বৃহস্পতিবার | ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘আচারের বিচার’

নন্দিনী অধিকারী / ৬০৮ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ৩ জুলাই, ২০২৩

“ওরে ও ছোটোখুকি, ছুঁসনি ছুঁসনি বাবা এখন আমায়। দেখছিস না কাচাকাপড়ে আছি! কোথায় একটু সাহায্য করবি, তা নয়, ছোঁয়ানাড়া করে সব এক করে দিল গা! যা ভাগ এখান থেকে এখন। আচার এখনো হলই না, তার আগেই ওনার নোলা সকসক করে!”

নিস্তারিণী স্নান সেরে কাঁচা আম খোসাসুদ্ধু কেটে নুন-হলুদ মাখিয়ে রোদে শুকোতে দিচ্ছিল। কালো পাথরের খোড়ায় রোদে জারাবে আমের টুকরো। কর্তার পুরনো কাচাধুতি টানটান করে তাতে চাপা দেওয়া হবে, যাতে কাকপক্ষী মুখ না দেয়। আমের রস একটু টেনে গেলে তাতে পড়বে পাঁচফোড়ন, শুকনোলঙ্কার গুঁড়ো, নুন, হলুদ, সরষের তেল আর সামান্য চিনি। মায়ের হাতের তেলেঙ্গা বড় খোকা মুড়ি মেখে খেতে খুব ভালোবাসে। মেজ জামাইয়ের নুচিপরোটার সঙ্গে পাতের এককোণে তেলেঙ্গার আমের টুকরো জ্বলজ্বল করা চাইই চাই।

মেজ খোকার রুচি আবার মিষ্টি আচারে। সে থাকে পশ্চিমে। ওকালতি করে। তার জন্যে বয়েমে ভরে রাখতে হবে গুড় আম, আমের জেলি, আমের মোরব্বা। আমের জেলি, মোরব্বা একপাকে ভালো হয় না। তাকে রেখে রেখে দু-দিন ধরে করতে হয়।

বোশেখ মাসের কাঁচা আম বাজারে উঠলেই নিস্তারিণীর আচারের মরশুম। কালবোশেখির ঝড়ের পরে কাঁচা আম একটু শস্তা হয়। তখন একতলার ঢালা বারান্দায় রোজই বাজার থেকে আসা কিলো কিলো আমের গড়াগড়ি।

কর্তা মাঝে মাঝে রাগ করে বলেন, “টানাটানির সংসারে রোজ রোজ এত আচার বানালেই কি নয় গিন্নি?”

নিস্তারিণী কপট রাগ দেখায়। “বচ্ছরকার দিনে আচারটা, বড়িটা বানিয়ে রাখি বলেই তো মাগ্গিগন্ডার দিনে সংসারে একটু সাশ্রয় হয়, তাও বোঝো না! জামাইষষ্ঠীর তত্বে বড়খুকি, মেজখুকির শ্বশুরবাড়িতে আচার না পাঠালে আমাদের মান থাকে বলো?”

নিস্তারিণীর ভালোমানুষ পতিটি বোঝেন এ সবই কথার কথা। আসলে আচার করা নিস্তারিণীর নেশা। গরমের সময় ছাড়াও শীতে কুল, বর্ষায় করমচা শরতে চালতার আচার চলতেই থাকে নিস্তারিণীর হেঁসেলে। এমনকি আমের কষিটুকুও বাদ পড়েনা। তাকে রগড়ে ধুয়ে, শুকিয়ে, গুঁড়ো করে, মশলা মাখিয়ে দিব্যি মুখশুদ্ধি বানিয়ে ফেলে গিন্নি। তার এ কাজের সাগরেদ বড়খোকা নবীনের বৌ গৌরী। শান্ত, সুশীলা বড়বৌমা ঘোমটা টেনে শাশুড়ির নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।

নিস্তারিণীও তার মা-ঠাকমা, শাশুড়ির কাছে শুনে এসেছে, আচার বড় ছুঁইমুই। মাসিকের সময়ে, আকাচা কাপড়ে, আধোয়া হাতে আচার ছুঁলে নষ্ট হয়। আচার মানে শুদ্ধাচার। ছেলেপুলের ঘরে এঁটোকাঁটা বাঁচিয়ে তাকে সম্বতসরের জন্যে তুলে রাখা হয় বড় বড় চিনে মাটির বোয়েমে। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোছত্রির মাথায়। প্রয়োজনমত সেসব ভাঁড়ারে ঢোকে।

সংসারের যেসব গুহ্য কথা কর্তা জানেন না, তার মধ্যে একটি হল আচার ছাড়া নিস্তারিণীর নিজেরই একদিনও চলে না। সংসারের আগ্রাসী ক্ষিদেয় যখন প্রায়ই ডাল-তরকারি-মাছ বাড়ন্ত হয়, তখন ঐ আচারের টাকনা দিয়ে নিস্তারিণী একথালা ভাত খেয়ে ফেলে।

সে কথা বড় বৌ গৌরী সবথেকে ভালো বোঝে। আজ যখন বয়সের ভারে শাশুড়ি প্রায় অথর্ব — শয্যাশায়ী, তখনও তার পালঙ্কের নিচে সাজানো রয়েছে সারি সারি আচারের শিশি। শীতকালে দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় ঠিক খোঁজ নেবে, “হ্যাঁরে বড় বৌ! এবারে সরষেবাটা, মূলো-কপিরডাঁটা দিয়ে টাটকা আচার করিস নি! নিয়ে আয় একটুসখানি, দেখি কেমন সোয়াদ হল?”

ডাঁটাবেগুন, গুড় দিয়ে মশলা মাখানো কুলের শুকনো আচার বুড়ির হাতে খুব খোলতাই হত। মনমতো না হলেই বলবে, “এ ম্যাগো, শুকনো আচার তুই করলি না সেজবৌ? গুড় আর কুলের আন্দাজ মোটে করতে পারিস নি। এত করে শেখালুম তোদের, সব বিফলে গেল?”

এত সমালোচনা করেও তার দু-বেলা খাওয়ার পাতে আচার চাইই চাই। আজকাল খাওয়া-দাওয়ার একটু এদিক ওদিক হলেই নিস্তারিণীর পেট ছেড়ে দেয়। সেজবৌ গীতা বড় মুখরা। সে বাড়ি মাথায় করে চেঁচিয়ে বলে, “আরো আচার খাওয়াও তোমার পেয়ারের শাউড়িকে! এবার হেগেমুতে একসা করলে তুমিই পরিষ্কার করবে দিদি”।

সেদিন গঙ্গায় ভরা কোটাল। রাতে পূর্ণিমার চাঁদের আলোতেও আকাশে বান ডেকেছে। সকাল থেকেই নিস্তারিণীর শ্বাসের টান উঠল। বিনয় ডাক্তার নাড়ি টিপে, চোখ টেনে, বুকে কল লাগিয়ে দেখে বলে গেল, “আজ সন্ধের মধ্যেই ভালোমন্দ কিছু একটা হয়ে যাবে।”

বড়নাতি অজয় তুলসীগাছ, নামাবলী, গীতা সব যোগাড় করে রেখেছে। গিন্নির শেষযাত্রায় যেন কোন ত্রুটি না হয়! গোটা পরিবার অনেকক্ষণ গিন্নিকে ঘিরে বসে ছিল। তারপর ধীরে ধীরে তাদের ধৈর্যৈর বাঁধ টুটল। একে একে যে যার নিজের কাজ দেখিয়ে চলে গেল।

চিরকালের অনুগামী বড় বৌ চুপটি করে শাশুড়ির পাশে বসে আছে। মুখে একটু করে গঙ্গাজল দিচ্ছে। বুকে হাত বুলোচ্ছে। প্রাণ যেন আর তার খাঁচা ছেড়ে বেরোতে পারে না। বুকটা হাপরের মত উঠছে, নামছে। ঠোঁটদুটো কইমাছের মত খাবি খাচ্ছে। সে কষ্ট আর চোখে দেখা যায় না। নীরবে চোখের জল ফেলতে ফেলতে কি যেন ভাবল গৌরী। এদিক ওদিক তাকিয়ে শাশুড়ির পালঙ্কের নিচে হামাগুড়ি দিয়ে সিঁধোল। সেখানে থরে থরে সাজানো আছে আম, কুল, তেঁতুলের ঝাল-মিষ্টি আচার। সময় নষ্ট না করে এক খাবলা তেঁতুলের আচার তুলে শাশুড়ির মুখে দিতেই আহ্ যেন কি প্রশান্তি! জিভে আচারের স্বাদ পেল কি শাশুড়ি? সেই কমবয়সী নিস্তারিণীর ফিক করা হাসি কি ফুটে উঠল মুখে? সব কষ্টের অবসানে চোখদুটি ধীরে ধীরে বুঁজে এল আচার বিলাসিনী নিস্তারিণীর।

বড়বৌ গৌরী চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল, “ওগো, কে কোথায় আছ এসো গো! মা যে আমাদের ছেড়ে চলে গেল….”


আপনার মতামত লিখুন :

6 responses to “নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘আচারের বিচার’”

  1. রিঙ্কি says:

    আচার বিলাসিনী নিস্তারিণীর গল্প পড়তে দুর্দান্ত লাগলো।

  2. Nandini Adhikari says:

    থ্যাঙ্কু গো। খুব খুশি হলাম।

  3. শাশ্বতী চৌধুরী says:

    এইসব দিন যেন আজকের জীবনে রূপকথার গল্প — কি ভালো যে লাগলো।

  4. Nandini Adhikari says:

    সেইসব দিনের কথা আপনাদের ভালোলাগায় ভ’রে উঠলে লেখা সার্থক। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন 🙏

  5. Nabanita santra dey says:

    খুব ভালো লাগলো নন্দিনী দি!! 🥰

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন