গত তিন দশক ধরে লাগাতারভাবে বাড়ছে মানসিক উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা। এটা শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, অন্যান্য রোগবালাইয়ের ওপরও এই সমস্যার প্রভাব বাড়ছে। বিশেষ করে অতিমারি আক্রান্ত মানুষদের ওপর এই উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার একটা বড় প্রভাব পড়ছে। এমনকি বহু সময় তা মৃত্যুও ডেকে আনছে। ল্যানসেট জর্নালে প্রকাশিত গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ রিপোর্ট জানাচ্ছে পৃথিবীর ১০ শতাংশ রোগবালাইয়ের পিছনে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষ আর্থ-সামাজিক কারণেই মানসিক সমস্যার শিকার। অতিমারি সহ সবরকম অসুখবিসুখ এই সমস্যাকে আরও তীব্র করে। এই সমস্যা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে। একটা পরিসংখ্যান দিলে এই বৃদ্ধির গতিটা পরিস্কার হবে। ১৯৯০ এ গোটা পৃথিবীতে ৬৫৪. ৮ মিলিয়ন মানুষ মানসিক রোগের শিকার হয়েছিলেন। ২০১৯ এ তা বেড়ে দাড়িয়েছিল ৯৭০. ১ মিলিয়ন। কোভিডকালে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ল্যানসেটের মতে গত তিন দশক ধরেই এই সমস্যা বেড়ে চলেছে। আরও লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হল, আক্রান্তদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেশি।
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাজনিত সমস্যা বাড়ার নানা কারণ আছে। তবে অর্থনীতি এখানে কোন বিভেদ আনতে পারেনি। গরিব-বড়লোক নির্বিশেষে সমাজের সব অংশের মহিলারা এই সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এরা মূলত আক্রান্ত হচ্ছেন উদ্বেগ ও বিষণ্ণতাজনিত মানসিক সমস্যায়, অনেকের রয়েছে খাওয়াদাওয়া নিয়ে নানা বাছবিচার ও খুঁতখুঁতানি। তুলনামূলকভাবে কম অটিজম এবং মনোযোগ সংক্রান্ত সমস্যা।
অঞ্চলভেদে এই সমস্যার তারতম্য রয়েছে। যেমন উদ্বেগ ও বিষণ্ণতাজনিত সমস্যা, সাব সাহারান আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য প্রাচ্যে সবথেকে বেশি। আবার সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা বেশি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং সংলগ্ন দ্বীপরাষ্ট্রগুলিতে। মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। যে কোন বয়সের মানুষই এতে নানা কারণে যখন তখন আক্রান্ত হতে পারেন। আবার এই সমস্যা থেকেই তৈরি হতে পারে নানা ধরণের সাধারণ অসুখ। মুশকিল হল, সাধারণ অসুখের একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে কিন্তু মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে সবসময় এই নিয়ম খাটবে তার কোন সম্ভাবনা নেই। সবমিলিয়ে এ হল মানব সম্পদের এক বিশাল অপচয়।