আজ কারিগর সংগঠন কলাবতী মুদ্রা আর বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র শিল্পী সঙ্ঘের পক্ষ থেকে পেজফোরনিউজের পাঠকদের একটা খুশির খবর ভাগ করে নিচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আধিকারিক এবং দেশজ কৃষি প্রসার প্রচারের অন্যতম পরিচিত ব্যক্তিত্ব লেখক, ডক্টর অনুপম পালকে সম্প্রতি মহীশুরে ভাগ্যহত কৃষিবিজ্ঞানী ডক্টর রিচারিয়া সম্মান অর্পণ করা হল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নন সারা দেশজুড়ে কর্পোরেট কৃষির বিরুদ্ধে দেশিয় কৃষি করতে কৃষকদের উৎসাহিত করে চলেছেন। দেশিয় জ্ঞানচর্চা সংগঠন, কলাবতী মুদ্রা, হুগলী জেলাপরিষদের আনন্দধারা প্রকল্পের অধিকর্তা শাশ্বতী দাসের সক্রিয় পরিকল্পনায় পুরশুড়া ব্লকের মহিলা স্বরোজগার সঙ্ঘের মহিলাদের দিয়ে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশিয় প্রথায়, দেশিয় বীজে, রাসায়নিকমুক্ত সফল ধান চাষ করিয়েছে। সেই সফল কাজের অন্যতম প্রযুক্তিবিদ এবং জ্ঞান প্রবাহের অন্যতম কারিগর ড. অনুপম পাল।
ড. পাল এই সম্মান পেলেন সম্প্রতি মহীশুরে আয়োজিত কিষান স্বরাজ সম্মেলন এবং বীজ সম্মেলননে এই সম্মেলনে ভারতজোড়া কয়েক হাজার কৃষক এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। দেশিয় কৃষি নিয়ে আলাপ আলোচনা ছাড়াও এই মহতী সম্মেলনে দেশজোড়া কৃষকের আনা দেশিয় বীজের প্রদর্শনীও হয়েছে। এই সম্মেলন আয়োজন করেছিলেন মূলত ভারত বীজ স্বরাজ মঞ্চ এবং আরও কয়েকটা সহযোগী সংগঠন। সারা দেশের কৃষকের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও যে সব কৃষক সুস্থায়ী কৃষি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন, তারাও এই সম্মেলন এবং প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন — এরা হলেন সুস্থায়ী কৃষি মঞ্চ বাঁকুড়া, রায়গঞ্জের ফিয়াম, সেভ আ রাইস ক্যাম্পেন পাথরপ্রতীমা। এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি প্রশিক্ষইণ কেন্দ্র ফুলয়ার স্টল থাকত — এবারে তারা অনুপস্থিত।
এই প্রদর্শনী এবং সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের দেশিয় কৃষি আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. অনুপম পাল এবং উত্তরাখণ্ডের বিজয় জারধারি মহাশয়কে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়। ড. পাল এবং শ্রীবিজয় গত তিন দশক ধরে দেশিয় কৃষি প্রচার-প্রসারে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর উদ্যোগেই ৪০০টি দেশিয় ধানের বীজ সংরক্ষিত হয়েছে এবং দেশিয় প্রথায় ধান উৎপাদনে এবং তরিতরকারি চাষে পশ্চিমবঙ্গ আজ যে সারা দেশের কাছে নিদর্শনস্বরূপ, তার একটা বড় শ্রেয় ডক্টর পালের। মাঠে নেমে কৃষকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, কর্পোরেট রাসায়নিক কৃষির বিপরীতে দেশজ কৃষির কাজ করা, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আধিকারিক ড. অনুপম পাল আজ দেশজ কৃষি ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অন্যতম পথ প্রদর্শক। উত্তরের কোচবিহার থেকে দক্ষিণের উপকূলের দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পশ্চিমের পুরুলিয়া থেকে পূর্বের নদীয়ার কৃষিক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা।
কৃষিক্ষেত্রে তিনি এতই প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন যে তাঁর নামে গাঁইয়া খামার নামে একটি দেশিয় কৃষি প্রচার প্রসার করার সংগঠন তাঁর দেওয়া দেশিয় জ্ঞান ব্যবহার করে ‘অনুপম’ নামে একটি গাছের খাদ্য বাজারে এনেছে।
অনুপম পালকে যে রিচারিয়ার নামে সম্মান দেওয়া কিছুটা হলেও ডক্টর রিচারিয়ার অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করার দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অনুপমবাবুর এই সম্মান পাওয়া আদতে রাধেলাল হরলাল রিচারিয়ার প্রতি ছয়ের দশকে ভারত সরকার দেশিয় কৃষি ধ্বংস করতে যে অসম্মান, অবিচারের ধারা নামিয়ে এনেছিল, তার প্রতি একটা পোয়েটিক জাস্টিস করা হল।
আজ বাংলার কারিগর সংগঠনের একজন সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে বলতে পারি, অনুপম পাল শুধু একজন দেশিয় কৃষি প্রচারের অন্যতম উদ্যোক্তাই নন, তিনি শুধু বীজ সংরক্ষকই নন, নিজে উদ্যোগ নিয়ে মানুষকে দেশিয় কৃষি নিয়ে সচেতন করার মানুষ নন — সব থেকে বড় কথা তিনি আদতে কর্পোরেট বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রতিভূ। যেভাবে গত ছয় দশকে যে যুক্তি দিয়ে কেন্দ্রিয় সরকারের উদ্যমে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক সংগঠন, বহুজাতিক সংগঠন ভারতবর্ষীয় কৃষিকে দখল করার উদ্যম নিয়েছে, সেই লোভের আর লুঠের রাজনীতির বিপক্ষে সমবায়িক সবাইকে নিয়ে চলার দেশজ কৃষির দর্শন প্রযুক্তি জনগণের সামনে আনার কাজ করে চলেছেন তিনি। কলাবতী মুদ্রা প্রকাশ করেছে ড পালের লেখা একমাত্র কৃষি রাজনীতির বই — কৃষি ভাবনা দুর্ভাবনা। যে উপনিবেশক প্রথায় আজ বিভিন্ন ইওরোপিয় আমেরিকিয় কর্পোরেট দেশের ভূমিতে তাদের কেন্দ্রীভূত উৎপাদন ব্যবস্থা আমাদের চাপিয়ে দিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে রিচারিয়া সম্মান ডক্টর পালকে আরও বড় কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করুক, আমরা কারিগর সংগঠনের পক্ষ থেকে এই আশা পেশ করলাম।
জয় দেশিয় কৃষির জয়য়। জয় চাষী কারিগর হকার নির্ভর কারিগর ব্যবস্থার জয়।
Dr Anupam Pal ke aamar antorik shrodhya janai tar ei mohoti kajer jonnye…
Dike dike chhoriye poruk tar uddyog.
অভিনন্দন, ড
অনুপম পাল। ড রিচারিয়ার নামাঙ্কিত এই পুরস্কার আমাদেরও অনুপ্রাণিত করবে।
আপনার সুস্থ o কর্মময় জীবন দীর্ঘ হোক।
Ovinondon
Dr Anupam Pal is very close to me।
I wish him more success .
দেশী ধানকে পরীক্ষাগার থেকে বের করে কৃষকের মাঠে ছড়িয়ে দেবার মূল কারিগর অনুপম স্যার। আমাদের সময়ের পাইওনিয়ার।
যোগ্য লোককে সন্মান দেওয়া হলো । ডঃ অনুপম পালের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্র ধরে বলতে পারি, তিনি আদ্যন্ত দেশীয় কৃষিপদ্ধতিতে নিবেদিত প্রাণ একজন কৃষি বিজ্ঞানী । নিঃস্বার্থভাবে জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজকে উৎসাহিত করবার জন্যে দেশের যে কোনও প্রান্তে ছুটে যাবার জন্যে প্রস্তুত । সুযোগ পেলে তিনি কৃষি বিপ্লব ও আনতে পারেন রাজ্যে ।