শুক্রবার | ৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:১০
Logo
এই মুহূর্তে ::
ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় হুগলির খানাকুল থানাকে দুটি করার দাবিতে সরব এলাকার বাসিন্দারা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা নামের ব্যুৎপত্তি, নতুন আলোকপাত : অসিত দাস আবার সেই হাথরস! এবার স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলেবাবা : তপন মল্লিক চৌধুরী সন্ন্যাসী ও সুন্দরী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর ছোটগল্প ‘একটা পিস্তল ও ডুমুর গাছ’ ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় সুলেখা সান্ন্যাল-এর ছোটগল্প ‘ঘেন্না’ সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (শেষ পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী শোভারাম বসাকের লবণের ব্যবসা : অসিত দাস রাখাইনে সংঘাত ও সেন্টমার্টিন পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন খেলার মাঠ থেকে চেম্বারে : রিঙ্কি সামন্ত ছড়া কি শিশুসাহিত্য? : লুৎফর রহমান রিটন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা দিবস ও ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মজয়ন্তী পালন : দীপাঞ্জন দে সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (তৃতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব) : গীতা দাস সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (দ্বিতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (চতুর্থ পর্ব) : গীতা দাস সাবঅলটার্ন দৃষ্টিতে কলকাতার লবণচিহ্ন : অসিত দাস মোদীকে চাপে রাখতে নীতীশ-নায়ডুর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা দাবি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (প্রথম পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বাঁধে ইঁদুরের তৈরি গর্ত দিয়ে ঢোকে বন্যার জল চলছে সংস্কারের কাজ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (তৃতীয় পর্ব) : গীতা দাস কবি সঞ্জীব প্রামাণিক, আবহমান বাংলা কবিতার পথে হেঁটে-যাওয়া এক কবিতাভিক্ষুক : অমৃতাভ দে সৌমেন দেবনাথ-এর ছোটগল্প ‘বিলাসী’ বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (দ্বিতীয় পর্ব) : গীতা দাস সাত্যকি হালদার-এর ‘ছোটগল্প’ কাজলদিঘি ডায়েটে আনতে হবে কয়েক টুকরো নারকেল তাহলেই কেল্লাফতে : রিঙ্কি সামন্ত বাতাসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও বৃহৎ শিল্প গড়ে তুলতে বাঁশগাছের কদর বাড়ছে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (প্রথম পর্ব) : গীতা দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই জগন্নাথদেবের শুভ স্নানযাত্রার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

শোভারাম বসাকের লবণের ব্যবসা : অসিত দাস

অসিত দাস / ১১১ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

শোভাবাজারের স্রষ্টা শোভারাম বসাক ছিলেন একজন সফল লবণব্যবসায়ী। বৌবাজারের বিশ্বনাথ মতিলাল ও শ্যামবাজারের কৃষ্ণরাম বসুর আগের যুগের মানুষ তিনি। সুতানুটিতে তাঁর কাপড়ের ব্যবসার কথা জানেন সকলে, কিন্তু তাঁর লবণের ব্যবসার কথা সেভাবে প্রচারিত হয়নি। মৃত্যুকালে তাঁর গুদামে তিন লক্ষ নিরানব্বই কেজি লবণ মজুত ছিল।

জোব চার্নকের ১৬৯০-এ কলকাতায় ঘাঁটি গড়ার সময় আজকের শোভাবাজার ছিল না৷ ‘শোভাবাজার’ তখন সুতানুটির অন্তর্গত পাবনার ‘বাসনা’ নামক একটি গণ্ডগ্রাম৷ হুগলির আদিসপ্তগ্রামের বসাক (বসুক) ও শেঠরা কলকাতার আদি বাসিন্দা হিসেবে ‘জঙ্গল-কাটা’ ও শহরপত্তনের কারিগর৷ সুতানুটির যে বিখ্যাত সুতার হাট তা বসাকদের হাত ধরেই পূর্ণ বিকাশ লাভ করে৷ বসাক বংশের বিখ্যাত পুরুষ শোভারাম বসাক পলাশির যুদ্ধের আগে ও পরে বেশ কয়েক দশক ধরে কলকাতার অন্যতম ধনী ও গণ্যমান্য ব্যবসায়ী হিসেবে দাপট দেখিয়েছিলেন, তাঁর সামাজিক প্রতিপত্তি ছিল অসীম৷ বস্তুত শোভাবাজার রাজবংশের আদিপুরুষ মহারাজ নবকৃষ্ণ দেব যখন মুনশি হিসেবে ইংরেজের গোলামি ও খিদমতগারি করতেই ব্যস্ত, তখন শোভারাম বসাক ও গোবিন্দরাম মিত্র পুরোনো কলকাতার বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে বাঙালি সমাজ ও খাস ইংরেজ মহলের স্বীকৃতি পেয়ে গেছেন৷

পলাশির যুদ্ধের এক বছর আগে (১৭৫৬) নবাব সিরাজদৌল্লা কলকাতা আক্রমণ করেন৷ যে সমস্ত বিখ্যাত ব্যক্তি তখন কলকাতা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাননি, ইংরেজেদের বিরুদ্ধাচরণ করেননি এবং নিজেরা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন, তাদের জন্য পলাশির যুদ্ধজয়ের পর নবাব মিরজাফর ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন৷ শোভারাম বসাকের প্রতিপত্তি এতটাই ছিল যে তিনি নিজের তো বটেই, নিজের আশ্রিত ব্যক্তিদের জন্যও যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন৷ গোবিন্দরাম মিত্র ছিলেন ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে৷ শোভারাম বসাক বড়োবাজার তথা কলুটোলার বাসিন্দা হলেও সমগ্র উত্তর কলকাতা জুড়ে তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়ানো ছিল৷

তিনি একদিকে দেশীয় সমাজে আদৃত ছিলেন, অন্যদিকে ইংরেজের কাছেও তাঁর মানসম্মানের খামতি ছিল না৷ কথিত আছে, তাঁর গৃহদেবতা ‘শ্যামরায়’-এর নামানুসারে ‘শ্যামবাজার’ গঠিত হয়৷ ‘শ্যামপুকুর’ নামও এসেছে শ্যামরায় থেকে৷ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী তথা কলকাতার তৎকালীন জমিদার হলওয়েল সাহেব একবার শ্যামবাজারের নাম পালটে ‘চার্লসবাজার’ করেছিলেন৷ শোভারাম বসাক প্রচুর আইনি লড়াই করে নাম ‘শ্যামবাজার’ই বহাল রেখেছিলেন৷ আমার মনে হয় শ্যামরায়ের নাম থেকে নয়, সামুদ্রিক লবণ অর্থাৎ শ্যাম থেকেই শ্যামবাজারের নামকরণ হয়েছিল। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ শ্যাম শব্দের অন্যতম অর্থ আছে, সামুদ্রিক লবণ’। শোভারাম বসাকের বিখ্যাত সুতার হাট ছিল সুতানুটিতে৷ এই সুতা-হাটাই সম্ভবত ‘শোভাবাজার’ নামে পরিচিতি লাভ করে৷

শোভারাম ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তাঁর দুই পুত্র হরিমোহন এবং মদনমোহনছিলেন তাঁর ব্যবসাসম্পত্তির উত্তরাধিকারী। শোভারাম তার উত্তরাধিকারীদের জন্য একটি বিশাল সম্পত্তি রেখে যান যার মধ্যে একত্রিশটি বাড়ি এবং আটটি বাগান ছিল। তিনি একটি সফল ব্যবসাও রেখে গেছেন। তাঁর ব্যবসায়িক হিসাব থেকে জানা যায়, পঁচিশ হাজার দুইশ কেজি সুতি কাপড়, তেরো হাজার আটশ কেজি সুতা, একশ কেজি সিল্ক, তিন লাখ নিরানব্বই কেজি লবণ, আটানব্বই কেজি মুক্তা, একশো তেরোটি হীরা, পঁয়ত্রিশটি রুবি, অঢেল সোনার মুদ্রা এবং নগদ টাকা। তিনি পাঁচ লাখ সাতাশ হাজার একশ বারো টাকার বন্ডও রেখে গেছেন।তখনকার যুগে এটি এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ এবং সম্পত্তি।

শোভারাম বসাকের নাম থেকেই যে ‘শোভাবাজার’, এ কথা কলকাতা বিষয়ক কোনো ইতিহাস গ্রন্থে লেখা নেই, প্রত্যেক বইয়েই শোভাবাজার নামের সঙ্গে রাজা নবকৃষ্ণের রেফারেন্স টেনে আনা হয়েছে৷ গবেষক সুকুমার সেন লিখছেন, ‘ঠিক বানান হইবে সভাবাজার, নবকৃষ্ণের ‘রাজসভা’ হইতেই এই নামের উৎপত্তি’৷ অথচ হরিসাধন মুখোপাধ্যয় লিখিত ‘কলিকাতা সেকালের ও একালের’ পুস্তকে এই রকম কোনো সোচ্চার ঘোষণা নেই৷ এই বইয়ে বলা হয়েছে যে ১৭৭৫-৭৬-এ মাতৃবিয়োগ ঘটলে মহারাজ নবকৃষ্ণ জাঁকজমক করে দেশের রাজা-মন্ত্রী-অমাত্য-রাজকর্মচারী ও জমিদারদের নিমন্ত্রণ করেন৷ চাঁদের হাট বসে যায়, ভোজসভার রাজসূয় যজ্ঞ সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়৷ সেই থেকেই নাকি সুতানটির ‘পাবনা-বাসনা’ সভাবাজার নাম ধারণ করে৷ তা থেকেই শোভাবাজার৷ নবকৃষ্ণের রাজসভার নির্দিষ্ট স্থল হিসেবে কোনো দাবি করা হয়নি হরিসাধনের বইয়ে৷

যাই হোক, হরিসাধনের বই থেকে জানা যাচ্ছে, রাজা নবকৃষ্ণ ইংরেজের মুনশিগিরি ও মনসবদারি করতে গিয়েই জীবনের অর্ধেক কাটিয়ে ফেলেন৷ অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে তাঁর সামাজিক প্রতিপত্তির পেছনে সময় দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ মায়ের মৃত্যুর পর তিনি সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর দিকে নজর দেন৷ ওয়ারেন হেস্টিংস বড়োলাট হিসেবে ১৭৭২-এ কলকাতায় ফিরে এলে একদা তাঁর ফার্সি শিক্ষক ও বাল্যবন্ধু হিসেবে স্বীকৃত নবকৃষ্ণ অনেক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নেন৷ যথা — সুতানুটির তালুকদারি অর্জন, মহরাজ নন্দকুমারের হাত থেকে ‘জাতিমালা কাছারি’ ছিনিয়ে নেওয়া, নিজ সম্পদ ও অর্থ ছড়িয়ে কায়স্থসভার শিরোমণির স্বীকৃতি পাওয়া৷

আমার মনে হয়, এই পর্বেই শোভাবাজার নামটির স্রষ্টার কৃতিত্ব নেওয়ার বাসনা তাঁর মাথায় ভর করে৷ তাই মাতৃশ্রাদ্ধে বিরাট ভোজসভা ও চাঁদের হাট বসিয়ে দিয়ে তিনি দিকে দিকে ‘সভাবাজার’-এর ব্যপক প্রচার শুরু করে দেন৷ বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতে, এইভাবে ‘সভাবাজার’ হওয়া এবং ‘সভাবাজার’ থেকে শোভাবাজর নামটি আসার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ৷ উপরন্তু শোভারাম বসাকের সামাজিক সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেক বেশি হওয়ায় ও পাশেই শ্যামবাজারের সঙ্গে শোভারামের ‘শ্যামরায়’ বিগ্রহের সাক্ষাৎ যোগ থাকায় মনে হয় শোভারামের পক্ষেই শোভাবাজারের জনক হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা৷ সম্প্রতি প্রাপ্ত একটি তথ্য জানাচ্ছে, ইংরেজরা শোভারাম বসাককে উল্লেখ করতেন (Sooberam Bysack) বলে৷ (Sooberam Bysack Ghat) পুরোনো কলকাতার অতি প্রাচীন এক ঘাট৷ সেইজন্যেই কোনো কোনো ঐতিহাসিক শোভাবাজারকে ‘সুবাবাজার’ বলেও উল্লেখ করেছেন৷ এই ‘সুবা’ যে শোভারামের ইংরেজি বানানের (Sooberam) সুবা তা কোনে ঐতিহাসিক এতাবৎ বলেননি৷ এর কারণ তাঁরা জানতেন না৷ বোঝাই যায় শোভাবাজার রাজবংশের প্রথম পুরুষ রাজা নবকৃষ্ণ শোভারাম বসাকের কৃতিত্বকে নিজের বলে জাহির করেছেন৷ তবে বেশিরভাগ ইংরেজ ইতিহাসবিদের বইয়ে নবকৃষ্ণের নাম উল্লেখ পর্যন্ত করা হয়নি৷ শোভারাম বসাকই কিন্তু সেখানে সসম্মানে জায়গা পেয়েছেন৷ তাই মনে হচ্ছে, বস্ত্র ও লবণসম্রাট শোভারাম বসাকই শোভাবাজারের স্রষ্টা, রাজা নবকৃষ্ণ নন৷


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন