“গলদা চিংড়ি তিংড়িমিংড়ি, লম্বা দাঁড়ার করতাল”…
বাঙালির অন্যতম প্রিয় পদ চিংড়ি। যে মাছ সামান্য রাঁধুনিকে রন্ধনশিল্পী বানিয়ে দেয় রাতারাতি, সে একমাত্র চিংড়ি। যে কোনো নিরামিষ তরকারিতে যদি চিংড়ি মেশানো হয়, তবে রান্নার স্বাদ এক্কেবারে পাল্টে যাবে শুধু নয় মন জয় করে নেবে ভোজনরসিকের। এ ব্যাপারে সবচেয়ে জনপ্রিয় গোপাল ভাঁড়। নদিয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র দেবের বিধবা পিসির তৈরি নিরামিষ লাউয়ের তরকারিতে চিংড়ি মাছ মিশিয়ে প্রচুর উপহার পেয়েছিলেন ভাঁড় মহাশয়।
গরীব থেকে বড়লোক হয়েছে বোঝানোর জন্য চিংড়ির ভূমিকা অসামান্য। সামান্য কচুর লতি, নারকেল-সর্ষে বাটাকে সমাজে মিনিংফুল করে তুললো কে— চিংড়ি।
এবার শুধু ডিশে নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো পোজ দিয়ে ছবি তুলে চক্ষুছানাবড়া করিয়ে সমুদ্রে ফিরে গেল নীল লবস্টার। সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে জালে ধরা দিলো নীল গলদা চিংড়ি। ঘন নীল চেহারা দেখলে মনে হয়, প্রকৃতিদেবী যেন তার তুলি দিয়ে উপচে পড়া নীল রঙে ভরিয়ে দিয়েছেন।
ইউনিভার্সিটি অফ মেইন লবস্টার ইনস্টিটিউটের মতে, — জিনগত কারণেই এমন উজ্জ্বল রঙের হয় এই চিংড়ির। একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের প্রাচুর্যের কারণেএই নীল রঙ। যদিও ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে যে, প্রতি দুই মিলিয়নের জন্য শুধুমাত্র একটি নীল গলদা চিংড়ির অস্তিত্ব রয়েছে, গবেষণা পরিচালক ডা. রবার্ট বেয়ার স্বীকার করেছেন যে পরিসংখ্যানটি শুধুমাত্র একটি অনুমান। তার মতে, — “এটি ঘটার সম্ভাবনা সত্যিই কেউ জানে না”।
তবে, বিরল রঙের হলেও বিষাক্ত নয় এই চিংড়ি। পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য চিংড়ি মাছের মতো। সাধারণত, উত্তর আমেরিকার আটলান্টিক উপকূল থেকে ধরা গলদা চিংড়ি একটি অপ্রাকৃত সবুজ-বাদামী রঙ হতে থাকে। সেদ্ধ হয়ে গেলে এগুলি কমলা-গোলাপী হয়ে যায়।
গত বছর ‘ক্যাপ্টেন জো এন্ড সন্স লবস্টার কোম্পানি’ এর হয়ে কাজ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে এক মৎস্যজীবী টোবির জালে ধরা পড়ে এই ব্লু লবস্টার। ফটোগ্রাফি করে সেটিকে সমুদ্রেই ছেড়ে দেয় টোবি। এর আগে আগস্ট ২০১৬ তে ওয়েন নিকারসন, ম্যাসাচুসেটসের একজন বাণিজ্যিক লবস্টারম্যান, কেপ কডের উপকূলে একটি দুই পাউন্ডের বিরল নীল গলদা চিংড়ি ধরেছিলেন। ১৯৯০ সালেও তিনি ব্লু লবস্টার ধরেন।
মাছ ধরার লোককাহিনী অনুসারে, নোভা স্কটিয়ার উপকূলে নীল গলদা চিংড়ি ধরা যে দুই জেলের সৌভাগ্যের প্রতীক।
চিংড়ি কে যতই জলের পোকা বলা হোক না কেন, মেতি থেকে চাপড়া হয়ে বাগদা হয়ে গলদা, সব আকারেই চিংড়ি রসনায় তৃপ্তি বহন করে। শুধু স্বাদে নয়, বহু রোগের চিকিৎসায় উপযুক্ত এটি। চিংড়িতে উপস্থিত ম্যাগনেশিয়াম দেহকে টাইপ-২ ডায়বেটিসের হাত থেকে রক্ষা করে। বিপুল সংখ্যক ভিটামিন এবং খনিজ এবং কম গ্লাইসেমিক সূচক থাকার কারণে চিকিৎসকগণ ডায়াবেটিসের জন্য চিংড়ি খাওয়ার পরামর্শ দেন। চিংড়িতে থাকা সেলেনিয়াম ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে উপস্থিত ফসফরাস হাড় ক্ষয় রোধ করে। অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলে হবু মা বা স্তনপান করান মহিলাদের জন্য চিংড়ি খুব উপকারী।
তবে চিংড়ি আকার যত বড়ো হবে, স্বাভাবিক ভাবে তাতে ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়বে। তাই হার্টের বিশেষ কোন সমস্যা থাকলে এটি না খাওয়াই ভালো। কিন্তু মাটন, বিফ, ল্যাম্বের চেয়ে কম ক্ষতিকারক।
চিংড়ি রান্না করার সময় বাড়তি তেল মোটেও চলবে না কারণ এর মধ্যেই উচ্চমাত্রার ফ্যাটিঅ্যাসিড থাকে। তাই সর্ষে-নারকেল চিংড়ি ডিশ বেশি খাওয়া যাবে না।
নিউট্রিশনিস্টদের মতে বড়ো আকারের চিংড়ি সুস্থ মানুষের জন্য মাসে দু-তিনদিন। ছোট বা কুচো চিংড়ি হলে মাঝে মধ্যেই তরকারি করে খাওয়া যায়, তবে তা নিত্য নয়। আর আপনি যদি চিংড়িপ্রেমী হন, অবশ্যই মাঝে মধ্যে কোলেস্টেরল মেপে নিন।
চিংড়ির মালাইকারি, বাটা, ভাপা বা যে কোন ডিশই ভোজনরসিক বাঙালির বড়ো প্রিয়। বাঙালিনীর হেঁসেলে সারাবছরের সঙ্গী এই মাছ। শুধু কোথায় কতটা রাশ টানবেন, সেটুকু হিসেবে রাখলেই কোলেস্টেরলের কোঠায় তালা মেরে সুস্থতার পথে আজীবন হাঁটবেন আপনি।
Source : Various articles and journals have been referred for the Writeup.
Chingri joler poka…
চিংড়ি মাছ অসামান্য প্রতিবেদনে আরও সুস্বাদু মুখখরোচক হয়ে ধরা দিলো পেজ ফোরের পেজে
হামেশাই আপনারা মুগ্ধ ঋদ্ধ করেন তথ্যবহুল
রিপোর্ট’র মাধ্যমে।আজ আবার খাবার খবর হয়ে
ধরা দিলো *নীল চিংড়ি” রূপে* ভীষণ ভালোলাগা
ধন্যবাদ ম্যাডামজী*
খুবই সুন্দর স্বাদ। মালাইকারির জবাব নাই।
খুব সুস্বাদু রচনা, নীল চিংড়ি দর্শন, তথ্য সমৃদ্ধ, পরিতৃপ্ত হোলাম।