১৯৩১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় প্রকাশন সমিতির উদ্যোগে বিদেশের বিভিন্ন ভাষায় সোভিয়েত সাহিত্যের এবং রুশ ভাষায় বিদেশি সাহিত্যের অনুবাদ — মূলত মানববিদ্যা সংক্রান্ত এবং সর্বোপরি ভাবাদর্শগত গ্রন্থাদি প্রচারের উদ্দেশ্যে মস্কোয় ‘বিদেশী শ্রমজীবীদের প্রকাশন সমিতি’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১৯৩৯ সালে সংস্থাটি নাম বদল করে ‘বিদেশী ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ এবং ১৯৬৩ সাল থেকে ‘প্রগতি প্রকাশন’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। মার্কসবাদী-লেনিনবাদী সাহিত্য এবং আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক গ্রন্থাদির অনুবাদ ছাড়াও সোভিয়েত তথা রুশ সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রচারও ‘বিদেশী ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ এবং ‘প্রগতি’র অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। তাই সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রকাশিত অনুবাদের অন্তত এক-চতুর্থাংশ হত সোভিয়েত ও রুশ সাহিত্যের; আবার তার সিংহভাগ ছিল শিশু ও কিশোর সাহিত্যের, যেহেতু শিশু ও কিশোর মনে নির্দিষ্ট কোন ভাবাদর্শ গাঁথা হয়ে গেলে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব সুদূরপ্রসারী হওয়া খুবই সম্ভব। প্রকাশের তৃতীয় স্থানে থাকত রুশ ও সোভিয়েত ধ্রুপদী সাহিত্যের অনুবাদ।
কিন্তু প্রচারের দিকটার কথা ছেড়ে দিলেও একথা অনস্বীকার্য যে রুশ সাহিত্য যে-কোন অবস্থাতেই হোক না কেন — সোভিয়েত-পূর্ববর্তী আমলেই হোক বা সোভিয়েত আমলেই হোক – মূলত ছিল মানবতাবাদী। তাই তার আবেদন ছিল সর্বব্যাপী। রুশ সাহিত্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য রূপে স্বীকৃত। আর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিশু ও কিশোর সাহিত্যের বিকাশ যে সোভিয়েত আমলেই হয়েছিল একথাও অস্বীকার করার উপায় নেই — অবশ্য সোভিয়েত পূর্ববর্তী আমলেও সাহিত্যের এই শাখাটিও যথেষ্ট উন্নত ছিল — এমন কি পুশ্কিন দস্তইয়েভ্স্কি তল্স্তোয় তুর্গ্যেনেভ্ থেকে শুরু করে এমন কোন রুশ লেখক ছিলেন না যিনি শিশু ও কিশোরদের জন্য কিছু-না-কিছু লেখেননি।
বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে — তখনও অনুবাদ সাহিত্যের এই প্রকাশালয়টি ‘বিদেশী ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়’ নামে পরিচিত — সেই সময় সেখানে স্থায়ী বাংলা বিভাগ গড়ে উঠেছিল। সেই পর্বে অনুবাদক হিসেবে আমাদের দেশ থেকে সেখানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন : ননী ভৌমিক, নীরেন্দ্রনাথ রায়, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (তাঁর স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায়ও কিছু অনুবাদ করেছিলেন), ফল্গু কর, সমর সেন ও শুভময় ঘোষ (শুভময় ঘোষের স্ত্রী সুপ্রিয়া ঘোষও কিছু অনুবাদ করেছিলেন)। সম্ভবত সেটা ১৯৫৭ সাল। এক কালের বিখ্যাত চলচ্চিত্র-অভিনেতা রাধামোহন ভট্টাচার্যও অল্প সময়ের জন্য সেখানে অনুবাদকের কাজ করেন। এরই কাছাকাছি কোন এক সময়ে কোলকাতা থেকে বিষ্ণু মুখোপাধ্যায়ও যোগ দেন। কোলকাতায় তিনি ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। ননী ভৌমিক ও বিষ্ণু মুখোপাধ্যায় ছাড়া এই পর্বের অনুবাদকদের কারোই মস্কোয় অনুবাদকের কর্মজীবন তিন-চার বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি। দীর্ঘ দুই দশকব্যাপী অনুবাদকের কর্মজীবনের অন্তে অবসর নিয়ে আশির দশকে বিষ্ণু মুখোপাধ্যায় দেশে ফিরে আসেন। একমাত্র ননী ভৌমিকই পাকাপাকি ভাবে মস্কোয় থেকে যান।
প্রথম পর্বের অনুবাদকদের মধ্যে একমাত্র নীরেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন রুশ ভাষা বিশেষজ্ঞ সাহিত্যিক। ননী ভৌমিক পরবর্তীকালে রুশ ভাষা শিখে সরাসরি রুশ থেকেই অনুবাদ করতেন।
সত্তরের দশক পর্যন্ত ননী ভৌমিক ও বিষ্ণু মুখোপাধ্যায় — এঁরা দুজন ছাড়া ‘প্রগতি’র বাংলা বিভাগে আর কোনও অনুবাদক ছিলেন না। ননী ভৌমিক বিবিধ বিষয়ের রচনার অনুবাদের সঙ্গে সঙ্গে রুশ গল্প উপন্যাস এবং বিশেষত শিশু ও কিশোর সাহিত্যের অনুবাদও করতেন। বিষ্ণু মুখোপাধ্যায় ছিলেন আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক গ্রন্থের অনুবাদক।
‘প্রগতি’ ততদিনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রকাশনালয়ে পরিণত হয়। পৃথিবীর ৫৬টি ভাষায় অনুবাদ সাহিত্য প্রকাশিত হত এখান থেকে। বছরে মুদ্রণসংখ্যা ১ কোটি ছাপিয়ে গিয়েছিল। ‘প্রগতি’র প্রকাশিত বইগুলি তাদের বিষয়বৈচিত্র্য, মুদ্রণ পারিপাট্য, নজরকাড়া অলংকরণ এবং সুলভ মূল্যের জন্য তৃতীয় দুনিয়ার দেশগুলিতে, বিশেষত ভারতের মতো দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এক সময় সর্বস্তরের পাঠকমহলে সেগুলি ব্যাপক প্রচার লাভ করে। রুশ তথা সোভিয়েত সাহিত্য ও সংস্কৃতি দেখতে দেখতে দুনিয়ার ব্যাপক পাঠক সম্প্রদায়ের প্রাণের সম্পদ ও আকর্ষণের বস্তুতে পরিণত হয়।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশ-এর আবির্ভাবের ফলে ‘প্রগতি’র বাংলা বিভাগের গুরুত্ব বহুমাত্রায় বৃদ্ধি পেল। বাংলা তখন আর উপমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত পৃথক পৃথক দুটি দেশের প্রাদেশিক ভাষা মাত্র নয় — একটি দেশের প্রাদেশিক ভাষা এবং অন্য একটি দেশের রাষ্ট্রভাষা। তাই ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটল ‘প্রগতি’র বাংলা বিভাগের। এই পর্বে ‘প্রগতি’র বাংলাবিভাগে যোগদান করেন বাংলাদেশ থেকে হায়াৎ মামুদ, খালেদ চৌধুরি (পশ্চিমবঙ্গের চিত্রশিল্পী খালেদ চৌধুরী নন) ও দ্বিজেন শর্মা, কোলকাতা থেকে আমি এবং কবি মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, কিছুকাল পরে প্রফুল্ল রায় (ঔপন্যাসিক প্রফুল্ল রায় নন, তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের একটি অনূদিত বইও রাদুগা থেকে প্রকাশিত হয়)। এছাড়া ননী ভৌমিক ও বিষ্ণু মুখোপাধ্যায় ত ছিলেনই। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দুজন বাঙালি যুবক — বিজয় পাল এবং সুবীর মজুমদারও এই সময় ‘প্রগতি’তে অনুবাদকের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। এই পর্বের অনুবাদকদের মধ্যে ননী ভৌমিক ছাড়া শেষোক্ত দুজন এবং আমি ও হায়াৎ মামুদই সরাসরি রুশ থেকে অনুবাদ করতাম, বাকিরা ইংরেজি থেকে। ‘প্রগতি’র বাংলা বিভাগ তখন ভারতীয় ভাষাবিভাগগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
মস্কোয় নিযুক্ত নিয়মিত অনুবাদকদের বাইরেও ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’ প্রকাশালয়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে পুষ্পময়ী বসু (‘মা’), ইলা মিত্র (চাপায়েভ্), পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় (‘মানুষের জন্ম’), গিরীন চক্রবর্তী (‘মানুষ কী করে বড়ো হল’, ‘তিমুর ও তার দলবল’, ‘ছত্রভঙ্গ’) সত্য গুপ্ত (‘পৃথিবীর পথে’), রথীন্দ্র সরকার (‘পৃথিবীর পাঠশালায়’), অমল দাশগুপ্ত (‘আমার ছেলেবেলা’), অরুণ দাশগুপ্ত (‘অ্যান্ড্রোমেডা নিহারীকা’), প্রদ্যোৎ গুহ, প্রফুল্ল রায়চৌধুরী (‘বেঝিন মাঠ’), ক্ষিতীশ রায় (‘পুনরুজ্জীবন’), শঙ্কর রায় (‘গমের শীষ’, ‘চুক আর গেক’), সেফালী নন্দী(‘বসন্ত’), ছবি বসু (‘মনের মতো কাজ’), রবীন্দ্র মজুমদার (‘ইস্পাত’, ‘অঙ্কের মজা’), শিউলি মজুমদার (‘পিতা ও পুত্র’) এবং অনিমেষকান্তি পালও (‘কাশতানকা’) অনুবাদ করেছেন। আবার প্রথম দিককার অনেক অনুবাদকের নাম অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে। তাঁদের নাম এখন আর জানার উপায় নেই।
মস্কোর মির প্রকাশন থেকেও রুশ ও ইংরেজি ভাষা থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা সংক্রান্ত বেশ কিছু বই অনুদিত হয়। অনুবাদকদের মধ্যে, যতদূর মনে পড়ে, মস্কো থেকে অনুবাদ করেন ডাঃ শান্তিদাকান্ত রায় (‘মানুষের অ্যানাটমি’ ও ‘ফিজিওলজি’), অভিজিৎ পোদ্দার, বদরুল হাসান (‘কক্ষপথে নভোযান’) এবং মাহবুবুল হক (‘মৌমাছি ও মানুষ’)। কলকাতা থেকে অনুবাদ করেছিলেন সিদ্ধার্থ ঘোষ, শৈলেন দত্ত (‘পদার্থবিদ্যার মজার কথা’), ডাঃ সন্তোষ ভট্টাচার্য (‘ধাত্রীর ধরিত্রী’), শান্তিশেখর সিংহ (‘মহাসাগরের সজীব শব্দসন্ধানী’, ‘সকলের জন্য পদার্থবিদ্যা’), কানাইলাল মুখোপাধ্যায় (‘রাসায়নিক মৌল, কেমন করে সেগুলি আবিষ্কৃত হয়েছিল’) কান্তি চট্টোপাধ্যায় (‘শরীরতত্ত্ব সবাই পড়ো’)।
আশির দশকে ‘প্রগতি’র অগ্রগতি এতদূর হয়েছিল যে বিশেষভাবে গল্প উপন্যাস এবং শিশু ও কিশোর সাহিত্য অনুবাদের জন্য ১৯৮২ সালে ‘রাদুগা’ নামে পৃথক আরও একটি প্রকাশন সংস্থা গঠিত হয়। সেখানে আমিই ছিলাম বাংলা বিভাগের একমাত্র স্থায়ী অনুবাদক। ননী ভৌমিক ‘প্রগতি’তেই থেকে গেলেন, যদিও ‘প্রগতি’তে থেকেও ‘রাদুগা’র বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বইও তিনি অনুবাদ করেছেন। এছাড়া দ্বিজেন শর্মা এবং তাঁর স্ত্রী দেবী শর্মাও ‘রাদুগা’র দু-একটি ছোটখাটো বই অনুবাদ করেছেন। বছর দুয়েকের মধ্যে — ১৯৮৪ সালে তাশখন্দে ‘রাদুগা’র একটি বাংলা বিভাগও খোলা হয়। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠরতা, এককালে আমার রুশ ভাষার ছাত্রী পূর্ণিমা মিত্র সেখানকার বাংলা বিভাগে অনুবাদকের কাজে যোগ দেন।
ইতিমধ্যে মস্কোয় ‘প্রগতি’র নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে, ‘রাদুগা’ও পৃথক একটি ভবনে উঠে যাবার উপক্রম করছে। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা চলছে ঠিক তখনই ঘটে গেল সেই আকস্মিক অঘটন। আকস্মিক বলা ঠিক হবে না — ১৯৮৫ সালে দেশে ‘পেরেস্ত্রৈকা’ ঘোষিত হওয়ার ফলে এটাই প্রত্যাশিত ছিল। চূড়ান্ত বিপর্যয়ের জন্য আরও ছয় বছর প্রতীক্ষা করতে হল। ‘প্রগতি’র দীর্ঘ ছয় দশকের ইমারত তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ল। ১৯৯১ সালে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে আমূল সংস্কার ঘোষিত হল তার ফলে রাষ্ট্রের তরফ থেকে সোভিয়েত ভাবাদর্শ এবং রুশ সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রচারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেল। দ্বিতীয়ত, বাজার অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে ‘প্রগতি’ বা ‘রাদুগা’র মতো প্রকাশালয় একেবারেই লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল না — যে রাষ্ট্রীয় অনুদান ও সরকারি ভরতুকিতে এই প্রতিষ্ঠানগুলি চলত নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলনের ফলে একসময় তা বন্ধ হয়ে গেল। চাহিদা ও জোগানের নিয়ম অনুযায়ী চলতে গেলে বইয়ের যা মূল্য দাঁড়ায় যাদের মুখ চেয়ে তা ছাপানো তাদের পকেটে কুলোবে না। যে-কোন ভাবেই হোক, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অনুদান বা সরকারি ভরতুকি দিয়ে এ সমস্ত বই প্রকাশ করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
তাই ১৯৯১ সালের ২৫ মার্চ তারিখের এক সরকারি হুকুমনামা বলে ঘোষণা করা হল : ‘বিদেশি ভাষায় সাহিত্যের প্রকাশ লাভজনক না হওয়ার কারণে ‘প্রগতি’র পরিচালকমণ্ডলীর সিদ্ধান্ত আনুসারে আগামী এপ্রিল মাস থেকে একমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে যে সমস্ত বইয়ের ব্যাপক চাহিদা আছে শুধু সেগুলিই প্রকাশিত হবে। বস্তুতপক্ষে, প্রকাশালয়ের বিদেশি ভাষার সবগুলি দপ্তরই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’ দেশের অভ্যন্তরে আমজনতার রুচি ও চাহিদার নিয়ম মেনে ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’ থেকে দেশের অগণিত পাঠকদের জন্য বিদেশি ভাষা থেকে সস্তার রগরগে নভেল ডিটেকটিভ ইত্যাদি রুশ অনুবাদে প্রকাশিত হতে লাগল। সেই বছরই ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশালয়ের দালান কোঠা এবং অন্যান্য স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যক্তিগত মালিকানাধীনে চলে যাবার ফলে ‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’ গাড়ির শো রুম, নানা ধরনের দোকানপাট আর লাভজনক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের অফিসের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেল।
আজ তিন দশকের বেশি সময় হতে চলল ‘প্রগতি’ বা ‘রাদুগা’ অতীতের বস্তু। আমাদের দেশের বর্তমান প্রজন্ম ‘প্রগতি’ বা ‘রাদুগা’ থেকে প্রকাশিত সেই সমস্ত অনুবাদের সঙ্গে একেবারেই পরিচিত নয় — অনেকে তাদের নাম পর্যন্ত শোনেনি।
‘প্রগতি’ ও ‘রাদুগা’র অর্ধশতাব্দীকালের যে সৃষ্টি দুই দশকের মধ্যে অবলুপ্ত হতে চলেছিল, সম্প্রতি তার উদ্ধারসাধন করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ ও প্রচারের যে বিপুল শ্রমসাধ্য কাজে স্নেহভাজন প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোমনাথ দাশগুপ্ত ব্রতী হয়েছে এর জন্য তারা যেমন আমাদের প্রজন্মের তেমনি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষদেরও কৃতজ্ঞতাভাজন হয়ে থাকবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো সমাজ ও সাহিত্য নিয়ে এমন ব্যাপক ও দীর্ঘকালীন পরীক্ষানিরীক্ষা এবং তার এমন আকস্মিক অবসান পৃথিবীতে আর কখনও ঘটেনি; তাই সোভিয়েত সমাজব্যবস্থার মতো সোভিয়েত সাহিত্যও সমগ্র বিশ্বের কৌতূহলী গবেষকদের দীর্ঘকাল আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে। সেদিক থেকে এদের উদ্যোগ ভবিষ্যৎ গবেষণারও আকর হয়ে থাকবে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজে বিভিন্ন মহল থেকে যে ব্যাপক সাড়া ও সহযোগিতা মিলছে তা অত্যন্ত উৎসাহব্যাঞ্জক। তাই মনে হয় এখনও সব ফুরিয়ে যায়নি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ত ঘটেই। আশা করা যেতে পারে এদের উদ্যোগের ফলে মানবতাবাদী রুশ সাহিত্যজগৎ আবারও আজকের দিশেহারা মানুষের পথের দিশারি হবে।