এডওয়ার্ড অ্যাভেলিং (Edward Bibbins Aveling) (১৮৪৯-১৮৯৮) // এলেনরের স্বামী ও কার্ল মার্কসের জামাই
এডওয়ার্ড অ্যাভেলিং লণ্ডনের স্টোক নিউইংটনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হ্যারো স্কুলে পড়াশুনো করেন। তারপর লণ্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে ডাক্তারি পড়েন। কৃতী ছাত্র ছিলেন তিনি। স্নাতক হবার পরে তিনি লণ্ডন হাসপাতালে তুলনামূলক শারীরতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপক হন।
চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব তাঁকে প্রভাবিত করে। ফলে ধর্মবিশ্বাসের উপর আস্থা হারান তিনি। তিনি ‘সেকুলার সোসাইটি’তে যোগদান করেন এবং চার্লস ব্রাডলাউ ও অ্যানি বেসান্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ব্র্যাডলাউ-এর ‘দ্য ন্যাশনাল রিফর্মার’ পত্রিকায় তিনি লিখতে শুরু করেন। ১৮৮১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘দ্য স্টুডেন্টস ডারউইন’। ঈশ্বরবিশ্বাস নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলায় লণ্ডন হাসপাতাল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
অ্যানি বেসান্ত লক্ষ্য করেছিলেন যে কঠিন বিষয়কে সহজভাবে পরিবেশনের দক্ষতা আছে অ্যাভেলিং-এর। তাই তিনি বিভিন্ন স্থানে রবিবারে ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে বক্তৃতার আয়োজন করেন এবং অ্যাভেলিংকে বক্তৃতা দিতে অনুপ্রাণিত করেন। ‘হাউজ অব কমন্সে’র নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে ব্র্যাডলাউকে সাহায্য করেন।
১৮৮১ সালে অ্যাভেলিং-এর সঙ্গে চার্লস ডারউইনের সাক্ষাৎ হয়। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করেন। সেই আলোচনা নিয়ে অ্যাভেলিং যে বইটি লেখেন তার নাম ‘দ্য রিলিজিয়াস ভিউজ অব চার্লস ডারউইন’। এই বইতে তিনি দাবি কেন যে ডারউইন একজন নাস্তিক।
‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক অস্যোসিয়েশনে’র নেতা ছিলেন এইচ.এইচ.হাইণ্ডম্যান। তাঁর সঙ্গে অ্যাভেলিং-এর পরিচয় করিয়ে দিলেন অ্যানি বেসান্ত। ১৮৮২ সালে অ্যাভেলিং যখন লণ্ডন স্কুল বোর্ড নির্বাচনে দাঁড়ালেন, তখন ‘সেকুলার সোসাইটি’ ও ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ফেডারেশন’ তাঁর হয়ে প্রচার করেন। অ্যাভেলিং নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তবে ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ফেডারেশনে’র কিছু সদস্য প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন অ্যাভেলিং-এর নৈতিকতা নিয়ে। ১৮৭২ সালে তিনি বিয়ে করেছিলেন ইসাবেল ফ্রাঙ্ককে। কিন্তু বহু নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। সম্পর্ক ছিল অ্যানি বেসান্ত ও এলেনর মার্কসের সঙ্গে। এলেনরের সঙ্গে তিনি থাকতে শুরু করেন।
অ্যাভেলিং ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ফেডারেশনে’র সদস্য হন। কিন্তু হাইণ্ডম্যানের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। তাঁরই নেতৃত্বে ফেডারেশনের কার্যকরী সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য অনাস্থা প্রকাশ করেন হাইণ্ডম্যান সম্পর্কে। হাইণ্ডম্যান পদত্যাগ করতে না চাইলে অ্যাভেলিং, উইলিয়াম নরিস, এলেনর মার্কস সেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে এসে ‘সোশ্যালিস্ট লিগ’ নামে নতুন এক সংগঠন তৈরি করেন। সংগঠনের মুখপত্র ‘কমনউইল’-এ লিখতে শুরু করেন অ্যাভেলিং ও তাঁর স্ত্রী এলেনর। একই সঙ্গে অ্যাভেলিং ইংরেজিতে ‘দাস ক্যাপিটেল’ অনুবাদ করার ব্যাপারে সাহায্য করেন এলেনরকে ; দুজনে একসঙ্গে লেখেন ‘উওম্যান কোশ্চেন’। ১৮৮৬ সালে তাঁরা বেরিয়ে আসেন ‘সোশ্যালিস্ট লিগ’ থেকে। তারপর তাঁরা ‘সোশ্যালিস্ট পার্টি অব আমেরিকার’ আমন্ত্রণে আমেরিকা যান। এখানেও পার্টি নেতাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় অ্যাভেলিং-এর টাকা-পয়সা নিয়ে।
লণ্ডনে ফিরে আসেন অ্যাভেলিং। মার্কসবাদী শ্রমজীবী পার্টি গড়ার ব্যাপারে এঙ্গেলসের সঙ্গে যুক্ত হন। কিন্তু এখানেও তিনি বেশিদিন টিকতে পারেন নি। তারপর রাজনীতি সম্পর্কে মোহমুক্ত হয়ে তিনি শুরু করেন নাটক লিখতে। তাঁর চারটে নাটকের কোনটাই আসর জমাতে পারে নি। এলেনরের সঙ্গে তিনি ইবসেনের ‘ডলস হাউজ’ নাটক মঞ্চস্থ করেন।
১৮৯৫ সালে অ্যাভেলিং কিডনির অসুখে দারুণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এলেনর কয়েক মাস তাঁর সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। সুস্থ হয়ে অ্যাভেলিং এলেনরকে পরিত্যাগ করে চলে যান ২২ বছরের অভিনেত্রী ইভা ফ্রের কাছে। মাস কয়েক বাদে তিনি ফিরে আসেন এলেনরের কাছে। প্রেমের টানে ফিরে আসেন নি, এসেছিলেন অর্থের প্রয়োজনে। তখন দেনায় ডুবে আছেন তিনি। এই সময়ে তিনি দেখলেন এঙ্গেলসের বেশ কিছু টাকা পেয়েছেন এলেনর। তাই ফিরে আসা। ১৮৯৮ সালে অ্যাভেলিং আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আস্ত্রোপচার করতে হল। সেবা করলেন এলেনর। সুস্থ হয়েই নিজের রূপ ধারণ করলেন তিনি। এলেনরকে জানিয়ে দিলেন যে তিনি ইভা ফ্রেকে বিয়ে করেছেন, তার কাছেই ফিরে যাচ্ছেন তিনি। এই বিশ্বসঘাতকতা সহ্য করতে না পেরে এলেনর আত্মহত্যা করেন ১৮৯৮ সালের ৩১ মার্চ। অ্যাভেলিং-এর মৃত্যু হয় ১৮৯৮ সালের ২ আগস্ট। (ক্রমশ)