প্রখ্যাত সাহিত্যিক শওকত ওসমানের ১০৭তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হলো পশ্চিমবাংলায় তাঁর জন্মভূমি, হুগলির খানাকুল থানার সাবলসিংহপুর গ্রামে। ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সেই উপলক্ষে ২ জানুয়ারি সাবলসিংহপুর গ্রামে স্থানীয় ইউথ রিং ক্লাব, শওকত ওসমান স্মৃতির রক্ষা কমিটির উদ্যোগে কলকাতার বিশ্বকোষ পরিষদের সহযোগিতায় একটি বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি কবি প্রশান্ত মানিক, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক ইতিহাস বিশেষজ্ঞ তথা সাহিত্যিক, দেবাশিস শেঠ, এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমিটির সহ-সভাপতি, মানিক পন্ডিত, সম্পাদক, শওকত আলী-সহ এলাকার বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি সম্পন্ন মানুষজন।
শওকত ওসমানের জন্ম সাবলসিংহপুর এর এক সাধারন কৃষক পরিবারে। তাঁর পূর্ব নাম ছিল আজিজুর রহমান, পিতার নাম মো এহিয়া, মাতার নাম গুলজান বেগম। খানাকুলেই তাঁর শৈশবের শুরু। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে নন্দনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসা এবং পরবর্তীকালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম জীবনে ১৯৪১ সালেই কলকাতা কর্পোরেশনে ৮০ টাকা বেতনে চাকরি গ্রহণ করেন। পরে বাংলার তথ্য বিভাগের সরকারি চাকরি করেন। ১৯৪১ সালে কমার্শিয়াল কলেজে ১২৫ টাকা বেতনে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ববাংলায় চলে যান এবং সেখানে চট্টগ্রাম কলেজ অফ কমার্সে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজে অধ্যাপনার কাজে যুক্ত হন।
পরবর্তীকালে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে কিছুদিন তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। একাধারে নাটক গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ রম্য রচনা ইত্যাদিতে তিনি সিদ্ধ হস্ত ছিলেন। তার কালজয়ী উপন্যাস জননী, ক্রীতদাসের হাসি ইত্যাদি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দান করেছে। বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে জননী উপন্যাসটি। সাহিত্যের অবদানের জন্য ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে একুশে পদক, ১৯৯৭ সালের স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ইত্যাদি পদক ও পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আজাদ তাকে ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’ আখ্যা দিয়েছেন। স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি প্রশান্ত মানিক জানিয়েছেন, ‘শওকত ওসমান যে খানাকুলের ভূমিপুত্র সে কথা আমরা অনেক পরে জেনেছি। তিনি আমাদের গর্বের খানাকুলকে আরো গৌরবান্বিত করেছেন, এ আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমরা স্মৃতিরক্ষা কমিটি স্থাপন করে প্রতিবছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতি রক্ষা করে চলেছি’।
প্রাবন্ধিক, গবেষক, সাংবাদিক দেবাশিস শেঠ বলেন, — অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করলেও বাংলাদেশে জাতির কথাশিল্পী বলা হয় শওকত ওসমানকে। হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন, ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’। ৪৭ এর দেশভাগের পর চলে এলেন পশ্চিম বাংলা থেকে পূর্ব বাংলায়, হয়ে উঠলেন বাংলা ভাষার এক প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক। একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, রম্য সাহিত্যিক, শিশু সাহিত্যিক তিনি। তাঁর সাহিত্য বহুল বিস্তৃত। বহু প্রখ্যাত সাহিত্যিক উঠে এসেছেন তাঁর হাত ধরে।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কিছুদিন কলকাতার একটি স্কুলেও শিক্ষকতা করেছেন। সেখানেই প্রখ্যাত অভিনেতা উত্তমকুমারকে ছাত্র হিসেবে পেয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে শওকত ওসমান ছিলেন এক উচ্চকিত কণ্ঠের অধিকারী। ক্রীতদাসের হাসি তার বিখ্যাত উপন্যাস। ১৯৩৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার কাওসার আলীর মেয়ে সালেহা খাতুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ছয় সন্তান হচ্ছেন- বুলবন ওসমান, আশফাক ওসমান, ইয়াফেস ওসমান, তুরহান ওসমান (প্রয়াত), জাঁ নেসার ওসমান ও কন্যা আনফিসা আসগর।
নতুন তথ্য জানলাম,
সুন্দর একটি তথ্য পরিবেশনের জন্য দেবাশীষ বাবুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ