১ জুলাই, ২০২৪ (সোমবার) কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা দিবস ও ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। প্রতি বছরের ন্যায় এছরও কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় পাঠকক্ষে এদিনের সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে উপস্থিত পাঠকবর্গ ও পরিচালন সমিতির সদস্যরা যৌথভাবে সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
১৮৫৬ সালের ১ জুলাই কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির পথচলা শুরু হয়। নদিয়া-রাজ মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায় হলেন এই গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির প্রথম সভাপতি এবং রামলোচন ঘোষ ছিলেন এই গ্রন্থাগারের প্রথম সম্পাদক। এদিন গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির ১৬৯তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন করা হয়। গ্রন্থাগারের প্রধান পাঠকক্ষে স্থাপিত মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি সুবীরেন্দ্রনাথ সিংহরায় শ্রীশচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
১ জুলাই, ২০২৪ পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রসিদ্ধ ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের ১৪৩তম জন্ম দিবস ও ৬৩তম প্রয়াণ দিবস ছিল। তাঁর প্রতিও এদিন শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ‘ডক্টরস ডে’ (চিকিৎসক দিবস) পালন করা হয়।
এদিন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির পাঠকক্ষে থাকা ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির বর্তমান সম্পাদক সম্পদনারায়ণ ধর। এরপর গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে স্থাপিত অন্যান্য মনীষীদের মূর্তিতেও পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিচালন সমিতির সদস্যবৃন্দ ও পাঠকবর্গ একে একে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মাস্টারদা সূর্যসেনের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
অনুষ্ঠানের সূচনায় কবি রামকৃষ্ণ দে উদ্বোধন সংগীত পরিবেশন করেন। তারপর স্বাগত ভাষণ রাখেন পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য লেখক সঞ্জিত দত্ত। এরপর ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ‘গ্রাম গ্রামান্তর’ পত্রিকার সম্পাদক প্রবীরকুমার বসু। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির দুজন ক্ষুদে পাঠক এদিন আবৃত্তি পরিবেশন করেন। অপূর্বকুমার কুণ্ডুর লেখা ‘এক রূপকার’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনায় সৌমিলি দে এবং ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা ‘বিধানচন্দ্র রায়’ কবিতাটি আবৃত্তি করে শোনায় তনভি বিশ্বাস।
এরপর লাইব্রেরির পরিচালন সমিতির সম্পাদক সম্পদনারায়ণ ধর তাঁর বক্তব্যে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের জীবনকালের কয়েকটি বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। গ্রন্থাগারের বর্তমান পরিচালনা সমিতির অন্যতম সদস্য আলপনা বসু এদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান।
এরপর কবি রামকৃষ্ণ দে-র কণ্ঠে একটি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশিত হয়। সভাপতির ভাষণে সুবীরেন্দ্রনাথ সিংহরায় গ্রন্থাগারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সকলের সামনে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির বর্তমান গ্রন্থাগারিক শিল্পী বিশ্বাস সেনগুপ্ত। এদিনের সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সদস্য দীপাঞ্জন দে। গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা দিবস এবং ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিবস উদযাপনের এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় কৃষ্ণনগরের ভূমিপুত্র স্বনামধন্য সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানটি।
লেখক: আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক। সদস্য, পরিচালন সমিতি, কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরি।