কলকাতা শহরের একটি উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা কলকাতাশ্রী। প্রতি বছরের মতো এই বছরেও কলকাতা পুরসভা ও সিইএসসি-র যোথ উদ্যোগে ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হলো কলকাতাশ্রী প্রতিযোগিতার আবেদন পত্র বিতরণ। কলকাতা পুরসভার মেন বিল্ডিং-এ সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত আবেদনপত্র বিতরণ ও জমা দেওয়া যাবে অফলাইনে। এছাড়া কেএমসি-ওয়েব সাইট থেকে অনলাইনের মাধ্যমেও আবেদন করা যাবে।
কলকাতাশ্রী প্রতিযোগিতার উদ্বোধন উপলক্ষে এদিন কলকাতা পুরসভার সামনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব) সহ একাধিক বিশিষ্টগণ।
এই সংক্রান্ত বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, ‘১ সেপ্টেম্বর থেকে আমাদের পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। ওই দিন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে পথে নেমে আমরা ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। এই বছর আমরা পুজো উপলক্ষে বাজার-দোকানে কেনাকাটার জোয়ার দেখছি। করোনা মহামারির কারণে বিগত দু-বছর পুজো আমরা ভালোভাবে করতে পারিনা। অনেক বিধি-নিষেধের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। কিন্তু এই বছর মন খুলে আনন্দ করব। পুজোর উন্মাদনা ভিষণ ভাবে উপলব্ধী করছি। বাংলার মানুষ হিসেবে বাংলার জাতীয় উৎসব আমাদের বিশেষ ভাবে নাড়া দেয়। আমরা অনেকেই পুজোর আয়োজন করি। প্রত্যেকের মধ্যেই এইটি সুপ্ত প্রতিযোগিতা থাকে, কার মন্ডপে কত ভীড় হলো। তার সঙ্গে যদি আমাদের মণ্ডপ পুরস্কার পায় তাহলে আনন্দ দ্বিগুন বেড়ে যায়। কলকাতাশ্রী এমন একটি প্রতিযোগিতা, যে প্রতিযোগিতায় জয়ী হলে আমরা গর্বিত হই। জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে আমরা দুর্গাপুজোয় অংশ নিই। জীবনের সব সমস্যা এই কয়েকটি দিন আমরা ভুলে থাকি। কলকাতাশ্রী প্রতিযোগিতার আসল ‘শ্রী’ হলো ভালো পুজো, ভালো মণ্ডপ, ভালো দর্শক, ভালো কলকাতা, আনন্দের কলকাতা।’
এদিন দেবাশিস কুমার জানান, “আজ থেকে কলকাতাশ্রীর আবেদনপত্র বিতরণ শুরু হলো। ২০২২ সালের এই প্রতিযোগিতার শুভারম্বের সাক্ষী থাকার জন্য অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এখানে উপস্থিত হয়েছেন। অন্যান্য বছরের মতো এই বছরেও বিভিন্ন বিভাগে কলকাতশ্রী প্রতিযোগিতা হবে ও ষষ্ঠীর দিন তার ফল ঘোষণা হবে। কলকাতার মধ্যে মোট ১০০টি ক্লাবকে আমরা পুরস্কৃত করব। তবে কলকাতা পুরসভার মেয়র বা মেয়র পারিষদরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না। এই বছর কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর পুরস্কার পাচ্ছে। ‘প্রি-ভিউ’ পুজো নামে ইউনেস্কোর একটি টিম পুজো-প্রাক্কাল্লে শহরের ২২টি পুজো প্যান্ডেলে ঘুরবেন। ১ সেপ্টেম্বর আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাব ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক বিশাল পদসভার আয়োজন করেছিল। মূলত সেই দিন থেকেই আমাদের শহরে শারদোৎসব শুরু হয়ে গেছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে এই কলকাতাশ্রী প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই প্রতিযোগিতার নামকরণ করেন তৎকালীন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রথম অনুভব করেন কলকাতার পুজোর পাশে সরকারের দাঁড়ানো প্রয়োজন। কারণ এই পুজোকে কেন্দ্র করে এই রাজ্যের অর্থনীতির চাকা ঘোরে। ২০১০ সালের পর থেকে বিগত ১২ বছর ধরে এই সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। এখন তো দুর্গাপুজোর মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শণের মেন ডেস্টিনেশন হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতাশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্লাবগুলি। প্রতিমা, মণ্ডপ সজ্জা, আলোক সজ্জা, পরিবেশ — বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এই প্রতিযোগিতা হয়। সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের দিক্পালগণ এই প্রতিযোগিতার জুরি নির্বাচিত হন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতেই পুরস্কার বিতরণ হয়। এর মাধ্যমে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি পায়।