মঙ্গলবার | ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৪৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী সরস্বতীর বীণা কচ্ছপী ও গজকচ্ছপ বাঙালি বুদ্ধিজীবী : অসিত দাস মহাকুম্ভ উপলক্ষে এবার যে জনপ্লাবন দেখা যাচ্ছে, তা এককথায় অভূতপূর্ব : অসিত দাস মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘আখের রস’ নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সরস্বতী দিদিমণি’ মহাকুম্ভ থেকে মহাদুর্ঘটনা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা খুঁজছে মাটির নিরাপত্তা : রিঙ্কি সামন্ত জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

গুড়কথা — শীত যত জাঁকিয়ে পড়বে, খেজুর গাছে রস নামবে : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৬৬০ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে ওরা। কুয়াশার চাদরে তখনো মুড়ি দিয়ে থাকে অযোধ্যা পাহাড়ের সারি, পথঘাট, গাছপালা। বিনয়, বাবলু, প্রদীপ, পবন, রাজকুমারের হাতে একটা করে স্টীলের বাটি বা গেলাস। দশবছরের অম্বিকা সোরেনের কোলে দু-বছরের বোন রাণী। অঞ্জলি মূর্মুর হাত ধরে থাকে তার ভাই শান্তু। গ্রামের ধারের ফাঁকা জমিতে, মাটির উনুনে তখন কাটকুটোর আগুনের ধোঁওয়া। তাতে ফুটছে অমৃতের মত খেজুর রস। সুগন্ধে ম ম করছে চারদিক। আর কি ঘরে থাকা যায়?

খেজুরপাতার ছাউনি দেওয়া মহলে রাখা রয়েছে সারি সারি গুড়ের নাগরি। নঈমুদ্দিন সবার গেলাসে-বাটিতে একহাতা করে ঢেলে দিল আগের দিনে করা নলেন গুড়। ছোট্ট ছাগলছানাটিও বাদ গেল না। সে অবশ্য মাটিতে ফেলা গুড়ের গাদ খেয়েই খুশি।

শীত যত জাঁকিয়ে পড়বে, খেজুর গাছে রস নামবে। সেই রসের জ্বালের গন্ধে গোটা গ্রাম জেগে উঠবে। ধুলোমাখা পায়ে পায়ে বাঘমুন্ডির বাচ্চারা একমহল থেকে একমহল ঘুরে ঘুরে ঐ অমৃতরস খেয়ে পেট ভরাবে।

সে রস বা গুড়ের এমনি মহিমা, একটা গোটা অঞ্চল নামাঙ্কিত হয়ে যাবে গৌড় (গুড় থেকেই বাংলার নাম একসময় গৌড়দেশ বলে পরিচিত ছিল)।

ভবাপাগলা গান বাঁধবে —

“সুজন গাছে বাঁধলে হাঁড়ি

মিলবে তবে আসল চিনি

রসিক বুঝে রসের মর্ম

অরসিক বুঝে না তার আস্বাদন

খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন।”

তা এ হেন গুড়ের গুণ না গেয়ে যাই কোথায়? গুড় নিয়ে এত পিঠে, পায়েস, মিষ্টি, আইসক্রিম! বাংলাভাষার শব্দ, সাহিত্য, প্রবাদ, গান গুড়ের রসে একেবারে টইটম্বুর। যদিও ভালো গুড়, বিশেষতঃ খেজুর গুড়ের স্বাদ তেমন আর পাওয়া যায় না। আবহাওয়া পরিবর্তন থেকে শুরু করে আর্থসামাজিক বিভিন্ন কারণ ভালো গুড়ের আকাল তৈরি করেছে।

গুড়ের গল্পেরও কি শেষ আছে?

ঝোলা গুড় আর কাঁচা মূলোর ফিউসন ফুড কখনো খেয়েছেন? খাননি, হলফ করে বলতে পারি। তবে কবি, সাহিত্যিক তারাপদ রায় এই অদ্ভুত খাবারটি খাইয়েছিলেন তার এক সাহেব বন্ধুকে। সেদিন তাঁর বাড়িতে গৃহিণী নেই। ফ্রিজে বা ফ্রিজের বাইরে চটজলদি খাবারদাবারও তেমন মজুদ নেই। হঠাৎই এই বিদেশী অতিথির আগমন। কি করা যায়? ফ্রীজে রাখা ঝোলাগুড় আর মূলোতে চোখে পড়ল তাঁর। মূলো কুচিয়ে গুড় দিয়ে বন্ধুকে পরিবেশন করলেন Radish with molasses. সাহেব সে বস্তু আস্বাদন করে তো একেবারে উচ্ছ্বসিত! তারপর থেকে যখনই ফোন করেন তখনই এই নতুন পদটির প্রশংসা করতে ভোলেন না।

আমার আট মাসের নাতনীর জন্যে ডাক্তার বলেছেন, চিনির বদলে পাম জ্যাগারি খাওয়ান। আমার ছোটোবেলার তালমিছরি মনে পড়ল। অতি উৎসাহে অনলাইনে খুঁজেপেতে যা বাড়িতে এলো, সে তো তালপাটালি নয়। তার তো দুধের মত সাদা বর্ণ। ছোটোপিসিমা মেদিনীপুর থেকে আনতেন। এ গুড়ের একটু তিতকুটে ভাব, ডার্কচকলেটের মত স্বাদ আর রঙ।

মনে আছে, ছোটবেলায় মাথায় ঝুড়ি বা কাঁধে বাঁক নিয়ে চৌখুপি লুঙ্গি পরা, থুতনিতে দাড়িওয়ালা চাচাজানেরা খেজুরগুড়, পাটালি বিক্রি করতে আসতেন পাড়ায় পাড়ায়। দোখনে ভাষায় তাঁরা বলতেন মা নক্‌খী, এবারে গুড় আনছি সোনার বরণ। তুমি রসগুল্লা ফাইল্যা এ গুড় খাইব্যা। স্বাদ চাখা, বিস্তর দরাদরির পর মা কখনো গুড়ের নাগরী বা পাটালী কিনতেন। কখনো কখনো ঠকতেনও। মাটির হাঁড়ির ওপরের দিকে ভালো গুড় রাখা থাকত, ভেতরে ভেজাল। গুড়ের স্বাদ ভালো হলে বাবা একটা রুটি বেশি খেতেন। আর গুড় খারাপ হলে?

“কালে কালে গুড়েরও তার গেল” বলে আক্ষেপ আর গুড়ওলার মুন্ডুপাত!

যবে থেকে উত্তরপাড়ায় এসেছি, মাছির মত ভালো খেজুর-পাটালির সন্ধানে আমিও থাকি, পাইনা। এক গুড়ওয়ালা তো বিরক্ত হয়ে বলেই দিলে, “আপনি বরং খেজুর গাছের তলায় হত্যে দিয়ে পড়ে থাকুন। তবে যদি আপনার মনের মত গুড় পান”। কি করব! গুড়ের প্রতি ভালোবাসায় সে অপমান হজম করলাম।

তবে ইদানীংকালে সবথেকে ভালো গুড় খেয়েছি বিলাসপুরে। বছর কয়েক আগে। সেখানে আমার স্বল্পবাস কালে আমি প্রায়শই রেলকলোনীর বাজারে চলে যেতাম। রেলকলোনীতে বাঙালীদের রমরমা। সেই বাজারে বাপী কচুশাক, কচুর লতি, মোচা রাখত। খোকা কোলকাতা থেকে আনাত মুখরোচক চানাচুর, মাচার পটল মায় শাঁখা-সিঁদূর-আলতা। এদেরই কাউকে শীতকালে খেজুর পাটালী কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, কোলকাতার চালানী পাথর গুড় নেবেন না লোকাল আসল পাটালী। আমি স্বভাবতই আশ্চর্য হয়েছিলাম। ছত্তীশগঢ়ীরা পাটালীগুড় বানাতে কবে শিখল? এরা নিজেরা নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারিক প্রয়োগ এখনো বিশেষ জানে না। পথ আলো করে এখানে বসন্তে শিমূল ফোটে। সে ফুল শুকোলে হাওয়ায় উড়ে বেড়ায় নরম রেশমের মত তুলো। অথচ বাজারে শিমূল তুলোর বালিশ আসে বিহার বা পশ্চিম বাংলা থেকে। তাই গুড় কারা বানাল এখানে? দোকানী ভুল ভাঙালো। আজকাল নাকি ছত্তীশগঢ়ে গুড় বানাচ্ছে দণ্ডকারণ্যের বাঙালী শরণার্থীরা। সেখানে খেজুর গাছ পুঁতে রীতিমতো ব্যবসা শুরু করেছে তারা। আমি চমৎকৃত হলাম। দাম বেশি হলেও সে পাটালি স্বাদেগন্ধে অনন্য ছিল।

আমি ভাবতে লাগলাম অন্য কথা। কে না জানে, পৃথিবীর ইতিহাসে শরণার্থীরা যুগে যুগে এমন অনেক অসাধ্য সাধন করে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে!


আপনার মতামত লিখুন :

3 responses to “গুড়কথা — শীত যত জাঁকিয়ে পড়বে, খেজুর গাছে রস নামবে : নন্দিনী অধিকারী”

  1. Jaya Dey says:

    কত কীইইই যে পেলাম এ লেখায়…!!
    বিভূতিভূষণ আমার প্রিয় লেখক… আপনার লেখায় তিনি মাঝে মাঝেই এসে উঁকি দিয়ে যান। আপনার মাধুর্যে ভরা, তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধে প্রকৃতিপ্রেম ও লেখনীর অনন্যতার সাথে, সেই উঁকিঝুকি নেশার মত টেনে ধরে রাখে আমায়… খুউব ভাল লাগলো..!!!!!

  2. Nandini Adhikari says:

    ধন্য আমি তোমার এ প্রশংসায় ♥️

  3. Chandana Pal says:

    কি ভাল যে লাগল পড়ে । তোর লেখা মনের আরাম । জয়া দে বসু একেবারে যথার্থ বলেছেন । এই তথ্যসমৃদ্ধ লেখা গুলি তে তুই অনন্য । সত্যি ই বড লেখক দের মনে করিয়ে দেয় । ভাল থাকিস । ❤️❤️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন