মঙ্গলবার | ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৩৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

আমি — সবটাই নীল সাদা : যীশু নন্দী

যীশু নন্দী / ২৪২ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২

আমি একটা হ্যাঁদাক্যাবলা ছেলে। একসময় ফুটবলই বুঝতাম না অথচ আর্জেন্টিনা হয়ে গেলাম। মারাদোনার নাম শুনতাম বাবার মুখে, কিন্তু তাঁর লাইভ খেলা কস্মিনকালেও দেখিনি। তিনি যখন খেলা ছেড়েছেন, তার বছর দুই পরে আমি জন্মেছিলাম। মেসি বলে যে একজন খেলোয়াড় উঠছেন সেটাও আমার কাছে ছিলো সুদূর পাশ্চাত্যের কোনো অপ্রকাশিত নিউজ আর্টিকেলের মতোই। সে বছর জার্মানিতে বিশ্বকাপ শুরু হলো। বাবা সবসময় মারাদোনা মারাদোনা বলে লাফাতেন, এখনও লাফান। বাবা আয়ালার কথা বলতেন না, বাবা মার্তি ক্রেসপোর কথা বলতেন না, বাবা বলতেন না ভেরন নেই এবারের টিমটার কি হবে। বাবা শুধু মারাদোনার নাম বলতেন। তাই আমি শুধু মারাদোনাকেই চিনতাম, আর্জেন্তিনাকে না।

আসলে আমাদের ছোট্ট সাদাকালোর টিভির র‍্যাডারে স্প্যানিশ লিগ, ইংলিশ লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ধরা পড়তো না। জার্মানির বিশ্বকাপের সময়ে খেলার চ্যানেলটায় বিশ্বকাপ দেখাতো। টিউশন ছুটির শেষে শুনলাম জার্মানির সাথে একগোলে জিতছে আর্জেন্তিনা। বাবা লাফাচ্ছেন। ‘আর্জেন্তিনা!’ — বাহ্ নামটা বেশ সুন্দর তো। বাড়ি এসে খেয়ে দেয়ে রাত অবধি খেলাটা দেখলাম। জার্মানির একজন শেষমুহূর্তে বলটাকে হেডে করে পাশ কাটিয়ে দিলো, আরেকজন সেই বলটা হেডে নিয়ে নামিয়ে দিলো গোলে। জার্মানি গোলশোধ করলো। টাইব্রেকারে আর্জেন্তিনা হেরে গেলো। সাদাকালো টিভিতে আর্জেন্তিনার নকআউটে পরা নেভি ব্লু জার্সিটা কালে রঙের দেখাতো। দেখছিলাম ম্যাচ হেরে গিয়ে আর্জেন্তিনার একজন কান্নাকাটি করছে, আরেকজন মারামারি করতে লেগেছে। তাদের নাম জানতাম না কিন্তু হারটাকে যেনো কোনোমতেই মানতে পারছেনা তারা। অনেকটা যেনো আমারই মতোন। খেলার মাঠে আমি খুবই আনাড়ি ছিলাম, এখনও আছি। আউট হলে ব্যাট ছাড়তে ইচ্ছে করেনা, ছয় খেলে পরের বলটা ইচ্ছা করে জোড়ে করি। আর্জেন্তিনাও যেনো আমার মতোনই আনাড়ি। ভালোবেসে ফেললাম আর্জেন্তিনাকে। বাতিস্তুতা, বুরুচাগা, ক্যানিজিয়া, রিকুইলমে, ক্রেসপো, তেভেজ, মেসি — এদের কারোর জন্যে নয়, খানিকটা মারাদোনার নাম শুনে, আর বাকিটা আমার অন্তরস্থ স্বভাবটার প্রতিবিম্বটা দেশটার মধ্যে দেখতে পেয়ে আমি ভালোবেসেছিলাম আর্জেন্তিনাকে।

নামের মোহ একদিন হয়তো কেটে যায়। কিন্তু নিজেরই ছায়াটা কিভাবেই বা বদলাবে। তারপর থেকে যখনই ‘আর্জেন্তিনা’ নামটা কোথাও শুনি, কানটা খাড়া করে থাকি, শুনতে খুবই ভালো লাগতো নামটা। আর পাঁচটা কিশোরের মতোও আমারও ছিলো ক্যুইজের নেশা। দূরদর্শনে প্রতি রবিবার ক্যুইজ হতো। ক্যুইজমাস্টার একদিন প্রশ্ন করলো, “রূপোর দেশ কাকে বলা হয়?” উত্তর জানতামনা। জেনে নিলাম, — “আর্জেন্তিনা”। শুধুমাত্র নামটার জন্যেই এই প্রশ্নোত্তরটা চিরকাল মনে গেঁথে রয়ে গেলো।

সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপের সময় বিগ বাবুল না কীসের একটার সাথে বিভিন্ন দেশের পতাকাওয়ালা একটা স্টিকার ফ্রি দিচ্ছিলো, ইস্ত্রি করে জামায় বসালে নাকি জামার সাথে সেঁটে যাবে স্টিকারটা। আমি আর্জেন্তিনার স্টিকার নিয়েছিলাম। কিন্তু ইস্ত্রি করে আর বসানো হয়নি। কোথায় যে হারিয়ে গেছে স্টিকারটা! সেবারতো আবারও জার্মানদের সাথে ম্যাচ ছিলো। ভুভুজেলা, শাকিরা, ওয়েভিং ফ্ল্যাগে মাতোয়ারা সে বিশ্বকাপ। মেসি, রোনাল্ডো বড্ডো নিরীহ সেই বিশ্বকাপে। আগের ম্যাচে গোলার মতো শটে ম্যাচ জিতিয়েছে তেভেজ, মেক্সিকোর সাথে। পরের ম্যাচটাই জার্মানির সাথে। বাসে যেতে যেতে খবরের কাগজে পড়লাম তেভেজের বক্তব্য — “জার্মানি যদি ভাবে আর্জেন্টিনাকে হারাবে, তাহলে ওরা দিবাস্বপ্ন দেখছে।” বাব্বাহ, এতোটা কনফিডেন্স! তবে কি আমিই বেশী চিন্তা করছি? নিউজ চ্যানেলে বারবার হেডলাইন হচ্ছিলো, জোয়াকিম লো এর স্ট্র‍্যাটেজি বনাম মারাদোনার আবেগ। কিন্তু এতোই কি পোয়া  বারো!

কোয়ার্টারে বিধ্বস্ত হয়ে গেলাম জার্মানির সাথে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেবেল্লার আর্জেন্তিনাকে অনেকদিন পর অনেকটা কমপ্যাক্ট লাগছিলো। মেসি, মারিয়া, আগুয়েরো, রোমেরো, মাসচারেনো ছাড়াও আমার খুব ভালো লাগতো মার্ক রোহোকে। উফফ, একজন ডিফেন্ডার, এতো আক্রমণাত্মক, এতো আক্রমণাত্মক…। এখন যেমন দেখি লিসান্দ্রোকে। সেবার নেদারল্যান্ডস ম্যাচে গোলকিপার রোমেরো বোধহয় কিছু একটা ছু মন্তর পুষে রেখেছিলো গ্লাভসে। একের পর এক সেভ, উফফ! পরে জেনেছিলান ইতালিয়া ৯০’-এ গয়কোচিয়ার কথা, খানিকটা একার হাতে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছিলো আর্জেন্তিনাকে। রোমেরো অতোটা না হলেও, রোমেরো না থাকলে হয়তো আমরা ফাইনালে উঠতামনা। ফাইনালে শুনলাম মারিয়া খেলবেনা।

ম্যাচ যেরাত্রে হবে, সেইদিন সকালে আকস্মিকভাবে আমার দেবাশিস স্যারকে খবর দিলাম মারিয়া খেলতে পারে। দেবাশিস স্যার ছিলেন আমার রসায়ন শিক্ষক, অভিব্যক্তি ছিলো শিশুর মতো সরল। মারিয়া খেলবেন না বলে মুষড়ে ছিলেন। যখন শুনলেন মারিয়া খেলবে, তখন শিশুর মতো হেসে উঠে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “খেলবে? খেলবে?”। ওই অভিব্যক্তি আমি আজও ভুলিনি। ফাইনালে সেদিন দি মারিয়া মাঠে নামেনি। আর্জেন্তিনা হেরে গিয়েছিলো। সাবেল্লা সরে যাবার পর তাতা মার্তিনোর আর্জেন্তিনাকে অনেক অনেক কমপ্যাক্ট লাগতো, কিন্তু তাও কোপা আমেরিকা আসেনি। কখনও উরুগুয়ে, কখনও চিলি, কেউ না কেউ বাধা হতোই। কিন্তু আর্জেন্তিনা যতবার হারে, ততবার আরেকটু বেশি করে আপন করে নিই আর্জেন্তিনাকে। কারণ ওটাই তো আমি, ওটাই তো আমার ছায়া। ক্যাম্বিয়াসোর কান্না, তেভেজের মারামারি, মেসির শূন্যতায় ভাসা চোখ, কোচ মারাদোনার সমস্ত আর্জেন্তাইন প্লেয়ারদের এক এক করে বুকি জড়িয়ে চুমু খাওয়া, মাসচারেনোর মাঠে বসে পড়া — ওই সমস্ত কিছুই আমি। মাঠের রগচটা আমি, আনাড়ি আমি, হেরে যাওয়া আমি, জিতে যাওয়া আমি—সবটাই নীল সাদা, আর অন্য কোনো রঙ ধরেনা সেখানে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন