মঙ্গলবার | ২৭শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:২৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাঁসা-পিতল কারিগর এবং ভদ্রবিত্ত : বিশ্বেন্দু নন্দ

বিশ্বেন্দু নন্দ / ১৬৩৮ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১

কাঁসা পিতলের তৈজস কেন বাংলায় আর তৈরি হয় না (বাংলায় হয় না এটা অতিকথা – ভদ্রবিত্ত তার জীবনে কাঁসা পিতলকে টান মেরে ছুঁড়ে ফেলেছে কর্পোরেট নির্দেশে), সেটা নিয়ে বছর দুয়েক আগে একটা সাময়িকীতে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বিতর্ক চলছিল। প্রবন্ধ এবং চিঠিপত্রে বোঝা গেল সব দোষ বেঁড়ে ব্যাটা ছোটলোক কারিগরের আর তার মাল বিক্রি করা কাঁসা-পিতলের দোকানদারদের। কারিগর-চাষী-হকার ছাড়া বাংলায় ভদ্রদের বাছা বাছা গালি খাওয়ার এমন পাত্র কেই বা আছে? কেউ বলেন বলেন কাঁসা পিতল আর পাড়ায় পাড়ায় পাওয়া যায় না। কেউ বলেন মোরাদাবাদের থেকে বাংলার পণ্যের দাম অনেক বেশি। ভদ্রবাবুদের বলা যাক, মোরাদাবাদ আর বাংলার কাঁসা পিতল উৎপাদন পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে — মোরাদাবাদের পাত্রগুলো মূলত ছাঁচে ঢালাই, আর আমাদেরগুলো পেটাই। জ্ঞান, বুদ্ধি, দক্ষতা আর শ্রম মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি হয় বাংলার কাঁসা পিতলের অনন্য পণ্য। পার্থক্য দক্ষতায়, গুণমানে।

বাঙালি শিক্ষিত কর্পোরেট-বন্ধু ভদ্রলোকদের বলা যাক কাঁসা পিতলের পিটাইয়ের কাজ কেমন হয়।একটা পিতলের/কাঁসার গোলককে পিটিয়ে পিটিয়ে নির্দিষ্ট থালা বা বাটির আকারে আনা হয়। এই কাজ যে কত বড় অধীত জ্ঞান আর সামাজিক পরম্পরার দক্ষতায় সাধিত হয়, যন্ত্র নির্ভর প্রায় শ্রমবিহীন উৎপাদন ব্যবস্থাকে ভগবানের পর্যায়ে বসানো ভদ্রদের সে তত্ত্ব বোঝার কম্ম নয়। বাড়িতে ভদ্রবিত্তের পূর্বজরা যে কাঁসা-পিতলের তৈজস রেখেগিয়েছেন (যদি ইতিমধ্যে সেটি বিক্রি/বিদায় না করেন), সেই বাটি থালার অনেকগুলো তৈরি হয় একটা গোলোক পিটিয়ে পিটিয়ে, হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, একটা ধাতুর গোলোককে স্রেফ হাতুড়িতে পিটিয়ে পিটিয়ে থালা বা বাটির আকার দিয়ে। অন্যকে অশিক্ষিত দাগিয়ে দিয়ে, তুই তোকারি করে ব্যাপক ঔপনিবেশিক আত্ম্রপ্রসাদ অনুভাব করা বাঙালি অবলীলায় মোরাদাবাদের ছাঁচে ঢালাই পণ্যের দামের কৃতির ঐতিহ্যের সঙ্গে তুলনা করে খাগড়া বা দেবগ্রাম বা চন্দনপুরের কাঁসা পিতলের কাজ।

ভদ্ররা মাত্র কয়েক বছরের জীবনওয়ালা প্লাস্টিকের খেলনা ফোনের জন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ করে, কিন্তু একটা সারাজীবনের পেটাই বাটির জন্য ১৫০/২০০ টাকা বা থালার জন্য ১০০০/১২০০ খরচ করে না, বলে বহুত দাম। ভাইরে ভাই একটা তুচ্ছ মেলামাইন ডিনার সেটের দাম কত?

তাছাড়া আপনি চাইলেও কারিগর কেন কাজ করবে? কেন? তার দাম আপনি দেবেন? আপনাকে কর্পোরেট/রাষ্ট্র বেতন দালালি দ্যায় এই অলিখিত শর্তে যে আপনি সেই অর্থ কর্পোরেটিয় উৎপাদন ব্যবস্থায় ঢেলে আসতে পারেন। বাংলা তথা ভারতজুড়ে কাঁসা পিতলের কাজ টিকে আছে ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রদের জন্য নয় গ্রামীনদের জন্য। ব্যতিক্রমী কয়েকটা বাড়ি বাদ দিলে শহরের ভদ্রবাড়িতে কাঁসা-পিতলের বাসন প্রায় অদৃশ্য। অথচ অভদ্রবাড়িতে একটা না একটা বাসন আপনি পাবেনই। আজও বিয়েতে, শ্রাদ্ধে, অন্নপ্রাশনে কাঁসা পিতল উপহার দিতে হয়। গ্রামীনেরা কাঁসা পিতলকে আজও বিনিয়োগযোগ্য পণ্য হিসেবে গণ্য করে। আপনি ভদ্র; আপনার বাড়িতে রং-বেরঙের প্লাস্টিকের বালতি ভর্তি অথচ বহু গ্রামীনের বাড়িতে আসজও অন্তত একটা পিতলের বালতি পাবেন। দেশিয় কারিগরি বাঁচাবার জন্যে এরকম একটাও আধুনিক রিচুয়াল আপনারা ভদ্রবিত্তরা বানান নি। শুধু কারিগরদের গালি দিয়ে করে কী মোক্ষ লাভ হয় নাই না। এই তাচ্ছিল্য আর কর্পোরেটিয় গালিই কারিগর বা কারিগরদের বিক্রেতাদের প্রাপ্য। বড়বাজারে বা মৌলালিতে বা চিতপুরে কাঁসা/পিতলের দোকানে গিয়ে কোনও দিন দেখেছেন তারা কি ভাবে ব্যবসা করে, বা এই কলকাতারই ঠনঠনিয়ার তারক প্রামাণিক রোডে বা খাগড়া বা দেবগ্রাম বা চন্দনপুরে গিয়ে কোনও দিন দেখেছেন পিটাই কারিগরেরা কীকরে পণ্য উৎপাদন করে? ভদ্ররা কী করে বুঝবেন কারিগরদের আর তার ব্যবসাদারদের বেদনা। গালি দিয়েই খালাস! দায় শেষ।

সব শেষে জেনে নিন চিতপুরের কাঁসারিপাড়ার কৃষ্ণকালী কুন্ডুর দোকানের কী কী কাঁসা পিতলের বাসন পাওয়া যায়। এই বৈচিত্র আমাদের জোর। একে ধরে রাখতে হবে

থালা : বগি থালা, পদ্মকটকি, হ্যাঁচা, লড কটকি, দুপিঠ বগি

বাটি : জামবাটি, নমুনা বাটি, শিউলি বাটি, আয়নাপল

গ্লাস : ধর্মদা, সরপোষ (ঢাকা দেওয়া), বেনারস গ্লাস

ঘড়া : সর্বসুন্দরী, লোহাজং

ডেচকি : বেনারসি

হাঁড়ি : আশিকি, বেনারস হাঁড়ি

কলসি : দাঁইহাট কলসি

ঘটি : মোহরপুর, বাবুঘটি, বেনারসি সিলভার লোটা, ডাবর, মুখ ডিবে, পান ডিবে ফুলদানি ইত্যাদি সৌখিন দ্রব্য

দেশের কারখানা কারিগর হকার চাষীর জীবকা বাঁচানোর অর্থ হল অলিখিত ভদ্রবিত্তের জন্যে বিনা খরচে সামাজিক সুরক্ষার বীমা অর্জন। দেশে থাকুন, দেশিয় অর্থনীতির পাশে থাকুন।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “কাঁসা-পিতল কারিগর এবং ভদ্রবিত্ত : বিশ্বেন্দু নন্দ”

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন