শুক্রবার | ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:১৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
ফলের নামটি পাকা কলা : রিঙ্কি সামন্ত বই-বাই : নবনীতা দেব সেন হেমচন্দ্র বাগচীর ১২০তম জন্মবর্ষ : দীপাঞ্জন দে নিম্ন চাপের অতিবৃষ্টি ও ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত আরামবাগ : দেবাশিস শেঠ আরামবাগে ভয়াবহ বন্যা, দুর্যোগের পদধ্বনি, ক্ষোভ জনমানসে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন মেয়েদের ক্ষমতায়নের পক্ষেও আওয়াজ তুলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী কবি দেবদাস আচার্য-র কবিতাজগৎ — বহমান পৃথিবীর জীবনপ্রবাহ, চেতনাপ্রবাহ : অমৃতাভ দে মনসার নাম কেন ঢেলাফেলা : অসিত দাস ভোও.. ও ..ও.. কাট্টা…! ভো… কাট্টা…! : বিজয় চৌধুরী দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা : সন্দীপন বিশ্বাস নারীবেশী পুরুষ অভিনেতা শঙ্করকে সামাজিক ট্যাবুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় না : বিশ্বেন্দু নন্দ সাসারামের রোহতাসগড়, বৃহতের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ : নন্দিনী অধিকারী জমিদার রবীন্দ্রনাথ : আহমাদ ইশতিয়াক আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর, এবারও অধরা রইলো আলোচনা : সুমিত ভট্টাচার্য জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব চাষির দুঃখের ঘরে সাপের বাসা, আজও রেহাই নেই ছোবলের হাত থেকে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সল্টলেক তথা লবণহ্রদই কি কুচিনান : অসিত দাস পদ্মা বা পার্শ্বপরিবর্তনী একাদশী ব্রতকথা : রিঙ্কি সামন্ত জয়া মিত্র-র ছোটগল্প ‘ছক ভাঙার ছক’ কত দিন বিনা চিকিৎসায় চলে যাবে অসুস্থ মানুষের প্রাণ? প্রশ্ন দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের : সুমিত ভট্টাচার্য দেবী করন্দেশ্বরীর পূজো ঘিরে উৎসবের আমেজ মন্তেশ্বরের করন্দা : প্রবীর কুমার সামন্ত প্রেতবৈঠকে (প্ল্যানচেট) আত্মার আগমন : দিলীপ মজুমদার সংগীত সাধক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য : রিঙ্কি সামন্ত শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্যের অন্দরে বাহিরে বিরাজমান সিণ্ডিকেট : তপন মল্লিক চৌধুরী কবিতা সিংহ-এর ছোটগল্প ‘পশ্চিম রণাঙ্গন আজ শান্ত’ কলকাতার আর্মেনিয়ান জনগোষ্ঠী : অসিত দাস মঙ্গলবারের মধ্যে কাজে ফিরুন — সুপ্রিম ধমক, উৎসবে ফিরুন — মমতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (পঞ্চম পর্ব) : বিজয়া দেব বিবিসির ইয়ংগেস্ট হেডমাস্টার বাবর আলী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত হাঁসের ডিমের উৎপাদন বাড়াতে এগিয়ে এল রাজ্যের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ কৌশিকী অমাবস্যার-র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বর্ণান্ধতা ছিল কিশোর রবীন্দ্রনাথের খেলাধূলার অন্তরায় : অসিত দাস

অসিত দাস / ২৭২ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন আংশিক বর্ণান্ধ। লাল রংকে সবুজ দেখতেন। তাই রংনির্ভর খেলাধুলোয় অংশ নিতে ইতস্তত করতেন। পারতপক্ষে অংশ নিতেন না কোনও খেলায়।

জীবনস্মৃতিতে কবিগুরু লিখেছেন, “তাসখেলায় আমার কোনোদিন মন যায় নাই।” রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর বাড়ির অন্দরমহলে তাঁর মাকে ‘খুড়ীর সঙ্গে’ তাস খেলতে দেখতেন। তাস খেলতে দেখতেন বাড়ির অন্যান্য মহিলাদেরও। কিন্তু নিজে তিনি তাস খেলার প্রতি কোনও আকর্ষণ বোধ করেননি। ভাইঝি ইন্দিরা দেবীর স্মৃতিকথায় আছে, “যতদূর মনে পড়ে, রবিকাকাকে কখনো কোনো সাধারণ খেলায় অংশ নিতে দেখিনি।”

মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িতে থাকার সময় তিনি ‘ব্রীজ’ খেলবেন কথা দিয়েও সুকৌশলে শেষ পর্যন্ত এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তিনি নাকি বিলেতে ‘ন্যাপ’ নামে একটি পয়সা-দেওয়া তাস খেলা শিখেছিলেন, জেনেছিলেন অনুরূপ আর একটি খেলার নিয়মও। কিন্তু মৈত্রেয়ী দেবী সেগুলির ডিটেল গুরুদেবের কাছ থেকে আদায় করতে পারেননি।

‘গ্রাবু’ নামে একটি তাসখেলার নাম তাঁর বিভিন্ন লেখায় পাওয়া যায়, ‘প্রমারা’ নামে পয়সার তাসও সে সময় প্রচলিত ছিল। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন বাড়ির বউঝিরাও খেলত। কবিগুরুকে সেসব কখনও খেলতে দেখা যায়নি।

আসলে তাসের হরতন, রুইতন, ইস্কাপন, টেক্কার রঙ কবি বুঝতে পারতেন না, রঙ গুলিয়ে যেত তাঁর বর্ণান্ধতার জন্যে। তাই বিভিন্ন অছিলায় তিনি তাসখেলার আসর থেকে সরে যেতেন।

টেনিস অবশ্য খেলেছেন তিনি ইংরেজ বন্ধুবান্ধবদের সাথে। টেনিস বলের রঙ সাদা বলে তেমন কোনও বিপত্তিতে পড়েননি। তবে একবার স্লিপ করে পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছিলেন বলে প্রিয় এক বন্ধুকে চিঠিতে জানিয়েছিলেন।

শান্তিনিকেতনে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করেছিলেন রেবাচাঁদ নামে এক শিক্ষক। ইনি ছিলেন শান্তিনিকেতনের প্রথমদিকের আশ্রমিক, জাতে খ্রিস্টান। কিন্তু কবিগুরু লাল ডিউসের ক্রিকেট সেভাবে খেলেননি। লাল রঙটাই তিনি দেখতেন না যে! সবুজ দেখতেন। সবুজ মাঠে সবুজ বলে বাউন্ডারি! ফিল্ডার রবীন্দ্রনাথের কাছে দুঃস্বপ্ন! তবে মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ যখন বালিগঞ্জের স্টোর রোডে থাকতেন তখন কয়েকদিনের জন্যে ক্রিকেট খেলেছিলেন সেখানে বলে জানা যায়।

রবীন্দ্রনাথ কিঞ্চিৎ ক্রিকেট খেলেছিলেন বটে, তবে তিনি ঠিক কোন সময়ে ক্রিকেট খেলেছিলেন, তা নিয়ে পরিষ্কাভাবে কিছু বলা নেই কোথাও। তবে ক্রিকেট বিষয়ে গবেষকলেখক শঙ্করীপ্রসাদ বসু (যিনি বিবেকানন্দ বিশেষজ্ঞও বটেন) তাঁর ‘সারাদিনের খেলা’ বইয়ে জনৈক জগদীশচন্দ্র রায়ের আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা একটি চিঠির উল্লেখ করেছেন, যাতে কবির ক্রিকেট খেলার সরাসরি উল্লেখ আছে।

এই প্রসঙ্গে বলে নেওয়া যাক কবির মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই সি এস। তিনি ৩২ বছর অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ইংরেজের অধীনে চাকরি করেন। কিন্তু নেটিভ ইন্ডিয়ানদের তখন হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রমোশন দেওয়া হত না। সত্যেন্দ্রনাথও এই নিয়মের ব্যতিক্রম নন। তাই ১৮৯৭ সালে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। বালিগঞ্জের ১ নং রেইনি পার্কে ভাড়াবাড়িতে ওঠেন সস্ত্রীক। ওই সময়েই পিতা দেবেন্দ্রনাথ তাঁর উইল করেন, কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথকে জোড়াসাঁকোর বাড়ির কোনও অংশ না দিয়ে নগদ অর্থ ধরে দেন। সেই টাকায় সত্যেন্দ্রনাথ ১৯, বালিগঞ্জ স্টোর রোডে (এখনকার গুরুসদয় দত্ত রোড) একটি সুরম্য বাড়ি তৈরি করেন। বাড়িটি ছিল বিশাল জায়গা জুড়ে, কম্পাউন্ডের মধ্যে তিনটি বড় পুকুর ও ছড়ানো বাগান ছিল। তিনতলা বাড়িটির ভেতরে একটি সাহেবিকেতার বলরুমও ছিল।

১৯০০ সালে সত্যেন্দ্রনাথ ১ রেইনি পার্ক থেকে এই স্টোর রোডের বাড়িতে উঠে আসেন। জগদীশচন্দ্র রায় আনন্দবাজার পত্রিকায় চিঠিটি লেখেন ১৯৬২ সালের ৩রা জানুয়ারি। বলাবাহুল্য, তখন রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বাঙালির উৎসবের রেশ চলছে।

চিঠিটির অংশবিশেষ উল্লেখ করতেই হয় — ‘১৯ নং স্টোর রোডে (বালীগঞ্জ) স্বর্গীয় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় থাকতেন। তিনি তাঁর পেনসনের সমস্ত টাকাটাই দেশের জন্য খরচ করতেন। বিশেষ করে পালোয়ানদের ও লাঠিয়ালদের মাহিনা দিয়ে দক্ষিণ কলকাতার ছোট-ছোট ছেলেদের সংগঠন [Sic?]ও শক্তিশালী করিতেন। রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকো থেকে সপ্তাহে তিনদিন নিয়মিত এসে খেলায় যোগ দিতেন।

১৯ নং স্টোর রোডের সামনেই মিলিটারী মাঠ, সেই মাঠের একপাশে তখনকার দিনের ভারত-বিখ্যাত সাহেবদের ক্রিকেটক্লাব। ঐ ক্লাবে ভারতীয়দের সভ্য হওয়ার কোন উপায় ছিল না, তাঁরা যতই বড় হউন না কেন।

কোনো একদিন ঐ ক্লাবের ক্রিকেট-খেলা দেখে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মেজদাকে বলেন। সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর ম্যানেজার ভোগেল এবং আমাকে ব্যাট, বল, নেট প্রভৃতি কিনতে পাঠিয়েছিলেন। ঐ সঙ্গে বলে দেন — ভারতীয় দোকান থেকে জিনিস কিনতে। আমরা এসপ্ল্যানেডের উত্তরদিকের দোকান থেকে সমস্ত জিনিস কিনে ফিরি। তার পরদিন থেকেই খেলা আরম্ভ হয়। সত্যেন্দ্রনাথ দুইজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানকে মাইনে দিয়ে খেলা শিখাবার জন্য নিযুক্ত করলেন। রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকো থেকে প্রত্যহই খেলা দেখতে ও খেলতে আসতেন। রবীন্দ্রনাথের এই খেলা কিন্তু মোটেই ভাল লাগেনি। তার কারণ একদিন খেলতে-খেলতে একটা বল তাঁর পায়ে লাগে এবং তিনি জখম হন। তাছাড়া ক্রিকেট খেলার যা বিশেষ দরকার তা তাঁর ছিল না। অর্থাৎ তিনি তাঁর মন ও চোখ ঠিক রাখতে পারতেন না। প্রায় তিনমাস পরে ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয় খেলা লাঠি নিয়ে থাকতেন। তাঁর দাদা অবশ্য বৃদ্ধ বয়সেও ক্রিকেট খেলতেন।’

জগদীশবাবুর চিঠিটি প্রামাণ্য বলেই মনে হচ্ছে। বানিয়ে বানিয়ে এরকম লেখা একজন প্রবীণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব। তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরভর অনুষ্ঠানের সময়।

প্রসঙ্গত ১৮৬১তেই বিখ্যাত চিত্রসমালোচক স্টেলা ক্রামরিশ রবীন্দ্রনাথের আঁকায় বর্ণান্ধতার প্রভাব নিয়ে লেখেন জন্মশতবার্ষিকী স্মরণিকায়।

পরে চিত্রসমালোচক শোভন সোম ১৯৮২তে অনুষ্টুপ থেকে প্রকাশিত তাঁর বই ‘শিল্পী, শিল্প ও সমাজ’ বইটিতে কবির বর্ণান্ধতা বা প্রোটানোপিয়া নিয়ে আলোকপাত করেন। ১৯৮৭তে চক্ষুচিকিৎসক জ্যোতির্ময় বসু আর ডব্লিউ পিকফোর্ড ‘কালার ভিশন অ্যান্ড অ্যাসথেটিক প্রবলেমস ইন পিকচারস বাই রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ নামক গবেষণাপত্র লেখেন।

এই গবেষণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯৭ সালে কেতকী কুশারী ডাইসন ও সুশোভন অধিকারী লেখেন ‘রঙের রবীন্দ্রনাথ’ নামক গবেষণাধর্মী বইটি। রবীন্দ্রনাথের বর্ণান্ধতা ছিল বলেই তিনি লাল রঙকে সবুজ বা বাদামি দেখতেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছিল তাঁর চিত্রকলায়।

এটা বলার কারণ এই যে, রবীন্দ্রনাথ এই বর্ণান্ধতার জন্যেই তিন মাসের মধ্যে ক্রিকেটের পাট চুকিয়ে দেন। জগদীশচন্দ্র রায় তাঁর চিঠিতে পরিষ্কার লিখেছেন, ‘…তিনি তাঁর মন ও চোখ ঠিক রাখতে পারতেন না…’। লাল ক্রিকেট বলকে সবুজ দেখতেন বলেই বলকে তিনি অনুসরণ করতে পারতেন না। বিশেষত সবুজ আউটফিল্ড থাকলে সমস্যা আরও গুরুতর হত। বল তাঁর দৃষ্টিপথ থেকে হারিয়ে যেত।

ঠিক কোন বছর রবীন্দ্রনাথ বালিগঞ্জের ১৯ স্টোর রোডে সত্যেন্দ্রনাথের বাড়ির মাঠে ক্রিকেট খেলতে আসতেন, তা কেউ লিখে যাননি। লেখক শঙ্করীপ্রসাদ বসুও লেখেননি সময়টার কথা।

এখানে সত্যেন্দ্রনাথের এই বাড়িতে কাটানো বছরগুলির হিসেব নেওয়া দরকার। ১৯০০ সালে (খ্রিস্টাব্দে) তিনি এই বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯১২ সালের Thackers Directory’-র রেকর্ডে বাড়িটির নাম ‘Granville’। ১৯১৮-১৯-এ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর বাড়িটি বিক্রি করে দেন বিড়লাদের। পুত্র সুরেন্দ্রনাথ দেনার দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জামিনের টাকা জোগাতেই বাড়িটি বিক্রি করেন সত্যেন্দ্রনাথ।

ওদিকে রবীন্দ্রনাথ বড়মেয়ে মাধুরীলতার বিয়ের পর ১৯০১-এ আর দুই মেয়ে রেণুকা ও মীরা, আর ছেলে রথীন্দ্রনাথ ও শমীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রথমে শিলাইদহ ও পরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। দেবেন্দ্রনাথের সেই আদি শান্তিনিকেতনে গিয়ে এবার তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ করবেন। খোলনলচে বদলে দিয়ে একে একে গড়ে তুলবেন সবকিছু।

অর্থাৎ ১৯০০-১৯০১-এই মাত্র কবির ফুরসত ছিল প্রতিদিন জোড়াসাঁকো থেকে বালিগঞ্জের স্টোর রোডে গিয়ে ক্রিকেট খেলার।

তাসখেলার কথা বারবার বলতে হচ্ছে একটাই কারণে, রঙিন এই খেলাটিই কবির ছাত্রাবস্থায় চালু ছিল। ক্যারম, লুডো, চাইনিজ চেকার ইত্যাদি তখন ছিল বলে শুনিনি। রঙবহুল ইন্ডোর গেমস ছিল তাসই। স্কুলের ছেলেদের তাসখেলা এখনকার দিনে অচল হলেও ঊনিশ শতকের শেষদিকে চালু ছিল হয়তো। দাবা তথা শতরঞ্জে রঙের সমারোহ নেই। নেই পাশাতেও। তাই সে খেলায় যাচ্ছি না। পরিণত বয়সে কবির ইন্ডোর গেমস বলতে ছিল, বিভিন্ন রকম শব্দের জাগলারি। অন্ত্যাক্ষরী ধরনের খেলাও ছিল। একটি খেলার নাম ছিল ‘শ্যারাড’। ইন্দিরা দেবীর স্মৃতিকথায় এর সমর্থন মেলে। বীরভূমের সুরুল-এর সঙ্গে সু-Rule বা Shoe-rule মেলানোর মতো খেলা। শব্দের জাগলারি এটা। একটি শহর, সুশাসিত রাজ্য ও নৈরাজ্যের মধ্যে শাব্দিক মিল দেখা যাচ্ছে এখানে। এই রকম শব্দের ধন্যাত্মক মিল দিয়ে খেলা ছিল শ্যারাড।

কবি শান্তিনিকেতনে ফুটবল খেলারও আয়োজন করিয়েছিলেন পরবর্তীকালে। একবার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং স্কুল এসেছিল খেলতে। উত্তরায়ণ থেকে খানিকটা দূরে মাঠ। খেলা শুরুর পর হল্লা উঠলেই বোঝা যেত গোল হয়েছে। কম হল্লা হলে বাইরের টিমের গোল, বেশি হল্লা হলে আশ্রমিকদের গোল। এরকম আটবার হল্লা ওঠায় (বলা বাহুল্য, বেশ জোরেই) কবিগুরু ক্ষুন্ন হয়েছিলেন সেবার। বাইরের টিমের সম্মান ভূলুন্ঠিত হোক, এটা তিনি চাইতেন না। দক্ষ প্রশাসককে কত দিকেই না খেয়াল রাখতে হয়। তবে খেলাধুলা ভালোবাসলেও কবিগুরু যে খেলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন না, তা প্রমাণিত সত্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন