বৃহস্পতিবার | ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:১৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (চতুর্থ পর্ব) : আবদুশ শাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় কবিগান ও যাত্রার আসর : অসিত দাস সসীমকুমার বাড়ৈ-এর ছোটগল্প ‘ঋতুমতী হওয়ার প্রার্থনা’ সামাজিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনে সিনেমা : সায়র ব্যানার্জী নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সুও দুও ভাসে’ বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (তৃতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভিয়েতনামের গল্প (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব নীলমণি ঠাকুরের মেছুয়া-যাত্রা, একটি ঐতিহাসিক পুনর্নির্মাণ : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দ্বিতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর কাদের প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিরা বাংলার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রসাহিত্যে কবিয়াল ও কবির লড়াই : অসিত দাস নকল দাঁতের আসল গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (প্রথম পর্ব) : আবদুশ শাকুর মুর্শিদাবাদের কৃষি ঐতিহ্য : অনুপম পাল নক্সী কাঁথায় বোনা জসীমউদ্দীনের বাল্যজীবন : মনোজিৎকুমার দাস পঞ্চানন কুশারীর জাহাজী গানই কি কবির লড়াইয়ের মূল উৎস : অসিত দাস দিব্যেন্দু পালিত-এর ছোটগল্প ‘ঝালমুড়ি’ নকশালবাড়ি আন্দোলন ও বাংলা কবিতা : কার্তিক কুমার মণ্ডল নিঃসঙ্গ ও একাকিত্বের আখ্যান : পুরুষোত্তম সিংহ ভিয়েতনামের গল্প (পঞ্চম পর্ব) : বিজয়া দেব অন্তরের আলো জ্বালাতেই কল্পতরু উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস কল্পতরু — এক উত্তরণের দিন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চলচ্চিত্র উৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (শেষ পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী ফেলে আসা বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া না ঝড় : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোয়ানিতা ম্যালে-র ছোটগল্প ‘নাইট জব’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস দেশজ ফসলের বীজকে কৃষির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে নদিয়া বইমেলা মুখপত্র : দীপাঞ্জন দে চলচ্চিত্র মহোৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (প্রথম পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী শৌনক দত্ত-র ছোটগল্প ‘গুডবাই মাষ্টার’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই ২০২৫ ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

‘রবীন্দ্রনাথ’ — জামিল সিদকী আল-যাহাবী : দিলীপ মজুমদার

দিলীপ মজুমদার / ৩৫৩ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার লাভ করার পরে তাঁকে নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয় আরবের সাহিত্য জগতে। কারণ রবীন্দ্রনাথ শুধু ভারতের প্রতিনিধি নন, তিনি সমগ্র এশিয়ার প্রতিনিধি। আরবের দৈনিক সংবাদপত্র, যেমন ‘আল-আহরম’, ‘আল-হিলাল’, ‘আল-জিনান’ প্রভৃতিতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা আলোচনা ও সংবাদ প্রকাশিত হয়। কলকাতায় এসে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করেন আরবি ভাষার লেখক ওয়াদি আল-বুস্তানি। ১৯১৬ সালে ‘আল-হিলাল’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখেন এক চমৎকার প্রবন্ধ। কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় আহমেদ সাকি, হাফিজ ইব্রাহিম, সাআদ জাগলুল, আহমদ লুটফি, মহম্মদ হাসিন হায়কাল প্রভৃতি সাহিত্যিকদের।

১৯৩২ সালের ১১ এপ্রিল রবীন্দ্রনাথ আরব যাত্রা করেন। ১৫ মে তিনি তেহেরান ত্যাগ করে ইরাকে আসেন। ইরাকের এক সংবর্ধনা সভার কথা রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছেন তাঁর ‘পারস্যযাত্রী’ গ্রন্থে : “আজ অপরাহ্নে আমার নিমন্ত্রণ এখানকার সাহিত্যিকদের তরফ থেকে। বাগানে গাছের ছায়ায় আমাদের আসন। ছোট ছোট টেবিলে চায়ের আয়োজন জনতার মধ্যে বিক্ষিপ্ত। একে একে নানা লোকে তাঁদের অভিনন্দন পাঠ শেষ করলে সেই বৃদ্ধ কবি তাঁর কবিতা আবৃত্তি করলেন। বজ্রমন্দ তাঁর ছন্দপ্রবাহ, আর উদ্দাম তাঁর ভঙ্গি। আমি তাঁদের বললেম, এমন কবিতার অর্থ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই; এ যেন উত্তালতরঙ্গিত সমুদ্রের বাণী, এ যেন ঝঞ্ঝাহত অরণ্যশাখার উদগাথা। … অবশেষে আমার পালা উপস্থিত হলে আমি বললুম, ‘আজ আমি একটি দরবার নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। একদা আরবের পরম গৌরবের দিনে পূর্বে-পশ্চিমে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ভূভাগ আরবের প্রভাব-অধীনে এসেছিল। ভারতবর্ষে সেই প্রভাব যদিও আজ রাষ্ট্রশাসনের আধারে নেই, তবুও সেখানকার বৃহৎ মুসলমান সম্প্রদায়কে অধিকার করে বিদ্যার আকারে, ধর্মের আকারে আছে। সেই দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে আমি আপনাদের বলছি, আরব সাগর পার করে আরব্যের নববাণী আর একবার ভারতবর্ষে পাঠান — যাঁরা আপনাদের স্বধর্মী তাঁদের কাছে, আপনাদের মহৎ ধর্মগুরুর পুজ্য নামে, আপনাদের পবিত্র ধর্মের সুনাম রক্ষার জন্য…।”

এই সভায় উপস্থিত ছিলেন লেখক জামিল সিদকী আল-যাহাবী। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরোক্ষ পরিচয় ছিল কবির রচনাদির মাধ্যমে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে সামনা-সামনি দেখে, তাঁর কথা শুনে, তাঁর সঙ্গে বাক্য-বিনিময় করে অভিভূত হয়ে যান জামাল সিদকী।

জামিল সিদকী আল-যাহাবী

১৮৬৩ সালের ১৮ জুন বাগদাদে জামিল সিদকীর জন্ম। অভিজাত কুর্দি বংশের সন্তান তিনি। তাঁর বাবা মুহাম্মদ ফাইদি ‘বাবান’গোত্রভুক্ত এবং তিনি ছিলেন ‘মুফতি’। প্রথাগত শিক্ষা লাভ করতে পারেন নি তিনি। তবে বাবার কাছে সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা পড়েছেন। গৃ্হশিক্ষকের কাছে তিনি যুক্তিবিজ্ঞান, আইন, জ্যোর্তিবিজ্ঞানের শিক্ষা লাভ করেছিলেন। বাগদাদের মজলিশে ষেতেন নিয়মিত। লেখক ও বিদগ্ধজনের সঙ্গে এসব মজলিশেই আলাপ হয় তাঁর। মুক্তবুদ্ধির চর্চাও তাঁকে অনুপ্রাণিত করে।

তুর্কি সুলতানের আমন্ত্রণে ১৮৯৬ সালে তিনি আসেন ইস্তাম্বুলে। মালাক্কি বিদ্যালয়ে ইসলামিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে। তারপরে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন আরবি সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে। এ সময়ে অনুবাদের মাধ্যমে ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আরবি সাহিত্যকে নবজীবন দান করতে তিনি উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এই সময়ে সুলতানের কাজের সমালোচনা করায় তাঁকে বাগদাদে বদলি করে দেওয়া হয়।

বাগদাদে তিনি এডুকেশন কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে জোর দেন। সম্পাদনা করেন ‘আল-যাওরা’ পত্রিকা। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপনা করেন। বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পর্দাপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে তিনি আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এর ফলে তাঁকে জনরোষের মুখে পড়তে হয়। তিনি বাগদাদ ত্যাগ করে ইজিপ্ট চলে যান। ইরাকের স্বাধীনতার পরে ১৯২১ সালে তিনি আবার ফিরে আসেন বাগদাদে।

৯টি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা জামিল সিদকী ভাব-ভাষা ও ছন্দে আধুনিকতার প্রবর্তন করেছিলেন। ১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ পরিচয় তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তিনি রচনা করেন ‘রবীন্দ্রনাথ’ নামে একটি অসাধারণ কবিতা। এই কবিতাটি আছে তাঁর ‘দিওযান ই আয যাহাবী’ কাব্যগ্রন্থে। বাংলায় অনুবাদ না হওয়ায় আমরা এর কথা জানতাম না। কয়েক বছর আগে তাসনীম আলম ও জাকির তালুকদার নামে দুজন লেখক ও সাংবাদিক কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ করেন। রবীন্দ্রপ্রেমিক বাঙালি পাঠকের কাছে আমরা জামিলের কবিতাটি তুলে ধরছি : —

পারস্যে রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ : জামিল সিদকী আল-যাহাবী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার অন্তরে এতটাই জীবন্ত ছিলেন যে

যখনই চাইতাম আপনাকে সম্মুখে দেখতে পেতাম,

ডানে তাকালে আপনাকে দেখতাম, বাঁয়েও তাই।

যেমন উজ্জ্বল নক্ষত্র অনেক উঁচু থেকে মুচকি হাসি দিয়ে অন্ধকারে পথ দেখায়

তেমনি আপনিও ছিলেন আমার পথপ্রদর্শক।

আপনাকে স্পর্শ করব বলে দুই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে যেতাম ;

কিন্তু ব্যর্থ আর নিরাশ হয়ে ফিরে আসতাম।

নিজেকে বলতাম, ইচ্ছা হলেই তো মনে মনে তার সঙ্গে কথা বলতে পারি।

অথচ আমাদের মাঝে অনেক দূরত্ব।

আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি এ দূরত্ব অতিক্রম করার।

তার সাক্ষাতের আশা সংশয় আর অবিশ্বাসে হারিয়ে ফেলেছিলাম।

অনর্থক নিজেকে বলতাম, আবার চেষ্টা করো পাবে তাকে।

বারবার আশা করে আমি শুধু ব্যর্থতার ভারই বৃদ্ধি করতাম।

শেষে আমার ইচ্ছার গলায় বেড়ি পরালাম।

এছাড়া কিই বা করার ছিল আমার !

কিন্তু এরপর রাতের আঁধার কেটে ভোরের শুভ্র আঁচল উদ্ভাসিত হল।

উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে সূর্যের আগমনের সাথে সাথে নিদ্রা ভেঙে জেগে উঠল সব মানুষ।

এই দিনেই আমার কল্পনার অবসান ঘটল।

আজ আমি সর্বান্তঃকরণে অবলোকন করছি তাকে, যাকে এতদিন শুধু কল্পনাতেই পেতাম।

***

আহ ! কত সুন্দর এক তারকা আজ ইরাকের আকাশে জ্বলজ্বল করছে।

কত কাছে পেয়েছি আমি তাকে।

যে তারকার সবকিছু সৌন্দর্যমণ্ডিত।

যতভাবেই দেখি না কেন তার অপরূপ রূপে আমি শুধু মুগ্ধই হই।

এ তারকা তার শুভ্র আলোকরশ্মি ছড়িয়ে একাই পুরো প্রাচ্যকে আলোকিত করে রেখেছে।

অনেক দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই সাক্ষাৎ কত সুন্দর !

আজ আমাদের সব আশা -আকাঙ্খা যেন পূর্ণতা পেল।

আমরা ধারণা করেছিলাম এ মিলন অসম্ভব ; অথচ আজ তা বাস্তবায়িত হয়েছে।

ইরাকের মানুষ আজ একত্রিত হয়েছে এই বিস্ময়কর, মহান ব্যক্তিত্বকে অভ্যর্থনা জানাতে।

***

হে মহান কবি ! সালাম গ্রহণ করুন আপনার কবিতার ভক্ত এক পাঠকের কাছ থেকে।

শান্তি বর্ষিত হোক আপনার প্রতি প্রতিদিন, সর্বাবস্থায়।

আপনি যেন কবিতার খনি, যেমন সমুদ্র মণিমুক্তার খনি।

কবিতাগুলো যখন আপনি সুর করে গেয়ে ওঠেন তখন যেন তার মধ্যে ঈশ্বরিক ভাব আসে।

আমি শংকিত নই এর স্থায়িত্ব নিয়ে; এ সুর চিরন্তন, ক্ষণিকের নয়।

অসামান্য প্রতিভাধর কবিদের তালিকা করলে আপনি হবেন তাদের অন্যতম।

***

আপনি কি মনে করেন মৃত্যু হল নতুন এক জীবনের সূচনা ?

জগতের প্রকৃত সত্য সম্পর্কে তোমরা আমার কাছে জানতে চেয়ো না।

আমি তো অন্ধকার মেঘের ফাঁক দিয়েই সূর্যের দেখা পেতে চাই।

কোন প্রশ্ন করো না এ সত্য নিয়ে।

কেননা সন্দেহ সংশয় নিয়েই তো আমি ডুবে আছি।

প্রতিনিয়ত যেন পাহাড়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

আমি তো জানি না কী আমার জীবনের লক্ষ্য, অস্তিত্বের কারণ, শুরু আর পরিণতি।

মন যদি আমার বিবেকের আদেশ মানতে অস্বীকার করে তাহলে

এত যুক্তি প্রমাণ কোন কাজেই আসবে না।

আমার নির্বুদ্ধিতার জন্যই আমার পথ অন্ধকার হয়ে যায়

আর আমার ভ্রষ্টতার মধ্যেই আমি সঠিক পথ দেখি।

সুপথ খুঁজে না পেলে আমি কিছুই পাব না।

অশ্রু যেমন গণ্ডদেশ থেকে ঝরে পড়ে তেমনি ঝরে পড়ব।

হে প্রেম ও সৌন্দর্য! তোমরা তো উভয়েই শান্তির প্রচারক। দুজনেই মহান।

***

আমি আজীবন সত্যের সন্ধান করতেই থাকব —

তাতে যদি আমার ডানা ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ে তবুও।

আমি জানি না জীবনের পূর্ণাঙ্গ পথে কে তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ !

সত্য হল এমন এক রঙিন ফুল, যাকে ঘিরে থাকে ধারালো কাঁটা।

এ ফুলের থাকে সৌন্দর্য আর সুরভি।

কংকর আর বালুকাময় পথ মাড়িয়েই এ ফুলের দেখা মেলে।

এক সকালে খুব আগ্রহ নিয়ে আমি সে ফুলের সাথে সাক্ষাৎ করলাম।

বন্ধুরা এর খবর আমাকে আগে জানায় নি।

***

শেষ পর্যন্ত মৃত্যু আসবেই। ভ্রূক্ষেপ করি বা না করি।

মৃত্যুযন্ত্রণা তো কিছুই নয় যদি সারাজীবনের যন্ত্রণার সাথে তা তুলনা করা হয়।

বিবেকের মধ্যে অহর্নিশ দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে, এ আগুন কখনও নেভে না।

আল্লাহ জানেন আমি বেহেশতে নেই। জাহান্নমের আগুনে পৌঁছে গেছি।

যুগের দুটো রূপ দেখেছি আমি। যুগ মিলন ঘটিয়ে দেয় অতীতের সাথে ভবিষ্যতের।

দেহাবসানের পরে আত্মার কোন ক্ষয় বা লয় নেই।

ধ্বংসপ্রাপ্ত দেহেই আবার প্রাণ ফিরে আসে।

হে বিদ্যুৎ! তুমিই আমার সকল প্রশ্নের উত্তর জনগণের সামনে।

***

সম্মান, মর্যাদা স্থায়ী হয়। অতঃপর তা প্রকৃতির সাথে মিশে যায়।

নতুন প্রাণের জন্ম হবে আবার তা হারিয়ে যাবে একের পর এক।

আমরা মিলিত হই, আবার বিচ্ছিন্ন হই।

কে আমার সাথে মিলিত হতে পারে বিচ্ছেদ ছাড়া !

আমি মনকে প্রবোধ দিই — মৃত্যুকে ভয় পেয়ো না।

মৃত্যুতো স্থানান্তর হওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।

অবাধ্য হৃদয় আমার কথার সাথে একমত হয়না।

ধারালো অস্ত্র নিয়ে সে আমার সাথে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হয়।

তোমরা আমার হৃদয়ের সমালোচনা করো, কেননা সে জীবনকে খুব ভালোবাসে।

আমি আমার অতীত বা বার্ধক্য নিয়ে কাঁদি না, বরং আমার ভবিষ্যৎ আমাকে কাঁদায়।

যদি চাও তো বিপদে-আপদে কাঁদতে পারো, যদিও কান্না পুরুষের জন্য শোভনীয় নয়।

মৃত্যুশোকে শোকাতুরা কাঁদে কেননা এই আপদ প্রতিহত করতে সে অক্ষম।

আর কুমারীরা কাঁদে প্রেমিকের কঠিন কথায়।

সম্ভবত খুব সামান্য পার্থক্য এই দুঃখ আর অভিমানের অশ্রুর মধ্যে।

আহ ! কত সুন্দর ওই অশ্রু যা শিশুর অশ্রুর মতো চোখের কোলে টলমল করে।

যে চোখ এমন করে কাঁদে তার অশ্রু যে মুক্তোদানা।

***

আমরা আশা করি সূর্য প্রত্যাবর্তন করবে আমাদের গৌরবমর্যাদা সঙ্গে নিয়ে।

কিন্তু প্রতিশ্রুতিপালনে সে খুব বিলম্ব করে থাকে।

হে প্রাচ্য ! বহু বছর তুমিই ছিলে আলোর উদয়স্থল,

যখন পাশ্চাত্য ছিল ঘন অন্ধকারে আচ্ছন্ন।

তুমিই ছিলে সভ্যতা-সংস্কৃতির শিক্ষক, খুব উচ্চস্তরের জ্ঞানে পরিপূর্ণ ছিলে তুমি।

আজ তোমার সে শিক্ষা হারিয়ে গেছে।

পুরোপুরি বিপরীত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছ তুমি।

ঠাট্টা তামাশার বিষয়ে পরিণত হয়েছ।

নিশ্চয়ই একদিন শান্তি ঘোষিত হবে,

এইসব ধর্মীয় আর সম্পদের যুদ্ধ সমাপ্ত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন