বৃহস্পতিবার | ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:১১
Logo
এই মুহূর্তে ::
হাইনরিখ হাইনে : শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত ‘হীরক রাজার দেশে’র একটি স্মরণীয় আউটডোর : রবি ঘোষ বাবরি মসজিদ ভাঙার ‘ঐতিহাসিক যুক্তি’ : ইরফান হাবিব হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গান্ধীমূর্তি : সুবিমল মিশ্র সর্বনামই যেখানে নাম হয়ে উঠতে পারে : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (শেষ পর্ব) : রহমান হাবিব নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘পূর্ণিমা রাত ও পাটকিলে কুকুর’ মহানাটক শেষ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হলেন ফড়ণবীস : তপন মল্লিক চৌধুরী বাজার মাতাচ্ছে রাজ্যেরই ড্রাগন ফল, লাভবান চাষিরা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কবিতার শত্রু মিত্র : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (চতুর্থ পর্ব) : রহমান হাবিব মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘রেফারী’ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (তৃতীয় পর্ব) : রহমান হাবিব কাশ্মীরী মন্দির — অবহেলায় না অনীহায়? অবন্তীস্বামী ও মার্তন্ড মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মমতার স্পষ্ট বার্তা — আগে বাংলার মানুষ আলু খাবে, তারপর বাইরে পাঠানো হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (দ্বিতীয় পর্ব) : রহমান হাবিব লঙ্কা চাষ বাড়ছে, লাভবান চাষিরা, রপ্তানি বাড়াতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পাশাপাশি, তবে প্রাণ নেই, চিহ্ন বইছে ভেলুগোন্ডা, রবিবার জল সরার পরে : অশোক মজুমদার নলিনী বেরার কবিতা — স্বভূমি, স্বদেশ, স্বজন : ড. পুরুষোত্তম সিংহ অদ্বৈত মল্লবর্মণ — প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য-সমালোচক (প্রথম পর্ব) : রহমান হাবিব রংবাহারি ক্যাপসিকাম : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যের কৃষকমান্ডিতে কৃষকদের ধান বিক্রিতে দালাল মুক্ত করার নির্দেশ সরকারের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘উচ্ছেদ’ আমাদের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং নানা মত : তপন মল্লিক চৌধুরী বেঙ্গল গোট গ্রামীণ অর্থনীতিতে এনে দিতে পারে স্বচ্ছলতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পিটার নাজারেথ-এর ছোটগল্প ‘মালদার’ অনুবাদ মাসুদ খান আমরা নারী-আমরাও পারি : প্রসেনজিৎ দাস ঝুম্পা লাহিড়ীর ছোট গল্প “একটি সাময়িক ব্যাপার”-এ অস্তিত্ববাদ : সহদেব রায় ঝুম্পা লাহিড়ী-র ছোটগল্প ‘একটি সাময়িক বিষয়’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস ঠাকুর আমার মতাে চিরকালের গৃহীর চিরগুরু : সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সেকালের কলকাতায় বনেদি বাড়ির রথ কলমে তপন মল্লিক চৌধুরী

তপন মল্লিক চৌধুরী / ৭৮৪ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

একসময় শুধু বউবাজার থেকেই ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় গোটা তিরিশেক রথ বের হত। কোনওটা রুপোর, কোনওটা পিতলের আবার কোনওটা কাঠের ওপর লোহা দিয়ে সাজানো। উত্তর কলকাতার তারক প্রামানিক রোডের প্রামানিক বাড়ির রথ ছিল পিতলের। তাঁরা ছিল কাঁসা-পিতলের ব্যবসায়ী। বড়বাজারে বিশাল আড়ত ছিল তাঁদের। হুগলীর ব্যান্ডেলে পারিবারিক কাঁসা-পিতলের কারখানায় তৈরি হয়েছিল ১৪ ফুট উচ্চতার এই পিতলের রথ। ওজন ২২ টন। কারখানা থেকে সেই রথ কলকাতায় টেনেই নিয়ে আসা হয়েছিল প্রামানিকদের বড়বাজারের কারখানায়। সেইখানেই থাকত ৭ দিন। তারপর উল্টোরথের দিন টেনে আনা হত বাড়িতে। এখন সাবেকি প্রথা মেনে রথ টানা হয় বাড়ির উঠোনে।

বউবাজার এলাকার যদুনাথ দত্তের বাড়িতে গত ১১৯ বছর ধরে সাড়ম্বরে হয়ে পালিত হয়ে আসছে রথযাত্রা। কথিত যদুনাথ ছোটবেলায় জগন্নাথের পুজো করতেন। পরে তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়িতে জগন্নাথ প্রতিষ্ঠা করেন। এই পরিবারের গৃহদেবতা জগন্নাথ। এখানে  সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ নেই। রথের আগের দিন জগন্নাথ নবযৌবন লাভ করেন। স্নানযাত্রার পরে থাকেন অসুস্থ। সোজা রথ ও উল্টো রথের দিন আজও সাজানো রথ রাস্তায় বেরোয়। রথ উপলক্ষে রুপোর সিংহাসনে বসানো হয় দেবতাকে। রথের সময় পরিবারের আত্মীয়রা যাঁরা জগন্নাথকে নিমন্ত্রণ করেন তাঁদের বাড়িতে রথ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিশেষ পুজো-ভোগ হয়, একে বলে ‘দ্বারে ভোগ’।

বউবাজারেই আছে ধর-দের বাড়ি। এই পরিবারের স্বরূপচন্দ্র ধর নিমকাঠের তৈরি আটচালার তিনতলা রথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানকার বিগ্রহ প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো।

উত্তর কলকাতার বলরাম বসুর বাড়ির রথ। এই রথ টেনেছিলেন রামকৃষ্ণ।

বউবাজার অঞ্চলেরই আরও এক ঐতিহ্যবাহী রথ হল পঞ্চাননতলা লেনের শান্তি শীলের বাড়ির রথ। এখানকার রথ বিপিন শীলের রথ নামেই খ্যাত। ছ’চাকার কাঠের তৈরি তিনতলা উচ্চতার এই রথ বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। রথের চাকা, সারথি, একজোড়া হাতি, সিংহকে লোহার মোটা শিকল, আঁকশি, চেন দিয়ে একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে রথকে ধীরে ধীরে সাজিয়ে তোলা হয়।

বউবাজারের গোবিন্দ সেন লেনে প্রায় ১২৫ বছর আগে জগন্নাথ বিগ্রহ ও রথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চুনিমনি দাসী। পাঁচটি চূড়াবিশিষ্ট ত্রিতল এই রথে সাবেক শিল্পরীতির নমুনা দেখা যায়। রথের চার দিকে আছে চারটি পুতুল এবং রথের গায়ে আঁকা আছে দেবদেবীর ছবি। শোনা যায়, এক বার পুরীর নব কলেবরের সময় অবশিষ্ট এক খণ্ড নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছিল এই পরিবারের নিমকাঠের জগন্নাথ বিগ্রহটি। এই বিগ্রহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত আছে শালগ্রাম শিলা। পরিবারের সদস্যদের কথা অনুযায়ী স্নানযাত্রার পরে হয় বিগ্রহের অঙ্গরাগ। আগে রথের দিন ও উল্টো রথের দিন পথে রথ বেরতো। এখন আর রথ রাস্তায় বেরোয় না। বাড়ির উঠোনেই টানা হয়।

কাটোয়ায় এবার কোলে চড়েই মাসির বাড়ি গেছিলেন জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম

হিদারাম ব্যানার্জি লেনের নীলমণি দে-র ঠাকুড়বাড়ির রথ ১১৭ বছরের পুরনো। জগন্নাথদেবের বিগ্রহ এবং রথ কাঠের তৈরি। এই রথ আগে টানা হত বড় রাস্তায়। দুপুরে বেড়িয়ে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যেত। এখন মন্দিরের ঠাকুরদালানেই রথ টানা হয়। এখানে রথের দিন থেকে উল্টোরথ এই ৭ দিন জগন্নাথের সাতটি বেশ হয়। উল্টোরথের আগের দিন হয় জগন্নাথের রাজবেশ। দেওয়া হয় ৫৬ রকমের ভোগ।

মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মার্বেল প্যালেসে আজও বেলোয়ারি কাচের ফানুসে, রেড়ির তেলে ও মোমবাতির আলোয় গৃহদেবতা জগন্নাথকে সাজানো হয়। স্নানযাত্রার দিন থেকেই শুরু হয় উত্সব। প্রথা অনুসারে স্নানযাত্রার পরে জগন্নাথ অসুস্থ হন এবং তাঁকে পাচন দিয়ে সুস্থ করা হয়। এর পরে হয় অঙ্গরাগ। রথের দিন মোট ছ-বার পুজো, চার বার আরতি হয়। রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক প্রচলিত বৈষ্ণব প্রথা অনুসারে আজও চলে সাবেক আচার অনুষ্ঠান। মা লক্ষ্মীর ঘর থেকে আরতি করে রথযাত্রার শুভ সূচনা হয়।

শশীভূষণ দে স্ট্রিটের গৌরাঙ্গ মন্দিরের রথ এঁদের তুলনায় বয়সে নবীন, ৭৫ বছরের পুরনো। পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে কোনও রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে এই রথের পুজো। ঘটনা হল, কলকাতার বেশ কিছু বনেদী বাড়ির রথ যেমন বিভিন্ন সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তেমনই কোনও কোনও পরিবার আবার ম্লান ভাবে হলেও তাঁদের ঐতিহ্য কোনওভাবে টিকিয়ে রেখেছে।

৪২ পিতলের রথের সেরা রথ বনকাটির রথ

পুরীর রথের মতো বাংলার বহু অঞ্চলের রথও জনপ্রিয়। শ্রীরামপুরের মাহেশ, গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্রের রথ, মহিষাদল রাজবাড়ির গোপালজিউর রথ। এছাড়া পুরনো কলকাতার বাসিন্দা শেঠ-বসাকদের গৃহদেবতা গোবিন্দজির রথ, পোস্তার রথ, জানবাজারের রানি রাসমণির বাড়ির রথ ছিল বেশ নাম করা।

এককালে জানবাজারের রানি রাসমণির বাড়ির রথ বেরতো বেশ ঘটা করে। সে আমলের রথটি ছিল রুপোর। সেটি তৈরি করতে সে যুগে খরচ হয়েছিল এক লক্ষ ২২ হাজার ১১৫ টাকা। সেই রথের সঙ্গে ছিল দু’টি সাজানো ঘোড়া, একটি সারথি এবং চারটি পরী। এগুলিও ছিল রুপোর। রানি রাসমণির বাড়ির রথ শুরু হয় ১৮৩৮ সালে। রথযাত্রা উপলক্ষে সে যুগে যুঁই ফুলের মালা কেনা হত কম করে আড়াই থেকে  তিন মণ। তখনকার জানবাজারের রানি রাসমণির বাড়ির রথযাত্রা এখন হয় দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে। রানির গৃহদেবতা রঘুনাথ জিউ বেশ কিছু বছর আগে মন্দির চত্বরে রাধাকৃষ্ণের দেবালয়ে স্থানান্তরিত হয়েছেন। সে কালে রানি রাসমণির রথে থাকতেন অসংখ্য মানুষ। ঢাক ঢোল সানাই জগঝম্পের শব্দে চারিদিকে জানান দিয়েই কলকাতার রাজপথে এগিয়ে চলত রথটি। সঙ্গে থাকত নানা রকমের সং।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “সেকালের কলকাতায় বনেদি বাড়ির রথ কলমে তপন মল্লিক চৌধুরী”

  1. sandipan biswas says:

    রথ নিয়ে জম্পেশ এই লেখা অনেকেরই মনোরথ পূর্ণ করবে।

  2. Tapti Mukherjee says:

    খুব ভালো লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন