কৃষ্ণনগরের একটি হেরিটেজ ভবন হল গ্রেস কটেজ, যেটি চাঁদসড়ক পাড়ার পূর্ব প্রান্তে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিস পাওয়ার হাউসের অভ্যন্তরে অবস্থিত। বিপ্লবী হেমন্তকুমার সরকার নজরুলকে হুগলি থেকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে এসেছিলেন। ভগ্নস্বাস্থ্য নজরুল ১৯২৬ সালের ৩ জানুয়ারি সপরিবারে কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন। কৃষ্ণনগরে বসবাসকালেই নজরুল ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ সহ একাধিক জন-জাগরণী সঙ্গীত রচনা করেন। প্রথমে প্রায় সাত মাস নজরুল গোলাপট্টিতে মদন সরকার লেনে বন্ধু হেমন্তকুমার সরকারের বাড়ির পাশেই থাকতেন। তারপর শহরের কোলাহল থেকে দূরে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে এক সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টান মহিলার বাগানবাড়ি এই গ্রেস কটেজে কবির থাকার ব্যবস্থা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের আরেকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হেমচন্দ্র দত্তগুপ্ত। নজরুল প্রায় আড়াই বছর (১৯২৬ থেকে ১৯২৮ খ্রি.) সপরিবারে গ্রেস কটেজে ছিলেন বলে জানা যায়। গ্রেস কটেজের সঙ্গে নজরুলের বহু স্মৃতি জড়িত। এই বাড়িতেই তাঁর দ্বিতীয় পুত্র বুলবুলের জন্ম হয়। এখানে বসবাসকালেই নজরুল ‘দারিদ্র্য’, ‘খালেদ’ প্রভৃতি বিখ্যাত কবিতা লেখেন। নজরুলের ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসও এখানেই রচিত হয়। বাংলা সঙ্গীতের অন্যতম মাইলফলক বাংলা গজলেরও সৃষ্টি হয় এই বাড়িতে। ২০১২ সালে এই ভবন হেরিটেজ ভবনেরও স্বীকৃতি পায়।
কৃষ্ণনগরের এই ঐতিহ্যশালী ভবনে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ মেলা বসেছিল। ব্যবস্থাপনায় ছিল গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ, আর সহযোগিতায় ছিল— নদিয়া পরিবেশ মঞ্চ, কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু এবং সুজন বাসর। কৃষ্ণনগরের এই গ্রেস কটেজ ভবন ও তার প্রাঙ্গণেই ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ (রবিবার) পরিবেশ মেলার আসর জমে উঠেছিল। সুজন বাসর কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। কৃষ্ণনগর শহরে এহেন পরিবেশ মেলা এই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো বলা যায়। নদিয়া জেলা তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজ্ঞান ও পরিবেশকর্মীরা এসেছিলেন এই পরিবেশ মেলায় অংশগ্রহণ করতে। পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, পত্রিকা প্রকাশ— সবমিলিয়ে জমাটি আসর।
গ্রেস কটেজের দরদালানে স্থাপিত নজরুলের আবক্ষ মূর্তি (যেটি এখন ভবনের বাইরে ডানপাশে স্থাপন করা হয়েছে) এবং ভিতরের ঘরে নজরুল প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। মাল্যদান করেন বরিষ্ঠ বিজ্ঞান প্রচারক দীপককুমার দাঁ এবং সুজন বাসরের সভাপতি দীপঙ্কর দাস। পরিবেশ মেলার উদ্বোধন করেন শান্তিপুর নিবাসী বিশিষ্ট জৈব কৃষি প্রচারক শৈলেন চন্ডী। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জৈব চাষ, বিষমুক্ত খাদ্যশস্যের বাজারের প্রয়োজনীয়তার কথা। পরিবেশ মেলার উদ্বোধনী সংগীতেও পরিবেশ ভাবনার বার্তা ছিল। পরিবেশ মেলার জন্য জলঙ্গি নদীকে নিয়ে নতুন গান বেঁধেছিলেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী দীপঙ্কর দাস। গানের কথা, সুর — দুটিই ছিল তাঁর। সেদিন গ্রেস কটেজে গানটি তাঁর কণ্ঠেই পরিবেশিত হয়। জলঙ্গিকে নিয়ে গানটি ছিল— ‘ও মা জলঙ্গী, আজ কেন তোমার থমকে গেল চলা…’। পরিবেশ মেলায় সংগীতশিল্পী কল্পনা পালের গাওয়া— ‘চল কোদাল চালাই ভুলে মানের বালাই’ গানটিও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিল। সেদিন সকাল দশটা থেকে পরিবেশ মেলা শুরু হয়েছিল এবং প্রায় সন্ধ্যে পর্যন্ত মেলা চলেছিল।
পরিবেশ মেলার আয়োজক গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে সকল অভ্যাগতদের স্বাগত জানিয়ে সূচনায় বক্তব্য রাখেন বরিষ্ঠ বিজ্ঞানকর্মী দীপককুমার দাঁ। তাঁর বক্তব্যে এই ধরনের আয়জনের প্রয়োজনীয়তা এবং আগামী সময়ে পরিবেশ, বিজ্ঞানকর্মীদের কর্মপন্থা কিরকম হওয়া উচিত, সেই বিষয়টি গুরুত্ব পায়। নদিয়া পরিবেশ মঞ্চের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক সুব্রত বিশ্বাস সকল পরিবেশ সংগঠনগুলির মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেন। সুজন বাসরের পক্ষ থেকে সম্পাদক ইনাস উদ্দীন সকলকে অভিনন্দন জানান এবং নজরুল স্মৃতিধন্য গ্রেস কটেজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করেন। পরিবেশ বন্ধু রতনকুমার নাথ, অমৃতাভ দে, মমতা বিশ্বাস, তরুণকুমার সাহা প্রমুখরা সক্রিয়ভাবে মেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ‘কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু’-র পক্ষ থেকে মেলার আহ্বায়ক দীপাঞ্জন দে সকলকে স্বাগত জানান এবং সেদিনের সামগ্রিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
এই পরিবেশ মেলার কিছুদিন পরেই ছিল কৃষ্ণনগর পৌরসভার নির্বাচন। তাই জোড়কদমে চলছিল পুরভোটের প্রচার। শহর জুড়ে দেখা যাচ্ছিল ফ্লেক্সের ব্যানার, তোরণ, প্ল্যাকার্ড— সবই পরিবেশ দূষণের দ্যোতক। আর অন্যদিকে হেরিটেজ ভবন গ্রেস কটেজে চলছিল পরিবেশ মেলা-২০২২। কৃষ্ণনগর শহরে পরিবেশ বন্ধুদের প্লাস্টিক বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র পাঠকেরাও নিশ্চয় অবহিত, কিন্তু সেই আন্দোলনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের যত্রতত্র পাওয়া যাচ্ছিল সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ। পরিবেশ মেলায় আগত সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে পরিবেশকর্মীদের আলাপচারিতার সময়ও সেসব কথা উঠে এসেছিল।
যাইহোক, সেদিন মেলার আলোচনা কক্ষেও পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য পেশ এবং পরিবেশকর্মীদের মধ্যে সেসব বিষয়ে ভাববিনিময় হয়। গঙ্গা, জলঙ্গি, ভৈরব, চূর্ণী, মাথাভাঙ্গা, ইছামতি, অঞ্জনা সহ আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ নদীর বাস্তবিক সমস্যাগুলি নিয়ে নদীকর্মীরা আলোচনা করেন। নদীপাড়ের ভাঙন, জলদূষণ, নদীতে বাঁধাল, জলাশয় কেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য, জল সংকট প্রভৃতির কথা উঠে আসে। আবার নদিয়া পরিবেশ মঞ্চের প্রদর্শনীতে শান্তিপুরের বাগান চুরি, কৃষ্ণনগরের প্লাস্টিক দূষণ, অঞ্জনা সংস্কারের দাবিতে সাইকেল মিছিল, চালতেতলা খালের মৃতপ্রায় অবস্থা প্রভৃতি বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়।
গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ থেকে প্রকাশিত পরিবেশ পত্রিকা ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’ (ত্রৈমাসিক) ২০২২ সালে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করে। কৃষ্ণনগরের গ্রেস কটেজে প্রথম পরিবেশ মেলায় ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র তৃতীয় বর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় যুগ্ম সংখ্যাটি (জানুয়ারী-মার্চ, এপ্রিল-জুন ২০২২) প্রকাশ পায়। কৃষ্ণনগরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেবাশিষ মণ্ডলের হাত দিয়ে পত্রিকার নতুন সংখ্যার আবরণ উন্মোচিত হয়। তাঁকে সঙ্গ দেন সেদিনের বিশেষ অতিথি শিল্পী লালমোহন গুড়িয়া এবং বিশিষ্ট বিজ্ঞানকর্মী ও লেখক প্রকাশ দাস বিশ্বাস। পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দীপককুমার দাঁ।
কৃষ্ণনগরে পরিবেশ মেলার আয়োজন ও প্রদর্শনীতে শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাব এবং কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবারের বিজ্ঞানকর্মীরা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাদের প্রদর্শনী ছিল এই পরিবেশ মেলার অন্যতম আকর্ষণ। শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের প্রতিনিধিরা ‘বন্য বিপন্ন’ শিরোনামে কিছু জীববৈচিত্র্যের পোস্টার প্রদর্শনী করেছিলেন। পাশাপাশি গ্রেস কটেজের প্রাচীরের রেলিঙে তাদের পরিবেশ দূষণ বিষয়ক পোস্টারগুলিও ছিল বিশেষ বার্তাবহ। শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাবের পক্ষ থেকে সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, রামপ্রসাদ সাহার নেতৃত্বে সদস্যরা পরিবেশ মেলায় অংশ নিয়েছিলেন। বিজ্ঞান অন্বেষক পত্রিকার পক্ষ থেকে পরিবেশ মেলায় অংশ নিয়েছিলেন জয়দেব দে, অনুপ হালদার, সুরজিৎ মণ্ডল প্রমুখরা। কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবারের পক্ষ থেকে ‘সাপ কামড়ালে কি করবেন?’ — এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে গ্রেস কটেজ প্রাঙ্গণ জুড়ে প্রদর্শনী সাজানো হয়েছিল। তাদের পত্রিকা ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ (দ্বিমাসিক) -এর নতুন সংখ্যাটিও (জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারি ২০২২) সেদিন মেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ মেলার কয়েকটি বিশেষ বিশেষ প্রদর্শনীর কথা এখানে উল্লেখ করতেই হবে। যেমন নদিয়া জেলার দুটি সংগ্রহশালা মেলায় নিজেদের স্টল দিয়েছিলেন। নদিয়া সংগ্রহশালার স্টলে তাদের সংগৃহীত বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য বই এবং বস্তু সামগ্রী প্রদর্শিত হয়েছিল। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও, ডা: বাসুদেব মণ্ডলের উদ্যোগে গড়ে ওঠা নদিয়া সংগ্রহশালার একটি ঝলক সকলে এখানে দেখতে পেয়েছিলেন। অন্যদিকে বরেন্দ্রনগরের ঐতিহ্য সংগ্রহশালা তাদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ঐতিহ্য সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠাতা অনির্বাণ বসু চূর্ণী নদীর হারিয়ে যাওয়া মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, সাপ প্রভৃতির মমি কাঁচের বাক্সে রেখে মেলায় প্রদর্শিত করেন। রাণাঘাটের পরিবেশ সংস্থা ‘নেচার ফার্স্ট’ তাদের স্টলে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের বিকল্প হিসেবে নিজেদের তৈরি কাপড় ও কাগজের ব্যাগ রেখেছিলেন। ‘জলঙ্গি নদী সমাজ’ এবং ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও’ আন্দোলনের পরিবেশ কর্মীদের নদী বিষয়ক পোস্টার প্রদর্শনীটি ছিল পরিবেশ মেলার পক্ষে বিশেষ তাৎপর্যবাহী। উল্লেখ্য, পরিবেশ বন্ধু তরুণকুমার সাহার সৌজন্যে গ্রেস কটেজের পরিবেশ মেলায় ‘এক কাপ চা’ শীর্ষক একটি পরিবেশ সচেতনতামূলক লিফলেট প্রদর্শিত হয়েছিল।
গ্রেস কটেজের পরিবেশ মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘লালন প্রকৃতি লালমোহন’ প্রদর্শনীটি। গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদের পক্ষ থেকে দীপাঞ্জন দে-র উপস্থাপনায় ‘লালন প্রকৃতি লালমোহন’ প্রদর্শনীটি হয়েছিল। পরিবেশ মেলার বিশেষ অতিথি শিল্পী লালমোহন গুড়িয়ার শিল্পকর্ম নিয়ে ছিল এই প্রদর্শনীটি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বন জঙ্গল থেকে গাছের গুড়ি বা শুকনো গাছের ডাল সংগ্রহ করেন এবং সেগুলিকে লালন সাঁইয়ের রূপ দেন। তাঁর হাতে গড়া সেসব শিল্পকর্মের ছবি দিয়েই ‘লালন প্রকৃতি লালমোহন’ প্রদর্শনীটি হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ দুটি আসল মডেলও রাখা হয়েছিল।
এছাড়াও শান্তিপুরের বিশিষ্ট জৈব কৃষি প্রচারক শৈলেন চন্ডীর উদ্যোগে বিষমুক্ত খাবার সামগ্রীর একটি স্টল ছিল। বলাগড় থেকে উজ্জ্বল কাঞ্জিলাল জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃতি দানাশস্যের সম্ভার নিয়ে এসেছিলেন। কৃষ্ণনগরের ‘আমরা আন্তরিক’ সংস্থার সদস্যরাও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা দিয়েছিলেন। সংস্থার পক্ষ থেকে শোভনা দাস পরিবেশ মেলায় সেদিন বক্তব্যও রেখেছিলেন। নদিয়া পরিবেশ মঞ্চের পক্ষ থেকে নদী বিশেষজ্ঞ অনুপ হালদারের উপস্থাপনায় ‘নদিয়ার নদ-নদী’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনী করা হয়েছিল। কিছু ব্যতিক্রমী এবং ভেষজগুণ সম্পন্ন ফুলের ছবি দিয়ে বিশিষ্ট লেখক ডা: সতীনাথ ভট্টাচার্য গ্রেস কটেজে দুটি পুষ্প প্রদর্শনী করেছিলেন। সৌজন্যে অলোক প্রামাণিক এবং অধ্যাপক ড: অরিন্দম চক্রবর্তী। ‘ফুলের জলসায়’ এবং ‘ফুল তুলিতে এলেম বনে’ শীর্ষক প্রদর্শনী দুটি মেলায় আগত দর্শকদের মুগ্ধ করে।
পরিবেশ ও বিজ্ঞান সংগঠনের পাশাপাশি কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংস্থা, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গ্রেস কটেজের পরিবেশ মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক স্বরাজ বক্সী ও চিরঞ্জিত প্রামাণিক। গ্রেস কটেজে প্রথম পরিবেশ মেলায় যেসকল সংগঠন অংশগ্রহণ করেছিল, তারা হল— কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবার, বিজ্ঞান অন্বেষক পত্রিকা, শান্তিপুর সায়েন্স ক্লাব, ঐতিহ্য সংগ্রহশালা, মুর্শিদাবাদ জিলা বিজ্ঞান পরিষদ, রাখী পত্রিকা, শান্তিপুর পরিবেশ ভাবনা মঞ্চ, মিশন গ্রীন ইউনিভার্স, উৎস মানুষ, লালনায়ন, এবং কি কে ও কেন পত্রিকা, বহরমপুর জলাভূমি রক্ষা কমিটি, কবি হেমচন্দ্র বাগচী স্মৃতি রক্ষা সমিতি, বাসভূমি পত্রিকা, শান্তিপুর সাহিত্য পরিষদ, নদিয়ার যুগবার্তা পরিবার, সূর্যসেনা পত্রিকা, চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়, নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও, ব্যারাকপুর পরিবেশ বান্ধব মঞ্চ, রানাঘাট নেচার ফার্স্ট, জলঙ্গি নদী সমাজ, মুক্তধারা, আমরা আন্তরিক, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি (নবদ্বীপ শাখা), শান্তিপুর জৈব কৃষি বিষমুক্ত খাবার, সেভ জলঙ্গি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ (রানাঘাট শাখা), শতাব্দীর কলকাতা পত্রিকা, ইউনাইটেড রেড স্টার্স, নদিয়া সংগ্রহশালা, আমরা কৃষ্ণনগরবাসী, কিষাণ স্বরাজ সমিতি প্রভৃতি।
এদিন গ্রেস কটেজে পরিবেশ এবং বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদিনব্যাপী পরিবেশ মেলা চলে। শুরুর ন্যায়, মেলার সমাপ্তিও হয়েছিল পরিবেশের বিষয় দিয়েই— নদী নিয়ে রচিত নজরুলের একটি গান পরিবেশিত হয়েছিল। বর্তমানে কৃষ্ণনগরের লুপ্তপ্রায় অঞ্জনা নদীকে নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের একদা ‘নদীর নাম সই অঞ্জনা’ গান লিখেছিলেন। সেই গানটিই এদিন পরিবেশিত হয়— গ্রেস কটেজে নজরুলেরই বসতঘরে। বিশিষ্ট নজরুল অনুরাগী ইনাস উদ্দীনের নেতৃত্বে সমবেত কন্ঠে গানটি গাওয়া হয়। উপস্থিত পরিবেশ কর্মীরাও তাতে গলা মেলান। এই গানের মধ্য দিয়েই ‘পরিবেশ মেলা ২০২২’-এর পরিসমাপ্তি ঘটে। সবশেষে গ্রেস কটেজ প্রাঙ্গণে নদিয়া পরিবেশ মঞ্চের পক্ষ থেকে দুটি অশোক গাছের চারাও রোপিত হয়।
লেখক: আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক, নদিয়া।
খুব সুন্দর প্রতিবেদন। ছবিগুলিও ভালো সংযোজন। গ্রেস কটেজে পরিবেশ নিয়ে এতো দূর দূর থেকে এতো রকমের সংগঠন ও পরিবেশ প্রেমী যে উপস্থিত হবেন ভাবতে পারিনি। এরকম মেলা আরও প্রয়োজন।
হ্যাঁ, দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা উপস্থিত হয়েছিলেন। সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় পরিবেশ মেলার এই আয়োজন সম্ভব হয়েছিল।
আমাদের প্রাণের নজরুল। তাঁরই একদা কৃষ্ণনগরের ঠিকানা গ্রেস কটেজে আমরা পরিবেশ মেলা করতে পেরে ধন্য হয়েছি। সকলে পড়ে দেখবেন।
An outstanding presentation and lucid writing on regional and local history. Excellent effort. Thanks for sharing.
Thank You Sir. I can learn a lot from scientists like you. You are my inspiration.
খুবই গুরত্বপূর্ণ ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। আপনার (সন্মানীয় প্রফেসর দীপাঞ্জন দে মহাশয়ের) ডাকে উক্ত মেলায় উপস্থিত ছিলাম। সব স্বচক্ষে দেখেছি, জ্বলজ্বল করছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আড়াই বছরের যে ইতিহাস সত্যিই খুব তথ্যপূর্ণ লেখা,,সেই সাথে গেস কটেজ এর ইতিহাস। আগামীতে আরো তথ্য সমৃদ্ধ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রইলাম। বিজ্ঞান ও পরিবেশ সচেতনতা মূলক মেলা/ শিবির বর্তমানে খুব বেশি বেশি প্রয়োজন। যার দ্বারা সমাজের কাছে পরিবেশ সম্পর্কে সঠিক বার্তা পৌঁছে যাবে।
তোমাদের অংশগ্রহণেই গ্রেস কটেজ ও পরিবেশ মেলার মতো কর্মযজ্ঞের উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। এমনভাবেই পাশে থেকো মইনুল।
পরিবেশ এর জন্য কিছু কাজে যুক্ত হওয়া অসম্ভব একটা ভালো লাগা। খুবই সুন্দর সেই দিনটি উপভোগ করছিলাম। আগামী দিনের অপেক্ষায় রইলাম।
সংস্কারের পরে গ্রেস কটেজ নবরূপে সজ্জিত। সুজন বাসরের সৌজন্যে এবং তোমাদের সহযোগিতায় আগামীদিনেও পরিবেশ মেলা করা যাবে নিশ্চয়। ধন্যবাদ সাহেব।
ভারী চমৎকার একটি প্রতিবেদন। দীপাঞ্জন কে আমার অভিনন্দন এবং অফুরান শুভেচ্ছা। পরিবেশ মেলা টি যে কত সফল এবং অবশ্যই প্রেরণাদায়ক হয়েছিল, সেটি প্রতিবেদন পড়লেই বোঝা যাবে।
ইনাস উদ্দিনকে আলাদা করে ধন্যবাদ। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে সুজন বাসরের সাথে যুক্ত করবার উদ্যোগের জন্য। এই ভাবেই একদিন শৃন্বন্তু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী সুজন বাসরের সাথে জড়িয়ে পড়েছিল।
নজরুল চর্চার এত বছর পরেও বহু মানুষ এই গ্রেস কটেজের কথা সে অর্থে জানেন না । সুজন বাসরের বন্ধুরা যে কত পরিশ্রম, কত অধ্যবসায়ের সাথে লড়াই করে এই বাড়িটিকে হেরিটেজ বানিয়েছেন, সংস্কার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন, তার তুলনা হয় না।
নজরুল জীবনের উজ্জ্বলতম তিনটি বছর এই বাড়িতে অতিবাহিত হয়েছে। যে ঘরগুলিতে কবি পদচারণা করেছেন, যে ঘরে যেখানে বসে কবি গান শেখাতেন, সেই পূণ্যস্থলে বসে কোন অনুষ্ঠান করবার সৌভাগ্য যাঁদের হয়েছে,তাঁদের অনুভূতি অনির্বচনীয়।
গ্রেস কটেজে কবির জীবন নিয়ে শৃন্বন্তু গোষ্ঠী একটি শ্রুতি নাটক পরিবেশন করে থাকে। ঘটনাচক্রে লন্ডন শহরে গত বছর বাঙালীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক রবীন্দ্র নজরুল সন্ধ্যায় সেই শ্রুতি নাটকটি শোনাবার সুযোগ ঘটেছিল। পূর্ন প্রেক্ষাগৃহে দুই বাংলার মানুষ ছাড়া স্থানীয় মানুষজন ও ছিল। তাঁদের।কেউই কবি জীবনের এই পর্যায়টির কোন কথা জানতেন না। অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা অনেকেই দেখা করে বহু প্রশ্ন করেছেন।
পরিবেশ মেলা বা এই ধরনের মিলন মেলা আর ও বেশি বেশী করে এখানে হলে গ্রেস কটেজে র পরিচিতি ব্যাপকতর হবে। সুজন বাসরের উদ্দেশ্য সফল হবে ।
মন থেকে লিখেছেন। খুব ভালো লাগলো। শৃন্বন্তু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান আমাদেরও খুব ভালো লেগেছিল। গ্রেস কটেজের প্রতি আপনাদের অনুভূতি ভালো লাগলো।