শনিবার | ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৫৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
সৌরভ হোসেন-এর ছোটগল্প ‘সালাম’ বঙ্গের শক্তি-পূজা : সুখেন্দু হীরা পুজোর পরিবর্তন, পরিবর্তনের পুজো : সন্দীপন বিশ্বাস পিতৃপক্ষের মধ্যে পালিত একাদশী — ইন্দিরা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত অরণ্যের অন্তরালে তাম্বদি সূরলা : নন্দিনী অধিকারী ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ হীরালাল সেন : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্যাসাগরের অন্তরালে ঈশ্বরচন্দ্র, পূর্ব পুরুষের ভিটে আজও অবহেলিত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব সুধীর চক্রবর্তী স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার : দীপাঞ্জন দে কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে দুর্গা রূপে আরাধনা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির নিজস্ব দুর্গা : শৌনক দত্ত সে নারী বিচিত্র বেশে মৃদু হেসে খুলিয়াছে দ্বার : দিলীপ মজুমদার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ছোটগল্প ‘প্রাতঃভ্রমণ’ বন্যায় পুনর্জীবন বেহুলার : রিঙ্কি সামন্ত গরানহাটা কি ছিল ভেড়ার হাট : অসিত দাস ডিভিসি-র ছাড়া জলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ নাজেহাল, দায় কার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সুধীর চক্রবর্তী মুক্তধারা ভাষণমালা : দীপাঞ্জন দে বোর্হেসের গোলকধাঁধা : অশ্রুকুমার সিকদার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলের দুর্গোৎসব : রিঙ্কি সামন্ত মর্ত্যে দুর্গাপূজার সেকাল ও একাল : অসিত দাস বই-বাই : নবনীতা দেব সেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘প্রবাসী’ ম্যান মেড নয় ডিভিসি-র পরিকল্পনা আর রূপায়নে গলদ : তপন মল্লিক চৌধুরী রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে রাখাইনে সেইফ জোন তৈরি করা আবশ্যক : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ফলের নামটি পাকা কলা : রিঙ্কি সামন্ত বই-বাই : নবনীতা দেব সেন হেমচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবর্ষ : দীপাঞ্জন দে নিম্ন চাপের অতিবৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত আরামবাগ : দেবাশিস শেঠ আরামবাগে ভয়াবহ বন্যা, দুর্যোগের পদধ্বনি, ক্ষোভ জনমানসে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষেও আওয়াজ তুলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ কৌশিকী অমাবস্যার-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সান্দাকফুর পথে…চিত্ররূপময় জগতের খোঁজে : অমৃতাভ দে

অমৃতাভ দে / ১৩১ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। উচ্চতা ৩৬৩৬ মিটার। সান্দাকফু। বহু দিনের ইচ্ছে অবশেষে বাস্তবায়িত হলো। পাহাড় ঘোরার নেশা অনেকদিন থেকেই। পাহাড়ি গ্রামগুলো তো আমার কাছে স্বর্গ। ছোটখাটো ট্রেকের অভিজ্ঞতা এর আগেও ছিল। কিন্তু এরকম অভিজ্ঞতা এই প্রথম। টিম ‘গোত্রহীন’ রওনা হয়েছিলাম সান্দাকফুর উদ্দেশে। বন্ধু দেবাশীষ বিশ্বাসের নেতৃত্বে নবদ্বীপধাম স্টেশন থেকে রাত ১১.৫০-এর পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস ধরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আমাদের ড্রাইভার তেনজিং। সেখান থেকে সোজা আমরা পৌঁছে গেলাম ধোত্রে। শুখনা, কার্শিয়াং, লেপচাজগৎ, সুখিয়া, মানেভঞ্জন হয়ে সাজানো-গোছানো পরিচ্ছন্ন একটি পাহাড়ি গ্রাম ধোত্রে পৌঁছালাম। অনেকেই মানেভঞ্জন থেকে ট্রেকিং শুরু করেন। মানেভঞ্জন থেকে সোজা গাড়িতেও টংলু হয়ে সান্দাকফু পৌঁছানো যায়। আমরা রাতটা কাটালাম ধোত্রেতে। অসাধারণ একটি হোমস্টে। গোপাল ছেত্রীর পরিবার আমাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। যেতে যেতেই গরম চায়ে চুমুক। আগামী দিনগুলোর জন্য যিনি আমাদের গাইড, সেই কুন্দন ভাই দেখা করে গেলেন আমাদের সাথে। জানিয়ে দিয়ে গেলেন আগামী দিনগুলি আমাদের কি কি পরিকল্পনা করতে হবে। পরেরদিন দোল পূর্ণিমা। স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণিমার চাঁদ তখন পাহাড়ি গ্রামকে আলোয় ভরিয়ে তুলেছে। আমাদের হোম স্টে-এর উপরেই রয়েছে শিব মন্দির, পাশাপাশি সেখানে রয়েছে হনুমানজীর মূর্তি। ঠান্ডা বেশ ভালোই। গাইড কুন্দনের কথামতো পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়া টুমলিং-এর উদ্দেশ্যে। কুন্দন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ গাইড। ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় গাইড হিসেবে কাজ করেন তিনি। ‘গোত্রহীন’ এর প্রতিটি সদস্যই তাদের নির্দিষ্ট জ্যাকেট গায়ে দিয়েই তৈরি হয়ে নিল সকাল সকাল। প্রথম দিনের হাঁটা ৬কিলোমিটার। চড়াই-উতরাই রাস্তা। সকলেই খুব আনন্দিত এবং রোমাঞ্চিতও বটে। এই প্রথম একসঙ্গে বন্ধুদের এত সুন্দর এক প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া-রোমাঞ্চ তো থাকবেই। কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ল একটি স্কুল। জানা গেল খুব অল্প কয়েকজন ছাত্রছাত্রী। দার্জিলিং থেকে ওখানে এসে থাকেন প্রধান শিক্ষক।

দুপুর দুপুর পৌঁছে গেলাম টুমলিং। কিছুটা এগিয়ে গেলেই টংলু। অনেকে সরাসরি টংলু চলে যান। পূর্ণিমার রাতটা আমরা টুমলিং-এ কাটাবো বলেই বেছে নিয়েছিলাম। আমাদের হোমস্টের পাশ দিয়ে চলে গেছে কংক্রিটের রাস্তা। যে রাস্তা ধরে ছুটে যায় ল্যান্ড রোভার। এই রাস্তায় গাড়ি ওঠার কথা ভাবলেই বুকের ভেতরটা কেমন ধড়াস ধড়াস করে ওঠে। পূর্ণিমার মায়াময় রাতে টুমলিং-এর রাস্তা ধরে হেঁটে চলে গেলাম অনেক দূর। পরের দিন কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে আমরা প্রবেশ করলাম। চেকপোষ্টে এন্ট্রি ফি দিতে হয়। নির্জন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার লোভ বোধহয় কেউই সামলাতে পারেন না। আমরা চলেছি কালিয়াপোখরির উদ্দেশ্যে। কুন্দন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন এই ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘপথের বেশ কিছুটা অংশে আমরা বরফ পাবো। তাই বেশ সাবধানেই আমাদের পথ চলতে হবে। কিন্তু বন্ধুরা ছিল বেশ উত্তেজিত। পাহাড়ি পথ, তারপরে আবার বরফ! কালিয়াপোখরি যাওয়ার পথেই পড়ে গৈরিবাস। গৈরিবাসে আমরা দেখতে পেলাম সশস্ত্র সীমাবলের জওয়ানরা হোলির আনন্দে মেতেছেন। আমরা সেই আনন্দ উপভোগ করলাম। চা খেয়ে আবার রওনা দেওয়া। গৈরিবাস থেকে রাস্তা বেশ খাড়া। শারীরিক কষ্ট হবে। তবে মনের জোর পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। অনেকখানি দুর্গম পথ অতিক্রম করার পরে আমরা পৌঁছালাম কাইয়াকাটা। বেশ রহস্যময় জায়গা। গা ছমছম করবে সেখানকার গল্প শুনলে। জায়গাটি নেপালের মধ্যে পড়ে। আমাদের গাইড কুন্দন আগে থেকেই খাবার রেডি করে রাখবার জন্য ফোন করে দিয়েছিল। পথের ক্লান্তি ভুলে আমরা গরম গরম খাবার খেয়ে আবার রওনা দিলাম কালিয়াপোখরির দিকে। সিঙ্গালিলা নামের একটি হোমস্টেতে আমাদের থাকবার ব্যবস্থা হয়েছে। কালিয়াপোখরিতে ঢুকতেই চোখে পড়ল “Welcome to Sandakpur Rural Municipality Ilam, Nepal”।

বুঝতে অসুবিধে হল না আমরা নেপালের ইলাম এলাকার মধ্যে এসে পড়েছি। তাছাড়া আমরা যাকে ‘সান্দাকফু’ বলে জানি, স্থানীয়ভাবে সবাই তাকে ‘সান্দাকপুর’ বলে। ইলাম শহর এখান থেকে অনেকটাই দূরে। যদিও যেকোনো প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষকে সেখানে ছুটতে হয়। প্রচন্ড ঠান্ডা। ‘পোখরি’ মানে পুকুর। পবিত্র একটি পুকুর আছে সেখানে। নানান রঙের পতাকা টাঙানো। পুকুরকে দেবতা বলে পূজা করেন ওখানকার স্থানীয় মানুষেরা। রয়েছে একটি স্তূপ। সেখানে রয়েছে মাতাজির মূর্তি। মনোকামনা পূরণ হয় সেখানে মানত করলে। প্রতি পূর্ণিমাতেই বিশেষ পূজার্চনার ব্যবস্থা হয়। সন্ধ্যা নামতেই কালিয়াপোখরির পরিবেশ বদলে গেল। প্রবল হাওয়ায় মনে হচ্ছিল যেন আমাদের হোমস্টে উড়ে চলে যাবে। চাঁদের আলোয় চারপাশ মায়াময়। মলয়ের মাউথ অর্গানে তখন বন্ধুত্বের গান। গাইড কুন্দনের নেপালি গানে কন্ঠ মেলালাম সবাই। সকালবেলা রোদ্দুর উঠেছে দেখে মন ভরে গেলো। কালিয়াপোখরির অপূর্ব সৌন্দর্য্যে মোহিত হতেই হবে। পাহাড়ের বুকে মেঘের খেলা দেখতে দেখতে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন রূপময় প্রকৃতির মধ্যে। কালিয়াপোখরি থেকে সান্দাকফুর দিকে হাঁটার পথে আপনি কী পাবেন না! সবকিছু। রঙিন ফুলের বাহার-ডেফনি, রডোডেনড্রন, তুষারাবৃত পাহাড়শ্রেণি। বরফাবৃত পথে হাঁটতে হাঁটতে অদ্ভুত আনন্দে ভরে যাচ্ছিল মন। সারারাস্তা ইন্দ্র গেয়ে চলল গান। সাহেব, আশিস, জয়ন্ত, পিণ্টু, অনিন্দ্য, পাপু, সুদীপ কণ্ঠ মেলাল ওর সঙ্গে। যাঁরা গাড়িতে এসেছিলেন তাঁরা বাকেভঞ্জন পর্যন্ত গাড়িতে আসার পরে হাঁটতে শুরু করেছেন।কেননা এতই তুষারপাত হয়েছে যে হাঁটা ছাড়া গতি নেই। পাইনের বন জুড়ে বরফের গালিচা পাতা হয়েছে। সূর্যের আলো, নীল আকাশ,আর তুষারধবল পথ মিলেমিশে শিল্পীর ক্যানভাস তৈরি করেছে। সান্দাকফুতে পৌঁছানো মানে যেন শৃঙ্গজয়। সান্দাকফুতে পৌঁছে মনে হল ‘আহা কী দেখিলাম জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না!’

বরফ-ঢাকা হোম স্টে। ক্যামেরা-বন্দি করার চেষ্টা এইসব দৃশ্য। ঠাণ্ডা হাওয়ায় হাতের আঙুল জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। লাঞ্চে গরম গরম ভাত খেয়ে শরীর কিছুটা উষ্ণ করবার চেষ্টা।রাতে মাইনাস ৬-৭ ডিগ্রি টেম্পারেচারের মধ্যেও বেরোনোর সাহস দেখালাম কয়েকজন।কেননা চাঁদের আলোয় সান্দাকফু তখন রাণীর সাজে সেজে উঠেছে। সারারাত ঘুম হল না।বাতাসের শো শো শব্দ,আর কাঁচের জানালা দিয়ে পৌঁছানো চাঁদের হাসি জাগিয়ে রাখলো। আলো ফুটতে না ফুটতেই ভিউপয়েণ্টে ছোটা।চোখে বিস্ময়। সূর্যের আলো এসে পড়ল কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর। একদিকে মাউন্ট এভারেস্ট অন্যদিকে স্লিপিং বুদ্ধ। কতদিনের আশা পূরণ হল। চোখের সামনে একে একে ফুটে উঠল কাঞ্চনজঙ্ঘা পান্ডিম, টালুং, কাবরু নর্থ, কাবরু সাউথ, কুম্ভকর্ণ (জানো), কোকটাং, গুইচালা,জপুনো, শিম্ভ, নার্সিং প্রভৃতি শৃঙ্গ। যেন হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করা যায় ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’কে। এদিকে রোদ্দুর লুকোচুরি খেলছে সান্দাকফুর বরফের সঙ্গে।মেঘ তৈরি করছে রূপকথার গল্প। এভারেস্ট, লোৎসে, মাকালু হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চোখেমুখে অকল্পনীয় তৃপ্তি।

এবার শুরু হল নিচে নামা। অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাবো গুরদুম। নামার পর মোটেই সহজ নয়। বিশেষ করে শক্ত বরফ যখন গলতে শুরু করে তখন পিছলে যাবার ভয় ভীষণ‌। বেসামাল হয়ে পড়ে গেলে পা-হাত ভেঙে যেতে পারে। খুব সাবধানতার সাথে বরফের রাস্তাটুকু অতিক্রম করলাম। পারস্পরিক বন্ধুত্ব এই পথকে সহজ করল। সম্মিলিতভাবে পরিবেশিত হলো কতনা গান। হাতে হাত রেখে ১১ জন বন্ধু অতিক্রম করে ফেললাম ভয়ঙ্কর সুন্দর সেই রাস্তা। অনেকখানি বরফাবৃত পথ অতিক্রম করার পর কখনো সিঁড়ির ধাপ ধরে অনেকখানি নীচে নেমে যাওয়া, কখনো বরফাবৃত বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া। মাঝে কিছুক্ষণের বিরতি। ক্রমশ ঠাণ্ডা কিছুটা কমে আসছে। গুরদুমে পৌঁছনোর শেষ অংশটুকু বেশ কঠিন। প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা বোল্ডারের, সোজা নেমে গেছে নিচের দিকে। ধীরে ধীরে পা ফেলতে হয়। হাঁটুর ব্যথা শুরু হতে পারে, পেশির টান শুরু হতে পারে। বিকেল বিকেল গুরদুম পৌঁছালাম। শিল্পী যেন রং তুলি দিয়ে ছবি এঁকেছেন। সমস্ত গ্রাম লাল রঙের রডোডেনড্রন আর হলুদাভ ম্যাগনোলিয়ায় ঢাকা। হোমস্টের ডাইনিং স্পেসটি অতুলনীয়। হোমস্টের মালকিন নানা রঙের ফুলে সাজিয়ে তুলেছেন এই হোমস্টে। দূর থেকে পাহাড়ি নদীর বয়ে চলার শব্দ কানে এসে পৌঁছায়। গুরদুম থেকে আমরা যাবো শ্রীখোলা। শ্রীখোলায় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন আমাদের ড্রাইভার তেনজিং। গুরদুম থেকে শ্রীখোলা যাবার পথে অজস্র রডোডেনড্রন দেখতে পেলাম। গুরদুম ব্রিজ, পাহাড়ি নদী পেরিয়ে চোখের সামনে এক অপূর্ব দৃশ্যপট তৈরি করল ‘টিমবুরে’ নামের পাহাড়ি গ্রামটি। অনেকেই সান্দাকফু থেকে নামার পথে এই গ্রামটিতে একটা রাত কাটান। আবার অনেকে থাকেন শ্রীখোলায়। যতই এগিয়ে চলেছি শ্রীখোলার দিকে, মন খারাপ হয়ে আসছিল। দোদুল্যমান শ্রীখোলা সেতুর উপর দাঁড়িয়ে মনে হল “শেষ বলে কিছু নেই… শেষ যেখানে সেখানেই আবার শুরু…”। শ্রীখোলা থেকে সোজা গাড়িতে রিম্বিক হয়ে লেপচাজগৎ। ব্ল্যাক টি আর সঙ্গে ভেজ পকোড়া আমাদের জন্য প্রস্তুত ছিল। টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টি থামতেই লেপচাজগতের উল্টো দিকের পাহাড়ে জ্বলে উঠলো লক্ষ হীরের বাতি। দূরের দার্জিলিংকে দেখে ভাষা হারালাম সকলেই। সকালে পাইন বনের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে গেয়ে উঠলাম — “কী পাইনি তারি হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি”। লাঞ্চ সেরে রুকস্যাক তোলা হলো গাড়িতে। ফিরতে তো হবেই নিজগৃহে। ঘুম, সোনাডা, কার্শিয়াং পেরিয়ে গাড়ি ছুটে চলল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের দিকে।

কীভাবে যাবেন : শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। সেখান থেকে ছোট গাড়িতে ধোত্রে। ধোত্রে থেকে হাঁটা শুরু। টুংলিং,কালিয়াপোখরি হয়ে সান্দাকফু।সান্দাকফু থেকে গুরদুম হয়ে শ্রীখোলা পর্যন্ত হেঁটে শ্রীখোলা থেকে গাড়িতে নিউ জলপাইগুড়ি ফিরতে পারেন।

কখন যাবেন : যেকোনো সময় যেতে পারেন। এক এক সময়ের এক এক রকম রূপ। তবে মার্চ- এপ্রিল মাস সবচেয়ে ভালো সময়।

কোথায় থাকবেন : প্রতিটি জায়গায় হোমস্টে আছে। তবে সংখ্যায় খুব বেশি নয়। আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো।

কি কি সঙ্গে রাখবেন : প্রয়োজনীয় ওষুধ, বর্ষাতি, ট্রেকিং-এর নির্দিষ্ট জুতো, গরম পোশাক, স্টিক।

গাইড নেওয়াই ভালো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন