বাংলার সারস্বত জগতের সরতাজ আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের নামাঙ্কিত ২০২৩ বছরের দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণ পদক-এ ভূষিত হচ্ছেন, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, কলা সমালোচক, কলামিস্ট, সংগঠক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি তাঁকে এই সম্মাননাসূচক স্বর্ণ পদক দিচ্ছে বাংলা সাহিত্য-গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য। বর্তমান প্রাপকের আগে এই সম্মাননা পেয়েছেন লেখক সংগঠক মহাশ্বেতা দেবী, ফিরোজা বেগম, প্রাক্তন মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী, অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
২১ ডিসেম্বর কলকাতার বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভায় অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের হাতে ”দীনেশচন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণ পদক-২০২৩” তুলে দিবেন ভারতের আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের প্রপৌত্রী অধ্যাপক দেবকন্যা সেন। মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন ‘আমি বাংলায় গান গাই’-সহ বিখ্যাত সব গানের গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায় এবং ধর্মপ্রিয় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. জিনপ্রিয় মহাথেরো, অধ্যাপক ও গবেষক ড. বিমল কুমার থান্দার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ‘আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি’ ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং অধ্যাপক মিল্টন এই সংগঠনের পক্ষ থেকে এর আগে ‘দীনেশ-রবীন্দ্র পত্র’ সম্মাননা ২০২৩ পেয়েছেন। সেই সম্মাননা স্মারকে বলা হয়েছে, ”অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু গবেষক এবং কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। সাহিত্য-সমালোচক হিসেবেও খ্যাত৷ আপনার গবেষণার বিষয় নির্বাচনে নতুনত্ব আছে এবং গবেষণা ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে আপনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। গবেষক হিসেবে আপনার নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সততাকে বরণ করে ‘মৈমনসিংহ-গীতিকা’ প্রকাশের শতবর্ষ উদযাপনের শুভ লগ্নে ‘আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটি, ভারত’ -এর পক্ষ থেকে ‘দীনেশ-রবীন্দ্র পত্র’ সম্মাননা ২০২৩ অর্পণ করা হলো। এর আগে ভারতের বিচারপতি সুধেন্দু মল্লিক, বিচারপতি চিত্ততোষ মুখার্জি, সুপ্রিয় ঠাকুর, বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর ও সমাজকর্মী অরোমা দত্ত প্রমুখ এই পদক লাভ করেন।
সংগঠনের পক্ষে দেবকন্যা সেন পেজফোরনিউজকে মিল্টন বিশ্বাসের পরিচিতি দিতে গিয়ে জানালেন, মিল্টন বিশ্বাস কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক ও কবি। তিনি ইউজিসি পোস্ট ডক্টোরাল ফেলোতে ‘‘সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু’’ গবেষণা করেছেন। ‘জীবনানন্দ দাশ ও বুদ্ধদেব বসুর কাব্যচিন্তা’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য ১৯৯৯ সালে এমফিল এবং ‘তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষ’ রচনার জন্য ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২২ বছর যাবৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বহু দেশে সেমিনার ও কনফারেন্সে যোগ দিয়েছেন। মৌলিক ও সম্পাদনা মিলে মিল্টন বিশ্বাসের গ্রন্থের সংখ্যা ২৫। প্রবন্ধ ৪৭টি এবং ৪ হাজারের অধিক তাঁর লেখা কলাম রয়েছে। দেশের বিশিষ্ট কলামিস্ট হিসেবে তিনি পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে চলেছেন। ‘বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামে’র তিনি সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য।
গত বছরে কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বই ‘শতবর্ষে রণজিৎ গুহ ও সাব-অল্টার্ন তত্ত্ব’।