PotaTo potaTo potaTo PotaTo /potaTo potaTo PotaTo potaTo /potaTo PotaTo potaTo potato/ potaTo /They’re red, they’re white, they’re brown./ They get that way underground.
শেরিল হুইলারের এই বিখ্যাত গান ছাড়াও ইংরেজীতে অনেক ছড়াগান আছে আলু নিয়ে। আর বাংলায় গান না থাকলেও রয়েছে মজার মজার কৌতুক আর ‘আলুর দোষ’। আলুকে যতই বিদেশী তকমা দেন না কেন, সেই কোন যুগ থেকেই সর্বজনীন সব্জি হিসাবে দেশ-বিদেশের ভেদাভেদ ঘুচিয়ে আলু আমাদের হেঁশেলে মাস্তানি করে বেরাচ্ছে।।
ইতিহাস ভূগোল বলছে সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির সান্টিয়াগো শহর আলুর প্রথম ঠিকানা। প্রায় ৭ হাজার বছর আগে ১৫ হাজার ফুট উপরে পার্বত্য অঞ্চলে এখানকার মানুষ আলুর সন্ধান পায়। বেশ শক্ত ফলটি খেলে শরীরে বল হয় বলে চাষিরা আলু চাষে মন দেয়। যদিও পশ্চিমের দেশগুলো অনেক বছর পর্যন্ত এর কোন সন্ধান পায়নি। ১৫৩৭ সালে স্পেনের যোদ্ধারা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু অধিকার করার পর আলুর খবর জানতে পারে। এরপর ১৬ শতকের গোড়ার দিকে ১৫৭০ সালে আলু চাষ শুরু হয় আটলান্টিকের অন্য পারে ইউরোপের দেশগুলিতে। মজার ব্যাপার হলো, স্প্যানিশরা তখনও আলুর মর্ম বুঝতে পারেনি। তারা মনে করতো আলু হলো গরিব মানুষের খাদ্য। দক্ষিণ আমেরিকার স্পেনীয় উপনিবেশ গুলি এবং স্পেনীয় জেলখানা ও হাসপাতালগুলিতে রোগীদের খাদ্য হিসেবে আলু সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল।
এর ঠিক ত্রিশ বছর পরে ইউরোপের দেশগুলোতে আলু খাওয়ার প্রচলন হয়েছিল গরিবদের খাওয়া হিসেবে। আলু যদি বেশি সময় রোদে রাখা হয় তাহলে তার রং ক্রমশ সবুজ হয়ে যেত বলে ধারণা হয় যে খোসায় সোলালাইন নামে এক ধরনের তিক্ত রাসায়নিক আছে। যা খেলে মানুষ অসুস্থ হতে পারে। মূলত আলুর গুনাগুন সম্পর্কে সে সময় মানুষের কোন বৈজ্ঞানিক ধারণা ছিল না।
এরপর প্রথম ইউরোপে আলুর কদর শুরু হয় বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডে চাষিরা আলু চাষ করতে থাকেন। এর পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে অবহিতো হয়ে আলুর ওপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যে, যদি আলু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আয়ারল্যান্ডের মানুষ না খেতে পেয়ে মরে যাবে। সেরকম ঘটনাও ঘটলো সে দেশে।
১৮৪৫ সাল। লেটব্লাইট নামে এক ধরনের ছত্রাক রোগে পশ্চিম আয়ারল্যান্ডে আলুর উৎপাদন একবারে না হওয়ায় সে দেশে এক ধরনের দুর্ভিক্ষ হয়। পরের ছ-বছর এই রোগে আলুর উৎপাদন না হলে অনাহারে মরে যায় বহু মানুষ। এই দুর্ভিক্ষের নাম ‘আইরিশ পটেটো ফেমিন।’
ইংল্যান্ডে আলুর চাষ শুরু হয় এক জাহাজডুবি থেকে। ১৫৮৮ সালে ইংল্যান্ডের কাছাকাছি সমুদ্রে একটি স্প্যানিশ জাহাজ ডুবে গেলে সমুদ্রপাড়ের লোকেরা ভেসে ওঠা আলু সংগ্রহ করে খায়। এবং মজার জিনিস হল এখান থেকেই মাটিতে পুঁতে আলুর চাষ শুরু হয়। নানা রকম ভাবে আলুর চাষ সারা ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যান্তোয়াইন-অগাস্টিন পারমেন্টিয়ের (Antoine Augustin Parmentier) নামে ফরাসি উদ্ভিদবিজ্ঞানী আলুর ছত্রাক রোগ প্রতিরোধের ওষুধ উদ্ভাবন করলে আলুর মড়ক রোগ বন্ধ হয়ে যায়। আলু হয়ে দাঁড়ায় প্রতিদিনের অন্যতম প্রধান খাদ্য।
আমাদের এই উপমহাদেশের সঙ্গে আলুর প্রথম পরিচয় হয় পর্তুগিজ বণিকদের মাধ্যমে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। আলু বাংলার এক সুপ্রাচীন কন্দ। ইতিহাস বলে, পালযুগে বাংলার মানুষের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি। পাল যুগের বিখ্যাত কবি সন্ধ্যাকর নন্দী জানাচ্ছেন সমসময়েই বাঙালিরা আলুপ্রেমে ডগমগ ছিল। প্রকৃত অর্থে বাংলা অঞ্চলে এখন বন-জঙ্গলে বা বিভিন্ন গাছের ছায়াতে পরজীবী লতা হিসাবে নানা প্রকারের আলু জন্মে। তা মেটে আলু, পেস্তা আলু, চুপরি আলু, মাচা আলু, গজ আলু, মোম আলু, মাইট্টা আলু, মাছ আলু, প্যাচড়া আলু বা প্যাচরা আলু প্রভৃতি নামে পরিচিত। এ আলু গাছেও ঝোলে এবং কন্দ হিসাবেও পাওয়া যায়। তবে এ আলু উৎপাদনে কোন সার বা কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। কারণ এ গাছে কোনো পোকার আক্রমণ হয় না।
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার অনুসারে, একটি সাধারণ কাঁচা আলুতে ৭৯% জল, ১৭% শর্করা (৮৮% শ্বেতসার), ২% প্রোটিন এবং নগণ্য পরিমাণ চর্বি থাকে এবং এটিতে ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন-সি-এর সমৃদ্ধ উৎস। আলুর খোসাও ফেলনা নয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ডায়েটারিফাইবার থাকে। এর প্রয়োজনীয় অংশ শরীরের লার্জ ইন্টেস্টাইনে পৌঁছে যায়। যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আলু নিয়ে ভ্যান গগের আঁকা শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্মের নাম ‘দ্য পটেটো ইটার্স’ (The Potato Eaters)। ছবিটিতে একটি পরিবারের চার পাঁচজন সদস্যরা একসঙ্গে বসে খাবারের পাতে আলু খাচ্ছেন। ছবিটি কৃষকদের জীবন সত্য প্রকাশ করেছে।
আলুর ইতিহাস ভূগোল যাই হোক না কেন, আলু ছাড়া বাঙালির হেঁশেল একেবারেই অচল। নিরামিষ বা আমিষ যে কোন পদে আলু ছাড়া জমে না। এমনকি স্লিম ট্রিম হওয়ার জন্য বা ডায়াবেটিস রোগীরা যারা খাদ্য তালিকায় আলু নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, তারাও মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন আলুকে। মা ঠাকুমারা বলতেন, বাড়িতে কোন কিছু না থাকলেও শুধু চাল, ডাল, তেল, আলু থাকলেই নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। শুধু খাওয়া নয়, রূপচর্চা তেও আলুর কদর খুব। এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম ত্বকের বয়স কমিয়ে দেয়। ডার্ক সার্কেল উধাও হয় আলুর গুনেই।
কলকাতায় খাদ্যরসিকদের মেজাজ বিগড়ে যায় যদি না বিরিয়ানিতে আলু থাকে। অনেকেই মনে করেন নবাব ওয়াজিদ আলীর হাত ধরেই কলকাতার বিরিয়ানিতে আলুর অনুপ্রবেশ। নবাবের টানাটানির সংসারে পরিচিতদের দাওয়াতে রাঁধুনীরা নবাবের অনুমতিতে বিরিয়ানিতে আলু দেওয়ার রেওয়াজ চালু করেন। বিরিয়ানিতে আলুর সেই অমোঘ আকর্ষণে আজও মজে আছে বাঙালি। আলু ভাতে, আলু চচ্চড়ি, আলু পোস্ত, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই যে পদই রাঁধুন না কেন বাঙালির দিন গুজরান আলু ছাড়া খাবার মোটেও হয় না কিন্তু “পা পিছলে আলুর দম” মোটেও কাম্য নয়।।
অতি প্রিয় এই সব্জিটির জন্মলগ্নের ইতিহাস জেনে খুব ভাল লাগলো
খুব খুশি হলাম তোমার কমেন্ট পেয়ে।
ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ।
চমৎকার প্রতিবেদন
আন্তরিক ধন্যবাদ।
আলুর খবর,আলুর চিন্তা,আলুর ছদ্মবেশ* আলুর
দম খা দমাদম,আলুর চপ আলু টিকিয়া,আলুর
মহাদেশ*নাম পাল্টে চিপ্স্ প্যাকেটে রঙিন স্বাদে
গন্ধে* ফিস ফিঙ্গার হাতের মাঝে মিষ্টি ভালো মন্দে* মাছের ঝোল,মাংস মটন,মাংস চিকেন,
আলুর অনুপ্রবেশ*** চমৎকার সুন্দর প্রতিবেদনে
মুগ্ধতা ভালোলাগা।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে 🌹