বুধবার | ৪ঠা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৫০
Logo
এই মুহূর্তে ::
ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত আমার প্রথম অভিনয় দেখে সত্যেন বসুই বলেছিলেন— তোর হবে : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রজিৎ আমাকে ক্লান্ত করে কেবলই ক্লান্ত : তপন মল্লিক চৌধুরী মনোজ বসু-র ছোটগল্প ‘বাঁশের কেল্লা’ গ্রেস কটেজ বুলেটিন প্রকাশ : দীপাঞ্জন দে অথ ওয়াইন কথা : রিঙ্কি সামন্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসাবিভ্রাট : অসিত দাস বাংলা ইসলামি গান ও কাজী নজরুল ইসলাম : আবু বকর সিদ্দিকি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ পূর্তি : মনোজিৎকুমার দাস কঠোর শাস্তি হতে চলেছে নেহা সিং রাঠোরের : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন : শান্তা দেবী বাঙালি মুসলমান সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা : ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সিন্ধু সভ্যতার ভূখণ্ড মেলুহা-র সঙ্গে বাণিজ্যে মাগান দেশ : অসিত দাস তদন্তমূলক সাংবাদিকতা — প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি : দিলীপ মজুমদার হেমন্তকুমার সরকার ও নজরুল-স্মৃতিধন্য মদনমোহন কুটির : ড. দীপাঞ্জন দে রামমোহন — পুবের সূর্য পশ্চিমে অস্তাচলে গেলেও শেষ জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্ক : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাওবাদী দমন না আদিবাসীদের জমি জঙ্গল কর্পোরেট হস্তান্তর : তপন মল্লিক চৌধুরী জৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষে শ্রী অপরা একাদশী মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ১৪০ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ২ জুন, ২০২৫

আড়ংঘাটার যুগল কিশোর

“রাধাকৃষ্ণ প্রান মোর যুগোলকিশোর।

      জীবন মরণ গতি, আর নাহি মরন।।

      কালিন্দী কূলে কালি কদম্বের বন।

      রতন বেদীর উপর বসাব দুজন”।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’তে লিখেছিলেন ৩০০ বছরের পুরনো নদিয়ার আড়ংঘাটার যুগোলকিশোর মন্দিরের কথা।

প্রতিবছর এই জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে মেলা বসে। নাম যুগল-কিশোর মেলা। যদিও সোশ্যাল নেটওয়ার্কের দৌলতে আজ এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কারণ এ ভাবে মেলার ইতিহাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই মেলার পিছনে রয়েছে এক আশ্চর্য ইতিহাস। আজকে বলবো সেই কাহিনী।

আড়ংঘাটা যুগল কিশোর মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন গঙ্গারাম দাস। তিনি ছিলেন কৃষ্ণভক্ত। সম্ভবত বর্ধমানের মোহন্ত অস্তল ছেড়ে তিনি নানা দেশে পরিব্রাজনে বেরিয়ে পড়েন। বৃন্দাবনে পৌঁছে সেখানে আশ্রয় নিলেন শ্রীশ্রীগোবিন্দমন্দিরে। সেখানে পৌঁছে সেখানকার পুরোহিতের সঙ্গে তার গভীর সক্ষ্য হলো।একবার কার্যান্তরে বাইরে গেলে পুরোহিত গোবিন্দর সেবা পুজোর ভার দেন গঙ্গারামের হাতে।মনপ্রাণ দিয়ে সেবা কাজ করতে লাগলেন গোবিন্দ। মাস দুয়েক পর পুরোহিত ফিরে এসে গোবিন্দ সেবার ভার নিয়ে নেন গঙ্গারামের কাছ থেকে।এরপর গঙ্গারাম গোবিন্দ বিরহে কাঁতর হলে পড়লেন। এই অবস্থায় একদিন স্বপ্নাদেশ পেয়ে যমুনার জলে লাভ করলেন অপূর্ব এক কৃষ্ণবিগ্রহ।

শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ নিয়ে বৃন্দাবন থেকে তিনি বর্ধমানে ফিরে এলেন এবং বর্ধমানের সমুদ্রগড়ের কাছে এক পর্ণকুটিরে স্থাপন করলেন এই বিগ্রহ। সেই সময় বর্গী হাঙ্গামায় সারাদেশ বিপর্যস্ত। বর্গীরা শুধু টাকা পয়সা, সম্পত্তি বা নারী হরণ করত না, সেইসঙ্গে দেব-বিগ্রহগুলিও লুঠ করে নিয়ে যেত।

সেই ভয়েতে গঙ্গারাম কৃষ্ণ বিগ্রহটিকে নিয়ে হয় চূর্ণী নদীর ওপারে গিয়ে উঠলেন স্বদেশীয় রামপ্রসাদ পাঁড়ের কাছে।রামপ্রসাদ পাঁড়ে শুধু নদীয়ার কৃষ্ণচন্দ্রের কর্মচারী ছিলেন না, গোপীনাথের সেবাইত ছিলেন। গঙ্গারামের কৃষ্ণবিগ্রহটির স্থান হলো গোপীনাথ মন্দিরে। এই কৃষ্ণবিগ্রহের খবর গেল মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অষ্টাদশ শতকের এক বর্ণময় চরিত্র। বাংলা ধর্মীয় সংস্কৃতিতে তার বড় বড় অবদানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলা জগদ্ধাত্রী পূজা, নবদ্বীপে শাক্ত রসের প্রবর্তন ইত্যাদি। এছাড়াও বহু মন্দির তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্গীহাঙ্গামা, পলাশীর যুদ্ধের মত ঘটনা তার জীবদ্দশায় ঘটেছিল। বর্গীহাঙ্গামা স্তিমিত হলে গঙ্গারামের বিগ্রহ সেবার জন্য ১১৫১ বঙ্গাব্দে কুড়ি বিঘা ভূ সম্পত্তি প্রদান করলেন মহারাজ।

কাহিনী এখানেই শেষ নয়। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ক্রমশ কৃষ্ণ বিগ্রহটির প্রতি গভীর মায়ায় জড়িয়ে পড়লেন। তার মনে উদয় হল এভাবে কৃষ্ণকে একা রাখা যাবে না। তিনি একটি রাধা মূর্তি বানিয়ে বিবাহের আয়োজন করতে লাগলেন। মতান্তরে, একদিন গঙ্গারাম স্বপ্নে দেখা পান কিশোর গোপিনাথ বলছে, ‘আমার রাধিকা আছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে’। গঙ্গারাম এই স্বপ্নের কথা মহারাজকে বললে, মহারাজ বলেন আমরা কাছে কোন রাধিকার মূর্তি নেই। পরে কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে আদেশ পান রাজবাড়ীর ভূগর্ভে রাধিকা আছে। ভূগর্ভ থাকে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রাধিকার মূর্তি উদ্ধার করে গঙ্গারামকে সমর্পন করেন। মন্দিরের পিছনে  চূর্ণী নদীর  ঘাটে কৃষ্ণচন্দ্র রাধিকার মূর্তি নিয়ে বজরা থেকে নামেন।

মন্দিরের সামনে প্রাচীন বকুল গাছের তলায় জৈষ্ঠ মাসে বিবাহের দিন দেখে রাধাকৃষ্ণের ঘটা করে বিবাহ দিলেন।কন্যা পক্ষের তরফ থেকে নদীয়ারাজ বিবাহের যৌতুক বাবদ ১০০ বিঘা ভূসম্পত্তি দান করলেন। মন্দির কর্তৃপক্ষের মতে এই দানপত্রটি ১১৫৪ সালে লিখিত হয়েছিল। দেবদেবীর বিবাহের পর এই বিগ্রহটির নামকরণ হলো যুগল কিশোর। বিবাহ উপলক্ষে সেই সময়ে যে আড়ং বা মেলা হয়েছিল, সেই সূত্রে শান্তি পরিচিত হলো আড়ংঘাটা নামে এই মেলা আজও জৈষ্ঠ্য মাস ব্যাপী আড়ংঘাটায় বসে।

বিবাহ উপলক্ষে কৃষ্ণচন্দ্র দুটি ডালায় নানা স্বর্ণালংকার ফলমুলাদি যুগলকিশোরকে উপহার স্বরূপ দিয়ে নব দম্পতিকে বরণ করেছিলেন। এই ডালাটি যুগলের ডালা বা মিলনের ডালা নামে পরিচিত। অনেকেই সেই ডালাকে কপালে ঠেকায়, মানসিক করে অতি পবিত্র বস্তু ভেবে। যুগলকিশোরের একটি বৈশিষ্ট্য হল প্রতিদিন বেশ পরিবর্তন। যুগল মাহাত্ম্য পুস্তিকা এ সম্পর্কে লেখা হয়েছে–

রবিবার রক্তবর্ণ রাজবেশ পরি।

 ভক্তেরে আনন্দ দেন কিশোর কিশোরী।।

 সোম শুক্র শ্বেত বর্ণ পোশাক পরিচয়।

 মঙ্গলবারেতে পুনঃ রাঙ্গা বস্ত্র হয়।।

হরিদ্রা মখমল পরিধান শুক্রবারে।

 নব নটবর হের সিংহাসন পরে।।

 কৃষ্ণবর্ণ পরিচ্ছদ শনিবার তরে।

কভু নীলাম্বর বেশ সেবকের বিচারে।।

নব নটোবর হরি একাদশী দিনে।

পূর্ণিমায় রাজবেশ মন্দির বিধানে।।

এখন এই মন্দিরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকার মূর্তি ছাড়াও রয়েছে কালাচাঁদ, গোপীনাথ, শ্যামচাঁদ, রাধাবল্লভ, গোপীবল্লভ, শালগ্ৰামশিলা, বলরাম, রেবতী, সাক্ষীগোপাল, বালগোপালের মূর্তি। মন্দিরের শ্রীকৃষ্ণ মূর্তিটি কষ্টিপাথর দ্বারা নির্মিত। এই মন্দিরে সারাদিনে পাঁচবার ভোগআরতি হয়। ভোর চারটে সাড়ে চারটা থেকে প্রথম ভোগ নিবেদন করা  হয় ভগবানকে।

এই মন্দিরের দেওয়াল দেখা মিলবে সুন্দর পঙ্খ অলংকারের কাজ। রয়েছে পাঁচটি খিলান। মন্দিরের পাশেই আছে প্রায় ৩০০ বছর পুরোনো একটি বকুল গাছ। এটি ‘সিদ্ধ বকুল’ নামেই পরিচিত। একসময় শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকা বিগ্ৰহটির মিলন হয়েছিল এই বকুল গাছের তলায়। তাই গাছটি শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ভক্তরা মনস্কামনা পুরনের জন্য এই গাছে ঢিল বেঁধে মানত করে। ষষ্ঠীপুজোর দিন বহু মহিলা, মেয়ে-জামাইরা আসেন মন্দিরে পুজো দিতে।ভক্তদের বিশ্বাস, জ্যৈষ্ঠ মাসে যুগল কিশোরের পুজো দিলে এই জন্মে ও পরের জন্মে বৈধব্যদশা ভোগ করতে হবে না।

মেলাতে ব্যবসায়ীরা হরেক রকম পশরা নিয়ে আসেন।রাতে বসে বাউল, লোকসঙ্গীতের আসর চলে সারারাত ধরে। বহু মানুষের সমাগম হয়। বহু নাগা সন্যাসী আসেন এই সময়ে।সংক্রান্তির আগে অবধি এই মেলা চলে। শ্রীরামকৃষ্ণের একমাত্র সন্ন্যাসী কন্যা, গৌরী মা-ও এসেছিলেন এই মন্দির দর্শনে। সময় পেলে অতি অবশ্যই ঘুরে আসুন আড়ংঘাটার এই পবিত্র মন্দিরে।।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন