মঙ্গলবার | ২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৪১
Logo
এই মুহূর্তে ::
খেলার মাঠ থেকে চেম্বারে : রিঙ্কি সামন্ত ছড়া কি শিশুসাহিত্য? : লুৎফর রহমান রিটন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা দিবস ও ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মজয়ন্তী পালন : দীপাঞ্জন দে সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (তৃতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব) : গীতা দাস সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (দ্বিতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (চতুর্থ পর্ব) : গীতা দাস সাবঅলটার্ন দৃষ্টিতে কলকাতার লবণচিহ্ন : অসিত দাস মোদীকে চাপে রাখতে নীতীশ-নায়ডুর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা দাবি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (প্রথম পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বাঁধে ইঁদুরের তৈরি গর্ত দিয়ে ঢোকে বন্যার জল চলছে সংস্কারের কাজ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (তৃতীয় পর্ব) : গীতা দাস কবি সঞ্জীব প্রামাণিক, আবহমান বাংলা কবিতার পথে হেঁটে-যাওয়া এক কবিতাভিক্ষুক : অমৃতাভ দে সৌমেন দেবনাথ-এর ছোটগল্প ‘বিলাসী’ বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (দ্বিতীয় পর্ব) : গীতা দাস সাত্যকি হালদার-এর ‘ছোটগল্প’ কাজলদিঘি ডায়েটে আনতে হবে কয়েক টুকরো নারকেল তাহলেই কেল্লাফতে : রিঙ্কি সামন্ত বাতাসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও বৃহৎ শিল্প গড়ে তুলতে বাঁশগাছের কদর বাড়ছে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (প্রথম পর্ব) : গীতা দাস স্পিকার নির্বাচন থেকেই শুরু হল সেয়ানে সেয়ানে টক্কর : তপন মল্লিক চৌধুরী বাসুলী লবণের দেবী (দ্বিতীয় পর্ব) : অসিত দাস শক্তিপদ রাজগুরু-র ছোটগল্প ‘পাখিরা আর নেই’ বিস্মৃত কথাসাহিত্যিক সুলেখা সান্যাল : আনিসুর রহমান ময়মনসিংহের গৌরব কেদারনাথ মজুমদার (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার লেডি ম্যাকবেথ, ওয়াটার আঙ্কেল ও আমি : সসীমকুমার বাড়ৈ জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা শিক্ষার জনক : মনোজিৎকুমার দাস ময়মনসিংহের গৌরব কেদারনাথ মজুমদার (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার আম্বুবাচী শব্দের অর্থ কি? অম্বুবাচী কেন এবং কারা পালন কর? : মনোজিৎকুমার দাস ময়মনসিংহের গৌরব কেদারনাথ মজুমদার (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার নিজের জীবনের নানা কথা — কবিতার জীবন (শেষ পর্ব) : মহাদেব সাহা
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই জগন্নাথদেবের শুভ স্নানযাত্রার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

চাচা ফকিরের মেলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির : দীপাঞ্জন দে

দীপাঞ্জন দে / ২৫৯৬ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

তিনি হলেন সকলের চাচা। আসল নাম জানা যায় না। তাই চাচা ফকির নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। নদিয়া জেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম পাথরঘাটার পরিচিতি চাচা ফকিরের নামেই। সদ্য পাথরঘাটায় সেই চাচা ফকিরের মেলা হয়ে গেল। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের সূচনায় চাচা ফকিরের মেলাকে ঘিরে নদিয়ার সীমান্তবর্তী পাথরঘাটা গ্রাম যেন মেতে ওঠে। এই মেলা ঘিরে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের উৎসাহ থাকে চোখে পড়ার মতো। হবে নাই বা কেন? নিকটবর্তী এলাকার মধ্যে চাচা ফকিরের মেলা হলো একটি অন্যতম বড় মেলা। আর চাচা ফকিরের দরগা এলাকার মানুষের কাছে তো বটেই, বাইরের অনেক পর্যটকদের কাছেও খুবই জনপ্রিয়। চাচা ফকিরের মেলা দেখতে তাই প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ সীমান্তবর্তী এই পাথরঘাটা গ্রামে ভিড় করেন। চাচা ফকিরের ভক্তরাও অধীর আগ্রহে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের অপেক্ষায় থাকে।

চাচা ফকিরের দরগা থেকেই সীমান্তের কাঁটাতার দেখতে পাওয়া যায়। সন্ধ্যা নামলে সীমান্তে সারিবদ্ধ ভাবে দণ্ডায়মান ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলো দৃশ্যমান হয়। কাঁটাতার পেরোলেই বাংলাদেশ। সম্পূর্ণ এক ভিন্ন রাষ্ট্র। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নদিয়ার পাথরঘাটা গ্রামে চাচা ফকিরের দরগার তাই অবস্থানগত একটি গুরুত্ব রয়েছে। দরগার গা ঘেঁষে বর্ডার রোড চলে গিয়েছে। দরগায় সীমান্তরক্ষীদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। চাচা ফকিরের এই দরগাকে ঘিরে বহু কিংবদন্তি রয়েছে। সীমান্তরক্ষীরাও সেখানে একটি প্রধান চরিত্র। চাচা ফকিরের এই দরগার পাশেই রয়েছে সরস্বতী খাল। সেই খালের উপর দিয়ে নাকি মাঝে মধ্যে সাদা পোশাক পরিহিত একজনকে হেঁটে চলে যেতে দেখেছেন সীমান্তরক্ষীরা। গ্রামের মানুষ এবং সীমান্তরক্ষীদের অনুমান তিনিই হলেন চাচা ফকির। রাত্রিতে তিনি নাকি এই এলাকা পাহারা দেন। প্রচলিত মতে চাচা ফকিরের এমনই মাহাত্ম্য যে, কাক-পক্ষী, কুকুর-শেয়ালেও তার দরগা সংলগ্ন এলাকায় কুকর্ম করে না।

আগে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে ওপার বাংলা এবং এপার বাংলার মানুষেরা চাচা ফকিরের দরগায় বাৎসরিক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে একত্রিত হতে পারতেন। স্বাধীনতার পরেও বহুকাল এমনটি হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন সীমান্তের এই অংশে কাঁটাতার ছিল না। কিন্তু এখন সেখানে কাঁটাতার বসানো হয়েছে। যদিও এই কাঁটাতার চাচা ফকিরের মাহাত্ম্যকে নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারেনি। সীমান্তের ওপারে চাচা ফকিরের বহু ভক্ত এখনো রয়েছে। দেশের সীমানা অতিক্রম করে, সাম্প্রদায়িক বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে চাচা ফকিরের অনুগামীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েছে।

১৯৪৭-এর আগে ওপার বাংলার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া অবিভক্ত নদিয়া জেলারই অন্তর্গত ছিল, এখন যা অতীত। দেশ আলাদা হয়েছে, কিন্তু চাচা ফকিরকে নিয়ে মানুষের আবেগ একই রয়েছে। চাচা ফকিরের এমনই মহিমা যে, হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ চাচা ফকিরের ভক্ত। বছরভর প্রতি বৃহস্পতিবার চাচা ফকিরের দরগায় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষেরা হাজত দিতে আসেন। কেউ চাচা ফকিরকে প্রণাম করে পুজো দেন, কেউ বা করেন সেলাম। তিনি তো সকলের চাচা। তার কাছে সবাই সমান। কৃষিপ্রধান পাথরঘাটা গ্রামে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা যৌথভাবে চাচা ফকিরের দরগা দেখভাল করেন। চাচা ফকিরের দরগাটি একেবারে সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় সন্ধ্যা ছয়টার পর সেখানে সাধারণ মানুষের থাকার অনুমতি নেই। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে ফাগুন মাসের দুই, তিন ও চার তারিখে, চাচা ফকিরের দরগায় বাৎসরিক অনুষ্ঠানের সময়। সেই কটি দিন রাত পর্যন্ত মানুষ চাচা ফকিরের মেলায় আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। চাচা ফকিরের মেলার জন্য এই স্পেশাল পারমিশন দেওয়া হয়। পাথরঘাটা গ্রামের বহু কৃষককে প্রতিদিন কাঁটাতার পেরিয়ে দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী নো ম্যান্স ল্যান্ডে গিয়ে চাষ করতে হয়, আবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে এপারে ফিরে আসতে হয়। এমন ভাবেই পাথরঘাটার মানুষদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সেখানে তিনদিনের চাচা ফকিরের মেলা যেন মরুদ্দ্যান স্বরূপ।

পাথরঘাটার জনগণ মিলিত হয়ে কয়েক বছর আগে ‘চাচা ফকির স্মৃতিরক্ষা কমিটি’ গড়ে তুলেছেন। সেখানে হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এই কমিটি চাচা ফকিরের দরগা দেখভাল করে এবং প্রতি বছর ফাগুন মাসে তিনদিন ধরে মেলার আয়োজন করে। সেখানে বাউল, ফকিরি গানের আসর বসে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে পাথরঘাটার চাচা ফকিরের দরগা। এমনকি সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর বহু সৈনিকও চাচা ফকিরের ভক্তে পরিণত হয়েছে।

আজ যেখানে ভারতের অনেক জায়গায় সাম্প্রদায়িক হিংসার চূড়ান্ত নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে নদিয়া জেলার সীমান্তবর্তী একটি ছোট গ্রাম পাথরঘাটায় চাচা ফকিরের দরগাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির সৃষ্টি হয়েছে। এই গ্রাম দেখিয়ে দিয়েছে যে, কিভাবে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে কোনও উৎসবে যৌথভাবে শামিল হওয়া যায়। এর থেকে অনেক কিছু শিক্ষনীয় রয়েছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখানো কি কোনও শিক্ষিত, নৈতিক ভাবে চলা মানুষের কাজ? ইতিহাস বলছে বিভিন্ন যুগে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এধরনের কুকর্মের সাথে জড়িত হয়েছেন এবং সমগ্র জাতিকে তার খেসারত দিতে হয়েছে। বর্তমান সমাজেও সেই প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সচেতন নাগরিকদের সেই প্রবণতা দমনে সোচ্চার হতে হবে। আমি মনে করি সাম্প্রদায়িক বিভিন্নতার মনোভাব এক মানসিক ব্যাধি। যারা মানুষে মানুষে ধর্মীয় বিভাজনকে প্রকট করে দেখেন, তারা যেমন আত্মকেন্দ্রিক তেমনি রোগগ্রস্তও বটে। ভারতের এক প্রান্তিক গ্রাম পাথরঘাটার মানুষ যদি সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামির উর্ধ্বে উঠে চাচা ফকিরের দরগাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারে, আমরা তবে কেন তা পারবে না? এই উত্তরটা আমাদের সকলকেই খুঁজতে হবে।

লেখক: আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক, নদিয়া।


আপনার মতামত লিখুন :

5 responses to “চাচা ফকিরের মেলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির : দীপাঞ্জন দে”

  1. Arifulla Shaikh says:

    স্যার সত্যিই আপনার লেখাটা অসাধারণ লাগলো।

  2. তপতী ভট্টাচার্য্য says:

    তোমার লেখা পড়ে এক অজানা বিষয় জানতে পারলাম। লেখাটিও খুব ভাল হয়েছে।

  3. Sudakshina Gupta says:

    নতুন কিছু জানতে পারলাম। ভালো লাগলো। লেখার গুণে আরও সুন্দর লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন