শনিবার | ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৫২
Logo
এই মুহূর্তে ::
কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বাংলার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র এবং প্রযোজনায় ম্যাডান থিয়েটারের ইতিহাস : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৮৩৮ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৪

আজ থেকে ৯৩ বছর আগে আজকের দিনেই মুক্তি পেয়েছিলো বাংলার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাইষষ্ঠী’। ১৯৩১ সালে ১১ই এপ্রিল ক্রাউন সিনেমা হলে প্রথম কলকাতায় নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্যের সবাক বাংলা ছবি দেখানো হয়। অমর চৌধুরী পরিচালিত ম্যাডান থিয়েটার কোম্পানির প্রযোজনায় সৃষ্টি হয় বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক যুগান্তকারী স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমা। পারিবারিক দম ফাটা নিখাদ হাসির ছবিটি জুড়ে রয়েছিলো খাঁটি বাঙালিয়ানার প্রতিচ্ছবি।

চলচ্চিত্রটি সুদখোর ও হাড়কিপ্টে শ্বশুর মশাই ‘কুবের’ এর মজার কাণ্ডকারখানা নিয়ে। কুবের এতটাই কিপটে ছিল যে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ হাল ছিল সংসারের।সহধর্মিণী ইন্দ্রাণীকে সর্বদাই মুখ ঝামটা দিতেন যাতে না তিনি কিছু চাইতে পারেন স্বামীর কাছ থেকে। কুবেরের বিবাহিত কন্যার নাম ছিল সরোজ।জামাই শ্রীধর ছিল অতি নিরীহ, শান্ত ও ভদ্র। এক জামাইষষ্ঠীর দিন তাদের সংসারে ঘটে গেল এক মজার কান্ড। কিপটে শ্বশুর জামাইষষ্ঠীর মতো একটা অনুষ্ঠানে উটকো খরচা করবেন না বলে, নিজের অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে জামাইষষ্ঠীর দিন একরকম জোর করেই জামাইকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। এরপর… জানতে দেখতে হবে পুরো সিনেমাটি।

জামাইষষ্ঠী ছবির নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক ছিলেন অমর চৌধুরী। এই সিনেমায় তিনি নিজেও অভিনয় করেছিলেন এছাড়া মিস গোয়েলা, ক্ষীররোদাগোপাল মুখার্জি, রানিসুন্দরী প্রমুখ ছিলেন। সংগীত পরিচালনা করেন ক্ষীরোদগোপাল মুখার্জি।

জামাইষষ্ঠী ছবিটির নির্মাতা ছিলো ম্যাডান থিয়েটার। কোম্পানিটি কলকাতার হলেও সারা ভারত জুড়ে তারা দীর্ঘদিন ফ্লিমের ব্যবসা করে গিয়েছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এদের বিশাল অবদানের কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। ম্যাডন থিয়েটারের প্রাণপুরুষ ছিলেন জামশেদজি ফ্রামজি ম্যাডান। অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে তিনি জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।অসাধারণ ব্যাবসায়িক এবং সাংগঠনিক বুদ্ধিবলে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বায়োস্কোপ জগতে প্রবাদপুরুষে পরিণত হন।

বম্বে রিক্ল্যামেশন ব্যাঙ্কের পতনের কারণে ম্যাডানের পিতার অনেক টাকার ক্ষতি হয়। এই ব্যাঙ্কের দায়িত্ব ছিল বম্বের সাতটি দ্বীপের জমি উদ্ধার করা। এহেন পরিস্থতিতে জামশেদজি স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন; তারপর তিনি ১৮৬৮ সালে ‘এলফিনস্টোন ড্রামাটিক ক্লাব’-এর থিয়েটারে ‘prop boy’-এর কাজ নেন। ১৮৭৫ সালের মধ্যে এই অপেশাদার ক্লাব একটি পেশাদার থিয়েটার কোম্পানীতে পরিণত হয় এবং সারা ভারত জুড়ে এদের থিয়েটার মঞ্চস্থ হতে শুরু করে।

১৮৮২ সালে থিয়েটার কোম্পানীর কাজ ছেড়ে দিয়ে, ম্যাডান করাচী শহরে ছোটোখাটো ব্যবসা শুরু করেন আর তাতে সাফল্যও অর্জন করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। সেখানে সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে নানান দ্রব্য জোগান দেওয়ার ব্যবসা শুরু করেন। এই ব্যবসায় সাফল্য পেয়ে তিনি কলকাতায় করিন্থিয়ান হল নামক এক থিয়েটার মঞ্চ কিনে ফেলেন। এখান থেকেই তার কর্মজীবনের শুরু। এরপর তিনি ‘এলফিনস্টোন থিয়েটার কোম্পানী নামে একটি স্থায়ী চিত্ৰগৃহ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি তিনি কেনেন কুভার্জি নাজিরএর থেকে, যাঁকে ভারতীয় থিয়েটার জগতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয়।

করিন্থিয়ান হলের নতুন নামকরণ হয় করিন্থিয়ান থিয়েটার আর সেখানে তখনকার জনপ্রিয় পার্সি থিয়েটার মঞ্চস্থ হতে থাকে। এই থিয়েটার অনেক জাঁকজমকপূর্ণ হত আর এতে অভিনয় করতে আসতেন মহিলা অভিনেত্রীরাও, যা তখনকার সময়ে ছিলো বিরল।

১৯০২ সালে, কলকাতার ময়দানে তাঁবু খাটিয়ে তিনি বায়স্কোপ শো দেখানো শুরু করেন। একইসঙ্গে করিন্থিয়ান থিয়েটারেও একইরকম শো শুরু করেন। বিলেতের প্যাথে কোম্পানির রেখে যাওয়া যন্ত্রপাতি কিনে আনা হয়েছিল এসব শোয়ের জন্য। এইসব বায়োস্কোপ শোয়ে ‘প্যাথে প্রোডাকশনস’ কোম্পানীর নির্মিত ছবিই দেখানো হত। এইসব বায়োস্কোপ শোয়ের আয়োজন করা হয়েছিল এলফিনস্টোন বায়োস্কোপ কোম্পানীর নামে। এই কোম্পানীর তত্ত্বাবধানে অনেক স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিও তৈরি হয়।

একই বছরে আলফ্রেড থিয়েটার কিনে সেখানেও ম্যাডান বায়োস্কোপ শো শুরু করেন।

১৯০৭ সালে তিনি কলকাতার প্রথম স্থায়ী শো হাউস প্রতিষ্ঠা করেন ‘এলফিনস্টোন পিক্‌চার প্যালেস’, যা আজকাল ‘চ্যাপলিন সিনেমা’ নামে পরিচিত। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাডন থিয়েটার এবং ‘প্যালেস অফ্‌ ভ্যারাইটিস’ (যা আজকাল ‘এলিট সিনেমা’ নামে পরিচিত)।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তার ব্যবসায় প্রভূত উন্নতি হয়। ১৯১৯ সালে, চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যবসায়ে তিনি ‘ম্যাডান থিয়েটার্স লিমিটেড’ নামে একটি যৌথ উদ্যোগ কোম্পানী স্থাপন করেন। এই কোম্পানী আর এর সহযোগী কোম্পানীগুলির তখনকার ভারতীয় থিয়েটার হাউসগুলির ওপর অনেক প্রতিপত্তি ছিল। ১৯১৯ সালে ম্যাডানের প্রযোজনায় তৈরি হয় বিল্বমঙ্গল প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র। এ ছবির প্রথম প্রদর্শন হয় ‘কর্ণওয়ালিস থিয়েটার’-এ, যা আজকাল ‘শ্রী সিনেমা’ নামে পরিচিত।

‘দি ইলেক্ট্রিক ধিয়েটার’ (এখনকার ‘রিগ্যাল সিনেমা’), ‘গ্র্যান্ড অপেরা হাউস’ (এখনকার ‘গ্লোব সিনেমা’) আর ‘ক্রাউন সিনেমা’ (এখনকার ‘উত্তরা সিনেমা’)—এসবই ছিল ম্যাডান থিয়েটার্সের অধীনে।

ম্যাডানের তৈরি চলচ্চিত্রে উচ্চমানের কারিগরী দক্ষতার পরিচয় থাকত। বিদেশ থেকে ম্যাডান ইউজেনিও দে লিগুরো, ক্যামিল লে গ্রাঁদ আর জর্জিও ম্যানিনির মত অভিজ্ঞ পরিচালকদের আমন্ত্রণ করে এনে তাঁর ছবির পরিচালনার কাজে নিযুক্ত করেন। এঁদের অভিজ্ঞতার সাথে বিশাল বিশাল ‘সেট’-এর ব্যবহার আর জনপ্রিয় পৌরাণিক কাহিনীর গল্প—এসব উপাদান ম্যাডানকে ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দেয়। এর ওপর তার অনেক চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল সেই সময়কার জনপ্রিয় থিয়েটারের অনুসরণে। লিগুরো পরিচালনা করেছিলেন নল দময়ন্তী (১৯২০) আর ধ্রুব চরিত্র (১৯২১); লে গ্রাঁদ পরিচালনা করেছিলেন রত্নাবলী (১৯২২) আর ম্যানিনি পরিচালনা করেছিলেন সাবিত্রী সত্যবান (১৯২৩). সেই সময়ের জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেত্রী পেশেন্স কুপার ম্যাডান থিয়েটার্স প্রযোজিত বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

ম্যাডান বাংলা সাহিত্যের দিকপাল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানান রচনাসৃষ্টির চলচ্চিত্র সত্ত্ব সংগ্রহ করার প্রচেষ্টা চালান। ম্যাডান থিয়েটারের প্রযোজনায় বঙ্কিমচন্দ্রের রচনার ওপর ভিত্তি করে বিষবৃক্ষ (১৯২২ আর ১৯২৮), দুর্গেশনন্দিনী (১৯২৭) আর রাধারাণী (১৯৩০) ছবিগুলি তৈরি হয়। রবীন্দ্রনাথের রচনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় গিরিবালা (১৯২৯)।

এরপর একে একে আরো কয়েকটি ফিল্ম নির্মাতা সংস্থা এসে গেল ম্যাডানের নির্মাণ দৌড়ে। কিন্তু তাতে কোন খামতি আসেনি। নির্বাক যুগে বাংলায় যে ১২২টি ছবি তৈরি হয়েছিল তার মধ্যে ৬২টি টি ছিল ম্যাডানের তৈরি। ইতিমধ্যে ম্যাডান থিয়েটারের প্রাণপুরুষ জে এফ ম্যাডান ১৯২৩ সালে মারা যান। তাই বলে কিন্তু তার কর্মধারা বন্ধ হয়ে যায়নি তার সুযোগ্য বংশধরেরা ম্যাডানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

১৯৩১ সালে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে মুন্নি ভাইয়ের গানের মাধ্যমে বাংলা ফিল্মে শব্দের প্রবেশ ঘটে। এরপর এই বছরেই ১১ই এপ্রিল বাংলার প্রথম সব ছবি জামাইষষ্ঠী এসে গিয়েছিল। নতুন প্রযুক্তির সামনে পড়ে নির্বাক ছবির যুগের যে অবসান ঘটবে সেটাই তো স্বাভাবিক। বাংলার শেষ নির্বাক ছবিটি ছিল ‘নিয়তি’, ছবির পরিচালক ছিলেন যোগেশ চৌধুরী (১৯৩৪)। এরপর আর বাংলায় নির্বাক ছবি তৈরি হয়নি।।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন