শুক্রবার | ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৩৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কালীঘাটের পট (প্রথম পর্ব) : অঞ্জন সেন

অঞ্জন সেন / ৩৮৬৪ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০

কালীঘাটের পট বাংলার শিল্পীদের মৌলিক অবদান। এ ধরনের চিত্র ভারতে বা বিশ্বের অন্য কোথাও আগে আঁকা হয়নি। দেশীয় শিল্পের চলমান ধারা থেকেই এর উদ্ভব। তুলির বলিষ্ঠ চালনায় এর সূত্রপাত। প্রয়াত ভাস্কর প্রদোষ দাশগুপ্তকে একবার তাঁর এক বন্ধু দুটি ড্রয়িং দেখান, পাশাপাশি রাখা, একটি কালীঘাটের পট অপরটি পিকাসোর শ্রইং চিংড়ি মাছ। প্রদোষবাবুর মতো অত অভিজ্ঞ ভাস্করও ধরতে পারেননি কোনটি পিকাসোর কোনটি কালীঘাটের পটুয়ার, এমনই সে সাবলীল রেখার শক্তি।

কালীঘাটের পট আঁকা শুরু করেন কুমোর সম্প্রদায়। এঁরা প্রতিমা ও পুতুল তৈরি করতেন, প্রতিমা তৈরির সময় চালচিত্র আঁকতেন। কালীঘাটের মন্দির নতুন করে তৈরি হয় ১৮০৯ সালে। ধীরে ধীরে তীর্থযাত্রীদের আসা যাওয়া বাড়তে থাকে। এই তীর্থযাত্রীদের জন্যই কুমোর শিল্পীরা কালীঘাটে পট আঁকা শুরু করেন, তীর্থযাত্রীরা ফেরার সময় পট কিনে নিয়ে যেতেন। সম্ভবত ১৮৩০ বা কিছু আগে পরে কালীঘাটের পটের বহুল প্রচলন হয় এবং প্রথম দিকে এগুলি ছিল সাদা কাগজে কালো কালির সাবলীল ড্রইং। চিত্রগুলির ডৌলতা প্রতিমার ডৌলতার মতো, এ থেকেই বোঝা যায় মূলত প্রতিমা ও পুতুল তৈরির শিল্পীরা এই ধরনের পট আঁকা শুরু করেন। প্রতিমার চালচিত্রে কুমোরদের অঙ্কিত যে চিত্রগুলি দেখা যায় তার সঙ্গেও কালীঘাটের রেখাচিত্রগুলির মিল আছে। এই শিল্পীরা এসেছিলেন দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। প্রথম দিকে কেবল দেবদেবীর মূর্তি আঁকা হত, পরে তা নানান সামাজিক ঘটনাবলীর দৃশ্যরূপ, কোথাও নটি, বাবু, নাটকের দৃশ্য, গুরুঠাকুর, মেছুনি, নর্তকী, কামাখ্যার পুরুষদের ভেড়া বানানো। তারকেশ্বরের মহান্ত আর এলোকেশীকে নিয়েও আঁকা হয়েছে বহু সংখ্যক পট। কালো কালির ড্রয়িং থেকে পটুয়ারা রঙিন পট আঁকতে আরম্ভ করলেন, আরম্ভ করলেন বিলিতি জলরঙে আঁকা। বহু সংখ্যক রঙিন পট আজও সংগ্রহশালাগুলিতে দেখা যায়।

অনুমান করা হয় চিৎপুরের চিত্তেশ্বরীর মন্দিরের (প্রতিষ্ঠা ১৬১০?) কাছে এক শ্রেণির পটুয়ারা থাকতেন, ওই ওঞ্চলে ডাকাতের প্রবল উৎপাতে তাঁরা কালীঘাটে চলে এসেছিলেন। সূত্রধর সম্প্রদায়ের শিল্পীরা আরও কিছু পরে এসেছিলেন। বাংলার সূত্রধর শিল্পীদের আলাদা একটা শৈলী ছিল যা আমরা পুঁথির পাটাচিত্রে, মন্দির গাত্রের টেরাকোটায়, কাঠের পুতুল বা মূর্তিতে আরও অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। কুমোর সম্রদায়ের শিল্পীদের অঙ্কনে যে প্রতিমাসুলভ ডৌলতা দেখা যায় সূত্রধর সম্প্রদায়ের শিল্পীদের অঙ্কনে তার পরিবর্তে আছে ঋজুতা। কালীঘাটের পটে কোথাও কোথাও এই দুই শ্রেণির শিল্পীদের আদান প্রদান ঘটেছে।

কালীঘাটের পটুয়াদের সঙ্গে অনেকে ভুল করে জাত পটুয়াদের গুলিয়ে ফেলেন। জাত পটুয়ারা ধর্মে মুসলমান, দীঘল পট বা লাটাই পট দেখিয়ে এঁরা গান করে ঘুরে বেড়ান মূলত পৌরাণিক আখ্যান নিয়ে। এছাড়া ওই শৈলীতেই পড়ে গাজি পট, যম পট, সাঁওতালি পট। এঁরা বহু প্রজন্ম থেকেই এভাবে পট দেখিয়ে গান গেয়ে ঘুরে বেড়ান, এখনও এঁদের অস্তিত্ব রয়েছে। এই জাত পটুয়া সম্প্রদায়ও অনেক উৎকৃষ্ট চিত্র সৃষ্টি করেছেন কিন্তু কালীঘাটের পট এঁদের সৃষ্টি – এ ধারণা ভুল আর এঁদের চিত্রকলা লৌকিক পর্যায়েরও।

দুঃখের বিষয় কালীঘাটের পট উনিশ শতকের তথাকথিত শিক্ষিত বাঙালিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি, তাঁরা মত্ত ছিলেন ইউরোপীয় আকাদেমিক আর্ট নিয়ে, দেশীয় শিল্পকলাকে এঁরা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখতেন। এর ফলে দেশীয় উৎসের মৌলিক সৃষ্টির ধারা ব্যাহত হল। ব্যতিক্রম ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘আর্ট ম্যানুফ্যাকচারস অফ ইন্ডিয়া’ (১৮৮৮) গ্রন্থে পটুয়াদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং ওই সময়ে কালীঘাটের পটশিল্প যে পড়তির মুখে সে কথাও উল্লেখ করেছেন। ত্রৈলোক্যনাথ ইংল্যান্ডে ভারতীয় শিল্প প্রদর্শনীর সময় কিছু কালীঘাটের পট নিয়ে গিয়েছিলেন।

বিদেশিদের কাছে কালীঘাটের পটের সমাদর তার আগেই শুরু হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ১৮৫৪ থেকে ১৮৭১ কালীঘাটের পট চিত্র শৈল্পিক উৎকর্ষের শিখরে উঠেছিল। বিদেশে কালীঘাট পট সংগ্রহের কয়েকটি বিবরণ দিলাম—

১) ইংল্যান্ডের টমাস ম্যাকবেথ ১৮৫৪-৫৫-এ কলকাতায় ছিলেন, ওই সময় ২৬টি পট সংগ্রহ করে নিয়ে যান যেগুলি ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি, লন্ডন-এ সংরক্ষিত ছিল। টমাস ম্যাকবেথের এ বিষয়ে হাতে লেখা নোট হারউৎট্‌স সংগ্রহে আছে।

২) ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে আরও ৪৮টি পট আছে যার মধ্যে ১৭টি ১৮৭০-৭১এ লন্ডনে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছিল।

৩) স্যার মনিয়ের উইলিয়ামস এর সংগ্রহে আছে অক্সফোর্ডের Bodleihn লাইব্রেরিতে।

৪) জে লকউড কিপলিং (রেডিয়ার্ড কিপলিং-এর বাবা)সংগ্রহ আছে ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে। ওই মিউজিয়ামের মোট সংগ্রহ ৬৫০টি কালীঘাটের পট।

৫) প্রাগ-এর Naprstcr মিউজিয়ামে আছে ২৬টি কালীঘাটের পট, এগুলি ১৮৭৪-৭৮-এর মধ্যে সংগ্রহ করা।

৬) রাশিয়ার ডিমিট্রি আলেকসান্দারোভিচ রভনস্কি (১৮৭৪-) কলকাতা থেকে ৬২টি পট সংগ্রহ করে নিয়ে যান ; এগুলি আছে মস্কোর পুশকিন মিউজিয়ামে।

এছাড়া ইউরোপের অনেক জায়গায় কালীঘাটের পট উনিশ শতকের বিভিন্ন সময়ে পৌঁছে গিয়েছিল।  ফরাসি শিল্পী মাতিস কালীঘাটের পট দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন এ তথ্য অনেকেই দিয়েছেন। পিকাসোও কালীঘাটের পট দেখেছেন। এঁদের কোনো কোনো চিত্রে কালীঘাটের রেখাঙ্কনের ছায়া দেখা যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন