার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রসঙ্গক্রমে তাঁর লেখা ও সুরারোপিত হিন্দুধর্মীয় ভজন আঙ্গিকের ভক্তি সঙ্গীতের দু’এক কলি এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে। ‘হে গোবিন্দ রাখো চরণে,’ ‘সখি সে হরি কেমন বল, খেলিছ এ বিশ্ব লইয়ে বিরাট শিশু আনমনে,’ ‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’, মন জপনাম শ্রী রঘুপতি রাম’ ‘আজি মনে মনে লাগে হরি’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

নজরুল ইসলামকে ইসলামী ধর্মীয় হামদ, নাত আঙ্গিকের একছত্র সম্রাট। এ প্রসঙ্গেও তাঁর লেখা ও সুরারোপিত ইসলাম ধর্মবিষয়ক হামদ ও নাতের উদারহণ দিতে হয়। ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ে কোলে’, ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ,’ ‘মসজিদের পাশে আমার কবর দিও ভাই,’ ইত্যাদি নিঃসন্দেহে এ আঙ্গিকে গানে নবতর সংযোজন।

হিন্দুধর্মীয় ভজনাঙ্গিকের কীর্তন ছাড়াও তিনি শ্যামাসঙ্গীতে নতুনমাত্র দান করেন। রামপ্রসাদ সেনের শ্যামা সঙ্গীতের কথা ও সুরকে পরিশীলিত করে নতুন শব্দাবলী, নতুন ভাব ও ঘরাণায় নজরুল ইসলাম নিজস্ব ধারায় শ্যামাসঙ্গীত রচনা করে ভক্তিমিশ্রিত ধারায় সুরারোপ করেন। ভাবলে অবাক হতে হয়, ‘বলরে জবা বল, কোন সাধনায় পেলি রে তুই মায়ের চরণতল’, ‘শ্যামা নামের লাগলো আগুন’, ‘আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায়,’ শ্মশানকালীর রূপ দেখে যা’ ইত্যাদি শ্যামাসঙ্গীতগুলো নজরুল ইসলামের রচিত ও সুরারোপিত।

নজরুল জাতপাতের অনেক উর্ধে ছিলেন তার প্রমাণ মেলে তাঁর কবিতা, গান ও অন্যান্য রচনায়। পুত্র বুলবুলে মৃত্যুর পর নজরুল মানসে বিষাদ ও আধ্যাত্মিকতা আসন গেড়ে বসে। তিনি হিন্দু মুসলিম দু-সম্প্রদায়ের ভক্তিসঙ্গীত রচনা, সুরারোপে মনোনিবেশ করেন। কীর্তনাঙ্গিকের প্রাচীন পদাবলী সাহিত্যে পরিশীলিত বাংলা রূপ দিতে নজরুল ইসলাম বিশেষ অবদান রাখেন।

রবীন্দ্রনাথ তার পূজা পর্যায়ের গানে নতুন মাত্র দান করেন। অন্যদিকে, নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথের মতো বিমূর্তধারার পূজা আঙ্গিকের গানের পরিবর্তে মধ্যযুগের বৈষ্ণবপদাবলীকে শ্রীকৃষ্ণের কীর্তনের আঙ্গিকে নতুনমাত্র দান করেন কথা আর সুরের নবতর ধারায়। তাঁর এ ধারার গানের সংখ্যা প্রচুর এবং শ্রেষ্ঠত্বেও ঋদ্ধ। ‘হৃদিপদ্মে চরণ রাখো বাঁকা ঘনশ্যাম’, এলো নন্দের নন্দন নবঘনশ্যাম, ‘কৃষ্ণজী, কৃষ্ণজী’, ‘বজ্রগোপী খেলে হরি,’ ইত্যাদি।

চিরায়ত বাংলার মাটি-মানুষ-নদীর গান জারি, সারি, ভাটিয়ালি ও পল্লীগীতি। নজরুল এসব গানেও নবতর মাত্র যোগ করেন তাঁর নিজস্ব কথা ও সুরে। ‘বাঁশি বাজায় কে কদম তলায়’, ‘ওগাললিতে, নদীর এ কূল ভাঙ্গে ও কূল গড়ে, এই তো নদীর খেলা।’, ‘পদ্মার টেউরে, মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যারে,’ ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্রেম পর্যায়ের গানে নজরুল ইসলাম উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলাসঙ্গীত জগতের নজরুলের প্রেমের গান কালজয়ী অনুষঙ্গে হৃদয়গ্রাহী। তাঁর প্রেমের গানের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় গানগুলোর আবেদন চিরন্তন। তাঁর প্রেমের গানগুলোর কয়েকটি কথা এখানে না বললেই নয়। ‘শাওনো রাতে যদি’ তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়,’ ‘যার হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই,’ ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী’ ইত্যাদি। তাঁর প্রেমের গানে রোমান্টিকতা বিশেষ ভাবে উঠে উঠেছে। ‘তোমার হাতের সোনার রাখি,’ ‘আমি বনফুল গো’, ‘দূর দ্বীপবাসিনী চিনি তোমারে চিনি’, ‘রুমঝুম ঝুমঝুম নূপুর পায়ে’, ‘চেয়না সুনয়না আর চেয় না এ নয়ন পানে’, ‘পর পর চৈতালী সাঝে কুসুমী শাড়ি’।

নজরুল ইসলাম রাগ সঙ্গীতেও অনন্যসাধারণ। তিনি রাগাশ্রিত ধ্রুপদ, খৈয়াল, টপ্পা, ঠুংরী, গজল, পিলু, খাম্বাজ, আঙ্গিকের বহু বাংলা গান রচনা করেন। তিনি নিজস্ব সৃজনশীলতার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাগেরও সৃষ্টি করেন। সেই সমস্ত রাগগুলোকে বাংলা সঙ্গীতে নতুন ধারার জন্ম দিতে সক্ষম হন। উদাহরণ হিসাবে তার লেখা ও সুরকরা ‘কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া (খাম্বাজ), ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়’, (ছায়ানট), অরুণকান্তি কে গো যোগী ভিখারী (আহির ভৈরব), হিন্দুস্থানী রাগ সঙ্গীতের আঙ্গিকে রচিত ‘আলগা করো খোঁপার বাঁধন, কোন সুরে তুমি গান শোনালে ভিনদেশী পাখি’, ‘শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলো না,’ ‘চেওনা সুনয়না, আর চেওনা,’ ‘সই ভাল করে বিনোদবেণী বাঁধিয়া দে,’ ইত্যাদি গানগুলো বাংলা গানের জগতের অপূর্ব সম্পদ।

ঝুমুরের ঢঙে লেখা ‘হলুদ গাঁদার ফুল’, এই রাঙা মাটির পথে লো’, ‘ও কন্যারে পায়ের নূপুর বাজারে’ প্রভৃতি গানগুলো বাংলা গানের জগতে নজরুলের অনন্য সংযোজন। সবাক চলচ্চিত্রের জন্য তিনি যে সব গান রচনা করেন তা কালজয়ী আসন লাভ করে। তার লেখা চলচ্চিত্রের গানগুলোর মধ্যে ‘গভীর নিশীতে ঘুম ভেঙে যায়,’ ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়,’ যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারে নাই, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী’ ইত্যাদি গানগুলো আজও সমান জনপ্রিয়। বাউল সঙ্গীতের আঙ্গিকে লেখা গানগুলো বাংলা সঙ্গীতে নবতর সংযোজন। বাউল আঙ্গিকের গানের মধ্যে ‘আমি ক্ষ্যাপা বাউল’, ‘আমি বাউল হলাম ধূলির পথে লয়ে তোমার নাম’ ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো।

নজরুল ইসলামের তাঁর নিজের গানের প্রতি চরম আত্মবিশ্বাস ছিল। তিনি তাঁর গানের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘সাহিত্যে দান আমার কতটুকু তা আমার জানা নেই। তবে এইটুকু মনে আছে সঙ্গীতে আমি দিতে পেরেছি’। নজরুলের এ কথার কোন প্রকার অত্যুক্তি নেই।

পরিশেষে নজরুল ইসলামের গানের প্রচার প্রসার ইত্যাদি প্রসঙ্গে বলতে হয় তাঁর হাজার হাজার গানের সংরক্ষণ, প্রচার, প্রসার যেমন ভাবে হওয়া উচিত সেভাবে কিন্তু হচ্ছে না। তারঁ গানের সুরবিকৃতি রোধের জন্য তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে মনে হয় না। এ সত্ত্বেও বলা যায়, তিনি বাংলা সঙ্গীতাকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দীপ্যমান থাকবেন চিরকাল।

মনোজিৎকুমার দাস, লাঙ্গলবাঁধ, মাগুরা, বাংলাদেশ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন