মঙ্গলবার | ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:২৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস

অসিত দাস / ১৩২ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১ জুন, ২০২৫

আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ODBL’ বইয়ে জামাই শব্দের ব্যুৎপত্তিতে নাকি আছে, যাকে নতুন জামা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়। এক অভিজ্ঞ অধ্যাপকের মুখে শুনেছিলাম, নিজে পড়িনি। জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানের কথা সেখানে আছে কিনা জানি না।

তবে আমার নিজের বিশ্বাস জামাইষষ্ঠী সম্পূর্ণভাবে স্ত্রী লোকাচার। জামাই বাবাজীবনরা সেখানে রবাহূত। জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানের নেপথ্যে যে শব্দ কলকাঠি নাড়ছে, সেটি হল সংস্কৃত থেকে আসা ‘জামি’। এর অর্থ সধবা বধূ বা কুলস্ত্রী বা এয়োস্ত্রী। ক্ষেত্রবিশেষে দুহিতাও হয়।

জামি শব্দটি নিজে যে কোথায় হারিয়ে গেল, সেটাই আমার কাছে ধোঁয়াশা। বাংলাসাহিত্যে এর কোনও ব্যবহার নেই, গল্প-উপন্যাসে তো নেই-ই, কবিতাতেও নেই। সংস্কৃত শ্লোকের বাইরে এর প্রয়োগ দেখছি না। জামি-র বহুবচন যে জাময়ঃ বা জাময়ো, তা সংস্কৃত শ্লোকেই পাই।

মনুসংহিতায় যেমন লেখা হয়েছে —

“জাময়ো যানি গেহানি শপন্ত্যপ্রতিপূজিতাঃ

শোচন্তি জাময়ো যত্র বিনশ্যন্ত্যাশু তৎকুলং”

অস্যার্থ, জামি যে সংসারে পূজিত হন, সেখানে সুখসমৃদ্ধি বিরাজ করে, আর যে সংসারে জামি লাঞ্ছিত হন, সে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়, বিনাশ হয় বংশের।

আবার এও লেখা হয়েছে, —

“জামিঃ স্বসৃকুলস্ত্রিয়োঃ”

আর এক জায়গায় আছে, —

“নবোঢ়াদুহিতৃস্নুষাদ্যা জাময়ঃ”

জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে প্রতি ঘরে ঘরে যেন উৎসবের আমেজ। প্রাক বর্ষার ভ্যাপসা গরমকে তুচ্ছ করে লোডশেডিংয়ের চোখরাঙানিকে থোড়াই কেয়ার করে জামাইরা বউকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবেই। এখানে হরিপদ কেরানি থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসার, এমএনসির  সি ই ও, কেউ বাদ যান না। মাগ্গিগণ্ডার বাজারেও শ্বশুর- শাশুড়ির তরফে যে আপ্যায়নের ত্রুটি থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। শ্যালক-শ্যালিকারা তো জামাইবাবু তথা জিজাজিদের কোনও রকম অযত্ন হতে দেবে না।

কিন্তু এই জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানটি ঠিক কতটা প্রাচীন, সে নিয়ে সংশয় আছেই।

‘হিন্দুর আচার-অনুষ্ঠান’ বইটিতে প্রখ্যাত লেখক চিন্তাহরণ চক্রবর্তী লিখেছেন, কোনও ধর্মানুষ্ঠানের সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ বা ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ নেই। একটি অনতিপ্রাচীন লোকাচারের সঙ্গে নাকি এর যোগসূত্র আছে। লোকাচার বললেই অরণ্যষষ্ঠীর নামই আসে প্রথমে। অন্যান্য পাঁচটা ব্রতের মতই মেয়েরা এটি পালন করত। পূর্ববঙ্গে এর চল বেশি ছিল। সেখানে প্রায় প্রত্যেক সন্তানবতী রমণী এই ব্রত পালন করত। এই ব্রতে সন্তান-সন্ততির জন্যে মা-ষষ্ঠীর আরাধনা করা হয়।

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এ পাচ্ছি,আদতে অনুষ্ঠানটির নাম ছিল অরণ্যষষ্ঠী। অরণ্যষষ্ঠী সম্পর্কে বলা হয়,- জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীতে মহিলারা একহাতে পাখা নিয়ে বনে বিচরণ করেন, — বিন্ধ্যবাসিনী ষষ্ঠী দেবীকে পুজো করেন, কন্দ ফলমূল আহার করেন এবং পরিণামে শুভ সন্ততি লাভ করেন। এখন আর বনে পুজোর প্রচলন নেই। বাড়ির মধ্যে বটের ডাল পুতে তার তলায়  পিটুলি,হলুদবাটা ও ভুষো কালি দিয়ে ষষ্ঠী দেবী, তার বাচ্চাকাচ্চা ও বাহন বিড়ালের মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয়। পুজো শেষে ব্রতকারিণীরা বটপাতার উপরে রাখা ষষ্ঠীদেবীর সন্তানসন্ততির মূর্তিগুলো হাতে নিয়ে ব্রতকথা শুনতেন। ব্রতকথাটি অনেকের অজানা। সমুদ্রসেন নামক সওদাগর আর তার সর্বাঙ্গসুন্দরী কন্যা সুমনার কাহিনী। হিরণ্যরাজের পুত্রের হাতে পড়ে তার কী অবস্থা হল, তার বিবরণ।

অনেক বাড়িতে জামাইষষ্ঠী পালনের রেওয়াজ নেই। বেশ পয়সাওলা বাড়িতেও দেখেছি এটা। অথচ তারা দশটা জামাইকে ডেকে তিন দিন খাওয়াতে পারে। ‘কেন নেই আপনাদের এই পর্বটি?’ জিজ্ঞেস করলে কোনও সুদূর অতীতে এই বিশেষ দিনে এক দুর্ঘটনার গল্প বলেন অনেকে। পূর্ববঙ্গীয় অনেক বাড়িতে নাকি এদিন জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হয় না। মেয়েকেই শুধু ডাকা হয়। এটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে বছর কুড়ি-পঁচিশ আগে জামাই শব্দের কাছাকাছি কী শব্দ আছে, সেটা দেখার জন্যে অশোক মুখোপাধ্যায়ের সমার্থ শব্দকোষ ঘাঁটতে শুরু করি। এইভাবেই প্রথম জামি শব্দের খোঁজ পাই। ‘জামি’ শব্দটি তদবধি আমার অজানা ছিল। অর্থ দেখলাম সধবা বধূ, কুলবধূ বা এয়োস্ত্রী। তা হলে কি আদতে অনুষ্ঠানটি ‘জামিষষ্ঠী’ বা ‘জাময়ষষ্ঠী’ ছিল? জামির বহুবচন জাময়ঃ। মূলত সন্তানলাভের জন্য মা ষষ্ঠীর ব্রত এটি। আগে নাম ছিল অরণ্যষষ্ঠী। বনে গিয়ে পাখার হাওয়ায় মা ষষ্ঠীকে তুষ্ট করা হত। ফলমূল আহার বিধেয় ছিল। এখনকার মত জামাইবাবাজীবনদের জন্যে ভূরিভোজের আয়োজন হত না। মূলত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চাপে প্রাচীন এই লোকাচারটি নাম বদলে জামাইষষ্ঠী রূপে দেখা দিল। জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকে অপভ্রংশে এল জামাইষষ্ঠী।  শ্যালিকাসমভিব্যাহারে ভালোই খানাপিনা শুরু হল বাঙালির সুখী গৃহকোণে।এরও একটা কারণ আছে। দু’তিনশো বছর আগে পরিবহনবিহীন গ্রাম্য রাস্তায় বউ তো আর একা বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে পিত্রালয়ে যেতে পারে না। সঙ্গে স্বামীটিকে বগলদাবা করে নিয়ে যেতেই হয়। বেচারা স্বামী তো আর ‘আমার ব্রত নয়’ বলে বাড়ি চলে আসতে পারে না! তাঁর লাগি খানাপিনার ব্যবস্থা করতেই হয়। অনেক ক্রোশ হেঁটেছেন। ভদ্রলোকের ছেলে বলে কথা। এইটাই আস্তে আস্তে রেওয়াজ হল। আমূল বদলে গেল কালচার-লোকাচারের ব্যাখ্যাটি।কেন অনেক বাড়িতে জামাইয়ের কদর নেই এই বিশেষ দিনটিতে,তা বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।

জেন ওয়াই জামাইদের কদর এখন অন্যভাবে করছেন হালফিলের শাশুড়িঠাকরুনরা। কলকাতার বুকে গজিয়ে ওঠা জমকালো ঝাঁচকচকে রেস্তোঁরাগুলিতে এই বিশেষ দিনটিতে টেবিল পাওয়াই সমস্যা। যাঁরা ভাগ্যবান তাঁরা জামাইকে হরেকরকম পদ থরে থরে সাজিয়ে ভূরিভোজ করান। সঙ্গে নিজেদেরটাও সারেন। এই ব্যবস্থাটার একটা ভাল দিক হল, রান্নাঘরের ভ্যাপসা গরমে কাহিল হতে হয় না, পকেটে রেস্ত থাকলেই হল। মেয়েজামাইও খুশ।

জোম্যাটো, সুইগির কল্যাণে ঘরে বসেও জামাইয়ের স্পেশ্যাল মেনু অর্ডার করছেন অনেকে। এটাও বেশ চালু পদ্ধতি এখন। তবে জামাইষষ্ঠীর পাল্টা হিসেবে বৌমাষষ্ঠী সম্পূর্ণভাবে নারীবাদীদের সৃষ্টি। এর কোনও গুরুত্ব নেই। জামিষষ্ঠীই তো আসলে বৌমা ষষ্ঠী। তবে এই শুভদিনে ঝগড়াঝাঁটি করে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। মধুরেণ সমাপয়েৎ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন