বুধবার | ১লা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৪০
Logo
এই মুহূর্তে ::
অন্তরের আলো জ্বালাতেই কল্পতরু উৎসব : সন্দীপন বিশ্বাস কল্পতরু — এক উত্তরণের দিন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চলচ্চিত্র উৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (শেষ পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী ফেলে আসা বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া না ঝড় : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোয়ানিতা ম্যালে-র ছোটগল্প ‘নাইট জব’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস দেশজ ফসলের বীজকে কৃষির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে নদিয়া বইমেলা মুখপত্র : দীপাঞ্জন দে চলচ্চিত্র মহোৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (প্রথম পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী শৌনক দত্ত-র ছোটগল্প ‘গুডবাই মাষ্টার’ হেলান রামকৃষ্ণ শিশু বিতানের রজত জয়ন্তী বর্ষপূর্তি উৎসব পালিত হল মহাসমারোহে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের নদী ধানসিঁড়ি আজও আছে কিন্তু মৃতপ্রায় : মনোজিৎকুমার দাস মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘শঠে শাঠ্যং’ যথোচিত মর্যাদায় পালিত হল খানাকুলের রূপকার শান্তিমোহন রায়ের জন্মদিন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয় — নেতাজী নগর বিদ্যামন্দিরের পুনর্মিলন : সুশান্ত দাস মোদি বনাম মনমোহন: ইতিহাস বারবার এই বিশ্লেষণ করবে : সন্দীপন বিশ্বাস কবির লড়াইয়ের স্রষ্টা হলেন রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস চল্লিশতম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা : দীপাঞ্জন দে ভাগ্নার পদধূলিতে ধন্য হল মামার বাড়ি, বেলুড় মঠ ও মিশন অধিগ্রহণ করে মর্যাদা দিল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভিয়েতনামের গল্প (চতুর্থ পর্ব) : বিজয়া দেব কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ভিয়েতনামের গল্প (তৃতীয় পর্ব) : বিজয়া দেব চব্বিশে ভোট আর ফলাফলে ছিল উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘জিঙ্গল বেল’ নোবেল বিজয়ী কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনার : মনোজিৎকুমার দাস কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সফলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সুবিমল মিশ্র-র ছোটগল্প ‘বাব্বি’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই ২০২৫ ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কালীঘাটের পট (প্রথম পর্ব) : অঞ্জন সেন

অঞ্জন সেন / ৩৮০৫ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০

কালীঘাটের পট বাংলার শিল্পীদের মৌলিক অবদান। এ ধরনের চিত্র ভারতে বা বিশ্বের অন্য কোথাও আগে আঁকা হয়নি। দেশীয় শিল্পের চলমান ধারা থেকেই এর উদ্ভব। তুলির বলিষ্ঠ চালনায় এর সূত্রপাত। প্রয়াত ভাস্কর প্রদোষ দাশগুপ্তকে একবার তাঁর এক বন্ধু দুটি ড্রয়িং দেখান, পাশাপাশি রাখা, একটি কালীঘাটের পট অপরটি পিকাসোর শ্রইং চিংড়ি মাছ। প্রদোষবাবুর মতো অত অভিজ্ঞ ভাস্করও ধরতে পারেননি কোনটি পিকাসোর কোনটি কালীঘাটের পটুয়ার, এমনই সে সাবলীল রেখার শক্তি।

কালীঘাটের পট আঁকা শুরু করেন কুমোর সম্প্রদায়। এঁরা প্রতিমা ও পুতুল তৈরি করতেন, প্রতিমা তৈরির সময় চালচিত্র আঁকতেন। কালীঘাটের মন্দির নতুন করে তৈরি হয় ১৮০৯ সালে। ধীরে ধীরে তীর্থযাত্রীদের আসা যাওয়া বাড়তে থাকে। এই তীর্থযাত্রীদের জন্যই কুমোর শিল্পীরা কালীঘাটে পট আঁকা শুরু করেন, তীর্থযাত্রীরা ফেরার সময় পট কিনে নিয়ে যেতেন। সম্ভবত ১৮৩০ বা কিছু আগে পরে কালীঘাটের পটের বহুল প্রচলন হয় এবং প্রথম দিকে এগুলি ছিল সাদা কাগজে কালো কালির সাবলীল ড্রইং। চিত্রগুলির ডৌলতা প্রতিমার ডৌলতার মতো, এ থেকেই বোঝা যায় মূলত প্রতিমা ও পুতুল তৈরির শিল্পীরা এই ধরনের পট আঁকা শুরু করেন। প্রতিমার চালচিত্রে কুমোরদের অঙ্কিত যে চিত্রগুলি দেখা যায় তার সঙ্গেও কালীঘাটের রেখাচিত্রগুলির মিল আছে। এই শিল্পীরা এসেছিলেন দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। প্রথম দিকে কেবল দেবদেবীর মূর্তি আঁকা হত, পরে তা নানান সামাজিক ঘটনাবলীর দৃশ্যরূপ, কোথাও নটি, বাবু, নাটকের দৃশ্য, গুরুঠাকুর, মেছুনি, নর্তকী, কামাখ্যার পুরুষদের ভেড়া বানানো। তারকেশ্বরের মহান্ত আর এলোকেশীকে নিয়েও আঁকা হয়েছে বহু সংখ্যক পট। কালো কালির ড্রয়িং থেকে পটুয়ারা রঙিন পট আঁকতে আরম্ভ করলেন, আরম্ভ করলেন বিলিতি জলরঙে আঁকা। বহু সংখ্যক রঙিন পট আজও সংগ্রহশালাগুলিতে দেখা যায়।

অনুমান করা হয় চিৎপুরের চিত্তেশ্বরীর মন্দিরের (প্রতিষ্ঠা ১৬১০?) কাছে এক শ্রেণির পটুয়ারা থাকতেন, ওই ওঞ্চলে ডাকাতের প্রবল উৎপাতে তাঁরা কালীঘাটে চলে এসেছিলেন। সূত্রধর সম্প্রদায়ের শিল্পীরা আরও কিছু পরে এসেছিলেন। বাংলার সূত্রধর শিল্পীদের আলাদা একটা শৈলী ছিল যা আমরা পুঁথির পাটাচিত্রে, মন্দির গাত্রের টেরাকোটায়, কাঠের পুতুল বা মূর্তিতে আরও অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। কুমোর সম্রদায়ের শিল্পীদের অঙ্কনে যে প্রতিমাসুলভ ডৌলতা দেখা যায় সূত্রধর সম্প্রদায়ের শিল্পীদের অঙ্কনে তার পরিবর্তে আছে ঋজুতা। কালীঘাটের পটে কোথাও কোথাও এই দুই শ্রেণির শিল্পীদের আদান প্রদান ঘটেছে।

কালীঘাটের পটুয়াদের সঙ্গে অনেকে ভুল করে জাত পটুয়াদের গুলিয়ে ফেলেন। জাত পটুয়ারা ধর্মে মুসলমান, দীঘল পট বা লাটাই পট দেখিয়ে এঁরা গান করে ঘুরে বেড়ান মূলত পৌরাণিক আখ্যান নিয়ে। এছাড়া ওই শৈলীতেই পড়ে গাজি পট, যম পট, সাঁওতালি পট। এঁরা বহু প্রজন্ম থেকেই এভাবে পট দেখিয়ে গান গেয়ে ঘুরে বেড়ান, এখনও এঁদের অস্তিত্ব রয়েছে। এই জাত পটুয়া সম্প্রদায়ও অনেক উৎকৃষ্ট চিত্র সৃষ্টি করেছেন কিন্তু কালীঘাটের পট এঁদের সৃষ্টি – এ ধারণা ভুল আর এঁদের চিত্রকলা লৌকিক পর্যায়েরও।

দুঃখের বিষয় কালীঘাটের পট উনিশ শতকের তথাকথিত শিক্ষিত বাঙালিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি, তাঁরা মত্ত ছিলেন ইউরোপীয় আকাদেমিক আর্ট নিয়ে, দেশীয় শিল্পকলাকে এঁরা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখতেন। এর ফলে দেশীয় উৎসের মৌলিক সৃষ্টির ধারা ব্যাহত হল। ব্যতিক্রম ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘আর্ট ম্যানুফ্যাকচারস অফ ইন্ডিয়া’ (১৮৮৮) গ্রন্থে পটুয়াদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং ওই সময়ে কালীঘাটের পটশিল্প যে পড়তির মুখে সে কথাও উল্লেখ করেছেন। ত্রৈলোক্যনাথ ইংল্যান্ডে ভারতীয় শিল্প প্রদর্শনীর সময় কিছু কালীঘাটের পট নিয়ে গিয়েছিলেন।

বিদেশিদের কাছে কালীঘাটের পটের সমাদর তার আগেই শুরু হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ১৮৫৪ থেকে ১৮৭১ কালীঘাটের পট চিত্র শৈল্পিক উৎকর্ষের শিখরে উঠেছিল। বিদেশে কালীঘাট পট সংগ্রহের কয়েকটি বিবরণ দিলাম—

১) ইংল্যান্ডের টমাস ম্যাকবেথ ১৮৫৪-৫৫-এ কলকাতায় ছিলেন, ওই সময় ২৬টি পট সংগ্রহ করে নিয়ে যান যেগুলি ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি, লন্ডন-এ সংরক্ষিত ছিল। টমাস ম্যাকবেথের এ বিষয়ে হাতে লেখা নোট হারউৎট্‌স সংগ্রহে আছে।

২) ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে আরও ৪৮টি পট আছে যার মধ্যে ১৭টি ১৮৭০-৭১এ লন্ডনে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছিল।

৩) স্যার মনিয়ের উইলিয়ামস এর সংগ্রহে আছে অক্সফোর্ডের Bodleihn লাইব্রেরিতে।

৪) জে লকউড কিপলিং (রেডিয়ার্ড কিপলিং-এর বাবা)সংগ্রহ আছে ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে। ওই মিউজিয়ামের মোট সংগ্রহ ৬৫০টি কালীঘাটের পট।

৫) প্রাগ-এর Naprstcr মিউজিয়ামে আছে ২৬টি কালীঘাটের পট, এগুলি ১৮৭৪-৭৮-এর মধ্যে সংগ্রহ করা।

৬) রাশিয়ার ডিমিট্রি আলেকসান্দারোভিচ রভনস্কি (১৮৭৪-) কলকাতা থেকে ৬২টি পট সংগ্রহ করে নিয়ে যান ; এগুলি আছে মস্কোর পুশকিন মিউজিয়ামে।

এছাড়া ইউরোপের অনেক জায়গায় কালীঘাটের পট উনিশ শতকের বিভিন্ন সময়ে পৌঁছে গিয়েছিল।  ফরাসি শিল্পী মাতিস কালীঘাটের পট দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন এ তথ্য অনেকেই দিয়েছেন। পিকাসোও কালীঘাটের পট দেখেছেন। এঁদের কোনো কোনো চিত্রে কালীঘাটের রেখাঙ্কনের ছায়া দেখা যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন