রবিবার | ৭ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:২২
Logo
এই মুহূর্তে ::
সুভদ্রার রথ দর্পদলন : সন্দীপন বিশ্বাস ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (চতুর্থ পর্ব) : অভিজিৎ রায় আলুচাষে বিমার ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সমাদৃত মসলা হিং : আসমা অন্বেষা অল্পস্বল্প গল্প : তসলিমা নাসরিন ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ : রিঙ্কি সামন্ত হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী : দিলীপ মজুমদার ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় হুগলির খানাকুল থানাকে দুটি করার দাবিতে সরব এলাকার বাসিন্দারা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা নামের ব্যুৎপত্তি, নতুন আলোকপাত : অসিত দাস আবার সেই হাথরস! এবার স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলেবাবা : তপন মল্লিক চৌধুরী সন্ন্যাসী ও সুন্দরী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর ছোটগল্প ‘একটা পিস্তল ও ডুমুর গাছ’ ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় সুলেখা সান্ন্যাল-এর ছোটগল্প ‘ঘেন্না’ সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (শেষ পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী শোভারাম বসাকের লবণের ব্যবসা : অসিত দাস রাখাইনে সংঘাত ও সেন্টমার্টিন পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন খেলার মাঠ থেকে চেম্বারে : রিঙ্কি সামন্ত ছড়া কি শিশুসাহিত্য? : লুৎফর রহমান রিটন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা দিবস ও ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মজয়ন্তী পালন : দীপাঞ্জন দে সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (তৃতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব) : গীতা দাস সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (দ্বিতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (চতুর্থ পর্ব) : গীতা দাস সাবঅলটার্ন দৃষ্টিতে কলকাতার লবণচিহ্ন : অসিত দাস মোদীকে চাপে রাখতে নীতীশ-নায়ডুর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা দাবি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (প্রথম পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বাঁধে ইঁদুরের তৈরি গর্ত দিয়ে ঢোকে বন্যার জল চলছে সংস্কারের কাজ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই জগন্নাথদেবের শুভ রথযাত্রার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায়

অভিজিৎ রায় / ৪১ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪

এর তিন দিন পরে অর্থাৎ ১৫ই নভেম্বর কবিগুরু লিখলেন ‘অতিথি’ কবিতাটি। ১৬ নভেম্বর ‘অন্তর্হিতা’, ১৭ তারিখে ‘আশঙ্কা’, ২১ তারিখে ‘শেষ বসন্ত’। এ সমস্ত কবিতায় প্রেমময় অভিব্যক্তি এতোই বেশি ছিল রবীন্দ্রনাথ নিজে পর্যন্ত বিব্রত হয়ে গিয়েছিলেন — এ কবিতাগুলো দেশে (তাঁর পুত্র এবং পুত্রবধূদের কাছে) পাঠানো উচিৎ হবে কিনা ভেবে। এলমহার্স্টকে বললেন, ‘বেশি কিছু তো বলা যাবে না। ওরা খুব বিচলিত হয়ে পড়বে। আমার এই-সব কবিতার কোন মানে করতে পারবে না ওরা। ওদেরকে পাঠিয়ে দাও চিঠিগুলো আর খবরের কাগজের কাটিং গুলো, কিন্তু কবিতাগুলো পাঠিয়ো না’। তাঁর চোখে খেলা করে যাওয়া ‘দুষ্টু ঝিলিক’ আর ‘হাসির বন্যা’ এলমহার্স্টের নজর এড়ায়নি (১২)।

ওকাম্পোর বাড়িটি নিয়ে কিছু বলা যাক। ওকাম্পো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মিরালরিওর যে বাসাটিতে এনে তুলেছিলেন, সেটি বুয়েনোস আইরেস থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে সান ইসিদ্রোতে। তবে আজকে কেউ সেখানে গেলে ওকাম্পোর সাথে সম্পর্কিত কোন বাড়ি বলে চিনবেন না। এক ইউরোপনিবাসী দম্পতির ব্যক্তিগত বাড়ি হিসবেই এটি পরিচিত এখন। তবে মিরালরিও নামের এ বাড়িটির ক’ ব্লক পরেই একটি বাড়ি আছে, সেটিই আজ পরিচিত ‘ওকাম্পোর বাড়ি’ হিসেবে; নাম ‘ভিলা ওকাম্পো’। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন সময়ে সপরিবারে আর্জেন্টিনা এবং পেরু ভ্রমণে গিয়েছিলাম। ভ্রমণের এক ফাঁকে ওকাম্পোর এ বাড়িটি দেখার যে সৌভাগ্য আমার হল তা অনেকটা তীর্থস্থান ভ্রমণের সাথে তুলনীয় যেন। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলাম সেই বিখ্যাত ‘ভিলা ওকাম্পো’তে। বাড়িটি আসলে এক সময় ছিল ওকাম্পোর বাবার।

সেই বিখ্যাত ‘ভিলা ওকাম্পো’

প্রকৌশলী ভদ্রলোকের নিজের নকশাতেই তৈরি হয়েছিল বাড়িটি। পরে অবশ্য ওকাম্পো বাড়িটিকে উত্তরাধিকারসূত্রে পান, আর সেখানেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। বাড়িটির গ্রন্থাগারে প্রায় ১২ হাজারের বেশি স্প্যানিশ, ইংরেজি আর ফরাসি বই আছে। সেই সঙ্গে আছে ‘সুর’ পত্রিকার পুরনো সব সংখ্যা। আরও আছে ভিক্টোরিয়ার লেখা পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র ইত্যাদি। ‘ভিলা ওকাম্পো’ একটা সময় ছিল দেশ-বিদেশের জ্ঞানী-গুণীজনের চারণ ক্ষেত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়াও এ বাড়িতে বিভিন্ন সময় আপ্যায়িত হয়ে এসেছিলেন ইগোর স্ত্রাভিনস্কি, গ্রাহাম গ্রীন, ফেড্রেরিকো গার্সিয়া লোরকা, আঁদ্রে ম্যালরাস, হর্হে লুইস বর্হেস, অ্যাদেলফো বিয়য় ক্যাসেরাস, আলবেয়ার কামু, কাইজারলিঙ, অক্টাভিয়ো পাজ, ইন্দিরা গান্ধীসহ বহু গুণীজন। বাড়িটি ১৯৭৩ সাল থেকে ইউনেস্কোর সম্পত্তি। তাই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। মেয়ের সাথে ‘ভিলা ওকাম্পো’ ভ্রমণ সত্যই নান্দনিক একটা অভিজ্ঞতা।

তবে বাড়ি দেখে, এবং ওকাম্পোর উপর নথিপত্র ঘেঁটে যা বুঝলাম, রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত ওকাম্পোর জীবনে খুব বড় কোন অধ্যায় ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও আরো অনেক ‘প্রেমিক’ এসেছিল তাঁর জীবনে। অনেকটা রবিঠাকুরের মতই প্রেম-পিয়াসী মানুষ ছিলেন ওকাম্পো। জুলিয়েন মার্তিনেজের কথা তো আগেই বলেছি, এর বাইরে ছিলেন জ্যাক লাকান, ইগোর স্ত্রাভিনস্কি-সহ অনেক বিখ্যাত জনই। স্প্যানিশ সাহিত্যিক অর্তেগা ই গাসেত্‌, জার্মান দার্শনিক কাউন্ট হার্মান কাইজারলিঙ, ফরাসী সাহিত্যিক পিয়া দ্রিউ রা হোসেল, আমেরিকান লেখক ওয়ালদো ফ্রাঙ্ক সহ অনেকেই যে বিভিন্ন সময়ে এই প্রিয়দর্শিনী নারীর প্রণয়াকাঙ্ক্ষি হয়েছিলেন তার বহু উপকরণ খুঁজলেই পাওয়া যাবে (১৩)। ওকাম্পো তাঁদের কাউকে কাউকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়েছিলেন, কারো কারে সাথে স্বল্পস্থায়ী সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন। আরো মজার ব্যাপার হল যে ‘ভিলা ওকাম্পো’ ভ্রমণের জন্য এত তোড়জোড়, সেটিতে রবীন্দ্রনাথ থেকেছিলেন কিনা তার কোন প্রমাণ আমি পাইনি। আগেই বলেছি বাড়িটি ছিল আসলে ওকাম্পোর বাবার। ওকাম্পো বাড়িটিতে থাকা শুরু করেন আসলে ১৯৪০-এর পরে। কাজেই বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় রবীন্দ্রনাথকে সে বাসায় থাকার বন্দোবস্ত না করারই কথা, যদিও দেশের লেখক বিশ্লেষক এবং বুদ্ধিজীবীরা ওকাম্পোর এ বাড়িটিকেই আর্জেন্টিনায় রবীন্দ্রনাথের আবাসস্থল ভেবে নেন। আসলে রবীন্দ্রনাথ এ বাড়িটিতে কখনোই ছিলেন না, অসুস্থ রবিঠাকুরকে ওকাম্পো নিয়ে এসেছিলেন এ বাড়িটির কয়েক ব্লক দূরে ‘মিরালরিও’ নামের একটি ভাড়া বাড়িতে (বাড়িটির কথা বলা হয়েছে প্রবন্ধের শুরুতেই)। সেখানে দু’মাসের বেশি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে সে বাড়িটি আজ কালের গর্ভে হারিয়ে না গেলেও বাড়িটির অদূরে একটি ছোট রাস্তা ছাড়া রবিঠাকুরের কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। (১৪) ‘ওকাম্পো ভিলা’ই আজ আমাদের মতো ভ্রমণ পিপাসুদের তীর্থস্থান (১৫)। বহু বিখ্যাত জনের পাশাপাশি রবিঠাকুরেরও অনেক ছবি আছে এ বাড়িতে। আর আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর স্প্যানিশ ভাষায় লেখা ওকাম্পোর বিখ্যাত বই — ‘তাগোর এন্‌লাস্‌বার্‌রাংকাস দে সান ইসিদ্রো’ (Tagore en las barrancas de San Isidro)। ভিলা-ওকাম্পোর সংগ্রহশালা থেকে বইটির একটা কপি সংগ্রহ করতেই হল।

আমার মেয়ে ইদানীং স্প্যানিশ সাহিত্য নিয়ে কিছুটা উৎসাহী হয়েছে। ওকাম্পো ভিলায় তাকে সার্বক্ষণিক ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে পাওয়ায় একটা অন্তত উপকার হল। তার কল্যাণে জানলাম এর অর্থ হচ্ছে — ‘সান ইসিদ্রোর উপত্যকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’। শঙ্খ ঘোষ অবশ্য তাঁর ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’ বইয়ে ওকাম্পোর বইটির শিরোনামটির অনুবাদ করেছেন ‘সান ইসিদ্রোর শিখরে রবীন্দ্রনাথ’ হিসেবে। কিন্তু স্প্যানিশে ‘বাররাংকা’ (barranca) শব্দটির অর্থ ঠিক শিখর নয়, ইংরেজিতে ‘গর্জ’ (gorge) বা ‘র‍্যাভিন’ (ravine) বরং এর অনেক কাছাকাছি। কেতকী কুশারী ডাইসন তাঁর বইয়ে শব্দটির অনুবাদ করেছেন – ‘গিরিদরি’। পাশাপাশি অবশ্য তিনি ‘সংকীর্ণ উপত্যকা’ কেও অনুমোদন দিয়েছেন। তাই আমার এ লেখায় উপত্যকাই সই! অন্তত শব্দটি পাঠকদের কাছে অপরিচিত ঠেকবে না। এই বিখ্যাত বইটির কপি ছাড়াও ওকাম্পোর সম্পাদিত পুরনো ‘সুর’ পত্রিকার একটি কপি বগলদাবা করলাম। মাথায় ছিলো, ওকাম্পোর উপর যদি কখনো কিছু লেখাটেখা হয়ে উঠে তবে হয়তো এ সংগ্রহগুলো কাজে আসবে। এই লেখাটির সূত্রপাত সেখান থেকেই।

ওকাম্পোর বর্ণাঢ্য জীবনে রবীন্দ্রনাথকে আমি ‘একটি ছোট অধ্যায়’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সেই ক্ষণজন্মা কালটিকে মোটেই মূল্যহীন বলা যাবে না। রবিঠাকুরের উপর লেখা ‘তাগোর এন্‌লাস্‌বার্‌রাংকাস দে সান ইসিদ্রো’ (১৯৬১) নামের পূর্ণাঙ্গ বইটিই তার প্রমাণ। এই বইটি ছাড়াও ওকাম্পোর আরো বেশ কিছু রচনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখ পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মারা যাবার পর তাঁর ‘সুর’ পত্রিকায় ওকাম্পো লিখেছিলেন দীর্ঘ একটি ‘অবিচ্যুয়ারি’ নিবন্ধ। আসলে ভারতের সমসাময়িক তিনজন বিখ্যাত ব্যক্তি দিয়ে ওকাম্পো খুবই প্রভাবান্বিত ছিলেন — গান্ধী, নেহেরু এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথেই কেবল তাঁর দেখা হয়েছিল। তাঁর চোখে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন, ‘মিতবাক, স্নেহপরায়ণ, উদাসীন, পরিহাসপ্রিয়, গম্ভীর, আধ্যাত্মিক, খামখেয়ালি, প্রশ্রয় দিতে ওস্তাদ, উৎফুল্ল, কঠিন, কোমল, নৈর্ব্যক্তিক, সুদূর, বিবেকী এবং আবহাওয়ার মতোই পরিবর্তনশীল’ এক মানুষ। তবে রবীন্দ্র-চিন্তার প্রভাব ছিলো ওকাম্পোর উপরে উল্লেখ করার মতোই। অনেক সময়ই গান্ধী বনাম রবীন্দ্রনাথের অলিখিত দার্শনিক মনোদ্বন্দ্বে রবীন্দ্রনাথকেই বেছে নিতেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আর্জেন্টিনা ভ্রমণের সময়টুকু যাতে উপভোগ্য হয়ে উঠে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করেছিলেন তিনি। একটি সাজানো ঘর, নয়নাভিরাম দৃশ্যখচিত অলিন্দ, কবিতা লেখার উপযোগী নিভৃত পরিবেশের বন্দোবস্ত করা থেকে শুরু করে যখন দরকার সঙ্গ দেয়া, দর্শনার্থীদের সাথে রবিঠাকুরের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা, সাহিত্যিকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া, রবিঠাকুরের পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাওয়া সবই করেছিলেন ওকাম্পো। এ সমস্ত করতে গিয়ে ওকাম্পোর যথেষ্টই খরচপাতি হয়েছিল। আর্জেন্টিনায় রবীন্দ্রনাথের প্রথমে সাত দিন থাকার কথা থাকলেও সেটা ক্রমশ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় দুই মাসের কাছাকাছি। শোনা যায়, রবিঠাকুরের ভরণপোষণের এই খরচ মেটানোর জন্য ওকাম্পোকে খুব দামী একটি হীরের টায়রা খুব নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছিল (১৬)। গয়না বিক্রির টাকা থেকে দশ হাজার পেসো আগাম ভাড়া দিয়ে এসেছিলেন রবিঠাকুরের জন্য বরাদ্দকৃত সেই মিরালরিওর বাড়িটির মালিককে। কেবল তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাতে কোন সমস্যা না হয়, সেজন্য তাঁর ব্যক্তিগত পরিচারিকা ফানিকে নিয়োগ করে দিয়েছিলেন, ফানিকে ব্যস্ত রেখেছিলেন রান্নাবান্না-সহ চব্বিশ ঘণ্টা তদারকিতে। এর ফলে ফানির সাথেও কবিগুরুর এক ধরণের সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। ওকাম্পো তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একটু রসিকতা করেই লিখেছিলেন, ‘ …তবে ওদের কথাবার্তাটা ঠিক কোন ভাষায় চলতো, তা দুজনের একজনও আমাকে কখনো বুঝিয়ে বলতে পারেননি, কারণ একজন তো আদৌ ইংরেজি বলতে পারতেন না, অন্যজনের স্প্যানিশও ছিল তথৈবচ’।

শেষ পর্বে সমস্ত ফুট নোট দেওয়া রয়েছে।

(ক্রমশ)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন