নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের, স্কুল অব হিউম্যানিটিসের উদ্যোগে গত ২রা সেপ্টেম্বর আয়োজিত হল বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরির অষ্টম কর্মশালা এবং ২৩ তম পার্টিশন বক্তৃতা। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিদ্যা অনুষদের দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই প্রকল্পটি অষ্টম বছরে পদার্পন করল। চতুর্থ পর্যায়ের এই কর্মশালাটি ছিল প্রকল্প সমীক্ষকদের এবং নির্বাচিত আগ্রহী গবেষকদের জন্যে সংরক্ষিত। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৪০ জন আগ্রহী গবেষক এবং ছাত্র- ছাত্রী এই কর্মশালাতে উপস্থিত ছিলেন।
নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালাতে প্রারম্ভিক ভাষণপ্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববিদ্যা অনুষদের অধিকর্তা এবং প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মননকুমার মন্ডল। আগ্রহী গবেষকদের জন্যে তিনি কর্মশালার শুরুতেই প্রকল্প সম্বন্ধে বিস্তারিত একটি ধারণা পেশ করেন। বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরির বিগত কয়েক বছরের কার্যকলাপ সম্বন্ধে গবেষকদের অবহিত করেন অধ্যাপক মননকুমার মন্ডল। মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে সেন্টার ফর ল্যাঙ্গুয়েজ, ট্রান্সলেশন অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজের বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরি নামক প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং অভিমুখ আলোচনা ছাড়াও, ক্ষেত্রসমীক্ষার ক্ষেত্রে সমীক্ষকদের ঠিক কোন বিষয়ে প্রকল্প মনোযোগ দিতে চায় সেটি সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
অষ্টম কর্মশালার উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক তপোধীর ভট্টাচার্য। কর্মশালাতে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমর মিত্র। অধ্যাপক মন্ডল প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে গবেষণার বিভিন্ন দিকগুলি সম্বন্ধে অংশগ্রহণকারীদের অবগত করেন এবং পাশাপাশি প্রকল্পের পক্ষ থেকে যে রিপোজিটরি নির্মাণ করা হয়েছে সেটি গবেষকদের সামনে তুলে ধরেন। রিপোজিটরির খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক ও আঙ্গিকের সঙ্গে গবেষকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়াই ছিল তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য।
কর্মশালায় আমন্ত্রিত বক্তারূপে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উত্তম কুমার বিশ্বাস এবং কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাস। অধ্যাপক বিশ্বাস দেশভাগ ও বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরি প্রকল্পে তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে মূল্যবান কিছু কথা তুলে ধরেন গবেষকদের জন্যে। অধ্যাপক দাস পশ্চিবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে দেশভাগের যে অভিঘাত তৈরী হয়েছিল ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে সেটি সম্বন্ধে আলোচনা করেন এবং এই বিষয়ে গবেষণার সম্ভাবনার কথা উঠে আসে তাঁর আলোচনায়। দেশভাগের পরবর্তী বাংলাদেশের জীৱন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে আলোকপাত করেছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমর মিত্র। দেশান্তরিত জীবনের সংকট ও সমস্যা হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত অনুভব তিনি ভাগ করে নেন প্রকল্প সমীক্ষক ও অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে প্রকল্প গবেষক দ্যুতি তাসনুমা রিফাত যোগদান করেছিলেন এই কর্মশালাতে এবং বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জে তাঁর ক্ষেত্রসমীক্ষার অভিজ্ঞতা বিষয়ে তিনি কিছু কথা বলেন। প্রথম অধিবেশনের শেষ অংশে প্রকল্প অধিকর্তা প্রকল্পের পঞ্চম পর্যায়ের ভাবনা ও অনুসন্ধানের দিক সম্বন্ধে উপস্থিত আগ্রহী গবেষকদের অবহিত করেন।
অষ্টম কর্মশালার দ্বিতীয় অধিবেশনে আয়োজিত হয়েছিল বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরির ২৩তম পার্টিশন বক্তৃতা। ২৩তম পার্টিশন বক্তৃতা প্রদান করেন সাহিত্যিক সসীম কুমার বাড়ৈ। দেশভাগ পরবর্তী সীমান্তের জনজীবন , ছিটমহল , চর -মেঘনা , বেরুবাড়ি সমস্যা সংক্রান্ত নানান বিষয় তাঁর আলোচনায় উঠে এসেছিল। মূল বক্তৃতায়, সাহিত্যিক সসীম কুমার বাড়ৈ দেশভাগ এবং উদ্বাসন বিষয়ে শ্রোতাদের কাছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক তথ্য তুলে ধরেন। দেশভাগের পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের জীৱন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে মূল্যবান কিছু তথ্য উঠে আসে তাঁর আলোচনায়। পাশাপাশি, এদিনের অনুষ্ঠানে বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরির সাক্ষাৎকারের তৃতীয় ক্যাটালগটির আবরণ উন্মোচন করেন সম্মানীয় অতিথিবৃন্দ। ১০০ টি মৌখিক সাক্ষাৎকার সম্বলিত এই ক্যাটালগটিতে স্থান পেয়েছে উত্তরবঙ্গ ,বাংলাদেশ এবং পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু অঞ্চলের উদ্বাস্তুদের জীবন অভিজ্ঞতা। প্রকল্পের পক্ষ থেকে চতুর্থ পর্যায়ে যারা ক্ষেত্রসমীক্ষক ছিলেন তাঁদের শংসাপত্র প্রদান করা হয় দ্বিতীয় অধিবেশনের শেষ লগ্নে। এছাড়াও, কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের হাতেও শংসাপত্র তুলে দেন প্রকল্প অধিকর্তা অধ্যাপক মনন কুমার মন্ডল।
প্রসঙ্গত, এই উদ্যোগটি নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের, মানববিদ্যা অনুষদের দ্বারা ২০১৬ সালে গৃহীত বেঙ্গল পার্টিশন রিপোজিটরি প্রকল্পের একটি অংশ। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পিত এই জন-গবেষণা প্রকল্পটি বাংলার পার্টিশন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সমকালীন ব্যক্তিক স্মৃতি সংগ্রহ করেছে। ইতিমধ্যেই প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রায় ৬০০র অধিক মানুষের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রায়, ৬০ জন আগ্রহী গবেষক ও শিক্ষার্থী এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
উপস্থিত ছিলাম,অনবদ্য গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে,সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে ক্ষেত্রসমীক্ষকদের অভিজ্ঞতা লব্ধ উপস্থাপন।যে সব নিত্যনতুন আঙ্গিক উঠে আসছে,তাতে আগামীদিনে কোন্ উচ্চতায় পৌঁছবে প্রজেক্টটি,তা ভাবলেই প্রথম দিন থেকে যুক্ত একজন নগন্য ক্ষেত্রসমীক্ষক হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে হয়।