রবিবার | ৭ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৫৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
সুভদ্রার রথ দর্পদলন : সন্দীপন বিশ্বাস ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (চতুর্থ পর্ব) : অভিজিৎ রায় আলুচাষে বিমার ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সমাদৃত মসলা হিং : আসমা অন্বেষা অল্পস্বল্প গল্প : তসলিমা নাসরিন ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (তৃতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ : রিঙ্কি সামন্ত হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী : দিলীপ মজুমদার ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় হুগলির খানাকুল থানাকে দুটি করার দাবিতে সরব এলাকার বাসিন্দারা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা নামের ব্যুৎপত্তি, নতুন আলোকপাত : অসিত দাস আবার সেই হাথরস! এবার স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলেবাবা : তপন মল্লিক চৌধুরী সন্ন্যাসী ও সুন্দরী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর ছোটগল্প ‘একটা পিস্তল ও ডুমুর গাছ’ ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় সুলেখা সান্ন্যাল-এর ছোটগল্প ‘ঘেন্না’ সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (শেষ পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী শোভারাম বসাকের লবণের ব্যবসা : অসিত দাস রাখাইনে সংঘাত ও সেন্টমার্টিন পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন খেলার মাঠ থেকে চেম্বারে : রিঙ্কি সামন্ত ছড়া কি শিশুসাহিত্য? : লুৎফর রহমান রিটন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা দিবস ও ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মজয়ন্তী পালন : দীপাঞ্জন দে সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (তৃতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব) : গীতা দাস সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (দ্বিতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (চতুর্থ পর্ব) : গীতা দাস সাবঅলটার্ন দৃষ্টিতে কলকাতার লবণচিহ্ন : অসিত দাস মোদীকে চাপে রাখতে নীতীশ-নায়ডুর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা দাবি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (প্রথম পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বাঁধে ইঁদুরের তৈরি গর্ত দিয়ে ঢোকে বন্যার জল চলছে সংস্কারের কাজ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই জগন্নাথদেবের শুভ রথযাত্রার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সন্ন্যাসী ও সুন্দরী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী

মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী / ১৭৪ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০২৪

৪ জুলাই ১৯০২ তাঁর দেহাবসানের তারিখ। তবু তিনি বিস্ময়কর ভাবে আজও বেঁচে। বেলুড়ে জুলাইয়ের রাত নটা বেজে দশ। রাজার রাজা বিনা নোটিশে বিদায় নিচ্ছেন। বেলুড় মঠে বিদ্যুৎ ছিল না। টেলিফোন ছিল বলেই জানা যায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে পরদিন কোন সংবাদপত্রে এই সংবাদ শিরোনাম হয়নি। শোকবার্তাও সেভাবে প্রেরিত হয়নি। তাঁর শেষকৃত্যের স্থান সম্বন্ধে অনুমতি দিতেও বালি মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের দ্বিধা ও বিলম্ব ছিল যথেষ্ট। এই একটি ঘটনাই সেই যুগের লজ্জার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।

কিন্তু না। তার আগেও অন্য অনেক কিছু তাঁর সম্বন্ধে প্রবল উৎসাহে রটনা করা হয়েছে। তাঁর সন্ন্যাসজীবন নিয়ে তুমুল কটাক্ষ করা হয়েছে। ইঙ্গিত গেছে নারী সংসর্গ সম্পর্কে। কেউ বলেছেন সন্ন্যাসীর বেশে জুয়াচোর। কেউ বা বলেছেন ওঁর এক আধটা নয়, অনেকগুলো স্ত্রী আর একপাল ছেলেমেয়ে। তা বটে। এখনও পর্যন্ত, আজ পর্যন্ত, যতো মানুষ দলে দলে একটু জ্বালা জুড়োতে যায় ওই গঙ্গার ধারে, সকলেই তো তাঁর সন্তান, অগণিত সন্তান। যে বালির মানুষ তাঁর নামে কুৎসা রটিয়ে আমোদ পেতেন সেই মানুষের সন্তান সন্ততিরাও এখন নিশ্চয়ই তাঁর শরণে এসেছেন। মঠকে বলা হত ‘প্লেজার হাউস’। তাই বাড়িয়ে দেওয়া হল ট্যাক্সের পরিমাণ। তাঁর সন্ন্যাস নামের বিকৃতি ঘটিয়ে নাম হল ‘বিবিকা আনন্দ’।

এখন আলোচনার বিষয় হল তিনি বহু মহিলার সংস্পর্শে এসেছেন। তাঁর রূপ ছিল প্রখর সূর্যের ন্যায়। দেহ ছিল মল্লযোদ্ধার মতো সুদৃঢ়। যা তাঁর গুরুর দেহের ঠিক বিপরীত। প্রশস্ত গ্রীবা, বিস্তৃত বক্ষ, বিস্তৃত ললাট, কঠিন চোয়াল আর অপূর্ব আয়ত দুটি চক্ষু। যে চক্ষু কারোর অন্তরস্থল পর্যন্ত দেখে ফেলে। যে চক্ষুতে একই সঙ্গে বুদ্ধি, পরিহাস, করুণা, চেতনা, ভাবময়তা খেলা করে। সেই চক্ষুর সামনে প্রেমে নত হবেন বা অতীতে হয়েছেন এমন অনেক সুন্দরী নারী রয়েছেন। চলুন তাদের নিয়েই কিছু আলোচনা করা যাক।

তাঁর মুখেই শোনা যাক কিছু ঘটনা।

“আমার কয়েকজন বন্ধু অসৎপথে উপার্জন শুরু করেছিল, তারা আমাকে তাদের দলে যোগ দিতে বলল। তারা কিন্তু আমার আকস্মিক ভাগ্য বিপর্যয়ে সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছিল। এছাড়াও অন্য অনেক অসুবিধা ছিল। আমার সামনে তখন নানা রকমের প্রলোভন। এক ধনবতী রমণী আমার দারিদ্র্যের অবসানের জন্য একটা নোংরা প্রস্তাব পাঠালেন, আমি অবশ্য অবজ্ঞার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করলাম। আরও এক রমণী একই ধরনের কু-প্রস্তাব করলেন। আমি তাঁকে বললাম, দেহসুখের খোঁজে আপনি জীবনটা নষ্ট করছেন। কিন্তু সামনেই মৃত্যুর ছায়া। তার মুখোমুখি হবার জন্য কিছু ব্যবস্থা করেছেন কি? নোংরা চিন্তাগুলো ত্যাগ করে ভগবানকে স্মরণ করুন।” যিনি এই কথাগুলো সেইসময় বলেছেন তখন তাঁর বয়সটা কত ছিল? নিশ্চয়ই তরুণ ছিলেন। কিন্তু সংসার সমরাঙ্গনে নিপুণ যোদ্ধা।

বড়লোক বন্ধুর বাগানবাড়িতে নেমতন্নে গেছেন। খুব খুশি হয়েই গেছেন। নাচগান সকলে মিলে উপভোগ করলেন। বেশ কয়েকটি গানও গাইলেন। এবার ক্লান্ত হয়ে পাশের ঘরে গেলেন তিনি। বন্ধুরা তাঁকে বিশেষ আনন্দ দেবার উদ্দেশ্যে এক সুন্দরী নর্তকীকে নিঃশব্দে পাঠালেন তাঁর কাছে। কি হল? তিনি ওই অসামান্যা সুন্দরীর সঙ্গে শিশুর মত গল্প করতে শুরু করে দিলেন। আর ওই নর্তকী তাঁকে সারাজীবনের কষ্টের বঞ্চনার কাহিনী শোনাতে লাগলেন। কিন্তু কিছু সময় পরে যখন ওই নর্তকী তাঁকে উত্তেজিত ও প্রলোভিত করার চেষ্টা করলেন, তখনই তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “মাফ করবেন, আমাকে এখনই চলে যেতে হবে। আপনার জন্য আমার আন্তরিক সহানুভূতি রইল, আমি চাই আপনার মঙ্গল হোক। যদি আপনি বুঝে থাকেন এই ধরনের দেহদান ও জীবনযাপন ঠিক নয়, তা হলে একদিন নিশ্চয় এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।”

জ্বলন্ত অগ্নি বিদায় নিলে নর্তকী কেঁদে পড়ে বললেন – শেষে আপনারা এক সাধুকে প্রলোভিত করার জন্য আমাকে আনলেন! কিন্তু সেই তরুণ তো তখনও সাধু হননি।

১৮৯১ সালের অক্টোবরে পরিব্রাজক অতিথি হলেন খেতড়ির রাজপ্রাসাদে। খেতড়ির রাজা তখন অজিত সিং। স্বামী গম্ভীরানন্দের লেখায় আমরা একটি স্মরণীয় ঘটনার কথা জানতে পারি। খেতড়ির রাজা বংশধর লাভের জন্য স্বামীজীর আশীর্বাদ চেয়েছিলেন। ইচ্ছাপূরণ হওয়ায় রাজা বিরাট উৎসবের আয়োজন করেন। ভক্ত জগমোহন গিয়ে স্বামীজীকে খেতড়ি নিয়ে আসেন। স্বামীজী এর ঠিক একমাস পর আমেরিকা যাবেন বলে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তবু তিনি ভক্তের ডাকে খেতড়ি এলেন। নৌকো বিহার, নৃত্য গীত, আতশবাজি, আমোদ প্রমোদের কোন খামতি ছিল না।

খেতড়ির এক সন্ধ্যায় এক অসামান্যা নর্তকী গান গাইছিলেন। স্বামীজী এসব থেকে দূরে নিজকক্ষে ছিলেন। রাজা স্বামীজীকে সংগীতের আসরে আসার জন্য অনুরোধ পাঠালেন। স্বামীজী বলে পাঠালেন যে সন্ন্যাসীর পক্ষে এই আসরে যাওয়া অনুচিত। গায়িকা এই কথা শুনে খুব দুঃখিত হয়ে গান গাইলেন —

প্রভু মেরে অবগুণ চিত না ধরো।

সমদরশী হৈ নাম তিহারো, চাহে তো প্যার করো।

ইক নদিয়া ইক নার কহাবত মৈলী হই নীর ভরো।

জব্ মিলকরকে এক বরন ভই সুরসরি নাম পরো।।

ইক লোহা পূজামে রাখত, ইক ঘর বধিক পরো।

এই সঙ্গীত স্বামীজীকে আসরে আসতে বাধ্য করল। স্বামীজীর হৃদয় ব্যাকুল হল এই ভেবে যে এক এবং অভিন্ন ব্রহ্ম সর্বজীবে বর্তমান, এমনকি এই ঘৃণিত বাইজির মধ্যেও। এই ঘটনার কথা পরবর্তী কালে তিনি উল্লেখ করে বলেছিলেন, “গানটি শুনে আমার মনে হল, এই কি আমার সন্ন্যাস? আমি সন্ন্যাসী অথচ আমার ও এই নারীর মধ্যে আমার ভেদজ্ঞান রয়ে গেছে। সে ঘটনাতে আমার চোখ খুলে গেল। সর্ববস্তুতে সেই একই সত্তার অভিব্যক্তি জেনে আমার আর কাউকে নিন্দা করার জো ছিল না।”

এমা কালভে

গান শুনে স্বামীজী নর্তকীকে বলেন, “মা, আমি অপরাধ করেছি। আপনাকে ঘৃণা করে উঠে যাচ্ছিলাম, আপনার গানে আমার চৈতন্য হল।”

দেশের সুন্দরী ছেড়ে এবার বিদেশের সুন্দরীদের কথায় আসা যাক। তিনি তখন বিশ্বজয়ী। মার্কিন সমাজে শিক্ষিত মহলে তাঁর জয়জয়কার। আমেরিকার মাটিতে তাঁর সঙ্গে দেখা হল দুই ফরাসি উর্বশীর। একজনের নাম এমা কালভে (Madame Emma Calve) আর একজনের নাম সারা বার্নহার্ড (Sarah Bernhardt)। কালভের খ্যাতি তখন বিশ্বজুড়ে। অপেরা গায়িকা তিনি। অপেরা প্রধানত গানের উপর নির্ভরশীল, তবে নাটকীয় শিল্প। অর্কেষ্ট্রা সঙ্গীতের সাহায্যে এটি পরিবেশিত হয়। বীর সন্ন্যাসীর পত্রাবলিতে মাদামজোয়েল কালভের নাম বেশ কয়েকবার আছে। এমা কালভের মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে স্বামীজী কালভেকে সমবেদনা জানিয়ে পত্র দিয়েছিলেন।

কালভের থেকে বয়সে বড় সারা বার্নহার্ড। পাশ্চাত্যের অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠা অভিনেত্রী এই মাদাম সারা। সারা এবং কালভে দুজনেই ফরাসি সুন্দরী, দুজনেই ইংরেজি জানতেন না। কিন্তু ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় দুজনেই গান গেয়ে এবং অভিনয় করে লক্ষ লক্ষ ডলার রোজগার করেন। ফরাসি ভাষা সভ্য ভাষা, তাই তাঁদের ইংরেজি শেখার প্রয়োজন পড়েনি। তবে এক্ষেত্রে একথা বলা যায় যে ভারত এমা কালভেকে যতটা মনে রেখেছে, সারা বার্নহার্ড সেদিক থেকে কিছুটা হলেও বিস্মৃত। তার কারণ হিসেবে মনে হয় এমা যেমন ভারতে এসেছেন, সারা ভারতদর্শনে আসেননি। সারার স্মৃতিকথায় স্বামীজীর কোনও উল্লেখও নেই।

সারা বার্নহার্ড

১৮৯৬ সালের স্বামীজীর একটি চিঠিতে পাই —

“ফরাসি অভিনেত্রী সারা বার্নহার্ড এখানে ‘ইৎশীল’ অভিনয় করেছেন। এটা কতকটা ফরাসি ধাঁচে উপস্থাপিত বুদ্ধজীবন। এতে রাজনর্তকী ইৎশীল বোধিদ্রুম-মূলে বুদ্ধকে প্রলুব্ধ করতে সচেষ্ট, আর বুদ্ধ তাঁকে জগতের অসারতা উপদেশ দিচ্ছেন। সে কিন্তু সারাক্ষণ বুদ্ধের কোলেই বসে আছে। যা হোক শেষ রক্ষাই রক্ষা – নর্তকী বিফল হলেন। মাদাম বার্নহার্ড ইৎশীলের ভূমিকায় অভিনয় করেন। মাদাম খুব সুশিক্ষিতা মহিলা এবং দর্শনশাস্ত্র অনেকটা পড়া শেষ করেছেন।”

সুন্দরী সারা ফরাসি জাতীয়তাবাদের আইকন। তাঁর ব্যবহৃত রুমাল নিয়ে আজও টানাটানি হয়। অমূল্য এই রুমাল এখন রয়েছে ২০০৫-এর টোনি অ্যাওয়ার্ড বিজয়িনী চেরি জোন্সের সংগ্রহে। সারার এই রুমাল নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। রুমালটি যেন বিশ্বথিয়েটারের প্রতীক। স্বামীজী ও সারার যোগাযোগ ১৮৯৬-এর আগে নয়। কিন্তু মাদামজোয়েল কালভের কথা আলাদা। স্বামীজী ১৮৯৬ সালেই সারার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ‘বিবেকানন্দ ইন ইউরোপ’ গ্রন্থে যা লিপিবদ্ধ আছে।

সন্ন্যাসী ও মঞ্চ অভিনেত্রীর এই সাক্ষাৎকার নানা বিস্ময়কর চিন্তার জন্ম দেয়। একদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী অন্যদিকে সংসার ত্যাগী মোহমুক্ত এক সন্ন্যাসী। বাইরের কোন রূপে যে তাঁকে ভোলানো যেত না একথা তাঁর সান্নিধ্যে যতো সুন্দরী এসেছেন, মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। তাঁদের জীবনবোধ গিয়েছে পাল্টে।

একবার কায়রোর রাস্তায় স্বামীজী এবং সুন্দরী সঙ্গিনীরা হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা হারিয়ে অত্যন্ত নোংরা ও দুর্গন্ধময় স্থানে এসে পড়লেন। কাছাকাছি সব বাড়ির মেয়েরাই অর্ধনগ্ন হয়ে বিশ্রীভাবে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ দরজার সামনে এলোমেলো বেশবাসে দাঁড়িয়ে। স্বামীজী তন্ময় ভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিছুই তাঁর খেয়াল হচ্ছে না। ঠিক এই সময় কিছু মেয়ের দল তাঁর দিকে তাকিয়ে হেসে তাঁকে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে ডাকতে লাগল। স্বামীজীর দলের মহিলারা স্বামীজীকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু রাজাধিরাজের কি কারো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে? তিনি শান্তভাবে দল থেকে আলাদা হয়ে বারাঙ্গনাদের কাছে এগিয়ে গেলেন। তারপর তাদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, “আহা, দৈহিক সৌন্দর্যের পায়ে নিজেদের দেবত্বকে বলি দিয়েছে। এখন দেখ, এদের কি দুরবস্থা।” এই বলে তিনি কাঁদতে লাগলেন। সেই কান্না দেখে মেয়ের দল স্তব্ধ হল লজ্জায়। কেউ একজন এসে নতজানু হয়ে স্বামীজীর বস্ত্রের প্রান্তভাগ চুম্বন করে স্পেনীয় ভাষায় বলে উঠল, “Humbre de Dios, Humbre de Dios!” অর্থাৎ, ইনি ঈশ্বরপ্রেরিত পুরুষ, ইনি দেবদূত।

আমি দেবদূত বুঝিনা, ঈশ্বরপ্রেরিত পুরুষ ও বুঝিনা, আমি বুঝি যাঁর মা সঠিক শিক্ষায় তাঁর পুত্রকে মানুষ করে তোলেন তিনি এরকমই মানুষ হন। শুধুই মানুষ, প্রকৃত পুরুষ মানুষ।

তথ্যঋণ : শ্রী মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়, আন্তর্জাল


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “সন্ন্যাসী ও সুন্দরী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী”

  1. কিছু তথ্য সংগ্রহিত করে এই উপস্থাপনা এই লেখা সত্যি প্রশংসনীয়। খুব ভালো লাগলো।

  2. Bisweswar Jana says:

    It’s a excellent summary presentation with detailed fact & figures.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন