পরিবেশ দূষণ কমানোর ব্যাপারে কেন বিশেষজ্ঞ কিংবা নজরদার সংস্থাগুলি সরকারের কাছে আবেদন জানান এবং কেনই বা তারা বাধ্য ছাত্রের মত সেসব মেনে চলার মত প্রতিশ্রুতি দেন তা সত্যিই বোঝা কঠিন! আমরা দেখছি সবচেয়ে বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী দেশগুলি পরিবেশ বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞদের কোন নিষেধাজ্ঞাই মানেনা। সেকারণে তাদের বিরুদ্ধে বিরাট কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাও নয়। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। এ যেন এক রুটিন হুঁশিয়ারি! তাতে বিষয়টির গুরুত্ব কমে যায়। এই যে ইউনাইটেড নেশনস এনভায়র্নমেন্ট প্রোগ্রাম জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন, কটা দেশ তা মানলো? কারণ বহু দেশই বুঝে গেছে কোন নিয়ম না মেনেও পরিবেশ সংরক্ষণের বাণী বিতরণ করা যায়। আমরা দেখছি ইউএনইপি নিষেধাজ্ঞার পর অভিযুক্ত রাষ্ট্রগুলি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ করেছে। বিশ্বের তাপমান বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার ব্যাপারে কোন উদ্যোগই নিচ্ছে না তারা।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সবচেয়ে কম করতে হবে কয়লার ব্যবহার। অথচ বহু দেশের সরকার যা পরিকল্পনা করছে তাতে ২০৩০ এর মধ্যে কয়লার ব্যবহার কম করার বদলে ২৪০ শতাংশ বাড়বে। খনিজ তেলের ব্যবহার বাড়বে আরও ৫৭ শতাংশ বেশি। গ্যাসের ব্যবহার বাড়বে ৭১ শতাংশ। এতে হতাশ হয়ে কেউ বলতেই পারেন, তাহলে এত ঘটা করে এই ধরণের ঘোষণায় লাভ কি হল?
তবে হতাশ হলে আমাদের চলবে না। এটা পরিবেশ ও মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। যেমন কার্বন দূষণ ও মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কম করার জন্য সিডিআর প্রযুক্তি না ব্যবহার করা গেলে পরবর্তীকালে সঙ্কট আরও বাড়বে। দিনের পর দিন এই সঙ্কট আরও তীব্র হবে, তখন আগের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা আর কাজ করবে না। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হল, এই অবস্থাতেও সবচেয়ে বেশি দূষণ সৃষ্টিকারী অধিকাংশই বড় দেশই ২০৩০ এবং তারও পরবর্তী সময়ে এমন পরিকল্পনা নিয়েছে যাতে কার্বন ও মিথেন নিঃসরণ আরও বাড়বে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে ক্লিন এনার্জির ব্যবহার আরও বাড়াতে বলছেন। কিন্তু বিশ্বের ২০টি রাষ্ট্রের যে গোষ্ঠীটি জীবাশ্ম জ্বালানি ক্ষেত্রে ৩০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল তারা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে কাজকারবার! তাদের বিরুদ্ধে জোরদার ব্যবস্থা নেওয়ার মত কোন কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না। আমাদের সময় বড় কম, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতেই হবে। এক্ষেত্রে সামান্য বিচ্যুতিও পরবর্তী প্রজন্মকে মারাত্মক বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে। মানুষের তৈরি করা এই সঙ্কট রুখতে হবে মানুষকেই। আগামি নভেম্বরে গ্লাসগোতে এব্যাপারে সমাধান সূত্র খোঁজার জন্য রাষ্ট্রসংঘ যে বৈঠক ডেকেছে আশাবাদীরা এখন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।