বৃহস্পতিবার | ৪ঠা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:২৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় হুগলির খানাকুল থানাকে দুটি করার দাবিতে সরব এলাকার বাসিন্দারা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা নামের ব্যুৎপত্তি, নতুন আলোকপাত : অসিত দাস আবার সেই হাথরস! এবার স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলেবাবা : তপন মল্লিক চৌধুরী সন্ন্যাসী ও সুন্দরী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর ছোটগল্প ‘একটা পিস্তল ও ডুমুর গাছ’ ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় সুলেখা সান্ন্যাল-এর ছোটগল্প ‘ঘেন্না’ সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (শেষ পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী শোভারাম বসাকের লবণের ব্যবসা : অসিত দাস রাখাইনে সংঘাত ও সেন্টমার্টিন পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন খেলার মাঠ থেকে চেম্বারে : রিঙ্কি সামন্ত ছড়া কি শিশুসাহিত্য? : লুৎফর রহমান রিটন কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা দিবস ও ডা: বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মজয়ন্তী পালন : দীপাঞ্জন দে সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (তৃতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব) : গীতা দাস সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (দ্বিতীয় পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (চতুর্থ পর্ব) : গীতা দাস সাবঅলটার্ন দৃষ্টিতে কলকাতার লবণচিহ্ন : অসিত দাস মোদীকে চাপে রাখতে নীতীশ-নায়ডুর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা দাবি : তপন মল্লিক চৌধুরী সুখীমানুষদের দেশ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডাইরি (প্রথম পর্ব) : নন্দিনী অধিকারী বাঁধে ইঁদুরের তৈরি গর্ত দিয়ে ঢোকে বন্যার জল চলছে সংস্কারের কাজ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (তৃতীয় পর্ব) : গীতা দাস কবি সঞ্জীব প্রামাণিক, আবহমান বাংলা কবিতার পথে হেঁটে-যাওয়া এক কবিতাভিক্ষুক : অমৃতাভ দে সৌমেন দেবনাথ-এর ছোটগল্প ‘বিলাসী’ বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (দ্বিতীয় পর্ব) : গীতা দাস সাত্যকি হালদার-এর ‘ছোটগল্প’ কাজলদিঘি ডায়েটে আনতে হবে কয়েক টুকরো নারকেল তাহলেই কেল্লাফতে : রিঙ্কি সামন্ত বাতাসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও বৃহৎ শিল্প গড়ে তুলতে বাঁশগাছের কদর বাড়ছে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (প্রথম পর্ব) : গীতা দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ ডিজিটাল পত্রিকার পক্ষ থেকে সকল বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই জগন্নাথদেবের শুভ স্নানযাত্রার আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বেগম রোকেয়ার রচনায় লোকজ জীবন অভিজ্ঞতা (শেষ পর্ব) : গীতা দাস

গীতা দাস / ৩৮ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪

‘মহাভারত অশুদ্ধ করা’ নিয়ে প্রচুর লোকোক্তি রয়েছে যার প্রতিফলন দশম পরিচ্ছেদে — ‘তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করিলে মহাভারত অশুদ্ধ হইবে না’।

বাংলার সামন্ত সমাজের বলির শিকার লতীফ। লতীফের দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি হওয়ার অবস্থা বুঝাতে রোকেয়া বলিদানের ছাগল শব্দটি ব্যবহার করেছেন । কোরবানীর খাসী ও বলিদানের ছাগল সমার্থক শব্দ হলেও সচেতনভাবে বলিদানের ছাগল শব্দটি লেখার পেছনে তাঁর পাঠক হিসেবে কী বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কথাই বিবেচনায় ছিল? অথবা তখনকার লোকজ সমাজ ধর্মভিত্তিক ভাষা চর্চা হয়তো আত্মস্থ করেনি।

পদ্মরাগের একাদশ পরিচ্ছেদে মনোবিশ্লেষণে প্রবাদ ব্যবহার করেছেন — ‘বেল পাকিলে কাকের বাপের কি?’ য়ার আমরা বলি “গাছে বেল পাকিলে কাকের কি?’

বিভিন্ন অবস্থা বুঝাতে বিস্তৃত বর্ণনা না দিয়ে বহুল প্রচলিত বাগধারা ও প্রবাদ ব্যবহার করে সংক্ষেপেই পরিস্থিতি বুঝিয়েছেন, যেমন দ্বাদশ পরিচ্ছেদেঃ ‘দিদির কথাই বেদবাক্য’, ‘শাপে বর।’ অথবা ‘দশচক্রে ভগবান ভূত’ ।

চতুর্দশ পরিচ্ছেদে — স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনেও ঊষা রাণীর শাঁখা পরা নিয়ে “ছাড়ব না হাতের শাঁখা, ঐটি সধবার নিশানা!” লোক বিশ্বাসের নমুনা; যা আরেকটি প্রবচন মনে করিয়ে দেয় —

‘স্বামী নাই পুত্র নাই কপাল ভরা সিঁন্দুর

বেড়া নাই দুয়ার নাই ঘর ভরা ইঁন্দুর।‘

মতিচুর দ্বিতীয় খন্ডের ‘জ্ঞানফল’ নামক রূপকথায় মতো বেগম রোকেয়া মহাভারতের রচনাশৈলীর অনুকরণে ‘পদ্মরাগ’ উপন্যাসে দুই লাইন পয়ার লিখেছেনঃ

‘হেলেন- বিবাহ কথা অনল যেমতি

ব্যথিতা সকিনা ভণে শুনে দয়াবতী।’

এখানকার ‘ আরসী আনছি, কাঁকই আনছি। চুল বান্ধনের ফিতা আনছি!’ আরসী (আয়না), কাঁকই (চিরূণী) আর বান্ধন (বাঁধার) আঞ্চলিক শব্দত্রয় দিয়ে তৈরী বাক্যটিতে বেগম রোকেয়ার লোকভাষা ব্যবহারের নমুনা পাই ‘পদ্মরাগ’ উপন্যাসে।

‘রাঁধা- উননে ফু-পাড়া আর কাঁদার’ চিত্র গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিকতার সাথে সম্পৃক্ত।

বেগম রোকেয়া তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের সংলাপে প্রবাদ, প্রবচন ব্যবহার করে চর্রিত্রগুলোকে আমাদের আপন করিয়ে ছেড়েছেন। যেমন, ষোড়শ পরিচ্ছেদে: ‘উদোর বোঝা বুদোর ঘাড়ে’ চাপানোর চর্চার উদাহরণ তো আমাদের সমাজে যত্রতত্র।

তাছাড়াও,রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিণী লোকজীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত বলেই রোকেয়া তাঁর উপন্যাসের সপ্তদশ পরিচ্ছেদের চরিত্রের সংলাপ —

চারুঃ ‘আমি দশভুজা দূর্গা হইলে বেশ হইত!’’

পাল্টা সংলাপ —

ঊষাঃ ‘আমি কিন্তু দশমুন্ড রাবণ হইতে চাই — তাহা হইলে এক একটা মাথাকে এক একটা বিষয় চিন্তা করিবার ভার দিতাম!’

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ রোকেয়ার যাপিত জীবনের আশপাশ থেকেই নেয়া প্রবচনঃ

‘পন্ডিতে বুঝিতে পারে দু’ চারি দিবসে,

মুর্খেতে বুঝিতে নারে বৎসর চল্লিশে।‘

লোকোক্তিতে সংস্কৃত ব্যবহারও ছিল পরিচিত প্রচলন। দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদে একটি লোকোক্তির ব্যবহার — ‘মৌনং সম্মতি- লক্ষণং’ বলিয়া ধরা পড়িবেন।’

চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদে নদীমাতৃক বাংলাদেশের লোকের নদীর জল পরিমাপের লোকাভিজ্ঞতার ফলাফল “হরে দরে হাঁটু জল’ বাক্যটি।

‘ঢেঁকির আর অন্য কাজ কি আছে?’ — সংলাপটি ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানা ছাড়া যে কাজ নেই প্রবাদটিই মনে করিয়ে দেয়।

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদে বেগম রোকেয়া তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ইহজাগতিক চেতনার পরিবর্তে লৌকিক জীবনাচারকে — লোক বিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন। এটি হয়তো বা চরিত্র উপস্থাপনের স্বার্থে–সৃষ্ট চরিত্রকে বাস্তবানুগ করতেই করেছেনঃ

‘সতীর দেবতা, পতি জীবনের সার,

তেঁই যাচি পূজিবারে চরণ তোমার’

অন্যান্য লেখা

‘ভ্রাতা-ভগ্নী’ লেখাটি সংলাপ নির্ভর। এক ভাই ও দুই বোনের কথোপকথনে অনেকগুলো প্রবাদ ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন —

“টাকা হইলে বাঘের দুধ পাওয়া যায়।“

“গোষ্ঠির নিকট ফষ্ঠি’’

‘পুত্রের স্নেহ ততদিন পর্যন্ত, যে পর্যন্ত সে স্ত্রীলাভ না করে, আর কন্যার স্নেহ কখনও হ্রাস হয়না।’

‘যেখানে বাঘের ভয়, সেইখানে রাত হয়’

“তুমি আর ক্ষীরে লুন দিও না।”

‘এ নেড়ামাথা লইয়া বেলতলায় আর যাইব না।’

‘ধরাখানা সরা হেন দেখ’

‘বাহুবলই বল’

‘পড় বাবা মতীজান’

‘নীলকন্ঠের ন্যায় সে বিষ কণ্ঠে ধারণ করিতে হইবে’ শেষেরটি পৌরাণিক কাহিনীর উদাহরণ।

তাছাড়া, ‘তিন কুড়ে’ নামক গল্প যে আমাদের লোক গল্প তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

‘পরী ঢিবি’ গল্পে রূপকথার মোড়কে রকউড কলেজের ছাত্রীদের পরী হিসেবে উপস্থাপন করে বেগম রোকেয়া পাহাড়ের উপত্যকায় তাদের স্বাধীনভাবে পিকনিক উপভোগের চিত্র এঁকেছেন। এও তাঁর নারীর স্বাধীন সত্ত্বা প্রকাশের এক ধরণের কলা কৌশল যা লোকসাহিত্য ভান্ডারের রত্নের আভা নিয়ে নিজের অলংকারে বসিয়েছেন।

লোক সাহিত্য মাত্রই ব্যক্তির সৃষ্টি সমষ্টির সম্পদে পরিণত হয়। ব্যক্তির মালিকানা জাতীয় ঐতিহ্যে বিলীন হয়ে জাতীয়ভাবেই এর অংশীদারিত্ব থাকে। এর অস্তিত্ত্ব মৌখিকভাবে জন থেকে জনে বিস্তৃতি ঘটে। লোক অনুষ্ঠানে লোকের মুখে মুখে ব্যবহৃত হয়,গীত হয়, লোকের অন্তরে অন্তরে প্রীত হয় এ সাহিত্য। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে এ সব সংগ্রহের ও এর লিখিত রূপ দেয়ার উদ্যোগ চলছে। বিশেষ করে ঊনিশ শতকে এর জোয়ার এসেছিল। আর জোয়ারের জল বেগম রোকেয়ার মনও হয়তো বা ভিজিয়েছিল।

অনেক লেখক নিজেদের রচনায় প্রাসঙ্গিকভাবে লোক প্রবাদ, প্রবচন, ছড়া, গাঁথা, গল্প, লোকোক্তি ব্যবহার করে এদের শাশ্বত আবেদনকে প্রাকৃত জীবন থেকে নাগরিক সমাজে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে দিয়েছেন। বেগম রোকেয়ারও তাঁদেরই একজন এবং এ সবের বিস্তৃততে তাঁর অবদান আমাদের অন্তরে বিরাজমান থাকবে। তিনি লোক সংস্কৃতি ও লোক জীবনের জারিত রসে আন্দোলিত ও উদ্বেলিত হয়েছিলেন। (সমাপ্ত)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন