সোমবার | ২৮শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৪৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
মা কালী যখন মহালক্ষ্মী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর মহাকাব্যে ভেড়ার উল্লেখ : অসিত দাস কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (প্রথম পর্ব) : শংকর রমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও একাদশী পালনের নিয়মাবলী : রিঙ্কি সামন্ত আশাপূর্ণা দেবী-র ছোটগল্প ‘চাবি’ একে দানা-য় রক্ষা নেই তারওপর ডিভিসি-র ৪২ হাজার কিউসেক জল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (নবম পর্ব) : বিজয়া দেব চেতনার সমস্যা, সামাজিক অবকাঠামো এবং বলপ্রয়োগ : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক বারবার ভিলেন সেই বঙ্গোপসাগর : তপন মল্লিক চৌধুরী নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রাখাইন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ‘দানা’ থেকে ভয় পাবেন না, সতর্ক থাকুন, মোকাবিলায় রাজ্য সরকার প্রস্তুত : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সই বা বন্ধুত্ব স্থাপনের উৎসব সয়লা : রিঙ্কি সামন্ত প্রথম পাঠ — “নিশিপালনের প্রহরে” নিয়ে, দুয়েকটি কথা : সোনালি চন্দ বৃহন্নলার অন্তরসত্তা : নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী দুই দশক : শৈলেন মান্না ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের মুখোমুখি… : বিদিশি বসু দামোদর মাউজো-এর অনুবাদ গল্প ‘হরতাল’ বঙ্গে কুবেরের পূজা : অসিত দাস বাংলা সাহিত্যের দেবতারদের দেখা মেলে ওই ঘরেই : অশোক মজুমদার মালবাণকে ছুঁয়ে রূপোলী সমুদ্রসৈকতে : নন্দিনী অধিকরী মার্ক্সবাদ, মনোবিশ্লেষণ এবং বাস্তবতা : এরিক ফ্রম, অনুবাদ ফাতিন ইশরাক সাহিত্যের প্রাণপ্রবাহে নদী : মিল্টন বিশ্বাস এবার দুর্গা পুজোকেও ছাপিয়ে গেল রানাবাঁধের লক্ষ্মীপুজো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় দেড় হাজার বছর প্রাচীন ঘোষগ্রামের লক্ষীকথা : রিঙ্কি সমন্ত হুতোমের সময় কলকাতার দুর্গোৎসব : অসিত দাস নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘বৈতালিক’ কোজাগরীর প্রার্থনা, বাঙালির লক্ষ্মীলাভ হোক : সন্দীপন বিশ্বাস তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পের কাজ ভাবাদিঘিতে ফের জোর করে বন্ধ করা হলো : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর — অনেক বিদ্যাসাগর মাঝে তিনি একক : প্রলয় চক্রবর্তী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই মহাঅষ্টমীর আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কাশীপুরে নয়, দক্ষিণেশ্বরেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন ছোট ভট্টাচার্য (দ্বিতীয় পর্ব) : শংকর

শংকর / ১৯ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪

চাকরিতে ঠাকুরের আগ্রহ ছিল না। তা ছাড়া ওই হাঙ্গামায় ঢুকলে দেবীর অলঙ্কারাদির জন্য দায়ী থাকতে হবে। তাই রানির জামাই মথুরবাবু যখন প্রথম কাজের প্রস্তাব দিলেন, রামকৃষ্ণ তখন নিজের ভয়ের কথা বললেন। কিন্তু মথুরবাবু শুনলেন না, তাঁকে কালীমন্দিরের ‘বেশকারী’ এবং ভাগ্নে হৃদয়কে দুই ভাইয়ের সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করলেন।

রামকুমারের শরীর ভাল না যাওয়ায় মথুরবাবু তাঁকে বিষ্ণুঘরের পূজার দায়িত্ব দিলেন এবং কালীঘরে ঠাকুরপূজক রূপে আমরা রামকৃষ্ণকে পেলাম। এর কিছু পরেই রামকুমারের আকস্মিক দেহাবসান।

দাদার মৃত্যুর পরে পূজক রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক বিকাশ, মন্ত্রপাঠ ছাড়াও সঙ্গীতে ছিল তাঁর গভীর নির্ভরতা এবং সেই বিখ্যাত উক্তি“মা, রামপ্রসাদকে দেখা দিয়েছিস, আমায় কেন তবে দেখা দিবি না? আমি ধন, জন, ভোগসুখ কিছুই চাই না, আমায় দেখা দে।” মথুরবাবু এক সময়ে ঠাকুরের পুজো দেখে শাশুড়িকে বললেন, “অদ্ভুত পূজক পাওয়া গিয়েছে, দেবী বোধহয় শীঘ্রই জাগ্রতা হয়ে উঠবেন।”

পূজক রামকৃষ্ণের এই ছবি ভক্তজনের হৃদয়ে আজও জীবন্ত। ‘মা মা’ করতে করতে অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন। মামা বায়ুরোগগ্রস্ত হয়েছেন ভেবে ভাগ্নে হৃদয় ভূকৈলাসের রাজবাটিতে নিযুক্ত এক বৈদ্যের শরণাপন্ন হলেন এবং রোগীর তেমন কোনও উন্নতি না দেখে কামারপুকুরে খবর পাঠালেন।

১৮৬০ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ কামারপুকুর থেকে আবার দক্ষিণেশ্বরে ফিরে এলেন এবং আবার বিরাট এক ‘আধ্যাত্মিক ঝড়ের’ মধ্যে পড়লেন। স্ত্রী, ঘর, সংসার, দেহ পরিবেষ্টনসব ভুলে গেলেন। তাঁর নিজের কথায়, “হুঁশ নাই। কাপড় পড়ে যাচ্ছে, তা পৈতে থাকবে কেমনে?…একদিন বকুলতলায় দেখলুম নীল বসন পরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বেশ্যা।” কিন্তু সাধক দেখলেন, সাক্ষাৎ সীতা লঙ্কা থেকে উদ্ধার হয়ে রামের কাছে যাচ্ছেন।

ঠাকুরের দক্ষিণেশ্বরের দিনগুলির বিবরণ লিখতে গেলে মহাভারত হয়ে যায়। এ সব বিবরণ ভক্তরা অনেকে মুখস্থ বলে যেতে পারেন। দু’একটি নমুনা: ঠাকুরের চামড়া অত্যন্ত কোমল ছিল। তাই ক্ষুর দিয়ে দাড়ি কামানো যেত না। নাপিত তাঁর দাড়ি ছেঁটে দিত। সোমবারে তিনি চুল ছাঁটতেন। স্বামী শিবানন্দ জানিয়েছেন, তাঁর হাত এতই নরম ছিল যে কড়া লুচি ছিঁড়তে গিয়ে হাত কেটে গিয়েছিল। কিন্তু তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকতেন না, দক্ষিণেশ্বরে তিনি নিজেই লুচি ভাজতে নেমে পড়েছেন এমন বিবরণ রয়েছে।

ভাগ্নে হৃদয় খুব সেবা করতেন। তবু তাঁর ওপর রেগে যেতেন, যা-তা গালাগালি করতেন“সে সব মুখে আনা যায় না।” আত্মরক্ষায় হৃদয় বলত, “আঃ কি কর মামা, ও সব কি বলতে আছে, আমি যে তোমার ভাগনা।” ঠাকুর সামনে যা পেতেন ঝাঁটা-জুতো, অমনি সপাসপ লাগিয়ে দিতেন।…পরক্ষণেই আবার দুজনে বেজায় ভালবাসা, কথা, ইয়ারকি। ভাইপো রামলাল জানিয়ে গিয়েছেন, ঠাকুর এমন রঙ্গরস রহস্য করতেন যে, নাড়িবেদনা হত। ভক্তদের বলতেন, “হ্যাঁগা, আমি এসব জানি, শুনেছি, দেখেছি, তাই বলছি।”

কলকাতার মানুষদের সম্বন্ধে তাঁর বহু মন্তব্য আজও খেটে যায়। তিনি বলতেন, “কলকাতার লোকের ভক্তি করতেও যেমন, অভক্তি করতেও যেমন। আমায় কেউ কেউ বলে, বাবুর লালপেড়ে কাপড় পরা, পায়ে কালো বার্ণিশ চটি জুতো, তাকিয়া ঠেসান দিয়ে বসা, এসব না হলে চলে না। গঙ্গার জল সকালে দেখলুম বেশ ভরপুর রয়েছে, আবার দেখি, না কমে গেছে। এসব লোকদেরও কিরকম জানিস, ঠিক জোয়ার ভাটার মতন। কত শালা কত কি বলে, ও শালাদের ভাল কথায় মুতেদি, আর মন্দ কথায় মুতেদি।”

দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের নৃত্যগীতে আকর্ষণ নিয়ে মস্ত বড় একটা বই হয়ে যায়। কোন গান কখন গাইতেন, কখন শুনতেন, এক এক গানে কেন এক এক রকম ‘রিঅ্যাকশন’এ সব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। ভাইপো রামলালকে একবার গাইতে বললেন, একঘর লোক দেখে রামলালের তো লজ্জা। ঠাকুরের ব্রেক ফেল করল, “শালা লজ্জা করচিস! ঘৃণা, লজ্জা, ভয় তিন থাকতে নয়।”

গান গাইবার শ্রেষ্ঠ ফলাফলের জন্য তাঁর পরামর্শ: “যখন যে কোন দেবদেবীর গান গাইবি, আগে তাঁকে চোখের সামনে দাঁড় করাবি, তাঁকে শুনাচ্ছিস মনে করে তন্ময় হয়ে গাইবি। লোককে শুনাচ্ছিস কখনো ভাববি না, তাহলে লজ্জা আসবেনি।”

নাচার ব্যাপারেও দক্ষিণেশ্বরে বেজায় আগ্রহমুড এলে কোমর বেঁকিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ ঘুরে ফিরে নাচতেন। কৌতূহলীরা প্লিজ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত ও শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ বই দু’টি হাতের গোড়ায় রাখুন, সময়ে অসময়ে আনন্দ পাবেন। বুঝবেন স্বরলিপির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে চিবিয়ে চিবিয়ে গাওয়া আর প্রাণ খুলে গান গাওয়ার মধ্যে তফাত কোথায়! দক্ষিণেশ্বরের পূজারি ভক্তিতে ভেসে যাচ্ছেন, কিন্তু অপচয় দেখলেই প্রবল বিরক্তি ও বাধা। সকালে নিজেই দাঁতন সংগ্রহে বেরুতেন। একদিন অন্য এক জনকে বললেন। সে একাধিক ডাল ভেঙে আনায় বিরক্ত ঠাকুর বললেন, “শালা তোকে একটা আনতে বললুম, তুই এতো আনলি কেন? যা হোগ রেখে দে।” পরের দিন লোকটি আবার দাঁতনের জন্য ডাল ভাঙতে যাচ্ছে দেখে ঠাকুর মনে করিয়ে দিলেন, আগের দিনের ডাল রয়েছে। তার পর প্রবল বকুনি: “না দেখে অমনি ছুটে আনতে যাচ্ছিস যে? ও গাছ কি তুই সৃজন করেছিস?…শালার একটুও বুদ্ধিসুদ্ধি নেই, জেনে রাখবুঝেসুঝে কাজ করতে হয়। কোন জিনিসের অপচয় করতে নেই।”

১৮৫৫ থেকে গলার চিকিৎসার জন্য বাগবাজার শ্যামপুকুরে চলে আসা পর্যন্ত দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের পাক্কা তিরিশ বছরের সম্পর্কএই সময়েই তো একের পর এক এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটল, যা আজও মানুষকে বিস্ময়ে অভিভূত করে রেখেছে। অতএব দেখা যাচ্ছে, মহাপুরুষ-জীবনবৃত্তান্তে ভক্তি ছাড়াও ইতিহাসের একটু ময়ান থাকলে মন্দ হয় না। প্রথম: দেবী ভবতারিণী এই ব্র্যান্ডই মানুষের মনে গেঁথে গেলেও দক্ষিণেশ্বরের মায়ের অফিসিয়াল নামটি কী? দেহরক্ষার আগের দিন (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৬১) রানি রাসমণি দেবোত্তর সম্পত্তি রূপে যে দানপত্র স্বাক্ষর করেন, সেখানে মায়ের নাম ‘শ্রীশ্রীজগদীশ্বরী মহাকালী’। অফিসিয়াল কাজকর্মে, এমনকী কর্তৃপক্ষের কালীপূজার নিমন্ত্রণপত্রে তাঁর ওই নাম আজও অব্যাহত। কথামৃতকার তাঁর অল-টাইম বেস্টসেলার বইতে বারবার ঠাকুরের শ্রীমুখে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন: “কালই ব্রহ্ম। যিনি কালের সহিত রমণ করেন, তিনিই কালীআদ্যাশক্তি। অটলকে টলিয়ে দেন।” এই আদ্যাশক্তি লীলাময়ী। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করছেন। তাঁরই নাম কালী। এই দক্ষিণেশ্বরে কেশবচন্দ্র সেনকে ঠাকুর দেবীমাহাত্ম্য বোঝাচ্ছেন, “তিনি নানা ভাবে লীলা করছেন। তিনিই মহাকালী, নিত্যকালী, শ্মশানকালী, রক্ষাকালী, শ্যামাকালী।…যখন সৃষ্টি হয় নাই,…নিবিড় আঁধার, তখন কেবল মা নিরাকারা মহাকালীমহাকালের সঙ্গে বিরাজ করছেন।”

এ কালের বিজ্ঞানপ্রেমী ছাত্রছাত্রীরা একটু দৈহিক বিবরণ পছন্দ করেন। তাঁরা মন্দিরে গেলেই কিছু প্রয়োজনীয় খবরাখবর নিয়ে নেন। দক্ষিণেশ্বরের চতুর্ভুজা মা কালীর কষ্টিপাথরের বিগ্রহউচ্চতায় সাড়ে তেত্রিশ ইঞ্চি, তিনি দক্ষিণাস্যা। গর্ভমন্দিরটির দৈর্ঘ্য মাত্র পনেরো ফুট। দক্ষিণেশ্বরে পরবর্তী কালের (১৮৮৪) অমাবস্যার রাত্রের বর্ণনা কথামৃতে আছে, “ওঁ কালী, ওঁ কালী। সাবধানে পূজা করো। আবার মেড়া বলি দিতে হবে।…ঠাকুরের সে অবস্থা নয়, পশুবধ দেখিতে পারিবেন না।”

যাঁরা বলেন এ দেশে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না, তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, রামকৃষ্ণের দেহাবসানের পঁচিশ বছর আগে (১৮৬১) নাটমন্দিরে মন্দিরের মালিকরা সভা বসিয়েছিলেন‘শ্রীরামকৃষ্ণ সত্য সত্যই অবতার’ এই কথার অনুমোদন অথবা খণ্ডন। এই সভায় তন্ত্রসাধনায় পারদর্শিনী ভৈরবী সর্বসমক্ষে ঠাকুরকে অবতার রূপে ঘোষণা করেছিলেন। (ক্রমশ)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন