২৭ জুলাই বুধবার, ২০২২ কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে ইকো ইন্ডিয়া সংস্থা উচ্চপর্যায়ের আলোচনাসভা অনুষ্ঠীত হলো। এই আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ, অরুনাচলপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরা, আসাম ও কলকাতা পুরসভার প্রায় চিল্লশজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। কলকাতার পার্ক হোটেলে এর সূচনা করেন বিধায়ক তথা কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। আলোচনার বিষয় ছিল স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিত করা। এই সম্পর্কে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এই মুহূর্তে একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। বিশেষ করে করোনা মহামারিকালে এর অবদান অনস্বীকার্য। উন্নত মাণের এই প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে ইকো ইন্ডিয়া একটি উল্লেখযোগ্য অনুঘটকের কাজ করে চলেছে। এর ফলে স্বাস্থ্য পদ্ধতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নাগরিকবৃন্দ উপকৃত হচ্ছেন। এদের ব্যবস্থাপনায় ‘হ্যাব এন্ড স্পোক’ পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রায় এক বছর ধরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি আমরা। নাগরিকরা গুণগতমানে আরো সমৃদ্ধ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন। আমি ধন্যবাদ জানাই ইকো ইন্ডিয়াকে।’
কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে বর্তমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে ১২টি স্পোকের মাধ্যমে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে ইকো ইন্ডিয়া সমস্ত যন্ত্রপাতি দিয়ে সাহায্য করছে কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগকে। শুধু কলকাতা নয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যকেও এই পরিষেবাটি দিচ্ছে ইকো ইন্ডিয়া। তবে এটা উল্লেখযোগ্য এবং গর্বের বিষয় যে, ইকো ইন্ডিয়ার সাহায্যে ডিজিটাল মাধ্যমের দ্বারা প্রশিক্ষণের কাজ সর্বপ্রথম শুরু করেছে কলকাতা। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কলকাতা পুরসভার সবশ্রেণীর কর্মীদের কাছে চিকিৎসগণ যে বার্তাটি দিতে চাইছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে গিয়ে পৌঁছচ্ছে এবং এর জন্য কর্মীদের অনেক দূর যেতে হচ্ছে না। সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। প্রায় ২০০ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত কলকাতা শহর। এর মধ্যই আছে ১৪৪টি ওয়ার্ড। প্রতি ওয়ার্ডেই আছে পৌর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ডিজিটাল মাধ্যম হওয়ার আগের অবস্থায় সমস্ত পৌরপ্রাথমিক কেন্দ্রের সব স্বাস্থ্যকর্মীকে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া অসম্ভব ছিল। এখন তা সম্ভব হয়েছে। এই প্রশিক্ষণের ফলে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের পরিমান ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিড টিকাকরণ এবং মানসিকরোগের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও এই প্রশিক্ষণ বিশেষ ভাবে কাজে দিচ্ছে। এছাড়া ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া দমনে এই প্রশিক্ষণের সুফল বিশেষ ভাবে চোখে পড়ছে। এক কথায় বলা যায় কলকাতা পৌর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকাঠামোকে আরো উন্নত ও অত্যাধুনিক করেছে ইকো ইন্ডিয়া। এর সুফল পাচ্ছেন কলকাতাবাসী।
ইকো ইন্ডিয়ার চিফ অপারেটিং অফিসার সুরজিৎ চট্টরাজ এই প্রসঙ্গে জানান, ‘ইকো ইন্ডিয়া এবং কলকাতা পুরসভার মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এর পর থেকেই পৌর স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিজিটাল মাধ্যমে প্রশিক্ষণপর্ব শুরু হয়।’
ইকো ইন্ডিয়ার অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাঃ ভাল্লা জানান, ‘ইকো ইন্ডিয়া ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় স্বাস্থ্যপরিষেবাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে চলেছে এবং এই বিষয়ে আলোচনা স্বাস্থ্য পরিষেবাকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে ও স্বাস্থ্যব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনবে বলে আমার বিশ্বাস।’ বর্তমানে সপ্তাহে প্রায় ৬ দিন পুরস্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া চলেছে।
এদিনের অনুষ্ঠানে কলকাতা পৌরসংস্থার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডাঃ তপন কুমার মুখোপাধ্যায়, স্বাস্থ্য বিভাগের মুখ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরী, ডেপুটি সিএমএইচও ডাঃ বিবাকর ভট্টাচার্য, চিফ ভেক্টর কন্ট্রোল অফিসার ড. দেবাশিস বিশ্বাস, কলকাতার নোডাল অফিসার ডাঃ নবারুণ মজুমদার, ডাঃ অভয় দে, ডাঃ শুদ্ধচিত্র চক্রবর্তী, ডাঃ শ্রীমন্তি দাশ ও ডাঃ অর্পণ মিত্র সহ বিশিষ্টগণ।
এখন বর্ষাকাল অর্থাৎ ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার সময়। কী ভাবে মানুষ একটু সচেতন হলে এই অসুখগুলির থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় তার একটু আলোচনা এই প্রসঙ্গে করছি। কলকাতা শহরে ডেঙ্গির মশা ঈডিস ঈজিপ্টাই সব থেকে বেশি কামড়ায় সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত। কাজের ডেঙ্গির মরশুমে এই মশার কামড় এড়াতে শোওয়ার ঘরে নিয়মিত পাইরেথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশকের এরোসল স্প্রে করা দরকার — পরামর্শটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। অন্যদিকে ম্যালেরিয়ার মশা রাতে কামড়ায়। সমীক্ষা বলছে, যারা মশারি না টাঙিয়ে ম্যাট-কয়েল জ্বালিয়ে রাতে ঘুমোয়, তাদের ৮৫ শতাংশ ভোগে ম্যালেরিয়ায়। আর যারা মশারি টাঙিয়ে ঘুমোয় তারা ভোগে কম, মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশ। তাই বোঝাই যাচ্ছে রাতে নয়, দিনে কামড়ায় ডেঙ্গির মশা। কাজেই দুপুরে খাওয়ার পরে ঘুমোনোর অভ্যেস আছে যাঁদের, ডেঙ্গির মরশুমে রোগের সংক্রমণ এড়াতে দিনের বেলাতেও তাঁরা মশারি টাঙিয়ে শুতে পারেন।
কলকাতা শহরে ডেঙ্গির মশা ঈডিস ঈজিপ্টাই সব থেকে বেশি জন্মায় বাড়ির ভেতরের চোবাচ্চায়। কাজেই ঘন ঘন চৌবাচ্চা পরিষ্কার করা দরকার। চৌবাচ্চার দেওয়াল ভালো ভাবে পরিষ্কার না করলে সেখানে লেগে থাকবে ঈডিস ঈজিপ্টাই-এর ডিম। তারপর জল পেলেই সেই ডিম থেকে বের হবে মশার লার্ভা। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার জল ছাড়াও ৩ বছর বেঁচে থাকতে পারে ঈডিস মশার ডিম।
বাড়িতে কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে তাকে অবশ্যই মশারির ভেতরে রাখতে হবে। এতে রোগীর দেহ থেকে অন্য একজন সুস্থ মানুষের দেহে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গির ভাইরাস ছড়াবে না।
সমীক্ষা বলছে, কলকাতা শহরে বৃষ্টির জমা জলেই বেশি জন্মায় ম্যালেরিয়া-বাহক মশা অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই। সুতরাং, শহরের যেসব জায়গায় এই বর্ষার মরশুমে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বেশি, সেইসব জায়গাগুলিতে চিহ্নিত করে এলাকার প্রতিটি পাকা বাড়ির ছাদ, বাড়ির আশপাশ এবং কোথাও কোনও নির্মাণকাজ চলতে থাকলে, সেই জায়গায় বৃষ্টির জল জমে রয়েছে কি না, তা ভালো করে দেখতে হবে। প্রতিদিন দেখার দরকার হবে না। পনেরো দিন পরপর দেখলেই চলবে। অনুসন্ধানের কাজ ঠিকঠাক এগোলে ম্যালেরিয়া কমবে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের।