শনিবার | ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:১৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মিরাকেল অফ জায়ফল : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৭৬২ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জায়ফল (Nutmeg) এর বোটানিকাল নাম মাইরেস্টিকা ফ্রেগরেন্স (Myristica fragrans)। ‘জায়ফল’ এই ছোট্ট চার অক্ষরের ফলটিকে দখল করা নিয়ে সাক্ষী রয়েছে বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস। কোন এককালে মধ্য-ইউরোপে জিনিসপত্র আদান প্রদানের অন্যতম ধারক ও বাহক ছিল জায়ফল — যার মূল্য ছিল একটি হৃষ্টপুষ্ট ঘোড়া অথবা সাতটি দুধেল গাভীর সমান। বিয়েতে উপঢৌকন ও যৌতুক হিসেবে বিবাহিত দম্পতিরা জাফরান, জায়ফলের মতো অন্যান্য দামী মশলা উপহার পেতেন। কিন্তু কেন এতদামী ছিলো মসলাটি?

নিমেষে যন্ত্রণা কমাতে জায়ফল গাছের বীজ থেকে তৈরি তেল দিয়ে মেসেজ করলে উপশম হয়। সাধারণ সর্দি কাশিতে জায়ফলের গুঁড়ো খুবই উপকারী। রোস্ট, কোরমা, বিরিয়ানি, কাবাব, পোলাও, মাংস, সসেজ মিষ্টি, পুডিং ইত্যাদি ছাড়াও রাজকীয় মোগলাই ডিশে জিভে জল আনা বিশেষ ঘ্রাণ তৈরীর জন্য দরকার জায়ফলের।

ষোড়শ শতাব্দীতে জায়ফল বিশ্বের একটি ব্যয়বহুল বাণিজ্যিক মসলা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রোমানরা এটি ধূপ হিসাবে ব্যবহার করত ।

শুধুমাত্র স্বল্পপরিমানে খেলে একটি গর্ভাবস্থায় নিরাপদ কিন্তু পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে অকালপ্রসব বা গর্ভপাত ঘটতে পারে। তাই গর্ভপাত করানোর জন্য একসময় জায়ফলের প্রয়োজন পড়তো। এরসঙ্গে জুড়ে এক অন্ধবিশ্বাস, শোনা গেল জায়ফল খেলে নাকি প্লেগ রোগ সেরে যায়। এমনকি যৌণ উত্তেজনা ও ক্ষমতা বাড়াতে অব্যর্থ ঔষধের কাজ করতো জায়ফল। উইলিয়াম স্যালমন নামক সপ্তদশ শতাব্দীর একজন ইংরেজ একটি স্ব-পরীক্ষার বর্ণনা দিয়ে লিখেছিলেন, যৌনাঙ্গে জায়ফল তেল মালিশ যৌন উত্তেজনা তৈরি করে (Rudgley 1998, Salmon 1693 উদ্ধৃত)। এইসব প্রচারই মূল্যবৃদ্ধি ঘটালো জায়ফলের।

হিউয়েন সাঙ যখন নালন্দায় থাকতেন তখন তাকে রোজ কুড়িটি করে জায়ফল পরিবেশন করা হতো। খাবারে জায়ফল মেশালে খাবার দীর্ঘক্ষন ভালো থাকে। নবম শতাব্দীর শুরুর দিকে থিওডর দ্য স্টুডাইট তার শিষ্যদের খাবারের জায়ফলের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে খেতে বলতেন স্বাস্থ্য ও মনোযোগ যাতে দুটোই ভালো হয়।

জায়ফলের আদি বাসস্থান ইন্দোনেশিয়ার বান্দা দ্বীপ। এই দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট অংশ রাণ। সারাদিন মাত্র কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে এই দ্বীপে। ৩৫০ বছর আগে ডাচ্ তথা ওলন্দাজদের দখলে ছিল নিউআমস্টারডাম। ইংরেজরা ওই জায়গাটি দখলের পর নাম রাখেন নিউইয়র্ক। নিউইয়র্কের প্রধান এলাকা ছিল ম্যানহাটন। এই ম্যানহাটন ছিল ওলন্দাজদের দখলে। ওলন্দাজেরা এই দ্বীপটি ইংরেজদের সঙ্গে বদলাবদলি করে তারা পায় ইন্দোনেশিয়ার একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাণ যেখানে মূল্যবান জয়ত্রী-জায়ফলের উৎপাদন হয়। আর সেই সময় যার ফলে দাম ছিল সোনার চেয়েও বেশি। ভাবা যায়, জায়ফলের বদলে নিউইয়র্ক।

আসলে ইংরেজদের বেশিরভাগ নৌ বাণিজ্যপথ তখন ছিল ডাচেদের নিয়ন্ত্রণে। দ্বিতীয় ডাচ ইংরেজদের যুদ্ধ প্রায় দু-বছর ধরে হয়েছিল। যুদ্ধে দুপক্ষেরই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাই এই বদলা বদলি।

ইন্দোনেশিয়ার ওই ক্ষুদ্র দ্বীপের জায়ফল গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনেও ছিল উপনিবেশিক মসলা বাণিজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কথিত আছে শ্রীলঙ্কায় নাকি প্রথম ব্রিটিশরা জায়ফলের বীজ বপন করেছিল। সফলও হয়েছিল সেই চাষ। লক্ষ্য ছিলো একটাই, ডাচেদের সঙ্গে জয়ত্রী জায়ফলের ব্যবসার বাজারে নিজেদের অস্তিত্ব জমানো। ততদিন অবশ্য ক্যারিবিয়ান দ্বীপ গ্রানাডা জায়ফলের চাষাবাদ করে, রপ্তানি করে বাণিজ্যে লক্ষ্মীর আসন পাকাপোক্ত করে নিয়েছিলো। এতটাই লাভ করেছিল যে তাদের রাষ্ট্রীয় পতাকায় স্থান পেলো জায়ফল।

প্রসঙ্গত বলে রাখি জয়ত্রী বা গদা এবং জয়ফল বা জায়ফল দুটি ভিন্ন মশলা যা একই জায়ফল গাছ থেকে আসে। জায়ফল হল ডিম্বাকার আকৃতির বাদাম আর জয়ত্রী হল তার লালখোসা যা বাদামটিকে ঘিরে থাকে।

ষোড়শ শতাব্দীতে জায়ফলকে ঘিরে যে পাগলামি হয়েছিল, রক্ত ঝরে ছিল তা আক্ষরিক অর্থেই একটি ইতিহাস। লন্ডন বাজারে সেই সময় এক পাউন্ড জায়ফলের দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ সিলিং। মুনাফা বাড়াতে সেই সময় ডাচেরা কখনো কখনো তাদের আমস্টারডাম গুদামে মযুত জায়ফলকে পুড়িয়ে দিত। এই পরিস্থিতিতে ইংরেজ আর ডাচেদের মধ্যে যুদ্ধ হওয়াটাই ছিল খুব স্বাভাবিক।

ইতিহাস বলে দ্বাদশ শতাব্দী থেকে আরব বণিকরা ইউরোপের জায়ফলের ব্যবসা শুরু করে। ১৫১২ সালে এই ব্যবসা হাতে নেওয়ার জন্যই ভাস্কোদাগামা ইন্দোনেশিয়া জায়ফল ব্যবসার কেন্দ্র মালুকু দ্বীপ দখল করে।

আরব বণিকরা উটের পিঠে চাপিয়ে মরুভূমি পার হয়ে জায়ফল নিয়ে আসতো। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো তুর্কিরা। ১৪৯৩ সালে ইস্তামবুল হয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপের বানিজ্যপথ বন্ধ করে দিল তুর্কিরা। স্বভাবতই আরব বণিকদের জায়ফলের ব্যবসায় ঘাটা পড়ে গেল। সেই সময় জায়ফলের ব্যবহার তুঙ্গে, ফলে মরিয়া হয়ে সকলেই খুঁজতে লাগলো জায়ফলের ঠিকানা।

অবশেষে জায়ফলের জন্মভূমির সন্ধান পেলো পর্তুগাল। সে বছরই আলবুকার্ক মালাক্কা জয় করেছেন। বন্ধু অ্যানটেনিও দ্য আব্রেউকে পাঠালেন সত্যতা যাচাই করতে। তিনি একমাস বাদে ফিরে এলেন জাহাজ ভর্তি জায়ফল, লবঙ্গ নিয়ে। এরা চেয়েছিল বান্দা দ্বীপকে নিজের দখলে রাখার কিন্তু লোকবল যথেষ্ট কম থাকায় এই দ্বীপকে তারা দখলে আনতে পারেনি।

কিন্তু ইউরোপের কাছে খুলে গেল জায়ফলের যোগানের রাস্তা, এই নিয়েই তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী নেদারল্যান্ডস ও ইংল্যান্ড ব্যবসা চালিয়ে ফুলেফেঁপে উঠল। নেদারল্যান্ড শুরু করল ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের শাসন। এটাই ছিল বিশ্বের প্রথম বহু জাতিক সংস্থা। জায়ফলের ব্যবসা করে এই কোম্পানি ৫০ বছরের মধ্যে তাদের কর্মচারীর সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার ২০০ জাহাজ, দশ হাজার সৈন্য তৈরি করে ফেলেছিলেন।

ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজিক ইনফরমেশনের (এনসিবিআই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, কয়েক হাজার বছর ধরে জায়ফল ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীন আমলে রোমান ও গ্রীকরা জায়ফলকে ব্রেন টনিক হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

এটি অবসাদ ও মানসিক চাপ কমিয়ে দেয় এমনকি যদি কেউ বিষন্ন বা উদ্বেগ বোধ করেন তবে তার সমাধানও হল জায়ফল। এটি আপনার মনযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করে। এতে রয়েছে ইগুয়ানল, এলেমিশিনের মত কিছু উপকারি তেল যা শরীরের প্রবেশ করা মাত্রই সেরোটিনিন ও ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। অ্যালজাইমার ও পার্কিনসনের মতো রোগও সহজে এড়ানো যায়।

মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে জায়ফলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ব্রাশ করবার সময় টুথপেস্টের সঙ্গে দু-ফোঁটা জায়ফলের তেল মিশিয়ে নিতে পারলে খুবই উপকারী। প্রদাহজনিত স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে এর জুড়ি মেলা ভার।

রোজ এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে সমান্য জায়ফলের গুঁড়ো, এক চামচ মধু, কয়েকটা এলাচগুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারলে ইমিউনিটি বাড়বে দ্রুত। এতে যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

এটি রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। খাবারে সামান্য জায়ফলের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে পেট ফাঁপা, হজম ও গ্যাসের সমস্যা বিদায় হবে।

শিশুদের সর্দি কাশি হলে এক চিমটে জায়ফল গুঁড়া খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে সর্দি কাশি কমে এবং ভালো ঘুমও হয়।

তবে মধ্যযুগের ইতালির বিখ্যাত সালের্নো মেডিকেল স্কুল জায়ফলকে নিয়ে শুনিয়েছিলেন বিরাট এক সতর্কবাণী — একটি জায়ফল তোমার উপকার করবে, দুটি জায়ফল তোমার ক্ষতি করবে, আর তিনটি জায়ফল তোমাকে মেরে ফেলবে। তাই ব্যবহারকারীগণ সাবধান।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “মিরাকেল অফ জায়ফল : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. তপন says:

    তিনের বেশি মৃত্যু। হাফ খেলে কি হবে?

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন