বৃহস্পতিবার | ৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৩৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সব খেলার সেরা বাঙালির সে যে ফুটবল : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৯৭৮ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

যেখানে দুই ল্যাম্পপোস্টের মধ্যে দিয়ে

লম্বা পেনাল্টি কিকে

কে যেন শূন্যে পাঠিয়ে দেয়

চাঁদের ফুটবল

গ্যালারিতে অস্পষ্ট ছায়াচ্ছন্ন মানুষেরা

চেঁচিয়ে ওঠে,

‘গোল, গোল, গোল’

ভাগ্যিস তারাপদ রায়ের এই কবিতাটি আমার মোক্ষম মুহূর্তে মনে পড়ল, তা না হলে প্রতিবেদন ও ফুটবল একত্রে মেলানো আমার সাধ্য ছিলনা। পৃথিবীর সব দেশেই ফুটবলপ্রেমীরা একটু আবেগপ্রবণ। বুদ্ধিজীবীরা তাকেই ‘পাগল’ বলে ব্যঙ্গ করেন। এই ম্যানিয়ায় আক্রান্ত এখন গোটা বিশ্ব কারণ কাতারে চলছে ফুটবলের মহাযুদ্ধ।

অবশ্য বাঙ্গালি সারাবছর ধরে মেতে থাকে এই উন্মাদনায়। মূলত ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান এই দুই ক্লাবকে ঘিরেই বাঙ্গালীদের যা কিছু আবেগ রেষারেষি। শুধু ফুটবলে নয় হকি এবং অ্যাথলেটিক্সেও দেখা যায়। বাংলা সিনেমা, সাহিত্য, সংগীতেও এই দুই ক্লাবকে ঘিরে উন্মাদনার চিত্র পাওয়া যায়।

আদতে বাঙাল-ঘটি বা ইলিশ-চিংড়ি অথবা নৌকা-মশাল ঘিরে যেন একটা অঘোষিত ঠান্ডা লড়াই বাঙালি জীবনের একটা অঙ্গ। আমাদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেতে ছিলেন/ছেন এই ফুটবল প্রেমে।

শুনেছি সত্তরের দশকে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান ফুটবল ম্যাচের দিনে কোন পুলিশের ছুটি থাকত না। পাড়ায় পাড়ায় নজর রাখা হতো সমর্থকদের প্রতি যাতে তারা মারামারি না লাগিয়ে দেয়। ৩৬০ দিন যতই ঘটি আর বাঙালের বন্ধুত্ব থাকুক না কেন ফুটবল ম্যাচের দিন হয়ে উঠতো একে অপরের তীব্র প্রতিদ্বন্দী। এ যেন বাঙাল ঘটির লড়াইয়ে এক মজার সংস্কৃতি।বাঙালির যুদ্ধক্ষেত্রের জয় পরাজয়ের অনুভূতি মিলতো রেডিও ফুটবলের ধারা বিবরণীতে। তবে এখন এই লড়াইয়ের ঝাঁঝটা অনেকটাই কমে এসেছে।

শুনেছি যারা ভিন রাজ্যে এবং বিদেশে থাকেন তারাও এই সবুজ মেরুন ও লাল হলুদ ক্লাব ঘিরে আজও চায়ের কাপে তুফান তোলেন। আসলে কলকাতার ফুটবল দুনিয়াটাই রূপকথার মত। নানা রঙে রঙিন। কত ঘটনাবহুল। নানান ইমোশান জড়িয়ে আছে এই খেলার সঙ্গে। কিছু ঘটনার মধ্যে দিয়ে এই আবেগ প্রবণতার কথা বলি—

৭৫ সালে ইস্টবেঙ্গল ৫-০ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। এই হার মেনে নিতে পারেননি সবুজ মেরুন সমর্থক সিঁথির উমাকান্ত পালোধী। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই দিন মোহনবাগান সমর্থকরাও ফুটবলারদের ঘেরাও করে রাখেন। বাড়ি যেতে দিতে চাননি ফুটবলারদের। রাত আড়াইটার সময় পুলিশের সাহায্য নিয়ে শৈলেন মান্না উদ্ধার করেছিলেন প্রসূন ব্যানার্জি, সুব্রত ভট্টাচার্যদের।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের একজন বড় সমর্থক ছিলেন বাঘাদা। প্রতি ম্যাচে তিনি মাঠে উপস্থিত হতেন একটু আগেই, একবার হঠাৎ তাকে দেখা গেল না সবাই ভাবলো তিনি বোধহয় অসুস্থ। কিন্তু হঠাৎ বিরতির অনেকক্ষণ পর তিনি মাঠে এলেন। চুল তার উস্কো-খুস্কো। কি ব্যাপার !! তিনি নিজেই বললেন, “ছেলেটা কাল রাতে মারা গেছে তাকে শ্মশানে পুড়িয়ে তবে মাঠে এলাম।” সেদিন তার দল জেতায় শেষ পর্যন্ত তিনি খুশি হয়েছিলেন, একটু খুঁজলে এরকম নানান ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়।

শচীন দেব বর্মন ছিলেন কট্টর ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক। মান্না দে, অশোককুমার মোহনবাগান সমর্থক হয়েও ভয়ে মোহনবাগানের হয়ে চিৎকার করতে পারতেন না পাছে শচীন কর্তা রেগে যান৷ শচীন দেব একবার বড় ম্যাচ দেখতে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। মোহনবাগানকে ওই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল হারিয়ে দেয়। এই আবেগে তিনি এমনই আত্মহারা হয়ে গেছিলেন যে একটা ট্রাম কেনার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। সি সি আইয়ের ডরমেটরিতে এসে মাটিতে বসে গান শুনিয়ে গিয়েছেন শচীনকর্তা৷

বাবা শচীন দেব কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হলেও ছেলে পঞ্চম বোধহয় ততখানি নয়, এমনকি মাঝে-মাঝে মোহনবাগানের হয়েও তিনি গলা ফাটিয়েছেন৷ একবার পি.কে ব্যানার্জির অনুজ প্রসূন ব্যানার্জি রাহুলদেব বর্মণের কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি কাদের সমর্থক মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? উত্তরে পঞ্চমবাবু বলেছিলেন পিকে দা যেদিকে আমি সেদিকে৷

অবশ্য দুই প্রজন্মের মধ্যে আসল মিল তারা ফুটবলকে ভালবাসতেন৷

আসলে ফুটবল খেলার মধ্যেই কোথাও লুকিয়ে আছে জীবনের কথা। অতীন্দ্র দানিয়াড়ী ভাষায় —

“দুইধারে দুই তিন কাঠির মাঝখানে সবুজ মাঠটা যেন জীবন যাত্রারই প্রতীক। বাইশটা প্রাণের ৯০ মিনিটের লাব ডাপ জানিয়ে দেয় — বাঁচতেই হবে। জন্মের সময় শাঁখের শব্দের মত রেফারির বাঁশি দিয়ে এই সবুজ মাঠে জীবনের গল্পটা শুরু হয়। এরপর শুধুই দৌড়, দৌড় আর দৌড়। সংসার, আত্মীয়-স্বজন, কাছের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে সামনের বাধাগুলো কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হয় বিপক্ষের তিনকাঠির দিকে। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নামের দিন কাঠিতে ঘেরা ওই মায়াজালের মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের সার্থকতা। কারো লক্ষ্য পূরণ হয় আবার কারো শর্ট এক চিলতের জন্য বাইরে চলে যায়। বিপক্ষ কিন্তু সহজে ছেড়ে দেয় না। নিয়ম মত বাধা দিতে না পারলে মারে, রক্তাক্ত করে দেয় পা, মুখ, হৃদয়।

ওই যন্ত্রনা সহ্য করে পড়ে যেতে যেতে আবার উঠে দাঁড়িয়ে মারাদোনার মতো বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে বলতে হয় ‘আমিই পারি, আমিই পারবো’। কথাটির মধ্যে লুকিয়ে থাকে সম্ভাবনা। সবুজ ঘাসের সঙ্গে বুট পরা পায়ের সহবাস জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে প্রতিষ্ঠিত করতে করতে এগিয়ে যায় আগামীতে।

মুহূর্তের জাগলারিতে আগের মুহূর্ত গুলি হারিয়ে যায় তাই সেদিন বারের কোন দিয়ে গোলটা একটা সম্ভাবনা একটা সামরিক পূর্ণতা হারিয়ে যাওয়ার জন্যই যার জন্ম হয়।”

তথ্য সূত্র: মোহন বাগান ইষ্ট বেঙ্গল রেষারেষি– মানস চক্রবর্তী


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “সব খেলার সেরা বাঙালির সে যে ফুটবল : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    অসাধারণ প্রতিবেদন

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন